জাতীয় রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধে পরিকল্পিত মিথ্যাচার ও অপপ্রচার || এডভোকেট ওমর হাসান আল জাহিদ

জাতীয় রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধে পরিকল্পিত মিথ্যাচার ও অপপ্রচার || এডভোকেট ওমর হাসান আল জাহিদ

জাতীয় রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধে পরিকল্পিত মিথ্যাচার ও অপপ্রচার || এডভোকেট ওমর হাসান আল জাহিদসম্পাদনায়,খোরশেদ আলম,বাংলাদেশ প্রেস || অবশেষে পড়ে শেষ করলাম, আনোয়ার উল আলম-এর লেখা 'রক্ষীবাহিনীর সত্য-মিথ্যা' বইটি। চমৎকার তথ্যসমৃদ্ধ একটি বই। অনেক অজানা কাহিনী উন্মোচন করেছেন বইটির লেখক, যিনি জাতীয় রক্ষীবাহিনীর একজন প্রতিষ্ঠাতা উপ-পরিচালক ছিলেন। লেখকের আরেকটি পরিচয় হল তিনি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা, যিনি মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে টাঙ্গাইলের 'কাদেরিয়া বাহিনী'র বেসামরিক প্রধান ছিলাম।


বঙ্গবন্ধুর শাসনকালের সবচেয়ে সমালোচিত একটি অধ্যায় হল, জাতীয় রক্ষীবাহিনী গঠন ও এর কার্যক্রম। আজ পর্যন্ত আমি কোথাও রক্ষীবাহিনীর সমালোচনা ছাড়া প্রশংসা শুনিনি। তাই যখনি প্রথম আলো'তে বইটি সম্পর্কে জানতে পারি, তখনি বইটি পড়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠি। বইটি পড়ে মনে হল রক্ষীবাহিনীর যেসব সমালোচনা করা হয়, সেসব বেশির ভাগই একদম অযৌক্তিক, বানোয়াট, গুজব এবং অর্ধসত্য। অবশ্যই রক্ষীবাহিনীর বেশ কিছু প্রশ্নবিদ্ধ কার্যক্রম রয়েছে। তবে মহলবিশেষের পরিকল্পিত নানা গুজবই রক্ষীবাহিনীকে বিতর্কিত করে তোলে। আর এসব গুজব সশস্ত্র বাহিনীর সাথে রক্ষীবাহিনীর একটি প্রকাশ্য মানসিক দ্বন্দ্ব প্রকট করে তোলে। অথচ রক্ষীবাহিনীর বিভিন্ন কার্যক্রম ছিল প্রশংসাযোগ্য; বিশেষ করে সদ্য স্বাধীন দেশে অস্ত্রউদ্ধার, চোরাচালান নিয়ন্ত্রণ ও আইনশৃঙ্ক্ষলার অবনতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি রক্ষীবাহিনী দারুণ ভূমিকা পালন করে।

রক্ষীবাহিনী নিয়ে কিছু উল্লেখযোগ্য সমালোচনার ব্যবচ্ছেদ করা যাক। তৎকালীন সময়ে সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে দুটো গুজব 'সত্য' হিশেবে ছড়িয়ে পড়ে। একটি হল, রক্ষীবাহিনীর সদস্য সংখ্যা এক লক্ষ ছাড়িয়ে গেছে এবং এদের অধিকাংশ ভারতীয়। অন্যটি হল, রক্ষীবাহিনীর বাজেট সশস্ত্র বাহিনীর বাজেটের চেয়ে বেশি। দুটি তথ্যই সশস্ত্র বাহিনীর ভিতরে অসন্তোষ সৃষ্টি করে এবং সরকারের উপর মারাত্মকভাবে ক্ষুব্ধ করে। অথচ বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর দেখা গেল রক্ষীবাহিনীর সর্বমোট সদস্য মাত্র বারো হাজার এবং ভারতীয় কোনো সদস্য পাওয়া গেল না। তবে রক্ষীবাহিনীর উপর পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ হত ভারতে; তৎকালীন সময়ে সেটাই স্বাভাবিক ছিল। তাছাড়া শুধু রক্ষীবাহিনী নয়, সশস্ত্র বাহিনীর অনেক কর্মকর্তাও ভারতে প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। আর বাজেটের ক্ষেত্রে দেখা গেল, ১৯৭৩ সালে রক্ষীবাহিনীর জন্য বাজেট ছিল মাত্র ৯ কোটি যেখানে সেনাবাহিনীর জন্য বাজেট ছিল ৯২ কোটি, যা পরবর্তীতে বাড়িয়ে ১২২ কোটি করা হয়।

বিখ্যাত/কুখ্যাত 'আদর্শবাদী-সন্ত্রাসী' সিরাজ শিকদারকে গ্রেফতার থেকে হত্যা পর্যন্ত রক্ষীবাহিনীর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অথচ জনমানসে এমনটাই প্রতিষ্ঠিত যে, সিরাজ শিকদারকে রক্ষীবাহিনী হত্যা করেছে। রক্ষীবাহিনীর পোশাকের জলপাই রং নিয়েও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রশ্ন তোলা হয়। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী খাকি পোশাক ব্যবহার করত। তাই রক্ষীবাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা সদস্যদের ওই পোশাকের প্রতি ঘৃণা কাজ করে। তাই তারা বেছে নেয় ভারত থেকে আনীত জলপাই রং-এর পোশাক। অবশ্য ভারত থেকে খাকি ও জলপাই রং- দুই ধরনের পোশাকই আনা হয়েছিল। কিন্তু বামপন্তীরা গুজব ছড়ায় যে, জলপাই রং-এর পোশাক নেয়ার কারণ হল ভারতীয় সৈন্যরা যাতে একই পোশাকে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে; যেহেতু ভারতের সেনাবাহিনীরও একই রং-এর পোশাক ছিল। অথচ তখন বাংলাদেশ-ভারতের নৌবাহিনীর পোশাক একই রং অর্থাৎ শাদা ছিল; কিন্তু এটি নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি কিংবা কারো মনে হয়নি যে, ভারতীয় সৈন্যরা একই পোশাক পরে নৌপথে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে পারে। আর সবচেয়ে বড় উপহাস হল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী পরবর্তী সময়ে জলপাই রংয়ের পোশাকই বেছে নেয়। অথচ এটি নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা হয়নি কখনো।

এরকম আরো অনেকগুলো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত গুজব/মিথ্যা ছড়ানো হয় রক্ষীবাহিনী সম্পর্কে। অবাধ তথ্যের অভাবে সাধারণ মানুষও সেসব বিশ্বাস করতে শুরু করে। ক্রমেই মানুষের কাছে অজনপ্রিয় হয়ে ওঠে রক্ষীবাহিনী।

বইটি পড়ে কিছু ঘটনা ও মানুষ সম্পর্কে নতুনভাবে জানতে পারি। যেমন- এম এ জি ওসমানী সাংসদ ছিলেন; আবার একই সময়ে সশস্ত্র বাহিনীর সর্বাধিনায়কের পদ আঁকড়ে ছিলেন। তার আপত্তির কারণেই বঙ্গবন্ধু জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করেননি; জ্যেষ্ঠতা ডিঙিয়ে সফিউল্লাহকে সেনাপ্রধান করা হয়; যা স্বাভাবিক কারণেই জিয়াকে ক্ষুব্ধ করে। কিন্তু জিয়াকে শান্ত রাখতে বঙ্গবন্ধু 'উপ-প্রধান'-এর পদ সৃষ্টি করেন এবং সেই পদে জিয়াকে নিয়োগ দেন। অথচ এই ওসমানীই বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সফিউল্লাহকে অভিনন্দন জানান। বেঈমান আর কাকে বলে!

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বরের সেনা অভ্যুত্থানের উদ্দেশ্য ছিল অবৈধ মোশতাক সরকারকে উচ্ছেদ করে বিশ্বাসঘাতক মোশতাককে গ্রেফতার কিংবা হত্যা করা এবং বঙ্গবন্ধুর খুনীদের শায়েস্তা করা। এর মূল পরিকল্পক ছিলেন জাতীয় রক্ষীবাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক নুরুজ্জামান। কিন্তু পরবর্তীতে অভ্যুত্থানটি ব্যর্থ হয় এবং খালেদ মোশারফসহ অনেকেই নির্মমভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন।

তোফায়েল আহমেদের প্রতি আমার বরাবরই শ্রদ্ধা ছিল। বইটি পড়ে শ্রদ্ধা আরো বেড়ে গেল। বঙ্গবন্ধুর নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের পর আওয়ামী লীগের অধিকাংশ নেতৃবৃন্দ প্রতিরোধ গড়ে তোলাতো দূরের কথা, উল্টো পালিয়ে গিয়েছিলেন। এমনকি উপরাষ্ট্রপতি নজরুল ইসলাম ও প্রধানমন্ত্রী মনসুর আলী পর্যন্ত বাসা থেকে বেরিয়ে যান। তাদের আর হদিস পাওয়া যায়নি। কেবল তোফায়েল আহমেদই বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সাহসিকতার সাথে রক্ষীবাহিনীর প্রধান কার্যালয়ে আসেন। তাজউদ্দীনও অবশ্য বাসাতেই ছিলেন; তবে তিনি বিচলিত ছিলেন! তাছাড়া তাঁর বিশেষ কিছু করারও ছিল না। বঙ্গবন্ধু তাঁর মত মানুষকে দূরে ঠেলে দিয়ে বিশ্বাসঘাতকদের কাছে টেনে নিয়েছিলেন। অথচ তাজউদ্দীন যদি প্রধানমন্ত্রী থাকতেন, নিশ্চিতভাবেই একাত্তরের ন্যায় সরকারের হাল ধরতেন এবং হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেন।

তৎকালীন সেনাপ্রধান সফিউল্লাহও নিদারুণ ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন। সেনাবাহিনীর উপর তিনি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। বঙ্গবন্ধুকে বাঁচানো দূরে থাক, হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থাও গ্রহণ করতে পারেননি; উল্টো চাপের মুখে অসহায়ভাবে মোশতাক সরকারের প্রতি সমর্থন জানান।

তবে সেনাবাহিনীর সবচেয়ে চতুর কর্মকর্তা ছিলেন মেজর জিয়া। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে নিজে সরাসরি অংশগ্রহণ করেননি; তবে পরিকল্পনা জানা সত্ত্বেও অনাপত্তি জানাননি বরং সমর্থন জানিয়েছেন। একইভাবে ৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থানের পরিকল্পনা সম্পর্কে আগেই জেনেছিলেন; সেক্ষেত্রেও তিনি সরাসরি অংশগ্রহণ করেননি; তবে পরোক্ষ সমর্থন জানিয়েছেন। ভুলটা করেছিলেন খালেদ মোশাররফ জিয়াকে গৃহবন্দী করার মধ্য দিয়ে। এসব ঘটন-অঘটনের প্রত্যক্ষ সুবিধাবাদী হলেন জিয়া। অবশ্য তাঁকেও নিষ্ঠুরভাবে প্রাণ দিতে হয় আরেক অভ্যুত্থানে। পাপ তার বাপকেও ছাড়ে না।

জাতীয় রক্ষীবাহিনী বাংলাদেশের একমাত্র আইনশৃঙ্ক্ষলা বাহিনী, যার নামকরণ হয় বাংলায়। আর বামপন্থী বিশেষ করে চীনা সমাজতন্ত্রীদের সমাজবিরোধী নানা কর্মকাণ্ডই বঙ্গবন্ধুর সরকারকে তটস্থ করে রাখত! সেসব 'সন্ত্রাসীদের' বিরুদ্ধে রক্ষীবাহিনী ব্যবস্থা নেয়; কিন্তু চীনা সমাজতন্ত্রীদের পক্ষ থেকে প্রচার করা হয় যে, রাজনৈতিক কর্মীদের হত্যা করা হচ্ছে! এবং জনমানসে সেটাই প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় যে, বঙ্গবন্ধুর শাসনকালে হাজার-হাজার ‘রাজনৈতিক কর্মী’ হত্যা করা হয়েছে। কি ভয়ংকর সব মিথ্যা অপ-প্রচার।

লেখকঃ এডভোকেট ওমর হাসান আল জাহিদ, কলামিস্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক




www.bn.wikipedia.org/wiki/জাতীয়_রক্ষীবাহিনী
জাতীয় রক্ষীবাহিনী একটি নিয়মিত আধা-সামরিক বাহিনী যা নবপ্রতিষ্ঠ বাংলাদেশে ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে গঠন করা হয় শুরুতে মুজিব বাহিনী কাদেরিয়া বাহিনী সদস্যদের নিয়ে এই বাহিনীর পত্তন করা হয় ঢাকার শেরেবাংলা নগরে এই বাহিনীর সদরদপ্তর স্থাপন করা হয় ক্যাপ্টেন . এন. এম. নুরুজ্জামানকে রক্ষীবাহিনীর প্রধান করা হয় আনুষ্ঠানিক নাম জাতীয় রক্ষীবাহিনী হলেও সাধারণত এই বাহিনীকেরক্ষীবাহিনীবা সংক্ষেপে জেআরবি (JRB) বলে অভিহিত হতো ১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে এই বাহিনী অবলুপ্ত করা হয় অবলুপ্ত হওয়ার পর রক্ষীবাহিনীর অনেক সদস্য নিয়মিত সামরিক বাহিনীতে আত্মীকৃত হন [] []
ইতিহাস
১৯৭১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনীর আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বাঙ্গালীদের স্বাধীনতা সংগ্রাম চরম লক্ষ্যে পৌঁছায় এবং একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশের অভ্যূদয় হয়কয়েক দিন পর ১৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ তারিখে ঢাকায় অনুষ্ঠিত মন্ত্রী সভার প্রথম বৈঠকে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বিভিন্ন বাহিনী ভূতপূর্ব ইস্ট পাকিস্তার রাইফেলস-এর সদস্যদের নিয়ে একটি জাতীয় মিলিশিয়া গঠন করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়এই লক্ষ্যে একটি জাতীয় মিলিশিয়া বোর্ডও গঠন করা হয়মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী সহ রাজনৈতকি নেতারা এই বোর্ডের সদস্য ছিলেনঅস্থায়ী সরকারের রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব ১৯৭২-এর ১০ জানুয়ারি দেশে প্রত্যাবর্তনের পর ১৯৭২-এর ২৪ জানুয়ারি তারিখে এই ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার একটি আদেশ জারী করেমুক্তিযোদ্ধা . এন. এম. নুরুজ্জামনকে জাতীয় মিলিশিয়ার পরিচালক নির্বাচন করা হয়এই মিলিশিয়ার গোড়া পত্তনকালে পিলখানা গোলোযোগ এর কারণে ইস্ট পাকিস্তার রাইফেলস-এর সদস্যদের রাইফেলস-এর সদস্যদের বাদ দিয়ে বিশেষ বাহিনী গঠন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়এই অবস্থায় ১৯৭২ খ্রিস্টাব্দের মার্চ তারিখে জাতীয় রক্ষীবাহিনী গঠনের সরকারী আদেশ জারী করা হয়. এন. এম. নুরুজ্জামনকে এই বাহিনীর পরিচালক নিয়োগ প্রদান করা হয়এছাড়া সহকারী পরিচালক হিসেবে আনোয়ার উল আলম এবং সরওয়ার হোসেন মোল্লাকে নিযুক্ত করা হয়

অবলুপ্তি

১৯৭৫ খ্রিস্টাব্দে একটি সামরিক অভ্যূত্থানে বাংলাদেশের তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিব নিহত হন। এতে বাংলাদেশের সামগ্রিক রাজনৈতিক পটভূমিতে মৌলিক পরিবর্তন ঘটেএই অভ্যূত্থানের পরবর্তী কয়েক মাস ছিল অস্থিতিশীল এবং নাটকীয় পরিবর্তনে ভরপুর রকম একটি জায়মান অবস্থায় নতুন সরকার জাতীয় রক্ষীবাহীনীকে অবলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেরক্ষীবাহিনীর সদস্যদের নিয়মিত সামরিক বাহিনীতে আত্মীকরণ করা হয়এই অবলুপ্তির লক্ষ্যে ১৯৭৫-এর অক্টোবর তারিখে সরকারী আদেশ প্রকাশ করা হয়এই আদেশে বলা ছিল যে ১৯৭৫-এর সেপেটম্বরে তারিখ থেকে জাতীয় রক্ষী বাহিনী অবলুপ্ত হয়েছে বলে গণ্য হবে[]
নভেম্বর ১৯৭৫ দ্বিতীয় সামরিক অভ্যূত্থান রক্ষীবাহিনীর কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন। এর নেতৃত্বে ছিলেন মেজর জেনারেল খালেদ মোশাররফ

১৯৭২ গঠিতজাতীয় রক্ষীবাহিনী”, মিথ্যার পাহাড়ে ডুবে যাওয়া কিছুসত্যখোঁজার চেষ্টা

স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে যুদ্ধ ফেরত বিপুলসংখক তরুন মুক্তিযোদ্ধাদের কর্মসংস্থানের জন্য ১৯৭২ এর শুরুতেজাতীয় রক্ষীবাহিনীগঠিত হয়। আর্মড পুলিশ এ্যাক্ট সংশোধন করে এই আধা সামরিক বাহিনীটি গঠিত হয়।
শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধ ফেরত বেকার তরুনদের কর্মসংস্থানের জন্যই মিলিশিয়া রক্ষীরক্ষীবাহিনীগঠিত হয় নি। প্রধান কারনটি ছিল ৭১এ পরাজিত পাকিস্তানিরা এবং ৭২ এর সুরুতে সকল ভারতীয় সৈন্য চলে যাওয়ার পর স্বাধীন দেশটিতে একটা বাহিনী শূন্যতার সৃষ্টি হয়। যুদ্ধশেষে অনেকেই অস্ত্র জমা না দেয়ায় একটা বিপদজনক অবস্থার শৃষ্টি হয়। জমা না দেয়া বিপুল সংখক অস্ত্রসস্ত্র বিভিন্ন ব্যক্তি, গোষ্ঠীর কাছে থেকে গিয়েছিল। উদ্ধার করার জন্য অপেক্ষাকৃত ভারি অস্ত্রে সজ্জিত আধাসামরিক মিলিশিয়া বাহিনী দরকার ছিল।
আমলাতান্ত্রিক ব্রিটিশ আইনের পুলিশকে দিয়ে একাজ হত না, বিডিআর কে দিয়ে হয়তো হতো, কিন্তু তারাও যুদ্ধশেষে সংখায় কম ছিল, সিমান্ত পাহারা দিতেই হিমসিম খাচ্ছিল
সেনা বাহিনীতে এদেরকে ঢুকিয়েও অস্ত্র উদ্ধার অপারেশন করানো যেত। কিন্তু নিয়মিত বাহিনীতে একটা দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া আর লম্বা ট্রেনিং দরকার হতো, এত সময়ও হাতে ছিলনা। এরপরেও যদি করা তা করতো সেটা বিরাট বোকামির কাজ হতো। দেশের একটা নিয়মিত সশস্ত্র বাহিনী দেশ রক্ষা বাদ দিয়ে পুলিশি কায়দায় পাবলিকের সাথে সংঘাত করে অস্ত্র উদ্ধার করাটা ঠিক হত না
এদিকে পাকিস্তানে আটক প্রায় ২০-৩০ হাজার বাংলাদেশি বাঙ্গালি সেনাবাহিনীর সদস্য সহ পুলিশ, রেঞ্জার্স আধাসামরিক মিলিশিয়া আটক থাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর স্বল্পতা আরো প্রকট আকারে দেখা দেয়।
পাকিস্তানে চাকুরিরত ২০-৩০ হাজার সেনাসদস্য, নৌ বিমান বাহিনী, আধাসামরিক রেঞ্জার্স, সীমান্তরক্ষী, মিলিশিয়া এবং পুলিশ সদস্য। এছাড়া সরকারি-আধাসরকারি সংস্থায় চাকুরিরত ১৫-২০ হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারী, ছাত্র, দোকান, কারখানা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অগনিত বাঙ্গালি সহ প্রায় লাখ বাঙ্গালি পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করছিল
এই তিন লাখ বাঙ্গালিদের ৭১ সাল থেকে ৭৪ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানে প্রায় তিন বছর যাবত যুদ্ধবন্দীর মত জিম্মি করে রাখা হয়েছিল বিচারাধীন ১৯৫ জন পাকি সামরিক অফিসার যুদ্ধাপরাধীর বিপরিতে।
এই সকল শূন্যতা পুরন করতেই মুলতরক্ষীবাহিনীগঠিত হয়েছিল
বেছে নেয়া হয় মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে অপেক্ষাকৃত শিক্ষিত সাহসী তরুনদের। এদের একটা বড় অংশ ছিল মুজিব বাহিনী কাদের সিদ্দিকির কাদের বাহিনীর সদস্য। এই বাহিনীর সবুজ জলপাই রঙের ইউনিফর্মে SLR কম্ব্যাট রাইফেল হাতে রক্ষীবাহিনী ছিল রীতিমত ভীতিপ্রদ অস্ত্র উদ্ধার করতে যেয়ে প্রায়ই অতিরিক্ত শক্তিপ্রয়োগের করতে দেখা গেছে। রাজনৈতিক মিছিল দমন করতে পুলিশ ব্যার্থ হলেও রক্ষীবাহিনী নিয়োজিত হত। কারন তখনোদাঙ্গা পুলিশ ব্যাটেলিয়ানগঠন করা হয়নি
এদেরকে সেনাবাহিনীর প্যারালাল ভাবার কারন ছিলনা, কারন এরা ছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অধীনস্ত প্যারামিলিটারি ফোর্স। নিয়মিত সশস্ত্র বাহিনী না। এদের মর্যাদা-বেতনকাঠামো সীমান্তরক্ষী BDR (BGB) এর অনুরুপ
অনেকে বলত এরা স্বজনপ্রীতি করে ঢুকানো আওয়ামি লিগের রাজনৈতিক পেটোয়া বাহিনী। ৭৫এর ঘাতকেরা এবং এর অনুসারী সামরিক জান্তা সুপরিকল্পিত ভাবে গুজব ছড়ায় যে এদের কিছু ভারতীয় বাহিনীর ইউনিফর্মে ভারতীয় সৈন্য
অতচ বংগবন্ধু তার বাসভবনের নিরাপত্তার জন্যও রক্ষীবাহিনী রাখেননি। তার বাসভবন দফতর গণভবন-বঙ্গভবন নিরাপত্তার জন্য সার্বক্ষণিক ভাবে নিয়োজিত ছিল সেনাবাহিনীর কয়েকটি ইউনিট। তখনো PRG SSF বাহিনী গঠিত হয়নি
সেনাবাহিনীর তরফ থেকে যে কোন মুভমেন্টের এগেইনস্টে রক্ষীবাহিনী কখনোই মোতায়েন ছিলনা, অন্তত তখনকার ঘটনাচক্র এটা সমর্থন করে না। তাদের অস্ত্রভান্ডারে মোকাবেলায় কোন ভারি অস্ত্র (কামান-ট্যাঙ্ক) দেয়াই হয়নি
তৎকালিন সরকারের এই মোটিভ থাকলে তাদেরকে শহর থেকে এত দূরে সাভার ব্যারাক (বর্তমানে সাভার ক্যান্টনমেন্ট) কখনোই রাখা হত না। খুনিচক্র বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর গোয়েবলসিও স্টাইলে গুজব ছড়ায় যে বঙ্গবন্ধু সেনাবাহিনীকে বিশ্বাস করতেন না। তিনি সেনা সংখ্যা কমিয়ে সেনাবাহিনীকে একটি অকার্যকর বাহিনীতে পরিনত করেছিলেন। অনেক শিক্ষিতও এখনো এসব বিশ্বাস করে
যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন দেশটিতে বঙ্গবন্ধুর শাসনকাল ছিল মাত্র সাড়ে তিন বছর। শূন্য রাজকোষ থেকেই শুরু করতে হয়েছিল, প্রথম একবছর সরকারি বেতন দিতে হয়েছিল ভারতীয় মুদ্রায়
. অনেক সংকটের ভেতরেও সেনাবাহিনীর সংখা বড়ানোর জন্য ফৌজদারহাটে বিশাল এলাকা নিয়ে মিলিটারি একাডেমি স্থাপন করেন। তখনো দেশের বিধ্বস্ত অবকাঠামোগুলো মেরামত সম্ভব হয়নি। চট্টগ্রাম বন্দর মাইন মুক্ত করে চালু করা সম্ভব হয়নি
. তাদের বিশ্বাস করে তার বাসভবনের দফতরের নিরাপত্তায় রক্ষীবাহিনীকে না দিয়ে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছিলেন। (যদিও বাসা আক্রান্ত হওয়ার সময় তারা কোন প্রতিরোধ সৃষ্টি করেনি, একটা গুলিও ছুঁড়েনি)
. পাকিস্তানে বছর বিনা বেতনে পনবন্দি করে রাখা ৩০ হাজার সৈন্য ফিরিয়ে এনে বকেয়া বেতন দিয়ে সেনাবাহিনীতে যুক্ত করে সেনা সংখা বৃধি করেছিলেন। এরপরও তাদেরকে মুজিবের প্রতি অসন্তোষ ব্যক্ত করতে দেখা যায়।
(বিনিময়ে তাকে বিচারাধিন ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানি অফিসারদের ছেড়ে দিতে হয়েছিল, মুক্তিপন হিসাবে)
. ১৯৭৪ OIC সম্মেলন থেকে ফেরার সময় মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত এর সাথে দেখা করে সেনাবাহিনীর জন্য বিপুল অস্ত্রশস্ত্র ৩০টি রাশিয়ান ট্যাঙ্ক সংগ্রহ করেন।
(পরে এই ট্যাঙ্কগুলো দিয়েই ফারুক রশিদেরা তার বাসভবন আক্রমন করে)
রক্ষীবাহিনীর বিরুদ্ধে সকল অপবাদ মিথ্যা প্রমানিত হয় ৭৫ এর পট পরিবর্তনের পর
যখন রক্ষীবাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে এক ধাপ পদোন্নতি দিয়ে সেনাবাহিনীতে যুক্ত করা হয়, আর রক্ষীবাহিনী চিফ কে দেয়া হয় রাষ্ট্রদুতের পদ। ৯ই অক্টোবর ১৯৭৫ একটি অধ্যাদেশ Jatiya Rakkhi Bahini Absorption Army Ordinance 1975. গেজেট নোটিফিকেশনের মাধ্যমে এই সেনাবাহিনীতে আত্তিকরণ করা হয়।
এই অধ্যাদেশটিতে অনেকটা দায়মুক্তি দিয়ে বলা হয়েছে
রক্ষীবাহিনী কর্তৃক বর্তমান পূর্ববর্তী সকল কর্মকান্ড, সেগুলো অনুমান করে নেওয়া হবে সেনাবাহিনীর নিজস্ব এখতিয়ারভুক্ত জিনিস
আর্মি অর্ডিনেন্স ১৯৭৫
Jatiya Rakkhi Bahini Absorption Army Ordinance 1975
তারা উচ্চমান সম্পন্ন, দক্ষতা ছিল প্রশ্নাতীত। সেনাবাহিনীতে উচ্চপদে যোগ দেয়ার সময় কোন পরীক্ষা নেয়ার প্রয়োজন হয় নাই। কারন তারা ট্রেনিংপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা, যদিও সেনাবাহিনীই তাদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিল, তারা ভালকরেই জানত রক্ষীবাহিনী স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে দলীয় নিয়োগ ছিলনা, ছিল Good selection. সুদক্ষ, চৌকস, যোগ্য এবং সাহসী মুক্তিযোদ্ধা। এদের পেশাদারিত্ব প্রমাণিত হয়েছিল। প্রমোশন নিয়ে আর্মিতে ঢুকেও যোগ্যতার প্রমান রেখেছিল। সঙ্গতকারণেই তাদের দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন সুযোগ হয়নি ততকালিন সামরিক শাসকদের।
রক্ষীবাহিনী থেকে সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত শতাধিক অফিসার কর্নেল, জেনারেল পর্যন্ত চাকরি করে মেয়াদ শেষকরে অবসরে যায়। দুজন সেনা প্রধান পর্যন্ত হয়েছিলেন, এখনো অনেকেই সেনাবাহিনীতে উচ্চপদে ব্রিগেডিয়ার, জেনারেল পদমর্যাদা সম্পন্ন দেখা যায়
এটা সত্য যে রক্ষীবাহিনী গঠনের উদ্যেস্য মহৎ প্রয়োজনিয় হলেও বেশীর ভাগ সাধারন মানুষ এটাকে নেতিবাচক হিসেবেই দেখে এসেছে। যারা রাস্তায় মানুষ পেটায় তাদের কে তো ভাল ভাবার কারন নাই।
আসলে তারা ভাল ছিল, তাদের সিলেক্সান খুবই দক্ষ হয়েছিল, তাদের সুশৃঙ্খল ভাবমূর্তি সেনাবাহিনীতে যুক্ত হওয়ার পরও অটুট ছিল
বিভিন্ন জনসভায় বা পত্র-পত্রিকায় প্রায়ই রক্ষীবাহিনীর উদাহরন দেয়া হয়। বলা হয় -
স্বজনপ্রীতি করে লোক ঢুকানো একটি দলিয় প্রাইভেট বাহিনী,
মুজিবের দেহরক্ষী বাহিনী,
সেনাবাহিনীর চেয়ে বেশী মর্যাদা দিয়ে একটি প্যারালাল বাহিনী
এর কোনটিও সত্য নয়। ছিল রাজনৈতিক গুজব মাত্র। যদি তাই হত তাহলে এদের যায়গা অন্তত সেনাবাহিনীতে হোত না। বরখাস্ত করতো নতুবা কোনমতে ঠাঁই হোত আনসার বা VDP তে

 

রক্ষীবাহিনী

http://bn.banglapedia.org/index.php?title=রক্ষীবাহিনী

রক্ষীবাহিনী  বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য গঠিত একটি আধাসামরিক বাহিনী। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়নের লক্ষ্যে ১৯৭২ সালের মার্চ জাতীয় রক্ষীবাহিনী আদেশ জারি করা হয়। স্বাধীনতার পরপরই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটতে থাকে। অবস্থায় সরকার সম্পূর্ণ সরকারি নিয়ন্ত্রণে রক্ষীবাহিনী নামে একটি আধা সামরিক বাহিনী গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। জাতীয় রক্ষীবাহিনী আদেশ-১৯৭২ (রাষ্ট্রপতির ১৯৭২ সালের ২১ নং আদেশ) জারি করা হয় এবং ১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে আদেশ কার্যকর হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশটিতে আইনের অসম্পূর্ণতা থাকায় বাহিনীটি একটি প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত হতে পারে নি। আইনে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার কাজে বাহিনী বেসামরিক কর্তৃপক্ষকে সাহায্য করবে এবং সরকারের নির্দেশক্রমে সামরিক বাহিনীকেও সাহায্য করবে। এর তত্ত্বাবধান কর্তৃত্ব থাকবে সরকারের হাতে এবং এর পরিচালনা নির্দেশনায় থাকবেন একজন পরিচালক (পরে মহাপরিচালক) আদেশের ১৭ অনুচ্ছেদে এর জন্য বিধি প্রণয়নের ব্যবস্থা রাখা হয়। রক্ষীবাহিনীর যেকোন অফিসার কোনো পরোয়ানা ছাড়াই অপরাধী সন্দেহে যেকোন লোককে গ্রেপ্তার করতে পারবে এবং যেকোন ব্যক্তিকে এবং যেকোন স্থান, মোটরযান অথবা নৌযান তল্লাসী করতে পারবে এবং প্রয়োজনে সন্দেহযুক্ত মালামাল জব্দ করতে পারবে।
গোড়ার দিকে রক্ষীবাহিনী বেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে অনেক অস্ত্রশস্ত্র, চোরাচালানের মালামাল উদ্ধার করে এবং মজুতদার কালোবাজারীদের কার্যকলাপ কিছুটা প্রতিহত করতে সক্ষম হয়। কিন্তু খুব শীঘ্রই বাহিনীর ভাবমূর্তি নষ্ট হতে থাকে, কারণ দেখা যায় এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সাধনের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। ঝটিকা বাহিনীর মতো রক্ষীবাহিনী প্রায়ই একেকটি গ্রামের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ত এবং অস্ত্র দুষ্কৃতিকারীদের খুঁজত। তাদের যথেচ্ছাচার নিয়ন্ত্রণ বা তাদের কার্যকলাপের জবাবদিহিতার আইনগত কোন ব্যবস্থা ছিল না। অপরাধ স্বীকার করানোর জন্য গ্রেফতারকৃত লোকদের প্রতি অত্যাচারের অভিযোগও তাদের বিরুদ্ধে উত্থাপিত হয়। তাদের বিরুদ্ধে লুটপাট এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকা আদায়ের অভিযোগও ছিল। তাদের কার্যকলাপের সমালোচনা যখন তুঙ্গে ওঠে এবং পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হতে থাকে, তখন ১৯৭৩ সালের ১৮ অক্টোবর সরকার জাতীয় রক্ষীবাহিনী (সংশোধনী) অধ্যাদেশ-১৯৭৩ জারি করে রক্ষীবাহিনীর সকল কার্যকলাপ আইনসঙ্গত বলে ঘোষণা করে। রক্ষীবাহিনীর কোন সদস্য সরল বিশ্বাসে কোন কাজ করলে অথবা সৎ উদ্দেশ্যে উক্ত কাজ করে থাকলে অনুরূপ কাজের জন্য তার বিরুদ্ধে বিচারের জন্য কোন আইনি ব্যবস্থা নেয়া যাবে না বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়। বাহিনীটির কাঠামোগত দুর্বলতার জন্য এবং জনগণের দৃষ্টিতে এর ভাবমূর্তি দ্রুত হ্রাস পেতে থাকলে অনেক রক্ষী বাহিনী ছেড়ে পালিয়ে যায়। বাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার জন্য সরকার মূল আদেশে আরেকটি সংশোধনী (জাতীয় রক্ষীবাহিনী (সংশোধনী) অধ্যাদেশ ১৯৭৫) জারি করে। এর মাধ্যমে বহুসংখ্যক গুরু লঘু অপরাধের উল্লেখ করা হয়, যার জন্য অফিসার রক্ষীদের বিশেষ আদালত সংক্ষিপ্ত আদালতে বিচার করা যাবে।
এদিকে আইনশৃঙ্খলার অবনতি অর্থনৈতিক সংকট গভীরতর হতে থাকলে বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমান রক্ষীবাহিনীর উপর তার নির্ভরতা থেকে সরে এসে প্রকাশ্যে তাদের বল্গাহীন কার্যকলাপের সমালোচনা করেন। তিনি সেনাবাহিনী ডেকে সরকারের ভেতর বাইরের অপরাধীচক্র নিয়ন্ত্রণে আনার আদেশ দেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর রক্ষীবাহিনী বিলোপ করে সেনাবাহিনীর অন্তর্ভূক্ত করা হয়। নিয়মতান্ত্রিকভাবে বাহিনীটি বিলোপ করার জন্য ১৯৭৫ সালের অক্টোবর জাতীয় রক্ষীবাহিনী (সামরিক বাহিনীতে আত্তীকরণ) অধ্যাদেশ-১৯৭৫ (১৯৭৫ সালের অধ্যাদেশ নং ৫২) জারি করা হয়। অধ্যাদেশ বলে রাষ্ট্রপতির যে আদেশের অধীনে ১৯৭২ সালের মার্চ রক্ষীবাহিনী গঠন করা হয়েছিল তা রদ করা হয়।  [এনামুল হক]
 
^উপরে যেতে ক্লিক করুন