- প্রকাশ করা হয়েছে বৃহস্পতিবার, 07 আগস্ট 2014 17:02
প্রতিশ্রুতির পূর্ণতা
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটিয় সরকারের গত মেয়াদে (২০০৯ থেকে ২০১৩), ২০০৯ এর নির্বাচনী ইশতেহারের সকল প্রতিশ্রুতিই সফলভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের সার্বিক বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ছিল ৪৯৩১মেগাওয়াট। মাত্র ৫ বছরে এই উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় ১০৩৪১মেগাওয়াট, যার ফলে প্রায় ৬২% জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধা লাভ করে। এই অসামান্য সাফল্য এসেছে সরকারের সার্বিক বিদ্যুৎ ও জ্বালানী নীতির অংশ হিসেবে কিছু দীর্ঘমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটিয় সরকারের গত মেয়াদে (২০০৯ থেকে ২০১৩), ২০০৯ এর নির্বাচনী ইশতেহারের সকল প্রতিশ্রুতিই সফলভাবে বাস্তবায়ন হয়েছে। ২০০৯ সালে বাংলাদেশের সার্বিক বিদ্যুৎ উৎপাদনক্ষমতা ছিল ৪৯৩১মেগাওয়াট। মাত্র ৫ বছরে এই উৎপাদন ক্ষমতা বেড়ে দাঁড়ায় ১০৩৪১মেগাওয়াট, যার ফলে প্রায় ৬২% জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধা লাভ করে। এই অসামান্য সাফল্য এসেছে সরকারের সার্বিক বিদ্যুৎ ও জ্বালানী নীতির অংশ হিসেবে কিছু দীর্ঘমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে।
তাদের ২০০৯ এর ইশতেহারে, আওয়ামী লীগ
প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল রাষ্ট্রীয় বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ২০১১ সালের মধ্যে
৫০০০মেগাওয়াটে উন্নীত করবে এবং ২০১৩ সালের মধ্যে তা হবে ৭০০০মেগাওয়াট।
পরিসংখ্যানে স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে, সরকার অত্যন্ত সফলভাবে এই
লক্ষ্যমাত্রাগুলো অর্জন করেছে এবং তা ছাড়িয়ে যাবারও নজীর স্থাপন করেছে।
এই রিপোর্টে, আমরা সরকারের বিদ্যুৎ উৎপাদনের সার্বিক নীতি এবং কার্যকলাপের
আলোচনা করবো।
বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা
২০০৯এ ক্ষমতা গ্রহণের অব্যবহিত পরেই,
বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুৎস্বল্পতা মোকাবেলায়, আওয়ামী নেতৃত্বাধীন
সরকার একটি ভবিষ্যতমুখি বিদ্যুৎ খাতের মহাপরিকল্পনা ২০১০ প্রণয়ন
করে। স্পষ্টভাবেই এতে পূর্ববর্তী ২০০৫ সালে প্রণীত বিদ্যুৎ খাতের
মহাপরিকল্পনা থেকে উন্নততর, যা মূলত গ্যাস চালিত পাওয়ার প্লান্টভিত্তিক
ছিল। দেশের গ্যাস সম্পদের অনিশ্চয়তার কারণে, আগের পরিকল্পনাটি অপ্রতুল
হিসেবে প্রতীয়মান হয়।
এই পিএসএমপি ২০১০ কয়লাকে প্রধানতম জ্বালানি ধরে ২০৩০ সাল পর্যন্ত একটি স্থিতিশীল জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে জ্বালানী সম্পদের বৈচিত্র্যকে বিবেচনায় নেয়া হয়। মহাপরিকল্পনাটি জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এর কারিগরী সহায়তায় তৈরি হয়েছিল এবং সরকার তার মনোনয়ন দেয় এই খাতের বিশেষজ্ঞ ও কর্তাব্যক্তিদের শলাপরামর্শের পরে।
এই পিএসএমপি ২০১০ কয়লাকে প্রধানতম জ্বালানি ধরে ২০৩০ সাল পর্যন্ত একটি স্থিতিশীল জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে জ্বালানী সম্পদের বৈচিত্র্যকে বিবেচনায় নেয়া হয়। মহাপরিকল্পনাটি জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এর কারিগরী সহায়তায় তৈরি হয়েছিল এবং সরকার তার মনোনয়ন দেয় এই খাতের বিশেষজ্ঞ ও কর্তাব্যক্তিদের শলাপরামর্শের পরে।
এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, ২০৩০ সালে
বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৩৪,০০০মেগাওয়াটের মতো আর উৎপাদন
ক্ষমতা তখন বেড়ে দাঁড়াবে প্রায় ৩৯,০০০ মেগাওয়াটের মতো। আর ২০৩০এর এই
৩৯,০০০মেগাওয়াট পাওয়া যাবে বিভিন্ন উৎস থেকে: দেশের কয়লাভিত্তিক
প্লান্টসমূহ (১১,২৫০ মেগাওয়াট), আমদানীকৃত কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্লাট
(৮,৪০০ মেগাওয়াট), দেশীয় গ্যাসচালিত পাওয়ার প্লান্ট (৮,৮৫০মেগাওয়াট),
নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্লান্ট (৪০০০ মেগাওয়াট) এবং তেল, পানিভিত্তিক এবং
নবায়নযোগ্য শক্তি উৎসগুলো থেকে (২,৭০০ মেগাওয়াট)।
"ভিশন ২০৩০: বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎ উন্নয়ন কৌশল"
এই ইপ্সিত মাত্রার বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যে, পিএসএমপি ২০১০ "ভিশন ২০৩০: বাংলাদেশের জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিদ্যুৎ উন্নয়ন কৌশল"
কে সার্বিকভাবে ধারণ করে, যার লক্ষ্য হচ্ছে একটি পাওয়ার নেটওয়ার্ক গঠনের
মাধ্যমে স্থিতিশীল এবং উচ্চমানের বিদ্যুৎ দেশের মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া,
যাতে সকলের জীবনযাত্রা হয় স্বচ্ছন্দ এবং সমৃদ্ধ। এই স্বপ্ন পূরণের
অর্জনের জন্য সরকার নিচের লক্ষ্যগুলো নির্ধারণ করেছে:
ক. সক্রিয়ভাবে দেশিয় প্রধান প্রধান শক্তির উৎসগুলো উন্নয়নের জন্য: এই লক্ষমাত্রা হচ্ছে আভ্যন্তরীণ প্রধান বিদ্যুৎ সরবরাহ ৫০% এর উপরে বজায় রাখা এবং আভ্যন্তরীণ প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লার উন্নয়ন।
খ. জ্বালানীর বৈচিত্র্য বাড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থা স্থাপন:
জ্বালানি ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০এর জন্য যেভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে:
কয়লা (৫০%); প্রাকৃতিক গ্যাস (২৫%); এবং অন্যান্য (২৫%)। এই
লক্ষ্যমাত্রাকে অগ্রগামী করবে: কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ;
তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) এর প্রবর্তন; তেলভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র
নির্মাণ; প্রতিবেশি রাষ্ট্রগুলো থেকে বা যুগ্মভাবে উৎপাদিত পানি বিদ্যুৎ
আমদানী; আভ্যন্তরীণভাবে নবায়নযোগ্য শক্তিসমূহের উন্নয়ন (বাতাস এবং
সৌরবিদ্যুৎ)।
গ. উচ্চ
কার্যক্ষমতার বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং নিম্ন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমণের
প্রযুক্তির প্রবর্তনের মাধ্যমে একটি নিম্ন কার্বন সমাজ গঠন:
এর লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে গড়পরতায় ১০ পয়েন্টের তাপীয় কার্যক্ষমতার
উন্নয়ন; উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উন্নয়ন;
আভ্যন্তরীণ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের উন্নয়ন; ও অ্যান্ড এম স্কিমের
পর্যালোচনা; বিদ্যুৎ সংরক্ষণ এবং চাহিদার পার্শ্ব ব্যবস্থাপনা।
ঘ. বিভিন্ন সেক্টরকে যুগ্মভাবে পরিচালনার মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো বিনির্মাণ:
এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত লক্ষ্যমাত্রা হচ্ছে যুগ্মভাবে বিদ্যুৎচালিত একটি
গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, শিল্প এবং বাণিজ্যিক সেক্টর; বিদ্যুৎ প্রেরণ
ব্যবস্থার উন্নয়ন; গ্যাস প্রেরণের লাইনসমূহের পরিবর্ধন; জ্বালানি কেন্দ্র
বিনির্মাণ; আভ্যন্তরীণ জলপথ এবং রেলওয়ে ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী উন্নয়ন।
ঙ. স্থিতিশীল বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার জন্য দক্ষ ও কার্যকর মেকানিজম, সংগঠন এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা:
লক্ষ্যমাত্রাটি হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি ও স্থিতিশীল বিদ্যুৎ সরবরাহের
নিরাপত্তার জন্য উপযুক্ত প্রতিষ্ঠান স্থাপন; সরকারের নেতৃত্বে
বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে নিয়মিত ও বাধ্যতামূলক নিরীক্ষার প্রবিধান প্রণয়ন ও
প্রয়োগ; প্লান্ট ও যন্ত্রপাতির ব্যবস্থাপনা ব্যয় এবং ভবিষ্যৎ বিনিয়োগ
তুলে আনবার জন্য শুল্ক ব্যবস্থার পুন:সংশোধন।
ইশতেহার ২০১৪
পিএসএমপি ২০১০কে মাথায় রেখে, দশম জাতীয়
নির্বাচন, যা ৫ জানুয়ারী ২০১৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে, আওয়ামী লীগ তাদের
ইশতেহারে বাংলাদেশের বিদ্যুৎখাত নিয়ে আরো কিছু প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
ইশতেহারে তারা আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের প্রতিটি ঘরে বিদ্যুৎ
পৌঁছে দেবার পরিকল্পনা করেছে। আর সেজন্য ২০১৬ সালের মধ্যে ১৬০০০মেগাওয়াট
বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা গৃহীত হয়েছে এবং ২০২১ সালের জন্য ২০,০০০
মেগাওয়াট। পরবর্তীতে তাকে সংশোধন করে শিল্পায়ন, বিদ্যুতের বর্ধিত চাহিদা
এবং সম্ভাব্য অধিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জনের সম্ভাবনাকে মাথায়
রেখে, ২০২১ সালের মধ্যে নতুন লক্ষ্যমাত্রা ২১,০০০ মেগাওয়াট নির্ধারণ করা
হয়েছে।
ইশতেহারে আরো অঙ্গীকার করছে:
ক) পার্শ্ববর্তী দেশসমূহ যেমন ভারত, নেপাল ও ভূটানের সাথে দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক এবং আঞ্চলিক সহযোগিতির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থার ভাগাভাগির সুযোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ এবং প্রস্তাব পাঠানো।
ক) পার্শ্ববর্তী দেশসমূহ যেমন ভারত, নেপাল ও ভূটানের সাথে দ্বিপাক্ষিক, ত্রিপাক্ষিক এবং আঞ্চলিক সহযোগিতির মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যবস্থার ভাগাভাগির সুযোগ গ্রহণের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ এবং প্রস্তাব পাঠানো।
খ) সৌরবিদ্যুতের সহজপ্রাপ্যতা আনয়নের মাধ্যমে এর ব্যাপক ব্যবহারের লক্ষ্যে ৩০ লাখ সৌর প্যানেল স্থাপন;
গ) রামপাল এবং রূপপুরের বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোকে পূর্বনির্ধারিত সময়ের মধ্যেই বিনির্মাণ;
ঘ) কয়লা সম্পদকে আরো সুলভ উপায়ে ব্যবহার নিশ্চিতকরণ এবং কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিমাণ ২০৩০ সালের মধ্যে ৫০%এ উন্নীত করা;
ঙ) ব্যবস্থাপনার কার্যক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বিদ্যুৎশক্তির অপচয় হ্রাস;
চ) বিদেশ থেকে এলএনজি আমদানী;
ছ) মহেশখালি দ্বীপে এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন।
বাজেট ২০১৪-১৫
মাননীয় অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায়, বর্তমান সরকারের ২০১৭ সালের মধ্যে বিদ্যুৎ সেক্টরে অর্জনের পরিকল্পনাসমূহের রূপরেখা দিয়েছেন:
• আভ্যন্তরীণ উৎপাদন বৃদ্ধির বাইরেও,
প্রতিবেশি ভারত, ভুটান এবং নেপালে সাথে দ্বিপাক্ষিক, বহুপাক্ষিক এবং
আঞ্চলিক সমঝোতার মাধ্যমে আও বিদ্যুৎ উৎপাদন এবং বণ্টনের উদ্যোগ গ্রহণ;
• ২০১৭ সালের মধ্যে উৎপাদন ক্ষমতা ১৮,১৬২ মেগাওয়াটে উন্নীত করা;
• ২০১৭ সালের মধ্যে ১৪২৬ মেগাওয়াট
ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন যার ফলে গ্যাস সম্পদের
উপর চাপ কমানো সম্ভব হবে যা এখন দেশের প্রায় শতকরা ৭৮ ভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনে
অবদান রাখছে।
• রূপপুরে ২০০০ মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষম দুটি নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন।
বর্তমান অগ্রগতি
সরকার ইতোমধ্যেই আওয়ামী লীগের ২০১৪ নির্বাচন ইশতেহার থেকে নিম্নলিখিত প্রতিশ্রুতিগুলো বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে:
১) প্রতিবেশিদের থেকে বিদ্যুৎ আমদানী:
বাংলাদেশ বর্তমানে ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানী করছে। ভারত
থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ চালু হয় গত বছরের অক্টোবরে যখন বাহারামপুর-ভেড়ামারা
সীমান্তভেদী বিদ্যুৎ সরবরাহের সংযোগটির স্থাপন শেষ হয়। বর্তমানে, দুটি
দেশের মধ্যে একটি যৌথ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা চালানো
হচ্ছে যাতে আরো ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের পালাটানা
গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হতে আমদানী করা যায়। ভারত থেকে ৫০০ মেগাওয়াট
আমদানীতে বাংলাদেশের জন্য ফি বছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকার সাশ্রয় হচ্ছে।
পানিচালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনে ভুটানের অমিত
সম্ভাবনা রয়েছে এবং এই ব্যাপারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্প্রতি
ভুটানের রাষ্ট্রদূতের সাথে সাক্ষাৎ করে ভুটান থেকে তাদের উদ্বৃত্ত বিদ্যুৎ
আমদানীর ব্যাপারে বাংলাদেশের পক্ষে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বাংলাদেশ নেপালকেও
বিদ্যুৎ আমদানীর জন্য সম্ভাব্য উৎস হিসেবে দেখছে। বাংলাদেশ নেপালের উচ্চ
করনালি পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে ৫০০ মেগাওয়াট এবং উচ্চ মারস্যাংদি-২ থেকে
৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ আমদানীর ব্যাপার আনুষ্ঠানিকভাবে নেপালকে প্রস্তাব
দিয়েছে।
২) সৌর এবং বায়ু শক্তি:
বাংলাদেশ সূর্য থেকে শক্তি সঞ্চয়কে আরো বেগবান করতে ২০১২ থেকে ২০১৬ সালের
জন্য একটি ব্যাপক প্রকল্প চালু করেছে। সুনামগঞ্জের সাল্লা উপজেলায় ৪০০
মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন একটি কেন্দ্র ইতোমধ্যেই নির্মাণাধীন রয়েছে।
এছাড়াও, কুড়িগ্রামের ধরলা নদীর তীরে আরেকটি ৩০ মেগাওয়াট পিভি
বিদ্যুৎকেন্দ্র ইতোমধ্যেই নির্মাণাধীন রয়েছে। সম্প্রতি, সরকার চট্টগ্রামের
রাউজানে দেশের সর্ববৃহৎ একক সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প, ৬০ মেগাওয়াট সৌর পার্ক
নির্মাণের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে।
বাংলাদেশ একটি বিশ্বরেকর্ড অর্জন করেছে
সবচেয়ে দ্রুত, প্রতি মাসে ৭০,০০০, সোলার হোম সিস্টেম (SHS) স্থাপনের
মাধ্যমে। উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় ইতোমধ্যেই ৩০ লাখ সিস্টেম স্থাপিত
হয়েছে। এই প্রকল্পের সাফল্যের কারণে, বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংক থেকে আরো ৭৮৪
লাখ ডলার সহজ ঋণ পেয়েছে।
অতি সম্প্রতি, বাংলাদেশ কক্সবাজারে ৬০
মেগাওয়াট উৎপাদনক্ষম, দেশের সর্ববৃহৎ বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের
জন্য, বাংলাদেশ, ডেনমার্ক এবং ইউএসএর যৌথ উদ্যোগে গঠিত ইউএস ডিকে গ্রীন
এনার্জি (বিডি) লিমিটেডের সাথে চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
সবুজ শক্তি বাস্তবায়নের পথে বাংলাদেশের সাফল্য সম্পর্কে আরো জানতে, এখানে ক্লিক করুন।
সবুজ শক্তি বাস্তবায়নের পথে বাংলাদেশের সাফল্য সম্পর্কে আরো জানতে, এখানে ক্লিক করুন।
৩) কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র:
কক্সবাজারের মাতাবারিতে বাংলাদেশের প্রথম কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র
স্থাপিত হতে যাচ্ছে। আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির সমন্বয়ে ১২০০
মেগাওয়াটের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি বাংলাদেশ সরকার এবং জাপান ইন্টারন্যাশনাল
কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা) এর যৌথ অর্থায়নে প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
প্রকল্পটি সরকারের কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড
(CPGCBL) এর আওতাধীনে নির্মিত হতে যাচ্ছে ৪০০০কোটি টাকার বেশি ব্যয়ে।
বাংলাদেশ আগামী বছর হতে, ১৩২০ মেগাওয়াটের
কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, "মৈত্রী সুপার থার্মাল পাওয়া প্রকল্প" চালু
করতে যাচ্ছে খুলনার রামপালে। বাংলাদেশ ও ভারতে যৌথ উদ্যোগে প্রকল্পটি
নির্মাণে খরচ পড়বে ১৪৫৮.৫ কোটি টাকা। আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল টেকনোলজীর
সমন্বয়ে এই প্রকল্পটি নির্মাণ করবে বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশীপ পাওয়ার
কোম্পানী।
বাংলাদেশ সম্প্রতি, দক্ষিণ-পূর্ব
সমুদ্রতীরের মহেশখালি দ্বীপে, যৌথ উদ্যোগে কয়লা চালিত ১৩২০ মেগাওয়াট
বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য, চায়না হুয়াডিয়ান কর্পোরেশনের অঙ্গ-সংগঠন
চায়না হুয়াডিয়ান হংক কোম্পানি লিমিটেডের সাথে একটি সমঝোতার স্বারকে
স্বাক্ষর করেছে।
৪) পারমানবিক বিদ্যুৎ:
বাংলাদেশ পাবনার রূপপুরে রাশিয়ার করিগরী সহায়তায় দুটো পারমানবিক বিদ্যুৎ
কেন্দ্র স্থাপনের কাজ শুরু করেছে, যার প্রতিটির উৎপাদন ক্ষমতা হবে ১০০০
মেগাওয়াট। এই দুটি কেন্দ্র থেকে ২০২০ সাল নাগাদ জাতীয় গ্রিডে ২০০০
মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। উপরন্তু, বাংলাদেশ
দেশের দক্ষিণাঞ্চলে দ্বিতীয় পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য
জাপানের সহায়তার জন্য ইতোমধ্যেই আলোচনা শুরু করেছে।
৫) তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি):
পাওয়ার সেক্টরের মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়নের খাতিরে, সরকার দুটি তরলীকৃত
প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) টার্মিনাল করার প্রক্রিয়া শুরু করেছে, যার ফলে
বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য বর্ধিত জ্বালানী চাহিদা মেটাতে অন্যান্য দেশ থেকে
এলএনজি আমদানী করার জন্য। গত ২৬ জুন, বাংলাদেশ, ইউএস অ্যাস্ট্রা ওয়েল এবং
এক্সেলারেট এনার্জি এর সাথে একটি খসড়া চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে
কক্সবাজারের মহেশখালি দ্বীপে বাংলাদেশের প্রথম সাগরমুখি এলএনজি টার্মিনাল
নির্মাণের জন্য। আরেকটি উপকূলবর্তী টার্মিনালও নির্মিত হবে যার জন্য পনেরটি
কোম্পানি বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ে ইতোমধ্যেই তাদের এক্সপ্রেশন অফ ইন্টারেস্ট
(ইওআই) জমা দিয়েছে।
ভবিষ্যত পরিকল্পনা
গত মেয়াদে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে সরকার
বিদ্যুৎ সেক্টরে তাদের প্রতিটি অঙ্গীকারই সাফল্যের সাথে আদায় করতে পেরেছে।
অতীত কৃতিত্বের নজীর থেকে নিশ্চিতভাবেই আশা করা যায় বর্তমান সরকার তার
অঙ্গীকারকৃত ভবিষ্যতের লক্ষ্যমাত্রাগুলোও অনুমিত সময়ের মধ্যেই অর্জনে
সক্ষম হবে, যদি না তার আগেই অর্জিত হয়ে যায়। সেদিন আর বেশি দেরি নেই যখন
বাংলাদেশিরা বিদ্যুৎহীনতাকে একটি অতীতের বিষয় হিসেবেই দেখতে শুরু করতে
পারবে।