আমি বাঙালী, আমি মানুষ, আমি মুসলমান- একবার মরে, দুইবার না…

১০ জানুয়ারি, ১৯৭২। আমাদের স্বাধীনতাকে পূর্ণতা দিতে এদিন পাকিস্তানি কয়েদ থেকে দেশে ফিরলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিনই টইটুম্বুর রেসকোর্সে তার বন্দীদশার বিবরণ দিতে গিয়ে শিরোনামের কথাগুলো বলেছিলেন। সম্ম্ভাব্য মৃত্যু নিয়ে তার সম্পূরক কথাগুলো ছিলো- আমি হাসতে হাসতে যাবো, আমার বাঙালী জাতিকে অপমান করে যাবো না, তোমাদের কাছে ক্ষমা চাইবো না, এবং যাবার সময় বলে যাবো- জয় বাংলা, স্বাধীন বাংলা, বাঙালী আমার জাতি, বাংলা আমার ভাষা, বাংলার মাটি আমার স্থান।

পাকিস্তানী ঘাতকেরা সেবার পারেনি। পেরেছে আরো বছর চারেক পর। ১৫ আগস্ট এক নৃশংস হত্যাকান্ডের মধ্য দিয়ে আমরা হারিয়েছি আমাদের জাতির পিতাকে। দু’মেয়ে ছাড়া ওই নির্মম মৃত্যুযজ্ঞে তার সঙ্গী হয়েছিলো গোটা পরিবার। দীর্ঘ প্রশাসনিক কবচে খুনীরা সদম্ভে ঘুরে বেড়ালেও একসময় শেষ হয়েছে খেলা। ধরা পড়েছে অনেকেই, ফাসির দড়ির অপেক্ষায় সময় কাটছে তাদের। বাকিরা পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে কেউ লিবিয়ায়, কানাডায় কিংবা পুনঃ নাগরিকত্বের স্বদেশে। হত্যা মামলার রায় নিয়ে নতুন কি আর বলবো। তার চেয়ে উদযাপন করি ঐতিহাসিক কিছু উপাত্ত দিয়ে। যেসব জারজ ও তাদের উত্তরসূরীরা তার মহানুভবতার সুযোগে বেচে গিয়ে এখন তাকেই গালি দেয়, তার নিন্দা করে তাদের জন্য একদলা থু থুর বেশী কিছু বেরোয় না আমার মুখ দিয়ে।
দেশে ফেরার ক’দিন পর ব্রিটিশ টিভি সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট বঙ্গবন্ধুর একটি সাক্ষাতকার নিয়েছিলেন, যা সম্প্রচারিত হয়েছিলো জানুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহেই। দূর্লভ এই সাক্ষাতকারটির ঐতিহাসিক মূল্যমান অনেক। এখানেই বঙ্গবন্ধু প্রথমবারের মতো মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা তিরিশ লাখ বলে উল্লেখ করেছিলেন। খুনে পাকিস্তানীদের গণহত্যার দায়ে অভিযুক্ত করে বিশ্ব নেতৃত্বকে আহ্বান জানিয়েছিলেন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের।
গাড়ীতে শুরু, গণভবনের লনে শেষ হওয়া এই সাক্ষাতকারে দূর্দান্ত কিছু কথা বলেছিলেন। পাকিস্তানীদের অভিশাপ, নিরন্কুশ ক্ষমতা দূর্নীতির জন্ম দেয় এমন একটি প্রশ্নের জবাব, যু্দ্ধাপরাধ, দেশ গড়া নিয়ে তার অভিমতের পাশাপাশি রাজনৈতিক জীবন, বাঙালীর প্রতি তার মমতার অসাধারণ এক প্রামান্য দলিল এটি। দৈর্ঘ্যের কারণে দু পর্বে ভাগ করেছি, ওজন কমাতে কনভার্ট করেছি ফ্লাশ ভিডিওতে। সঙ্গে আরো দুটো ফুটেজ। একটি বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর আগে শেষ জনসভায় দেওয়া ব্ক্তৃতার অংশবিশেষ। অন্যটি তার হত্যাকারীদের নেতৃত্বে থাকা কর্ণেল ফারুক ও রশীদের একটি সাক্ষাতকারের ফুটেজ। ১৯৭৬ সালের আগস্টে সাক্ষাতকারটি নিয়েছিলেন অ্যান্থনি মাসকারেনহাস। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরে সংঘটিত গণহত্যার সংবাদ বিশ্বকে জানান দেওয়া বিখ্যাত এই সাংবাদিককে দেওয়া এই সাক্ষাতকারে মুজিব হত্যায় জিয়াউর রহমান ও খন্দকার মোশতাক আহমেদের ভূমিকা নিয়ে কয়েক ছত্র অমূল্য বয়ান রয়েছে খুনীদের তরফে।
ডেভিড ফ্রস্টকে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাতকার ১ম পর্ব :
ডেভিড ফ্রস্টকে দেওয়া বঙ্গবন্ধুর সাক্ষাতকার ২য় পর্ব :
বঙ্গবন্ধুর শেষ জনসভার ফুটেজ ও বক্তৃতার অংশ :
খুনী ফারুক-রশীদের সাক্ষাতকারের অংশবিশেষ :
^উপরে যেতে ক্লিক করুন