ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড

ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
ধরন বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংক
শিল্প ব্যাংকিং, অর্থনৈতিক সেবা
প্রতিষ্ঠাকাল ঢাকা, বাংলাদেশ (১৩ই মার্চ, ১৯৮৩)[১]
সদর দপ্তর ঢাকা, বাংলাদেশ
অঞ্চলিক পরিসেবা বাংলাদেশ ও বহির্বিশ্ব
প্রধান ব্যক্তি অধ্যাপক আবু নাসের মুহাম্মদ আব্দুজ জাহের[২]
(চেয়ারম্যান)

মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান
(ব্যবস্থাপনা পরিচালক)
আবু রেজা মুহাম্মদ ইয়াহিয়া
(কোম্পানি সচিব)
পণ্য ব্যাংকিং সেবা (সার্ভিসেস),
এটিএম সেবা,
গ্রাহক (কনজ্যুমার) ব্যাংকিং,
ব্যবসায়িক (কর্পোরেট) ব্যাংকিং,
বিনিয়োগ (ইনভেস্টমেন্ট) ব্যাংকিং
আয় বৃদ্ধি ২৫.৪০৩ বিলিয়ন টাকা
(০.৩৬৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার)
নীট আয় বৃদ্ধি ৬.৫১৮ বিলিয়ন টাকা
(০.০৯৩ বিলিয়ন ইউএস ডলার)
{ডিসেম্বর ২০১০}
মোট সম্পদ বৃদ্ধি ৩৪০.৬৩৮ বিলিয়ন টাকা
(৪.৮৬৬ বিলিয়ন ইউএস ডলার)
{ডিসেম্বর ২০১০}
মোট ইকুইটি বৃদ্ধি ৩৩.৭১৬ বিলিয়ন টাকা
(০.৮১২ বিলিয়ন ইউএস ডলার)
কর্মীসংখ্যা ১১,৪৬৫
ওয়েবসাইট ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড
ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংকিং ধারার পথিকৃত। এটি ইসলামী শরিয়াহ মোতাবেক পরিচালিত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটি ১৯৮৩ সালের[৩] ১৩ই মার্চ কোম্পানি আইন, ১৯১৩-এর অধীনে একটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়।[৪] ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড যৌথ বিনিয়োগে প্রতিষ্ঠিত বাণিজ্যক ব্যাংক যার ৩৬.৯১% স্থানীয় এবং ৬৩.০৯% বিদেশী বিনিয়োগ রয়েছে।[১] মোট ২৯১টি শাখা[২][৫] নিয়ে এই ব্যাংকটি দেশের বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ ব্যাংকে পরিণত হয়েছে। এটি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ লিমিটেড-এর তালিকভূক্ত কোম্পানী যার অনুমোদিত মূলধন ২০,০০০ মিলিয়ন টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১৪,৬৩৬.২৮ মিলিয়ন টাকা[১]

ইতিহাস

সুদমুক্ত ব্যাংক প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের মানুষের বহু পুরনো প্রত্যাশা। বিশ শতকের ষাটের দশকে মিসরের মিটগামারে প্রথম সুদমুক্ত ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয়। এর ফলে বাংলাদেশেও এরূপ একটি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আন্দোলন সক্রিয় হয়। ১৯৭৪ সালের আগস্ট মাসে বাংলাদেশ ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক বা আইডিবির চার্টার স্বাক্ষর করে। ১৯৭৬ সালে প্রখ্যাত ইসলামি চিন্তানায়ক মাওলানা মুহাম্মদ আবদুর রহীমের নেতৃত্বে ঢাকায় ইসলামী অর্থনীতি গবেষণা ব্যুরো প্রতিষ্ঠিত হয়।[৬]
১৯৭৯ সালে নভেম্বরে সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ মহসিন দুবাই ইসলামি ব্যাংকের অনুরূপ বাংলাদেশে একটি ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার জন্য পররাষ্ট্র সচিবের কাছে লেখা এক চিঠিতে সুপারিশ করেন। এর পরপরই ডিসেম্বর মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংকিং উইং বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিমত জানতে চায়। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিনিধি হিসেবে তৎকালীন গবেষণা পরিচালক এ এস এম ফখরুল আহসান ১৯৮০ সালে ইসলামি ব্যাংকগুলোর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনার জন্য দুবাই ইসলামি ব্যাংক, মিসরের ফয়সাল ইসলামি ব্যাংক, নাসের সোশ্যাল ব্যাংক এবং আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যাংক সমিতির কায়রো অফিস পরিদর্শন করেন। ১৯৮১ সালে তিনি বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করে একটি প্রতিবেদন পেশ করেন।[৭]
১৯৮০ সালের ১৫-১৭ ডিসেম্বর ইসলামী অর্থনীতি গবেষণা ব্যুরোর উদ্যোগে ঢাকায় ইসলামি ব্যাংকিংয়ের ওপর একটি আন্তর্জাতিক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৮১ সালের মার্চে ওআইসিভূক্ত দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নরদের সম্মেলন সুদানের খার্তুমে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে পেশকৃত এক প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর জানান, বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে। ১৯৮১ সালে এপ্রিল মাসে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে লেখা এক পত্রে পাকিস্তানের অনুরূপ বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর শাখাগুলোতেও পরীক্ষামূলকভাবে পৃথক ইসলামি ব্যাংকিং কাউন্টার চালু করে এ জন্য পৃথক লেজার রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়। ১৯৮১ সালের ২৬ অক্টোবর থেকে সোনালী ব্যাংক স্টাফ কলেজে ইসলামি ব্যাংকিংয়ের ওপর এক মাস স্থায়ী সার্বক্ষণিক আবাসিক প্রশিক্ষণ কোর্স অনুষ্ঠিত হয়। এ কোর্সে বাংলাদেশ ব্যাংক, সব রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক, বিআইবিএম ও প্রস্তাবিত ঢাকা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড)-এর ৩৭ কর্মকর্তা অংশ নেন।[৭]
১৯৮২ সালে নভেম্বর মাসে ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংকের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেন। এ সময় তারা বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে যৌথ উদ্যোগে একটি ইসলামি ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় আইডিবির অংশগ্রহণের আগ্রহ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশে ইসলামি ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্র প্রস্ত্তত করার ব্যাপারে ‘ইসলামী অর্থনীতি গবেষণা ব্যুরো’ (আইইআরবি) এবং বাংলাদেশ ইসলামী ব্যাংক সমিতি (বিবা) অগ্রণী ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বহুমাত্রিক চেষ্টার ফলস্বরূপ ১৯৮৩ সালের ১৩ মার্চ ঢাকা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড নামে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম সুদমুক্ত ব্যাংক প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৯৮৩ সালের ২৮ মার্চ পর্যন্ত ঢাকা আন্তর্জাতিক ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড নামে বাংলাদেশের প্রথম ইসলামী ব্যাংকের প্রস্ত্ততিমূলক কাজ করা হয় এবং এ নামেই তখন পর্যন্ত ব্যাংকের সাইনবোর্ড ও প্রচার-পুস্তিকা ব্যবহার করা হয়। আলহাজ্ব মফিজুর রহমান ২৯ মার্চ পর্যন্ত ব্যাংকের প্রকল্প পরিচালক ছিলেন। এরপর ৩০ মার্চ থেকে এ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড নামে কার্যক্রম শুরু করে।[৮] ব্যাংকের মনোগ্রাম তৈরি করেন শিল্পী ও ক্যালিগ্রাফার সবিহউল আলম। এক্ষেত্রে ১৯জন বাংলাদেশি ব্যক্তিত্ব, ৪টি বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান এবং আইডিবিসহ মধ্যপ্রাচ্যইউরোপের ১১টি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সরকারি সংস্থা এবং সৌদি আরবের দু’জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব বাংলাদেশে ইসলামী ব্যাংক প্রতিষ্ঠায় উদ্যোক্তারূপে এগিয়ে আসেন।[৭

প্রধান অংশীদারগণ

ব্যাংকটির ৬৩% শেয়ার উপরোক্ত অংশীদারগণের আর বাকি ৩৭% এর মালিকানা বাংলাদেশের ৬০,০০০ শেয়ারহোল্ডারগণ।[১১]




যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৩
http://www.jugantor.com/assets/images/news_images/2013/12/03/thumbnails/4_46512.jpg

মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে সচল রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। ব্যাংক ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক বলে দাবি করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে শরিয়াহ নিয়ম অনুসরণ করছে না। বরং মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে ইসলামকে বাণিজ্যিকরণ করছে। জানা গেছে, ব্যাংকটির প্রায় ৭০ শতাংশ মালিকানা বিদেশীদের হাতে। আর ওইসব বিদেশীর অধিকাংশই ইহুদি অমুসলিম। ছাড়া ব্যাংকটির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে শতশত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ইসলামী ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৩ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং মন্ত্রণালয়ের নাম পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, ব্যাংকটির বিরুদ্ধে গুরুতর ঋণ অনিয়মেরও অভিযোগ উঠেছে। এর আগে সন্ত্রাসবাদে অর্থের জোগানদাতা হিসেবে ব্যাংকটির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বিষয়ে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ . আবুল বারকাত বলেন, যেসব ব্যাংক ইসলামিক ব্যাংক বলে কার্যক্রম চালাচ্ছে সেগুলো কোনোভাবেই সুদমুক্ত নয়। কাজেই ব্যাংকিংব্যবস্থা থেকেইসলামশব্দটি বাদ দেয়া উচিত। তিনি বলেন, ইহুদিদের পরিচালিত কয়েকটি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং চালু করেছে, এটাকে ধোঁকাবাজি ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে? প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি যারা ইসলামী ব্যাংকিং করছে তারা মানুষের সঙ্গে মারাত্মক প্রতারণা করছে বলে তিনি মনে করেন। প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, দেশের দরিদ্র মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে ইসলামকে বাণিজ্যিকরণ করছে দেশের ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা। তিনি নিজেরমৌলবাদের অর্থনীতিশীর্ষক গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলেন, জামায়াতে ইসলামী ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ ৮টি খাতে অর্থায়ন করেছে। এটা তাদেরঅর্থনৈতিক কার্যভিত্তিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া তারা ধর্মের নামে ক্ষমতায় আসতে চায়। কিন্তু তা সম্ভব না হওয়ায় রাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্র বা সরকারের মধ্যে সরকার রাখার চেষ্টা করছে। ২০১০ সালে ইসলামী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিতইসলামী অর্থনীতি ব্যাংকিংশীর্ষক এক সেমিনারে আবুল বারকাত বলেন, জনতা ব্যাংকের ৬টি শাখায় ইসলামিক ব্যাংকিং চালুর অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে আমি বুঝতে চেষ্টা করেছি, ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার আয় সুদ না অন্যকিছু। দেখেছি এটা কোনোভাবেই সুদের বাইরে নয়। এজন্য তিনি জনতা ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং চালুর সম্ভাবনা নাকচ করে দেন
সূত্র জানায়, ইসলামী ব্যাংক নিজেদের সুবিধামতো ইসলামী শরিয়াহ বোর্ড গঠন করে নিজেদের স্বার্থে কার্যক্রম চালাচ্ছে। অদৃশ্য কারণে শরিয়াহ বোর্ডের সিদ্ধান্তের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক কখনো হস্তক্ষেপ করে না। বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নিজস্ব শরীয়াহ বোর্ড থাকা উচিত। কিন্তু কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে এটি করা যাচ্ছে না
ফাউন্ডেশনে অর্থ প্রদান বন্ধের নির্দেশ : জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডকে তার অধিভুক্ত সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনে অর্থ প্রদান বন্ধের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের অর্থের উৎস এর ব্যবহার নিয়ে প্রাথমিকভাবে কিছু অস্বচ্ছতার প্রমাণ পাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক ওই সিদ্ধান্ত নেয়
মুনাফার চার ভাগের তিন ভাগ বাইরে চলে যাচ্ছে : ব্যাংকটি প্রতি বছর যে বিপুল পরিমাণ মুনাফা করছে, তার চার ভাগের তিন ভাগ বাইরে চলে যাচ্ছে। আর এর বিদেশী মালিকরা ডলারে তাদের মুনাফা নিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে চাপ তৈরি হয়ে থাকে। বিদেশীদের মালিকানা না থাকলে ওই পরিমাণ ডলার বাংলাদেশে থেকে যেত। ২০১২ সালে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা মুনাফা হয়েছে প্রায় হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এর ৭০ শতাংশ দাঁড়ায় হাজার ২৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ইসলামী ব্যাংকের বিদেশী মালিকরা ওই পরিমাণ লভ্যাংশ নিয়ে গেছেন। একইভাবে ২০১১ সালে ব্যাংকের মুনাফা ছিল প্রায় হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সে হিসাবে সে বছর দেশের বাইরে গেছে প্রায় হাজার ৫০ কোটি টাকা। এদিকে বিদেশী প্রতিষ্ঠানের হাতে মালিকানা থাকায় বিনিয়োগকারীদের বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। এসব প্রতিষ্ঠান ব্যক্তি আন্তর্জাতিকভাবে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত কি না তাও জানা সম্ভব নয়। সূত্র আরও জানায়, ইসলামী ব্যাংকের বিদেশী একাধিক পরিচালক এবং শেয়ারহোল্ডারের বিরুদ্ধে তাদের দেশে বিভিন্ন সময় নানা অপরাধের অভিযোগও উঠেছে। তারা জঙ্গি সন্ত্রাসে অর্থায়নে জড়িত বলে বিভিন্ন সময় তথ্য বেরিয়ে এসেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে। অন্যদিকে বাংলাদেশেও ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় নানা অভিযোগ উঠেছে। এর বিরুদ্ধে জামায়াত শিবিরের কর্মকাণ্ডে অর্থায়নের অভিযোগ রয়েছে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের প্রধান শায়খ আবদুর রহমান ব্যাংকের মাধ্যমে হিসাব পরিচালনা করতেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়ান্দা বিভাগের তথ্যমতে, বর্তমানে এই ব্যাংকে শতাধিক সন্দেহজনক হিসাব রয়েছে। সেগুলোর লেনদেন তদারকির মধ্যে রাখা হয়েছে। যে কোনো সময় তথ্য-প্রমাণসহ প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে এর বিরুদ্ধে
বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মান্নান যুগান্তরকে বলেন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকসহ নিয়ন্ত্রক সব প্রতিষ্ঠানগুলোর বিধিবিধান মেনে চলে। ইসলামী ব্যাংক ১৬ কোটি মানুষের ব্যাংক। এটি জনগণের সম্পদ। ৭০ লাখ আমানতকারীর ব্যাংক। তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের শতাংশ শেয়ারের অংশগ্রহণে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বর্তমানে আমাদের বিদেশী শেয়ারহোল্ডার ৬৩.০৯ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, আইডিবিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মূল্যায়নে ব্যাংক শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের একটি মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এমন একটি শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান, যার কার্যক্রমের সঙ্গে দেশের শিল্প-বাণিজ্যসহ কয়েক কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ পরোক্ষভাবে জড়িত। ইসলামী ব্যাংকের মতো একটি সর্ববৃহৎ দেশ জনগণের ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সঠিক অবস্থান যাচাই না করে মন্তব্য করা বিস্ময়কর দুঃখজনক। তাই সব ধরনের ভিত্তিহীন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি


 

দুর্নীতি গ্রাহক হয়রানির শীর্ষে রয়েছে ব্যাংকটি
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ : ০৪ ডিসেম্বর, ২০১৩\
http://www.jugantor.com/assets/images/news_images/2013/12/04/thumbnails/3_46729.jpg
ইহুদি খ্রিস্টানদের মালিকানায় পরিচালিত ইসলামী ব্যাংক শুধু ধর্মীয় অনুভূতিকেই পুঁজি করেনি বরং প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে গুরুতর সব অনিয়মের প্রমাণও পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, ব্যাংকটি গ্রাহকসেবার কথা বলে একদিকে গ্রাহকদের কাছ থেকে নানাভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। অপরদিকে সিকিউরিটির নামে নানাভাবে গ্রাহকদের হয়রানি করছে। জানা গেছে, ব্যাংক থেকে ঋণ পেতে গেলে গ্রাহককে ঋণের তিনগুণ টাকার ল্যান্ড মর্টগেজ রাখতে বাধ্য করা হয়। এছাড়া ঋণ অনুমোদনের আগেই ব্যাংককে দিতে হয় এক বছরের অগ্রিম ১৮ থেকে ১৯ শতাংশ সুদসহ ঋণের সব টাকার চেক। এছাড়া ঋণ অনুমোদনের পর আবার সংশ্লিষ্ট শাখাকে দিতে হয় দ্বিগুণ টাকার আরও একটি চেক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ফিন্যানসিয়াল ইন্টিগ্রিটি কাস্টমার সার্ভিসেস বিভাগের তথ্য অনুযায়ী বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গ্রাহক হয়রানি হচ্ছে ইসলামী ব্যাংকে
 

কারওয়ানবাজার শাখায় গুরুতর ঋণ অনিয়ম : ব্যাংকটির কারওয়ানবাজার শাখায় গুরুতর ঋণ অনিয়ম চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। জাহাজ তৈরির প্রতিষ্ঠান আনন্দ শিপইয়ার্ডের আটটি জাহাজ রফতানির নিশ্চয়তাপত্র বা গ্যারান্টি দিয়েছিল ব্যাংক। অথচ একটি জাহাজও রফতানি হয়নি। চুক্তিগুলো বাতিল হওয়ায় বিদেশী ক্রেতারা গ্যারান্টির পুরো অর্থ সুদ-আসলে নিয়ে গেছে। আর ক্রেতাদের কাছ থেকে যে অর্থ অগ্রিম পাওয়া গিয়েছিল, তাও গ্রাহককে হাতিয়ে নেয়ার অবাধ সুযোগ করে দিয়েছে ইসলামী ব্যাংক। আনন্দ শিপইয়ার্ডের মালিকদেরই আরেক প্রতিষ্ঠান জেরিনা কম্পোজিট টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজও ব্যাংকের সঙ্গে যোগসাজশে ঋণসীমার বেশি অর্থ তুলে নিয়েছে। কোম্পানিতে অবশ্য আনন্দ শিপইয়ার্ডের একাধিক মালিকের শেয়ার ১৯ শতাংশ পর্যন্ত। ১৯ শতাংশে শেয়ার সীমাবদ্ধ রাখার কারণে ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ অনুসারে কোম্পানিটিকে আনন্দ শিপইয়ার্ড বা এর মালিকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বলা যাচ্ছে না। কৌশলের ফলে খেলাপি ঋণের কোনো দায়ও তাদের ঘাড়ে এসে পড়বে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে দেখা গেছে, ২০০৭ সালের ২৯ জুলাই ব্যাংকের ১৫২তম পরিচালনা পর্ষদের সভায় আটটি জাহাজ রফতানির চুক্তির বিপরীতে ২৫ কোটি ৬৬ লাখ, ছয়টি পারফরম্যান্স বন্ড, বিদেশী ক্রেতার ব্যাংকের অনুকূলে ৩৫৯ কোটি ৬৬ লাখ টাকার ২৪টি রিফান্ড গ্যারান্টি ২৫ কোটি ৬৬ লাখ টাকার ছয়টি ওয়ারেন্ট গ্যারান্টি ইস্যু করার সিদ্ধান্ত হয়। ফরেন এক্সচেঞ্জ ট্রানজেকশন নীতিমালা অনুযায়ী, জার্মানির প্রতিষ্ঠান কর্তৃক দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে কিনা তা নিশ্চিত না হয়েই বড় অংকের গ্যারান্টি পারফরম্যান্স বন্ড প্রদান করা হয়েছে। যেসব চুক্তির বিপরীতে অর্থ এসেছিল তা বাতিল হয়ে যাওয়ায় ইসলামী ব্যাংককে চুক্তি অনুযায়ী সুদসহ মুনাফা বিদেশী গ্রাহককে পরিশোধ করতে হয়েছে। ফলে যে পরিমাণ মুদ্রা দেশে এসেছিল, সুদসহ তার বেশি বিদেশে পাঠাতে হয়েছে। একই সঙ্গে অগ্রিম হিসেবে আসা বৈদেশিক মুদ্রাও গ্রাহককে হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ করে দেয়া হয়েছে, যার বিপরীতে জাহাজ রফতানি সম্পন্ন হয়নি। এতেই প্রমাণ হয় ব্যাংক গ্রাহকের যোগসাজশে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়েছে
৫৩৬ কোটি টাকা সঞ্চিতি সংরক্ষণের নির্দেশ : এদিকে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক আনন্দ শিপইয়ার্ডকে দেয়া ঋণ মন্দ বা ক্ষতিজনক মানে ধরে নিয়ে ৫৩৬ কোটি টাকা সঞ্চিতি সংরক্ষণে নির্দেশ দিয়েছে ইসলামী ব্যাংককে। তিন বছরে সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হবে ব্যাংকটিকে। এর মধ্যে চলতি বছরের ডিসেম্বরে ১৭৮ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ২০১৪ ২০১৫ সালের ডিসেম্বরেও সমপরিমাণ অর্থ সঞ্চিতি হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে ইসলামী ব্যাংককে। সূত্র জানায়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে অনিয়ম বেরিয়ে আসায় ইসলামী ব্যাংককে ৫৪৬ কোটি টাকা ক্ষতিজনক মানে ধরে নিয়ে সঞ্চিতি সংরক্ষণের নির্দেশ দেয়া হয়। কয়েক দফা চিঠি চালাচালির পর পাঁচ বছরে সঞ্চিতি সংরক্ষণের সুযোগ চায় ব্যাংকটি। প্রথম বছরে ৫০ কোটি পরের দুই বছর ১০০ কোটি করে সঞ্চিতি সংরক্ষণের সুযোগ চায় ইসলামী ব্যাংক। বাকি অংশ সংরক্ষণের প্রস্তাব দেয়া হয় চতুর্থ পঞ্চম বছরে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে তিন বছরে ৫৩৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা সঞ্চিতি সংরক্ষণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি ঋণ অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশও দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকটির চেয়ারম্যান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে পাঠানো চিঠিতে এসব নির্দেশনা দেয়া হয়। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়মানুযায়ী মন্দ বা ক্ষতিজনক মানের ঋণে সমপরিমাণ সঞ্চিতি সংরক্ষণ করতে হয়
আগের ঘটনা : এর আগেও বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল ২০১১ সালে আনন্দ শিপইয়ার্ডের প্রায় ১৫০ কোটি টাকাসহ ইসলামী ব্যাংকের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ৩৫০ কোটি টাকার ঋণ বিরূপভাবে শ্রেণীকরণ করে দেয়। এতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ পর্যায়ে বড় ধরনের প্রভাব বিস্তার করে ব্যাংক কোম্পানি। অসম্মানজনকভাবে ঘটনা নিষ্পত্তি করলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শন বিভাগের তৎকালীন এক মহাব্যবস্থাপক তার নির্বাহী পরিচালক পদে পদোন্নতি প্রত্যাখ্যান করে পদত্যাগ করেছিলেন
জেরিনা কম্পোজিট টেক্সটাইল : কোম্পানিটির জন্য ব্যাংকের বিনিয়োগের মঞ্জুরি সীমা ছিল যথাক্রমে ৪০ কোটি ২৬ কোটি টাকা। কিন্তু শাখা অনিয়ম করে মাত্রাতিরিক্ত অর্থ তোলার সুযোগ দিয়েছে। মার্চ শেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শক দল যথাক্রমে ৯৬ কোটি ৬৭ লাখ ৪৩ কোটি ২১ লাখ টাকার ঋণ স্থিতি পেয়েছে
বিল্ডট্রেড কালার কোট : কোম্পানিকেও সীমা অতিরিক্ত ঋণ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক চিঠিতে বলেছে, বিনিয়োগ হিসাবটিতে মোট বকেয়া ৭২ কোটি পাঁচ লাখ টাকার মধ্যে সাড়ে ২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা নিুমান পর্যায়ে খেলাপি ঋণ চিহ্নিত করার কথা। কিন্তু শাখা মাত্র চার কোটি ৪২ লাখ টাকা নিুমান দেখাচ্ছে। শাখা ক্ষমতাবহির্ভূতভাবে গ্রাহককে বেশি আর্থিক সুবিধা দিয়েছে। ছাড়া ইসলামী ব্যাংকের কারওয়ানবাজার শাখায় সাকিবুন্নাহার বস্ত্রবিতানের হিসাবে কাগুজে লেনদেন দেখিয়ে অর্থ তোলার প্রমাণ পেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক
 



নামে ইসলামী মালিক ইহুদি ও খ্রিস্টান
যুগান্তর রিপোর্ট
প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর, ২০১৩
মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে পুঁজি করে সচল রয়েছে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড। এ ব্যাংক ইসলামী শরিয়াহভিত্তিক বলে দাবি করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে শরিয়াহ নিয়ম অনুসরণ করছে না। বরং মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে ইসলামকে বাণিজ্যিকরণ করছে। জানা গেছে, ব্যাংকটির প্রায় ৭০ শতাংশ মালিকানা বিদেশীদের হাতে। আর ওইসব বিদেশীর অধিকাংশই ইহুদি ও অমুসলিম। এ ছাড়া ব্যাংকটির মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে শতশত কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ইসলামী ব্যাংকের পৃষ্ঠপোষকতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ১৩ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান এবং মন্ত্রণালয়ের নাম পাওয়া গেছে। শুধু তাই নয়, ব্যাংকটির বিরুদ্ধে গুরুতর ঋণ অনিয়মেরও অভিযোগ উঠেছে। এর আগে সন্ত্রাসবাদে অর্থের জোগানদাতা হিসেবে এ ব্যাংকটির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এ বিষয়ে জনতা ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আবুল বারকাত বলেন, যেসব ব্যাংক ইসলামিক ব্যাংক বলে কার্যক্রম চালাচ্ছে সেগুলো কোনোভাবেই সুদমুক্ত নয়। কাজেই ব্যাংকিংব্যবস্থা থেকে ‘ইসলাম’ শব্দটি বাদ দেয়া উচিত। তিনি বলেন, ইহুদিদের পরিচালিত কয়েকটি ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং চালু করেছে, এটাকে ধোঁকাবাজি ছাড়া আর কি বলা যেতে পারে? প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি যারা ইসলামী ব্যাংকিং করছে তারা মানুষের সঙ্গে মারাত্মক প্রতারণা করছে বলে তিনি মনে করেন। এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, দেশের দরিদ্র মানুষের ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে ইসলামকে বাণিজ্যিকরণ করছে দেশের ইসলামী ব্যাংকিং ব্যবস্থা। তিনি নিজের ‘মৌলবাদের অর্থনীতি’ শীর্ষক গবেষণার তথ্য তুলে ধরে বলেন, জামায়াতে ইসলামী ব্যাংক, বীমা, আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ ৮টি খাতে অর্থায়ন করেছে। এটা তাদের ‘অর্থনৈতিক কার্যভিত্তিক রাজনৈতিক প্রক্রিয়া’। তারা ধর্মের নামে ক্ষমতায় আসতে চায়। কিন্তু তা সম্ভব না হওয়ায় রাষ্ট্রের মধ্যে রাষ্ট্র বা সরকারের মধ্যে সরকার রাখার চেষ্টা করছে। ২০১০ সালে ইসলামী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে আয়োজিত ‘ইসলামী অর্থনীতি ও ব্যাংকিং’ শীর্ষক এক সেমিনারে আবুল বারকাত বলেন, জনতা ব্যাংকের ৬টি শাখায় ইসলামিক ব্যাংকিং চালুর অনুমোদন দেয়া হয়েছিল। ওই ব্যাংকের চেয়ারম্যান হিসেবে আমি বুঝতে চেষ্টা করেছি, ইসলামিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার আয় সুদ না অন্যকিছু। দেখেছি এটা কোনোভাবেই সুদের বাইরে নয়। এজন্য তিনি জনতা ব্যাংকের ইসলামী ব্যাংকিং চালুর সম্ভাবনা নাকচ করে দেন।
<a href='http://platinum.ritsads.com/ads/server/adserve/www/delivery/ck.php?n=acd94d5f' target='_blank'><img src='http://platinum.ritsads.com/ads/server/adserve/www/delivery/avw.php?zoneid=780&n=acd94d5f' border='0' alt='' /></a>
সূত্র জানায়, ইসলামী ব্যাংক নিজেদের সুবিধামতো ইসলামী শরিয়াহ বোর্ড গঠন করে নিজেদের স্বার্থে কার্যক্রম চালাচ্ছে। অদৃশ্য কারণে এ শরিয়াহ বোর্ডের সিদ্ধান্তের ওপর কেন্দ্রীয় ব্যাংক কখনো হস্তক্ষেপ করে না। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি নিজস্ব শরীয়াহ বোর্ড থাকা উচিত। কিন্তু কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে এটি করা যাচ্ছে না।ফাউন্ডেশনে অর্থ প্রদান বন্ধের নির্দেশ : জঙ্গি অর্থায়নের অভিযোগে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডকে তার অধিভুক্ত সেবামূলক প্রতিষ্ঠান ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনে অর্থ প্রদান বন্ধের নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনের অর্থের উৎস ও এর ব্যবহার নিয়ে প্রাথমিকভাবে কিছু অস্বচ্ছতার প্রমাণ পাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক ওই সিদ্ধান্ত নেয়।মুনাফার চার ভাগের তিন ভাগ বাইরে চলে যাচ্ছে : ব্যাংকটি প্রতি বছর যে বিপুল পরিমাণ মুনাফা করছে, তার চার ভাগের তিন ভাগ বাইরে চলে যাচ্ছে। আর এর বিদেশী মালিকরা ডলারে তাদের মুনাফা নিয়ে যাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভে চাপ তৈরি হয়ে থাকে। বিদেশীদের মালিকানা না থাকলে ওই পরিমাণ ডলার বাংলাদেশে থেকে যেত। ২০১২ সালে ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা মুনাফা হয়েছে প্রায় ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। এর ৭০ শতাংশ দাঁড়ায় ১ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। অর্থাৎ ইসলামী ব্যাংকের বিদেশী মালিকরা ওই পরিমাণ লভ্যাংশ নিয়ে গেছেন। একইভাবে ২০১১ সালে ব্যাংকের মুনাফা ছিল প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। সে হিসাবে সে বছর দেশের বাইরে গেছে প্রায় ১ হাজার ৫০ কোটি টাকা। এদিকে বিদেশী প্রতিষ্ঠানের হাতে মালিকানা থাকায় বিনিয়োগকারীদের বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য নেই বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে। এসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি আন্তর্জাতিকভাবে কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত কি না তাও জানা সম্ভব নয়। সূত্র আরও জানায়, ইসলামী ব্যাংকের বিদেশী একাধিক পরিচালক এবং শেয়ারহোল্ডারের বিরুদ্ধে তাদের দেশে বিভিন্ন সময় নানা অপরাধের অভিযোগও উঠেছে। তারা জঙ্গি ও সন্ত্রাসে অর্থায়নে জড়িত বলে বিভিন্ন সময় তথ্য বেরিয়ে এসেছে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোতে। অন্যদিকে বাংলাদেশেও ইসলামী ব্যাংকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় নানা অভিযোগ উঠেছে। এর বিরুদ্ধে জামায়াত ও শিবিরের কর্মকাণ্ডে অর্থায়নের অভিযোগ রয়েছে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট বোমা হামলার সঙ্গে জড়িত জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের প্রধান শায়খ আবদুর রহমান এ ব্যাংকের মাধ্যমে হিসাব পরিচালনা করতেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক গোয়ান্দা বিভাগের তথ্যমতে, বর্তমানে এই ব্যাংকে শতাধিক সন্দেহজনক হিসাব রয়েছে। সেগুলোর লেনদেন তদারকির মধ্যে রাখা হয়েছে। যে কোনো সময় তথ্য-প্রমাণসহ প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেয়া হবে এর বিরুদ্ধে।এ বিষয়ে ইসলামী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল মান্নান যুগান্তরকে বলেন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকসহ নিয়ন্ত্রক সব প্রতিষ্ঠানগুলোর বিধিবিধান মেনে চলে। ইসলামী ব্যাংক ১৬ কোটি মানুষের ব্যাংক। এটি জনগণের সম্পদ। ৭০ লাখ আমানতকারীর ব্যাংক। তিনি বলেন, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড ১৯৮৩ সালে বাংলাদেশ সরকারের ৫ শতাংশ শেয়ারের অংশগ্রহণে প্রতিষ্ঠা লাভ করে। বর্তমানে আমাদের বিদেশী শেয়ারহোল্ডার ৬৩.০৯ শতাংশ। তিনি আরও বলেন, আইডিবিসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মূল্যায়নে এ ব্যাংক শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা বিশ্বে ইসলামী ব্যাংকিংয়ের একটি মডেল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড এমন একটি শীর্ষস্থানীয় ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান, যার কার্যক্রমের সঙ্গে দেশের শিল্প-বাণিজ্যসহ কয়েক কোটি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত। ইসলামী ব্যাংকের মতো একটি সর্ববৃহৎ দেশ ও জনগণের ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে সঠিক অবস্থান যাচাই না করে মন্তব্য করা বিস্ময়কর ও দুঃখজনক। তাই সব ধরনের ভিত্তিহীন মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকার জন্য আমরা সংশ্লিষ্ট সবাইকে অনুরোধ জানাচ্ছি। 
- See more at: http://www.jugantor.com/first-page/2013/12/03/46512#sthash.okT3oV9q.dpuf
^উপরে যেতে ক্লিক করুন