চিকেনপক্স বা জলবসন্ত

জলবসন্ত ছোট-বড় সবাইকে আক্রমণ করে৷ এক সপ্তাহ বা তার বেশি সময় প্রায় একটানা এই অস্বস্তিকর অবস্থা থাকে৷ প্রথমে সামান্য জ্বর হতে পারে, এর পর ফোস্কা পড়ে, চুলকানি হয় এবং অবশেষে ফোস্কা থেকে শুকনো মরা চামড়া উঠে আসে৷ খুব কমক্ষেত্রেই জল বসন্ত মারাত্মক রোগ হিসাবে দেখা দিতে পারে৷ এই অস্বস্তিকর রোগের ব্যাপারে একটা সান্তনা রয়েছে,সেটাহলো-আপনার একবার জল বসন্ত হয়ে গেলে, সেটা সারা জীবনের জন্য বিদায় নেয়৷ কারো জলবসন্ত হলে আপনি নিচের ব্যবস্থা গুলো গ্রহণ করুন-
  • ব্যথা নাশক ওষুধ দিন যদি জ্বরের কারণে আপনি অস্বস্তিবোধ করেন, তাহলে প্যারাসিটামল খান৷ যদি আপনার শিশুর বয়স দু বছরের কম হয়, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন৷
  • হালকা পোশাক পরুন । জলবসন্তে আক্রান্ত হবার পর রোগীর ত্বক যত বেশি ঠান্ডা রাখতে পারবেন, রোগী তত কম অস্বস্তিবোধ করবে৷ রোগীকে এক গাদা কাপড় চোপড়ে না জড়িয়ে তাকে হালকা সুতির কাপড় কিংবা পায়জামা পরান৷ কারণ এটা ত্বকে কম জ্বালা পোড়া সৃষ্টি করে৷
  • রোগীর শরীর ঠান্ডা করুন রোগীর শরীরের তাপমাত্রা কমানোর জন্য একটা ঠান্ডা ভেজা কাপড় দিয়ে ত্বক মুছে দিতে পারেন কিংবা ঠান্ডা পানিতে গোসল করাতে পারেন৷ এতে রোগী আরাম বোধ করবে৷ তবে খেয়াল রাখবেন পানি যেন বেশি ঠান্ডা না হয়৷
  • রোগীকে সজীব এবং পরিষ্কার রাখুন জলবসন্তের রোগীকে প্রতিদিন গোসল করিয়ে পরিষ্কার রাখতে হবে৷ এটা তার সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে৷ রাতে ঘুমানোর সময় রোগীর সারাদিন পরে থাকা জামা কাপড় পাল্টে তাকে পরিষ্কার কাপড় পরাতে হবে৷ পরিষ্কার পোশাক তাকে কেবল স্বস্তিই দেয়না, এটা তার সংক্রমণের ঝুঁকি কমাতে ও সাহায্য করে৷
  • চুলকানি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করুন রোগীকে বুঝিয়ে বলুন সে যেন তার শরীর চুলকানোর চেষ্টা না করে,কারণ চুলকানোর ফলে তার সংক্রমণ হতে পারে এবং ত্বকে স্থায়ী দাগ পড়ে যেতে পারে৷ কিন্তু রোগী প্রবল চুলকানি কে সবসময় পুরোপুরি উপেক্ষা করতে পারবে না,তাই তাকে একটা ঠান্ডা, ভেজা নরম কাপড় দিন, যাতে সে এটা দিয়ে আস্তে আস্তে ঘষতে পারে৷ আর এটা তার ফোস্কা না ফাটিয়ে ত্বক অক্ষুন্ন রাখতে সাহায্য করবে৷
  • চুলকানি নিয়ন্ত্রণের জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন ব্যবহার করুন মুখে অ্যান্টিহিস্টামিন খাওয়ালে তা চুলকানি কমাতে সাহায্য করে৷কিন্তু যদি এতে চুলকানি না কমে, অন্তত এটা আপনার রোগীকে ঘুমিয়ে পড়তে সাহায্য করবে, যার ফলে সে কিছুটা বিশ্রাম নিতে পারবে৷
  • নখ ছোট করে কেটে দিন আপনার শিশু জলবসন্তে আক্রান্ত হলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তার আঙুলের নখ ছোট করে কেটে দিন৷ এমন কি অসুখ সেরে যাবার পরও কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত তার নখ প্রতি সপ্তাহে দুবার কেটে দেবেন৷ কারণ নখ বড় থাকলে সে নখ দিয়ে চুলকাবে এবং এতে চুলকানো স্থানে ব্যাকটেরিয়া জনিত সংক্রমণ হতে পারে এবং স্থায়ীভাবে দাগ পড়ে যেতে পারে৷
  • অ্যান্টিবায়োটিক সহকারে চিকিৎসা করুন যদি ত্বকে সংক্রমণের চিহ্ন দেখাদেয়, যেমন পক্সের চারপাশে লাল হওয়া কিংবা পক্সের মুখে পুঁজ হওয়া, তাহলে ওই স্থানে অ্যান্টিবায়োটিক মলম মেখে দিন৷ সংক্রমিত জলবসন্তের সংখ্যা যদি অনেক বেশি হয় তাহলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন৷
  • রোগীকে সূর্যালোক থেকে দূরে রাখুন যার জলবসন্ত হয়েছে কিংবা সম্প্রতি জলবসন্ত থেকে সেরে উঠেছে এদের সবাইকে সূর্যালোকের ব্যাপারে অতিরিক্ত সতর্কতা নিতে হবে৷ একবার জলবসন্ত হবার পর ত্বক প্রায় একবছর পর্যন্ত অরক্ষিত থাকে, এবং সূর্যালোকে সহজে পুড়ে যায়৷ তাই সম্প্রতি জলবসন্ত থেকে সেরে উঠেছে এমন রোগী যখন ঘরের বাইরে সরাসরি রোদের মধ্যে যাবে তার সমস্ত শরীরে ভালকরে সানস্ক্রিন মেখে দিতে হবে৷
কখন চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন?
প্রথমিক পর্যায়ে
  • তীব্র এবং ঘনঘন কাপুনি দিয়ে জ্বর আসে এবং এমনিতেই সেরে যায়
  • লসিকা গ্রন্থিব্যথা, লাল এবং লসিকা নালী ফুলে যায়৷ কুচকির কাছের লসিকা গ্রন্থির নালী বেশি আক্রান্ত হয়
  • অন্ডকোষ ফুলেযায় এবং ব্যথা হয়
  • মারাত্মক পর্যায়ে শরীরের যে সকল জায়গা আক্রান্ত হয় সে সকল স্থান ফুলে যায় এবং মোটা হতে থাকে। আক্রান্ত জায়গা গুলো শক্ত হয়ে যায়, চাপ দিলে বসে যায়না। হাঁটুর নিচের অংশে বেশি দেখা যায়
  • লসিকাগ্রন্থি ফেটে যাওয়ার কারণে দুধের মতো সাদা লসিকা রস প্রস্রাবের সঙ্গে বের হয়ে যায়৷
  • অন্ডকোষের মধ্যে পানি জমে যায়
  • অন্ডকোষে প্রদাহ হয়
চিকিৎসা : লক্ষণগুলো দেখাদিলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে।
প্রতিরোধ
  • সবাইকে অবশ্যই মশারি ব্যবহার করতে হবে
  • বাড়ির আশপাশের যে সকল জায়গায় ময়লা পানি জমতে পারে সে সকল জায়গা ভরাট করে ফেলতে হবে
  • বাড়ির আশেপাশের ঝোপঝাড় পরিষ্কার করতে হবে যাতে মশা বসবাস করতে না পারে
  • নিয়মিত কীটনাশক ছড়িয়ে বাড়ির আশপাশ মশামুক্ত রাখতে হবে।

 
^উপরে যেতে ক্লিক করুন