- প্রকাশ করা হয়েছে বুধবার, 02 এপ্রিল 2014 15:08
২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের তৈরিপোশাক শিল্পের রপ্তানি তিনগুন বৃদ্ধি পাবে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে মার্কিন ও ইউরোপীয় ক্রেতাদের সাথে সাথে নতুন ক্রেতারাও এই দেশের বাজারে প্রবেশ করতে ইচ্ছুক এবং তারা বাংলাদেশকে দ্বিতীয় চীন হিসেবে দেখছে।
২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিলের রানা প্লাজার ঘটনার পর থেকে সরকার, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা এবং আন্তর্জাতিক ক্রেতারা দেশের পোশাক শিল্পে কাজ করার পরিবেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। নতুন ওয়েজ বোর্ড প্রণয়নের ফলে শ্রমিকদের বেতন নিয়ে যা অসন্তোষ ছিল তাও দূর হয়েছে।
তৈরি পোশাক শিল্প বাংলাদেশের জন্য আশির্বাদ, যেন সোনার ডিম পাড়া হাঁস। বাংলাদেশ বর্তমানে সারা বিশ্বে দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরিপোশাক রপ্তানিকারক দেশ। চীনের পরই এর অবস্থান।
মাত্র নয়টি কারখানা নিয়ে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ এই সম্ভাবনাময় শিল্পে প্রবেশ করে এবং ৬৯ হাজার মার্কিন ডলার আয় করে। গত তিন দশকে এই শিল্পে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। সরকারের নীতিগত পৃষ্ঠপোষকতা, ব্যক্তিগত উদ্যোক্তাদের সক্রিয়তা এবং সর্বোপরি শ্রমিকদের কঠোর পরিশ্রমের কারনেই এই সাফল্য এসেছে।
বর্তমানে বাংলাদেশে তৈরিপোশাক শিল্পের কারখানা আছে ৬ হাজারেরও বেশি এবং রপ্তানি আয় ২০০ কোটি মার্কিন ডলার ছাড়িয়ে গিয়েছে। ১৪৮টি দেশে নিট গার্মেন্টস ও ১৩২ টি দেশে ওভেন গার্মেন্টস পন্য রপ্তানি করছে বাংলাদেশ।
পোশাক কারখানাগুলোতে বর্তমানে ৪০ লক্ষ জনবল নিয়োজিত আছে যার ৮০ শতাংশেরও বেশি নারী শ্রমিক। দেশের মোট রপ্তানির ৭৮ শতাংশ আসে এই পোশাক শিল্প থেকে। উৎপাদন খাতে নিয়োজিত জনবলের মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশই হল পোশাক শ্রমিক।
বর্তমানে বিশ্বের প্রধান তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ চীন বর্তমানে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন। বেড়ে যাচ্ছে শ্রমের মূল্য । চীনের শ্রমিকদের উৎপাদন ক্ষমতা গত দুই দশকে ৭ শতাংশ থেকে ১৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এর ফলে চীন সরকার ও কারখানা মালিকরা শ্রমিকদের বেতন বাড়াতে বাধ্য হচ্ছে। বেতন ও অন্যান্য সুবিধাদি বৃদ্ধির ফলে ভোগ্যপণ্য উৎপাদনে সর্বনিম্ন খরচের অবস্থান থেকে সরে আসছে চীন।
বাংলাদেশে মাথাপিছু উৎপাদন খরচ ১০৭.৬৫ মার্কিন ডলার, যেখানে চীনের খরচ হয় ১৪৭ মার্কিন ডলার এবং ভারতের খরচ হয় ১৬৩.৪৪ মার্কিন ডলার।
আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই বাংলাদেশ চীনে ১ বিলিয়ন ডলার মূল্যের তৈরী পোশাক রপানি করতে সক্ষম হবে। ২০২০ সালের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ৬৫০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের পোশাকের চাহিদা সৃষ্টি হবে যার মধ্যে বাংলাদেশ ৪৪.৫৬ বিলিয়ন ডলার অবদান রাখতে পারবে।
একটি জরিপে বলা হয়েছে ২০২০ সালের মধ্যে ইউরোপীয় ও মার্কিন ক্রেতারা তাদের পন্যের মূল্যের রক্ষিত অংশ থেকে বাংলাদেশের অংশভাগ ২০ শতাংশ থেকে ৩২ শতাংশে উন্নীত করতে আগ্রহী।
দেশের কারখানা ও প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে আরও দক্ষতা ও সুস্থ প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি করতে কিছু ক্ষেত্রে মনোযোগ প্রয়োজন। যেমন উৎপাদন ও বণ্টনের সময়, ক্রেতাদের আচরনবিধির প্রতিপালন এবং পন্য/বাজারের মিশ্রণ।