বঙ্গবন্ধু তার সময়ে দুজন ইসলাম অবমাননাকারীকে দেশ থেকে বের করে দেন।



আওয়ামী লীগ পর্যন্ত যত নির্বাচন করেছে প্রতিটি নির্বাচনী মেনিফেস্টোয় কোরআন সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন না করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে এবং পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কোরআন সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন প্রণয়নের অভিযোগ ওলামা-মাশায়েখরা উত্থাপন করতে পারেননি আওয়ামী লীগ ধর্ম নিয়ে অতিগোঁড়ামি করা যেমন পছন্দ করেনি আবার ধর্মকে নিয়ে খেলতামাশাও সহ্য করেনি আশা করি এবারো করবে না
বখ্তিয়ার উদ্দীন চৌধুরী http://www.jjdin.com/images/rpt.gifআবদুল লতিফ সিদ্দিকী হজ সম্পর্কে এত বিরূপভাবে কথাবার্তা বলেছেন যে, ইসলামের কোনো ঘোরশত্রুর পক্ষেও সম্ভবত তা মুখে আনা সম্ভব ছিল না তাবলিগ, টকশো আর প্রধানমন্ত্রীপুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় সম্পর্কেও বিদ্রূপাত্মক কথা বলেছেন তিনি কথায় মনে হলো নামটা ছাড়া তার কাছে মুসলমানত্বের কিছুই নেই ফ্রেঞ্চকাট একটু দাড়িও আছে অবশ্য একতারাওয়ালা যোগী সম্প্রদায় তো দাড়ি রাখে আর 'ওরে পিতলা কলস তোরে নিয়ে যাব যমুনায়' গান গেয়ে ভিক্ষা করে আওয়ামী লীগ ধর্মীয় রাজনীতি করে না সত্য, কিন্তু প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে (১৯৪৯ সাল) আজ পর্যন্ত হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী, মওলানা আবদুর রশিদ তর্কবাগীশ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, শেখ হাসিনা যারাই আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতা ছিলেন সবাই ব্যক্তিগত জীবনে ধর্ম-কর্ম করেছেন এবং ধর্ম সম্পর্কে মমত্ববোধ নিয়ে কথা বলেছেন পাকিস্তানের সময় দুজন মস্তবড় পীর_ পাগারো শরীফের পীর আর মানকী শরীফের পীর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন লাখ লাখ মুসলমান দুই পীরের অনুসারী ছিলেন
আওয়ামী লীগ পর্যন্ত যত নির্বাচন করেছে প্রতিটি নির্বাচনী মেনিফেস্টোয় কোরআন সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন না করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছে এবং পর্যন্ত আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে কোরআন সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন প্রণয়নের অভিযোগ ওলামা-মাশায়েখরা উত্থাপন করতে পারেননি। আওয়ামী লীগ ধর্ম নিয়ে অতিগোঁড়ামি করা যেমন পছন্দ করেনি আবার ধর্মকে নিয়ে খেলতামাশাও সহ্য করেনি। আশা করি এবারো করবে না
রসুলুল্লাহ (সা.)-কে উপহাস করে কবিতা লেখার কারণে বঙ্গবন্ধু কবি দাউদ হায়দারকে দেশ থেকে বের করে দিয়েছিলেন। দাউদ হায়দার আজ ৪১ বছর দেশছাড়া। নামটা মুহূর্তে মনে পড়ছে না, আরেক পাগল 'দুই ঘণ্টায় নিরক্ষরতা দূর' নামে আল্লাহর জ্ঞান সম্পর্কে কটাক্ষ করে একখানা বই লিখেছিলেন বঙ্গবন্ধুর জীবিতকালে। ওই লোক জেল থেকে বের হতে পারেননি। কুত্তার (কুকুর) মাথায় টুপি পরিয়ে এক নেতা একবার আওয়ামী লীগের সর্বনাশ করেছিলেন। এখন পুনরায় লতিফ সিদ্দিকী হজ তাবলিগ সম্পর্কে অযথা কথাবার্তা বলে পুরো দলকে একটা এমব্যারাসিং অবস্থায় নিয়ে দাঁড় করালেন। প্রধানমন্ত্রীর নিশ্চয়ই জানা আছে, ক্ষমতার আসন আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বড় পরীক্ষার ক্ষেত্র। আশা করি প্রধানমন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকীকে শুধু মন্ত্রিসভা থেকে নয়, দলের প্রাথমিক সদস্যপদ থেকেও বহিষ্কার করবেন। বঙ্গবন্ধু হলে লতিফ সিদ্দিকীকে সম্ভবত দাউদ হায়দারের মতো দেশ থেকেই বের করে দিতেন।
প্রধানমন্ত্রী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন, তাহাজ্জুদ নামাজও পড়েন আর সকালবেলা কালামুল্লাহ শরিফ তিলাওয়াত করে দিনের কাজ শুরু করেন। দেশের মানুষ তার পরহেজগারি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল।
হেফাজতে ইসলামের আমির মওলানা আহমদ শফি শেখ হাসিনার পর্দার সচেতনতা সম্পর্কে প্রশংসা করেছেন। অথচ ওলামাদের সমর্থন পান না। সমর্থন পান এক লা-শরা মহিলা। সবই লতিফ সিদ্দিকীদের মতো কুলাঙ্গারদের কারণে। আওয়ামী লীগের আরো কোনো নেতা যদি ধর্ম সম্পর্কে বিদ্বেষ মনোভাব পোষণ করে থাকেন তাদেরও বহিষ্কার করা উচিত। প্রধানমন্ত্রী বিষয়টিও যেন বিবেচনা করেন।
বুদ্ধি বিবেকের সংমিশ্রণ যেখানে আছে সেখানে মতভিন্নতা না থাকতে পারে না, কিন্তু ইসলাম মৌলিক বিষয়ে কোনো মতভিন্নতা সহ্য করে না। ইসলামের মাজহাবগুলো বিস্তারিত ব্যাখ্যায় ভিন্ন ভিন্ন মত পোষণ করে বক্তব্য দিয়েছে সত্য, কিন্তু মৌলিক বিষয়ে তাদের মাঝেও কোনো মতভিন্নতা নেই। হজ মৌলিক বিষয়। লতিফ সিদ্দিকী হজের উৎপত্তির কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা বিদ্রূপাত্মক এবং মহানবী হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর প্রতি শ্লেষাত্মক। মৌলিক বিষয়ের ভিত্তিকে দুর্বল করার চেষ্টাও কুফরি। বস্নাসফেমি আইন থাকলে তার মৃত্যুদ- দাবি করা হতো।
আমাদের দেশে কিছু রাজনৈতিক কর্মী আছেন যারা প্রগতিশীল সাজার জন্য ধর্মের বিষয়ে কোনো কোনো সময় কিছু মোটাতাজা কথাবার্তা বলেন। তাদের জ্ঞানের দুর্বলতার কারণে এটা হয়ে থাকে। তাদের অনুধাবন করা উচিত, ক্রমবিবর্তনের মাঝে দুনিয়া যে উন্নতির স্তরে এসে উপনীত হয়েছে তার কন্ট্রিবিউটরের (ঈড়হঃৎরনঁঃড়ৎ) মাঝে ধর্ম অন্যতম। ধর্ম কেউ আবিষ্কার করে না, ধর্ম স্রষ্টার পক্ষ থেকে আসে। একবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বোম্বে থেকে পানির জাহাজে করে লন্ডন যাচ্ছিলেন। ওই জাহাজে উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম মওলানা শিবলী নোমানীও ছিলেন। আলাপচারিতায় মওলানা একবার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, 'আপনাদের নতুন ধর্ম ব্রাহ্মসমাজ প্রসার পেল না কেন?' উত্তরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছিলেন, 'তোমাদের ধর্মের মুহম্মদ (সা.)-এর মতো সৃষ্টিকর্তা মনোনীত কোনো লোক ছিল না বলে।' বাংলাদেশের বুদ্ধিবৃত্তির সব আধুনিকতাই এসেছে রবীন্দ্রনাথের জোব্বা থেকে।
আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর মতো মূর্খ প্রগতিশীলদের জন্য আরেকটা বিষয় উল্লেখ করতে চাই। বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনের অন্যতম নায়ক এম এন রায়কে ব্রিটিশ সরকার জেলে দিয়েছিল। তিনি সেবার দীর্ঘ সময় জেলে ছিলেন।
কারাবাস দীর্ঘ হওয়ায় তিনি মনস্থির করলেন ইসলাম ধর্ম মুহম্মদ (সা.) সম্পর্কে জানবেন। তাই তিনি প্রচুর লেখাপড়া করলেন এবং জেলে বসেই হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর ওপর বেশ বড়সড় একটা বই লিখে ফেললেন। প্রগতিশীল কর্মীদের সে বইটা পড়া উচিত। এম এন রায় পরবর্তী সময়ে কমিউনিস্ট আন্দোলন থেকে পিছুটান দিয়েছিলেন। কারাবাসের লেখাপড়ার কোনো প্রতিক্রিয়া তার জীবনের ওপর হয়েছিল কি না, তা হয়তো কোনো একসময় কোনো গবেষক বের করবেন।
লতিফ সিদ্দিকী তাবলিগ জামাত সম্পর্কেও কথাবার্তা বলেছেন। তাবলিগীরা নিরীহ নিরহংকার প্রকৃতির লোক। হজরত মুহম্মদ (সা.)-এর দেউরিতে ধর্মের কাজের জন্য সার্বক্ষণিক কিছু সাহাবা প্রস্তুত থাকতেন। তাদের কাজ ছিল সার্বক্ষণিক ধর্মের কাজে আত্মনিয়োগ করা। সেই সুন্নাতের আদলে সম্ভবত প্রতিষ্ঠিত এই তাবলিগ জামাতটা বিশ্বের সর্বত্র দীনের খেতমতে নিজেদের উৎসর্গ করে রেখেছে। তাদের সফলতার অঙ্কও বিরাট। জার্মানির ঈযধহপবষষড়ৎ বলেছেন, ২০৫০ সালে হয়তো জার্মানি ইসলামিক রিপাবলিক হয়ে যাবে। ফ্রান্সের মার্চিডিস শহর (বন্দরনগরী) এখন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল। অথচ ৫০ বছর আগে তারা ইসলাম ধর্মটাও চিনত না। তাবলিগীরা তো ভালো কাজ করেন, মন্দ লোকের কাছে তো তা ভালো লাগার কথা নয়।
টকশোওয়ালাদের সম্পর্কেও বিরূপ কথাবার্তা বলেছেন লতিফ সিদ্দিকী। আওয়ামী লীগের আরো বহু নেতাও টকশোওয়ালাদের সম্পর্কে কথাবার্তা বলেন। টকশোওয়ালারা মিথ্যা বললে আওয়ামী লীগ আর এক টকশোয় তার জবাব দিতে পারে। টকশো তো কারো একক সম্পত্তি নয়। আর টকশোওয়ালাদের প্রতি মানুষের দৃঢ় আস্থাও নেই। মুষ্টিমেয় কয়েকজন কথাবার্তা বললে দর্শক গুরুত্বের সঙ্গে শোনে। সবার প্রতি দর্শকের গুরুত্ব আস্থা সমান নয়। অনেকে অভিযোগ করেছেন, লীগ সরকার নাকি মিডিয়াকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে এবং আইন করারও উদ্যোগ নিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীকে আবেদন জানাব 'নিন্দারে করিব ধ্বংস কণ্ঠ রুদ্ধ করি। স্তব্ধ করিয়া দিব মুখরা নগরী।' এমন কোনো কর্ম যেন শেখ হাসিনার সরকারকে দিয়ে না হয়। এটা গণতন্ত্র বাকস্বাধীনতার পরিপন্থী।

বখ্তিয়ার উদ্দীন চৌধুরী: প্রবন্ধকার, কলামিস্ট -

^উপরে যেতে ক্লিক করুন