চলুন দেখি শেখ মুজিব কেন জাতীর পিতা,



জামায়াত ভক্তরা প্রায়শইজাতির পিতাইস্যুতে জনগণকে বিভ্রান্ত করে থাকে। তাদের মতে – “আমরা মুসলিম, আর মুসলিম জাতির পিতাহলেন হযরত ইবরাহীম (আঃ),
বঙ্গবন্ধু আমাদের জাতির পিতা হতে পারেন না।আসলেই কি তাই?চলুন ব্যবচ্ছেদ করি . . . জাতি বলতে কী বুঝায়?জাতি বলতে কোন একক অংশকে বুঝায় না।জাতির বহুরূপতা আছে।যেমনঃ দেশ জাতি,ভাষা জাতি,ধর্ম জাতি,বর্ণ জাতি,গোত্র জাতি, প্রভৃতি।আমরা এক এক জন মানুষ একই সাথেবহুজাতির মধ্যে অর্ন্তভুক্ত।যেমনঃ আমি দেশজাতি হিসেবে একজন বাংলাদেশি,ভাষা জাতি হিসেবে একজন বাঙ্গালি,ধর্ম জাতি হিসেবে একজন মুসলিম/হিন্দু,বর্ণ জাতি হিসেবে একজন শ্বেতাঙ্গ/ কৃষ্ণাঙ্গ ইত্যাদি।এত গুলোবিভাজিত জাতির মধ্যে যে যে অংশে যে নেতার অবদান সে সেঅংশে বা গন্ডিতে তিনিই জাতির পিতা।সে ক্ষেত্রে কেউ কারও স্ব স্ব অবস্থান ছেড়ে অন্যের অবস্থান কেরে নিতে যাবেন না।যে জাতিতে আমি মুসলিম সে জাতির

আঙ্গিকে আমার জাতির পিতা হযরত ইব্রাহিম (:) এবং যে জাতিতে আমি একজন বাঙ্গালি সে জাতির আঙ্গিকে আমার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর বহমান,এই কথাটি আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি।আসুন ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে দেখা যাক,বঙ্গবন্ধুকে বাঙ্গালি জাতির জনকবললে ক্ষতি আছে কিনা?আল্লাহ তালা বলেছেন
ﺲَﻣّﺎﻜُﻣُ ﻼْﻤُﺴْﻠِﻤِﻴﻧَ ﺄَﺒِﻴﻜُﻣْ ﺈِﺑْﺭَﺎﻬِﻴﻣَ ۚ ﻩُﻮَﻤّﻟّﺓَ
অর্থাৎ- তোমরা তোমাদের পিতা ইব্রাহিমের দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক। তিনিই তোমাদের কে মুসলিম নাম প্রদান করেছেন পূর্বেও আর
পরেও।সূরা- আল হাজ্জঃ ৭৮)
এখানে উল্লেখ্য যে, দ্বীন দ্বারা ধর্মকে বুঝায়।তাই এখানে ইব্রাহীম(আঃ) এর সাথে পিতা,ধর্ম,এবং মুসলিম।এই তিনটি শব্দ স্পষ্ট উল্লেখ আছে।যার অর্থ দাঁড়ায় মুসলিম ধর্মের জাতির পিতা।আল্লাহ তালা মহাজ্ঞানী; তিনি ভাল ভাবেই জানেন জাতি কোন একক বিষয় নয় তাই তিনিমুসলিমীনকথা উল্লেখ করে জাতিগত
বিভেদ দূর করেছেন।তাই এই নিয়ে বিতর্কের কোন স্থান নেই।আমাদের মধ্যে যদি কেউ বঙ্গবন্ধূকে এই বলে জাতির পিতা বলতে অস্বীকার করে যেইব্রাহীম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু নয়।সে মূলত না বুঝেই একথা বলল।এবং কোরআনেরসঠিক ব্যাখ্যা বুঝল না।মুসলিম বহুদেশে তাদের জাতির পিতা আছে।যেমনঃ- পাকিস্থানের জাতির পিতা (বাবা-- কওম) কায়েদে আজম জিন্নাহ।বলা বাহুল্য জামাতীরা এখন বঙ্গবন্ধুকে জাতির পিতা বলতে নারাজ, কিন্তু তারা কায়েদে আজম জিন্নাহ কে খুব জাতির পিতা মেনেছেন। তখন
ধর্ম যুক্তি কিছুই প্রয়োজন হয় নি। হা হা হা।আবার আমরা দেখব পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় মুসলিম দেশ ইন্দোনেশিয়াতে জাতির পিতা হলেন জনাব সূকর্ণ সাহেব।ইরানের মত এত বড় ধর্মীয় অনুশাসনের দেশেও জাতির
পিতা আছেন,আর তিনি হলেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয়নেতা হযরত
আল্লামা আয়েতুল্লাহ খামেনী (রহঃ)তিনি হাদিস কোরআনে প্রচুর ধারণা রাখতেন।সেখানে কোন ধর্মীয় বিরোধ নেই জাতির পিতা মানার ক্ষেত্রে। একমাত্র ইউরোপিও মুসলিম দেশ তুর্কিস্থান,সেখানে জাতির পিতা কামাল আতাতুর্ক পাশা। ফিলিস্তিন,যে দেশ ইহুদি দ্বারা আক্রান্ত , সে দেশের
জাতির পিতা হলেন ইয়াসির আরাফাত। সংযুক্ত আরব আমিরাতেশেখ যায়েদ বীন সুলতাননাহিয়্যান,আফগানিস্তানে মুহাম্মাদ জহীর শাহ্।ঠিক এভাবেই আরও অনেক মুসলিম দেশেই জাতির পিতা আছে,মানা হয়।অন্যান্য মুসলিম দেশের মতই আমাদের দেশের জাতির পিতা হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমান।এতে কোন ভাবেই ধর্মীয় বিরোধ নেই।তবে কোন জাতি তা উল্লেখ করতে হবে।আর তা হলো বাঙ্গালি জাতি।আমাদের বলতে হবে,”বাঙ্গালী জাতির জনক তথা বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর
রহমান।এখানে তুলনা করা বা না মানা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ভিত্তিহীন। কারন নবী-রাসুলগণের সাথে কারোরই তুলনা চলে না।কিন্তু জামায়াত শিবির এই বিষয়টির ভুল ব্যাখ্যা করে মুসলমানদের বিভ্রান্ত করতে চায়।আল্লাহ পাক আমাদেরকে বোঝার তৈফিক দিন।

আমিন . . .

^উপরে যেতে ক্লিক করুন