বৈদেশিক সম্পর্কঃ শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষায় বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থান


জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ, ‘সকলের সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরীতা নয়’, এই মতবাদে বিশ্বাসী হয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ আজ বিশ্বে শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষায় আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মূল্যবোধ সমৃদ্ধ একটি সমন্বিত কার্যকর ও সুসংহত পররাষ্ট্র নীতি এবং কুটনৈতিক কুশলতার মাধ্যমে বাংলাদেশ আজ বিশ্বাঙ্গনে উজ্জ্বল ভাবমূর্তি অর্জন করেছে।
জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতির দেশ হিসেবে নেতিবাচক পরিচয় ঘুচিয়ে বাংলাদেশ আজ অগ্রসরমান, গণতান্ত্রিক,
অসাম্প্রদায়িক ও মানবাধিকার রক্ষাকারী দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
দেশের স্বার্থ সংরক্ষন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন, বৈদেশিক বানিজ্য ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি, শ্রমবাজার সম্প্রসারন ছাড়াও দক্ষিন এশিয়াসহ সারা বিশ্বে শান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের অবস্থান জাতিসংঘসহ সর্বত্র প্রশংসিত হয়েছে।
২০১১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বাংলাদেশ এক বিরল সম্মান অর্জন করে। জাতিসংঘের ৬৬তম অধিবেশনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা বিশ্বের জন্য একটি শান্তির মডেল উপস্থাপন করেন যার মূল প্রতিপাদ্য ছিল “জনগণের ক্ষমতায়ন ও উন্নয়ন”। এই মডেলকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ রেজুলেশন হিসেবে গ্রহণ করেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ ১৯৭১ সালের পর আরেকবার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মাথা তুলে দাঁড়ায়।
২০১২ সালের ১৪ই মার্চ নিজের সমুদ্র সীমায় পুর্ন অধিকার লাভ করে বাংলাদেশ। জার্মানীর হামবুর্গে অবস্থিত International Tribunal for Law of the Seas (ITLOS) বাংলাদেশ-মিয়ানমারের সমুদ্রসীমা নির্ধারনী মামলার রায়ে ১২ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় জলসীমা, পূর্ণ ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত একচ্ছত্র অর্থনৈতিক এলাকা এবং ২০০ নটিক্যাল মাইলের উর্ধ্বে মহীসোপানের সমুদ্র সম্পদের উপর বাংলাদেশ সার্বভৌম অধিকার অর্জন করে। এই গুরুত্বপুর্ন সমুদ্র বিজয়ের ফলে বঙ্গোপসাগরের ১ লক্ষ ১১ হাজার ৬৩১ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় বাংলাদেশের একচ্ছত্র অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়
‘তিন বিঘা করিডোর’-এর একটি শান্তিপুর্ন মীমাংসায় পৌঁছায় বাংলাদেশ-ভারত। দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার জনসাধারণের অবাধ ও নিরাপদ চলাচলের জন্য এই করিডোরকে ২৪ ঘন্টা উন্মুক্ত রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এই সিদ্ধান্তের ফলে এই জনপদের মানুষেরা এখন ব্যবসা-বানিজ্য, দৈনন্দিন চাহিদা মেটানো ও অন্যান্য কাজে সহজেই যাতায়াত করতে পারছে।
জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় প্রত্যক্ষ ভুমিকা পালন করছে। জাতিসংঘের ডাকে সবার আগে সাড়া দেয় বাংলাদেশের অকুতোভয় সৈনিকেরা। ২০১২ সালে যখন সিরিয়ার টালমাটাল যুদ্ধপরিস্থিতি সামাল দিতে অন্যান্য দেশ দ্বিধাবিভক্ত, তখন বাংলাদেশ সবার আগে এগিয়ে গিয়েছে। লাইবেরিয়া ও কঙ্গো থেকে ৫ জন পর্যবেক্ষককে বাংলাদেশ সিরিয়াতে জাতিসংঘের মিশনে পাঠানোর জন্য সম্মত হয়। অতি অল্প সময়ে লাইবেরিয়া থেকে সিরিয়াতে যোগ দেয় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ২ জন লেফটেন্যান্ট কর্নেল। পরবর্তীতে বাংলাদেশ থেকে সমস্যাসঙ্কুল সিরিয়াতে ১৫ দিনের মধ্যে নিয়োগের জন্য প্রথমে ৯ জন পর্যবেক্ষক ও পরে ৬ জন পর্যবেক্ষককে প্রস্তুত করা হয়। অতি অল্প সময়ে দারফুরে সেনাবাহিনীর একটি সেক্টর রিজার্ভ কোম্পানি ১ মাসের মধ্যে নিয়োগের প্রস্তাব সানন্দে গ্রহণ করে বাংলাদেশ। সেনাবাহিনীর শ’খানেক কমান্ডো সৈনিককে জাতিসংঘের কাজে নিবেদিত হওয়ার জন্য প্রস্তুত করে বাংলাদেশ সরকার। বিশ্বশান্তি রক্ষায় সরকারের এরকম দায়িত্বশীল ভূমিকা সারা পৃথিবীতে বেশ প্রশংসা লাভ করে।
এছাড়া, সারা বিশ্বে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে ‘জিরো টলারেন্স’, জাতিসংঘসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার সাথে একযোগে কর্মকান্ড পরিচালনা, সার্ক চার্টার অফ ডেমোক্র্যাসি প্রণয়ন, সন্ত্রাস নির্মুলে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গৃহীত ১২টি কনভেনশন ও প্রটোকলের অংশীদার হিসেবে কর্মকান্ড পরিচালনা করছে সরকার।
২০৫০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত বিশ্বের কাতারে তুলে ধরার প্রতিশ্রুতি নিয়ে বর্তমান সরকার গঠন করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দুর্নীতিপরায়ণ, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের দেশ হিসেবে পরিচয় ঘুচিয়ে ইতোমধ্যে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় ও কল্যাণকামী দেশ হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শুরু করেছে। দেশের অভ্যন্তরে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদ, ধর্মীয় জঙ্গিবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদী কোন শক্তিকে প্রশ্রয় না দেওয়ার প্রতিজ্ঞা রক্ষায় সবরকম ব্যবস্থা গ্রহন এবং ইতোমধ্যে গৃহীত পদক্ষেপগুলো অব্যাহত রাখা হবে। বিশ্বে শান্তি বজায় রাখতে এবং সকল বৈরিতা দূর করতে বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে।
^উপরে যেতে ক্লিক করুন