রেলওয়ে খাতের উন্নয়নকল্পে সরকারের পাঁচ বছর মেয়াদী কর্মপরিকল্পনা


যাত্রীসেবার মান উন্নয়নের মাধ্যমে ট্রেনকে একটি শক্তিশালী গণপরিবহন হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে আগামী ৫ বছরের কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে সরকার। এর মধ্যে অর্ধশত স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘ মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা রয়েছে। এসব বাস্তবায়নের জন্য একটি খসড়া কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। অতি দ্রুত এই কর্মপরিকল্পনা চূড়ান্ত করা হচ্ছে বলে রেলওয়ে সূত্র জানায়। এ পরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নে প্রকল্পভিত্তিক কমিটি গঠন করতে যাচ্ছে সরকার।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, পাঁচ বছর মেয়াদি নতুন কর্মপরিকল্পনার ২১টি স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা রয়েছে। যা ২০১৫ সালের জুনের মধ্যে সম্পন্ন করা হবে। মধ্য মেয়াদে ২২টি কার্যক্রম ২০১৬ সালের মধ্যে বাস্তবায়ন করা হবে। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি আরও ৬টি কার্যক্রম বাস্তবায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এ ব্যাপারে রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. তোফাজ্জল হোসেন জানান, রেলের যাত্রীসেবার মানোন্নয়ন এবং রেলওয়ের কাজের দৃশ্যমান উন্নয়নের জন্য নতুন করে কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তা চূড়ান্ত করা হয়নি। তবে দুই এক দিনের মধ্যে তা চূড়ান্ত করা হবে উল্লেখ করেন।
কর্মপরিকল্পনা অনুযায়ী, স্বল্পমেয়াদে রেলের সব শ্রেণীর শূন্য পদে নিয়োগের ব্যবস্থা করা, নতুন পদ সৃষ্টি ও নিয়োগ দেয়া, রেলওয়ের অর্গানোগ্রাম ও নিয়োগ বিধি চূড়ান্ত করা, বন্ধ স্টেশন চালু, ট্রেন দুর্ঘটনা রোধে লুপ লাইন সংস্কার, ২ হাজার ৫০০ চেয়ার কোচের সিট পরিবর্তন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা, ২০০ কোচ রং করা, টঙ্গী-ভৈরব বাজার ও লাকসাম-চিনকি আস্তানা ডাবল লাইন নির্মাণ সম্পন্ন করা, চট্টগ্রাম স্টেশন রিমডোলিং, ২০ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যান সংশোধন, ক্যাটারিং সেবা উন্নত ও ট্রেনের ভেতরে পরিষ্কার-পরিচ্ছতা বৃদ্ধি করা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
মধ্যমেয়াদে ঢাকা-চট্টগ্রাম ডাবল লাইন সম্পন্ন করা, প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা, ওয়ার্কসগুলো উন্নয়ন, সরকারের অর্থে নতুন ১০টি ইঞ্জিন সংগ্রহ, চলমান ১৭টি প্রকল্প দ্রুত সম্পন্ন করা, এডিবির অর্থায়নে ১০০টি এমজি এবং ৫০টি বিজি যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহ, ভারতীয় রাষ্ট্রীয় ঋণে ১২০টি ব্রডগেজ যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহ, ভারতীয় ডলার ক্রেডিট লাইনের বিপরীতে দ্বিতীয় ভৈরব এবং দ্বিতীয় তিতাস সেতু নির্মাণ, বিভিন্ন সেকশনে ৩৮টি সিগনালিং ও ইন্টারলকিং ব্যবস্থা আধুনিকীকরণ, ঈশ্বরদী হতে ঢালারচর ৭৮ দশমিক ৮০ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ, টঙ্গী-জয়দেবপুর সেকশনে ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন এবং আখাউড়া-লাকসাম ডাবল লাইন নির্মাণ, গাজীপুরে ধীরাশ্রমে আইসিডি নির্মাণসহ ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার অবশিষ্ট কাজ সম্পন্ন করা।
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে ভারতীয় রাষ্ট্রীয় ঋণের আওতায় কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশনের রেললাইন পুনর্বাসন এবং খুলনা হতে মংলা পর্যন্ত রেললাইন নির্মাণ, দোহাজারী-কক্সবাজার এবং রামু-মায়ানমারের গুনদুম পর্যন্ত ১২৮ মিটারগেজ ট্র্যাক নির্মাণ, সাপ্লায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় ৭০টি লোকোমোটিভ সংগ্রহ, টেন্ডারার্স ফিন্যাসিংয়ের আওতায় ২০০টি এমজি যাত্রীবাহী কোচ সংগ্রহ, ঢাকা-কুমিল্লা এলিভেটেড কর্ড লাইন নির্মাণ, বগুড়া-সিরাজগঞ্জ-রায়পুর-সদানন্দপুর পর্যন্ত মিটারগেজ লাইন নির্মাণ এবং বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরালে পৃথক রেলসেতু নির্মাণসহ রেলওয়ের প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ও মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী নির্ধারিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন উল্লেখযোগ্য।
২০১৪ সালে টানা দ্বিতীয় বারের মত সরকার গঠন করার পর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রেলওয়ে খাতের উপর ব্যাপক গুরুত্ব আরোপ করে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সরকার এই নতুন কর্মপরিকল্পনা গুলো গ্রহণ করেছে এবং এগুলো ধীরে ধীরে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এগুলো সম্পূর্ণ রুপে বাস্তবায়ন হওয়ার পর রেলওয়ে খাতের ব্যাপক উন্নয়ন হবে বলে আশা করা যায়
^উপরে যেতে ক্লিক করুন