সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীঃ দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশের স্বপ্ন পূরণ


দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অর্থনৈতিক ও সামাজিক দুর্দশা লাঘবে একটি সংহত ও সম্প্রসারিত সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী অন্যতম হাতিয়ার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের মানুষের দুর্দশা লাঘবে রেশন, খোলাবাজারে ভোগ্যপণ্য বিক্রি ও রিলিফ বিতরণ কর্মসুচীর মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসুচী চালু করেন। তাই, রূপকল্প-২০২১ এর অন্যতম লক্ষ্য, দারিদ্র্য বিমোচন, অর্জনের লক্ষ্যে আওয়ামী লীগ ও সরকার জাতির পিতার আদর্শিত পথ অনুসরন করছে। ১৯৯৬ সরকারের সময় বৃদ্ধ, দুঃস্থ নারী ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ভাতা প্রদান কর্মসূচী চালু করে। সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও বৈষম্য মুক্ত শান্তিপূর্ণ সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী ও উপকারভোগীর সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে।

সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে ব্যয় প্রতি বছর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে ১৬ হাজার ৭০৬ কোটি টাকা থেকে বর্তমান অর্থবছরে ব্যয় ২২ হাজার ৭৫০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।
সামাজিক সুরক্ষামূলক কর্মসূচীর আওতায় বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, স্বামী পরিত্যক্তা ও দুস্থ ভাতা, পঙ্গু, প্রতিবন্ধী ও অসহায়দের জন্য ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানী, ভর্তুকি মূল্য খোলা বাজারে খাদ্য পণ্য বিক্রি, ভিজিডি, বিজিএফ, টেস্ট রিলিফ, কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচীর আওতায় খাদ্য সহায়তা, কর্মসংস্থান এর সুযোগ সৃষ্টি ইত্যাদি কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা হয়েছে
একটি বাড়ী একটি খামার প্রকল্পের মাধ্যমে দেশের ৬৪টি জেলার ৪৮৩টি উপজেলার ১৯৩২টি ইউনিয়নের ১৭ হাজার ৩৩৮ টি গ্রামে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর ফলে প্রায় ১১ লক্ষ পরিবার সরাসরি উপকৃত হচ্ছে। এইসব পরিবারের নিজস্ব মুলধন গড়ে উঠেছে ১ হাজার ৩৪৪ কোটি টাকা।
৫৮ হাজার ৭০৩টি ভুমিহীন, গৃহহীন ও ছিন্নমূল পরিবারকে আশ্রয়ন প্রকল্প-১ এর মাধ্যমে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। ২০১২-১৩ অর্থবছরে হাতে নেওয়া হয় আশ্রয়ন প্রকল্প-২ যার মাধ্যমে আইলা ও সিডরে ক্ষতিগ্রস্ত ৫,৪২৫টি পরিবারকে পুনর্বাসিত করা হয়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জীবিকায়নের লক্ষ্যে সারাদেশে ৩০ হাজার ৪০০ পরিবারের মধ্যে ১৭ হাজার ৭২০ একর কৃষিজমির বন্দোবস্ত প্রদান করেছে সরকার।
বার্ধক্যের কারনে শারীরিক পরিশ্রমে অক্ষম ভুমিহীন ও বিত্তহীন দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে আর্থিক সহায়তা প্রদানের জন্য সরকার বয়স্ক ভাতা চালু করেছিলো। এই কর্মসুচীর আওতায় ২০১২-১৩ অর্থবছরে ২৪ লক্ষ ৭৫ হাজার ব্যক্তিকে সর্বমোট ৮৯১ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে।
এছাড়াও বিধবা ও স্বামী পরিত্যাক্ত দুস্থ মহিলা ভাতা ভোগীর সংখ্যা ৯ লক্ষ ২০ হাজারে এবং অসচ্ছল প্রতিবন্ধী ভাতা ভোগীর সংখ্যা ২ লক্ষ থেকে ২ লক্ষ ৮৬ হাজারে উন্নীত হয়েছে।
রূপকল্প ২০২১ অর্জনে এবং দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করতে আওয়ামী লীগ ও বর্তমান সরকার আগামী পাঁচ বছরে দারিদ্র্যের অনুপাত ১৫ শতাংশে এবং ২০২১ সালে ১৩ শতাংশে নামিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিবে। বর্তমান হার বজায় রাখতে পারলে এই লক্ষ্য অর্জন সম্ভব।
দারিদ্র্যপ্রবণ এলাকার জন্য সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসুচীর বিশেষ ব্যবস্থা এবং চলমান কর্মসূচীগুলো অব্যাহত রাখবে সরকার। ২০১৮ সালে বেসরকারী সকল প্রতিষ্ঠানে পেনশন ব্যবস্থা প্রচলন করার উদ্যোগ শুরু হবে। ২০২১ সালে সকলের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি জাতীয় পেনশন ব্যবস্থা চুড়ান্ত করা হবে।
দারিদ্র্যকে ‘যাদুঘরে’ পাঠানোর লক্ষ্যে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারলে বাংলাদেশ দারিদ্য ও পরনির্ভরশীলতার অপছায়া থেকে মুক্তি লাভ করবে। এরজন্য প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা ও নির্ভরযোগ্যতা।
^উপরে যেতে ক্লিক করুন