ইসলামের প্রচার ও প্রসারে বঙ্গবন্ধুর যুগান্তকারী অবদান ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাক

আতাউর রহমান
ঢাকা, ৯ আগস্ট, ২০১৫ (বাসস) : সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অক্ষুণ্ন রেখে ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদান দেশের ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা ও জায়গা বরাদ্দ, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড গঠন, বিশ্ব ইজতেমার জমি বরাদ্দ, বাংলাদেশের ওআইসি সদস্য পদ লাভ এবং সউদী আরবে কম খরচে হজ যাত্রীদের পবিত্র হজ পালনের উদ্যোগ, মদ ও জুয়া নিষিদ্ধকরণ এবং বেতার ও টেলিভিশনে আল কুরআনের বাণী প্রচার করাসহ ইসলামী মূল্যবোধ প্রচার ও প্রসারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর অবদান যুগে যুগে স্মরণীয় হয়ে থাকবে বলে অভিমত রেখেছেন এদেশের ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষকরা। পৃথক সাক্ষাৎকারে তারা বাসসকে এ সব অভিমত জানান।

তারা বলেন, বঙ্গবন্ধু ইসলামসহ সকল ধর্মের যথাযথ স্থান সঠিকভাবে নির্ধারণের ব্যাপারে খুবই যত্নবান ছিলেন। তিনি ইসলামী আদর্শ ঈমান ও আকিদা, তাওহিদ, রিসালাত, ইসলামী তাহযীব-তমুদ্দুন ও সুন্নতী তরিকা সমুন্নত রাখতে সদা তৎপর ছিলেন।
এ ছাড়াও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু তার ব্যক্তি, পারিবারিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে ইসলামের হুকুম-আহকাম ভিত্তিক সুন্নতি তরিকা অনুযায়ী জীবন যাপন করতেন বলে ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষকরা মন্তব্য করেছেন।
ইসলামী ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল বাসসকে বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু মদিনা সনদের আলোকে বাংলাদেশের সংবিধানে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিকে অক্ষুণ্ন রেখে ইসলামী মূল্যবোধকে যেভাবে সন্নিবেশিত করেছেন তা পৃথিবীর আর কোন দেশে কেউ করতে পারেনি। নবী করিম (সা.) আদর্শ ও দাওয়াতি দর্শনকে লালন করে মদিনা সনদের আলোকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে ইসলামী মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠা করে গেছেন।
তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক অধ্যাদেশ বলে ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা প্রতিষ্ঠা করেছেন। ইসলামের উদার মানবতাবাদী চেতনা বিকাশের লক্ষ্যে একটি বিধিবদ্ধ সংস্থা হিসেবে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠা ছিলো জাতির জনকের সুদূর প্রসারী চিন্তারই এক অমিত সম্ভাবনাময় স্বর্ণ ফসল।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রকাশিত অধ্যক্ষ মো. শাহজাহান আলম সাজু ও ড. মুহাম্মদ আশরাফুল আলম সম্পাদিত ‘ইসলাম ও বঙ্গবন্ধু’ গ্রন্থে বলা হয়েছে ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর পূর্ব পুরুষ দরবেশ শেখ আউয়াল হযরত বায়জীদ বোস্তামি (র.)-এর সঙ্গী হিসেবে বাগদাদ থেকে এ বঙ্গে আগমণ করেছিলেন। পরবর্তীতে তারই উত্তর পূরুষেরা বর্তমান গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়ায় বসতি স্থাপন করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু হচ্ছেন ইসলাম প্রচারক শেখ আউয়ালের সপ্তম বংশধর। বঙ্গবন্ধুর পিতা শেখ লুৎফর রহমান ছিলেন একজন সূফি চরিত্রের অধিকারী অন্যতম ধর্মপ্রাণ মুসলমান ও ইসলামের প্রচার ও প্রসারের অন্যতম একজন ধারক। ’
গ্রন্থে বলা হয়, ‘বঙ্গবন্ধু পবিত্র হজ পালনে যাতে বাঙ্গালীদের সমস্যা না হয় তার জন্য সরকারি অনুদানের ব্যবস্থা করেছিলেন। তিনি সউদী আরবে গিয়ে বিশেষ ব্যবস্থায় বাংলাদেশের মুসলমানদের জন্য হজ পালনের অধিকার আদায় করতে সক্ষম হয়েছিলেন। ইসলাম ও ধর্ম নিয়ে রাজনীতি নয়। ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম। ইসলামকে ব্যবহার করে যাতে কেউ ফায়দা লুটতে না পারে তার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বিভিন্ন কাজের মাধ্যমেই তা প্রমান করেছেন।’
১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রক্কালে পাকিস্তান বেতার ও টেলিভিশনে প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমরা বিশ্বাসী ইনসাফের ইসলামে। আমাদের ইসলাম হযরত রাসূলে করীম (স.)-এর ইসলাম, যে ইসলাম জগতবাসীকে শিক্ষা দিয়েছে ন্যায় ও সুবিচারের অমোঘ মন্ত্র। ইসলামের প্রবক্তা সেজে পাকিস্তানের মাটিতে বারবার যারা অন্যায়,অত্যাচার, শোষণ-বঞ্চনার পৃষ্ঠপোষকতা করে এসেছেন আমাদের সংগ্রাম সেই মুনাফিকদের বিরুদ্ধে।
জাতির পিতাই ১৯৭৩ সালে সীরাতুন নবী (সা.) সম্মেলনে ভাষণ দিয়ে জাতীয় ভাবে ইসলামের বাণী প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন বলে এ গ্রন্থে উল্লেখ করা হয়।
বঙ্গবন্ধু মুসলমানদের অন্যতম বৃহত্তম মুসলিম জমায়েত টঙ্গিতে বিশ্ব ইজমেতার জন্য ১৬০ একর জমি এবং ঢাকার কাকরাইল মসজিদের মাধ্যমে তা পরিচালনার করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছিলেন। তিনি বিদেশ থেকে মদ আমদানি ও মদ তৈরি নিষিদ্ধ করেছিলেন। তিনি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ঘোড়দৌড় প্রতিযোগিতার নামে প্রকাশ্যে জুয়া খেলা নিষিদ্ধ ষোষণা করেছিলেন।
^উপরে যেতে ক্লিক করুন