বঙ্গবন্ধু হত্যা পরবর্তী রাজনীতি ও সম্প্রতিক প্রসঙ্গ

আনিস সাবেত: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুর পর বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগ নাম দু’টোই ছিল নিষিদ্ধ। এমনকি ভারতের দেশ পত্রিকায় অন্নদা শংকর রায়ের ‘কাঁদো বাঙ্গালি, কাঁদো’ শিরোনামে লেখাটা পর্যন্ত ছাপা হয়নি! গত চুয়াল্লিশ বছরের ইতিহাসে অনেক চেঞ্জ হয়েছে এবং হচ্ছে, সংবিধানও কাঁটাছেড়া হয়েছে পনেরবার! কথা হচ্ছে এতোকিছুর পালাবদল, রদ-বদল সবই কিন্তু রাজনৈতিক এজেন্ডা বা স্বার্থসিদ্ধভূক্ত। সংস্কৃতির চোরা অলিগলিতেও রং বদলেছে যখন যে রকম মানাবে ঠিক তেমনটাই! মানে সরকারের রঙে রঙিন হওয়া টাইপ।

শহিদ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে সামরিক সরকারের অস্বস্তি ও ভয় ছিল। বঙ্গবন্ধুকে মুকাবেলা করবার জন্যে ৪ আগস্ট ১৯৭৬ সালে ইতোপূর্বে জারি করা রাজনৈতিক দলবিধি সংশোধন করা হয়। প্রথমে জারি হওয়া দলবিধিতে ছিল, ‘ক্ষতিকর কার্যকলাপে লিপ্ত’ কোনো সংগঠনকে নিবন্ধন দেওয়া হবে না। একমাত্র আওয়ামী লীগকে ঠেকানোর জন্যেই তা করেছিল তৎকালীন সামরিক সরকার।
আবার ১৯৭৬ সালের ৪ আগস্টের সংশোধনীতে ক্ষতিকর কার্যকলাপের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ১০টি উপদফার উল্লেখ করা হয়। ১০ নম্বর উপদফায় বলা হয়—কোনো জীবিত বা মৃত ব্যক্তির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ সৃষ্টি বা উৎসাহিত করিবার জন্য পরিকল্পিত হয় বা উৎসাহিত করিতে পারে বলিয়া সম্ভাবনা রহিয়াছে।
এরপর বাংলাদেশের মানুষ স্বৈরশাসকদের আমলে রাজনৈতিক ইসলামিক সম্মেলনে যোগ দিয়েছে বারবার। জুম্মাবারকে জাতীয়করণে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসল্লি জিকির করেছেন দলেদলে এবং রাত-বিরাতে আল্লাহ-রাসুলের সা. কাহিনি শুনেছেন তন্ময়চিত্তে তখন কিন্তু দেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধুর গুণবাচক কাব্য করা হয়নি। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনাও তখন বন্ধুরাষ্ট্রে আস্রিত! ‘বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি জাতীয়বাদ’ তখন লাটে। ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বঙ্গবন্ধু’ ঠিকই ড. ওয়াজেদ আলীর সঙ্গে বার্লিন ওয়ালে! তো আগস্টের মৌসুমে হল্লা সৃষ্টি হয় দেশের সর্বস্তরে পথ-ঘাটে। বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবাষির্কী রাজনৈতিক ও সংস্কৃতিক অফিসিয়াল প্রোগ্রামকে যথেষ্ট খেলো মনে হয়! ভাবখানা দেখলে ঠাওর হয় সময়টা বাকশাল না হলেও বাহাত্তরের হাওয়া বইছে ধানের শীষে!
অপ্রাসঙ্গিকভাবে উল্লেখ্য, যাতে দলের শক্তি পুনরুদ্ধারে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত ভাবমূর্তি ব্যবহার করা থেকে আওয়ামী লীগকে বিরত রাখার জন্যেই ‘রাজনৈতিক দলবিধি’তে এই পরিবর্তন আনা হয়েছিল।
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ ৩ সেপ্টেম্বর ১৯৭৬ সরকারি অনুমোদনের জন্য আবেদন করে। ঘোষণাপত্রে আওয়ামী লীগ ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি উল্লেখ করেছিল। তৎকালীন জেনারেল জিয়াউর রহমান সরকার আওয়ামী লীগকে অনুমোদন দিতে অস্বীকার করে। পরে আওয়ামী লীগ ঘোষণাপত্র থেকে ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটি বাদ দিয়ে আবার আবেদন করলে ৪ নভেম্বর ১৯৭৬ দলটিকে অনুমোদন দেয়া হয়।
^উপরে যেতে ক্লিক করুন