ডেঙ্গু সাধারণত দুই ধরনের হতে পারে -
- ক্লাসিক্যাল জ্বর এবং
- হেমোরেজিক জ্বর
ক্লাসিক্যাল জ্বর
লক্ষণ
- তীব্র জ্বরের সঙ্গে কাপুনি, জ্বর ১০৩ থেকে ১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট উঠতে পারে৷
- মাথাব্যথা
- মাংসপেশি এবং গিঁটে প্রচন্ড ব্যথা
- গলা ব্যথা
- খাওয়ায় অরুচি
- বমিবমি ভাব বা বমি হওয়া
- জ্বর শুরু হওয়ার তিন চার দিন পর ত্বকে র্যাশ (লাললাল ফুসকুড়ি) বের হয়।
হেমোরেজিক জ্বর
এটি ডেঙ্গুর মারাত্মক অবস্থা। এ ক্ষেত্রে রোগীর
ত্বকের নিচে রক্ত জমাট বাধে এবং দেহের বিভিন্ন অঙ্গ যেমন পাকস্থলী ও
অন্ত্রে রক্তক্ষরণ ঘটে। এ অবস্থায় রোগীর মৃত্যু ঘটতে পারে।
লক্ষণ
- জ্বর ১০৬ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত উঠতে পারে৷
- তীব্র জ্বরের সঙ্গে কাপুনি
- মাথা ব্যথা
- মাংস পেশি এবং গিঁটে প্রচন্ড ব্যথা
- গলা ব্যথা
- খাওয়ায় অরুচি
- রক্ত বমি
- ত্বকে র্যাশ (লাললাল ফুসকুড়ি) বের হয়
- নাক দিয়ে রক্ত পড়া
- মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া
- পায়খানার সঙ্গে রক্ত পড়া
- প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত পড়া
- শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে
- রক্তের চাপ কমে যায়
- লসিকা গ্রন্থি ফুলে যায়
- চোখ লাল হয়ে যায়
- নাড়ীর গতি বেড়ে যায়
- রোগীর হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায়
- পেটে তীব্র ব্যথা হয়
- রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে
ডেঙ্গু থেকে কী জটিলতা হতে পারে :
- নিউমোনিয়া
- অস্থিমজ্জার স্বাভাবিক ক্রিয়া ব্যাহত হওয়া
- চোখের প্রদাহ
- অন্ডকোষের প্রদাহ
- ডিম্বাশয়ের প্রদাহ
- শক
- রক্তপাত
- রক্তশূন্যতা
প্রতিকার :
রোগীর লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে ৷ রোগীকে
বিশ্রামে থাকতে হবে ৷ প্রচুর তরল খাবার খেতে দিতে হবে ৷ ক্ল্যাসিক্যাল
ডেঙ্গু সাধারণত ৭ থেকে ১০ দিনে ভালো হয়ে যায় ৷ হেমোরেজিক ডেঙ্গুর ক্ষেত্রে
রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে ৷ ডেঙ্গুজ্বর আক্রান্ত রোগী কে মশারীর
মধ্যে রাখতে হবে ৷
প্রতিরোধ :
১. মশার বংশ বিস্তারের স্থান গুলো নির্মূল করবেন কীভাবে ?
- বাড়ির বাইরে গাছের টব ও জলাধার গুলো শুকনো, পানিশূন্য রাখতে হবে ৷ যেসব জিনিসে বৃষ্টি বা বৃষ্টির পানি জমা হয়, যেমন- পুরনো টায়ার, ডাবের খোসা ইত্যাদি বাসার আশে পাশে না ফেলে ডাস্টবিনে ফেলে দিবেন।
- টবে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখুন
- ফ্রিজের নিচের ট্রেতে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখুন
- ফুলদানিতে যেন পানি জমে না থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখুন
জনস্বাস্থ্য কর্মীরা যাতে স্থির জলাধার, জলাবদ্ধ
এলাকা পরিস্কার করে, নির্মাণ স্থলে বা বর্জ্য পানি ট্রিটমেন্টের স্থানে
স্থিরজল সরিয়ে যাতে পাড়ার লোকের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তা দেন এজন্য সবাইকে
উদ্যোগী হতে হবে।
২. নিজেকে মশার কামড় থেকে রক্ষা করবেন কীভাবে?
- জানালা-দরজায় নেট এবং খাটে মশারি ব্যবহার করুন
- দিনের বেলা মশা তাড়াবার ক্রিম, মশারকয়েল, ভেপর ম্যাট ব্যবহার করতে পারেন।
কীভাবে বুঝবেন ডেঙ্গু হেমোরেজিক (রক্তক্ষরণী) জ্বর
রক্ত পরীক্ষায় যদি অণুচক্রিকাবা প্লেটলেটের সংখ্যা
কমে যায়, তাহলে বুঝতে হবে এটি হেমোরেজিক বা রক্ত ক্ষরণী জ্বর। শকে চলে
যাওয়া বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, অস্থিরতা, অবসন্নতা, পেটে তীব্রব্যথা, হাত-পা
ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, ত্বক কুঁচকে যাওয়া, রক্তচাপ কমে যাওয়া, বেশিবেশি
প্রস্রাব হওয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দেওয়া মাত্র রোগীকে হাসপাতালে স্থানান্তর
করতে হবে। পুনরায় রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে।
প্রচুর তরল খাওয়াতে হবে। বিশুদ্ধ পানি যথেষ্ট
পরিমাণে পান করাতে হবে। সেইসঙ্গে প্রস্রাবের পরিমাণ পর্যবেক্ষণ করতে হবে।
সময়মতো সঠিক ব্যবস্থাপনায় ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরও সারিয়ে তোলাযায়। বেশি
রক্তক্ষরণ হলে ফ্রেশ ফ্রোজেন প্লাজমা কিংবা কনসেনট্রেটেড প্লেটলেট অথবা
প্রয়োজনে পূর্ণ রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে।
রোগী কেন মারা যায়
অত্যধিক তাপ মাত্রার জ্বরের জন্য দেহে পানিশূন্যতা
দেখা দেয় দ্রুত। কোষের অভ্যন্তরীণ তরল কমে যায়, আশপাশের রক্ত নালিতে চাপ
পড়ে, শুরু হয় রক্তক্ষরণ।ইন্টারনাল ব্লিডিং। বেশিমাত্রায় রক্তক্ষরণ চলতে
থাকলে অণুচক্রিকা বা প্লেটলেট সংখ্যায় কমে যায়। প্লেটলেট কমে গেলে রক্ত
জমাট বাঁধতে পারে না, ফলে ধীরে ধীরে রক্ত ক্ষরণ আরও বাড়তে থাকে। দেখা দেয়
শক সিনড্রম। শরীরের অভ্যন্তরীণ ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। যথাযথ
চিকিৎসা-ব্যবস্থাপনার অভাবে রোগীর দ্রুত অবনতি ঘটে।নেমে আসে অবাঞ্ছিত
মৃত্যুর অন্ধকার।
রক্তের কোন পরীক্ষা জরুরি
ডেঙ্গু ভাইরাস সনাক্ত করণের, অর্থাৎ জীবাণু পৃথক
করণের কোনো পরীক্ষা আমাদের এখানে নেই। রোগের লক্ষণ দেখে চিকিৎসকের পরামর্শ
মতো রক্তে বিশেষ অ্যান্টিবডির উপস্থিতি নির্ণয়ের মাধ্যমে সাধারণত ডেঙ্গু
শনাক্ত করা হয়।
তবে এটি কোনো নিশ্চিত পরীক্ষা নয়। সাধারণ জ্বর হলেই
এটি করার দরকার নেই, কারণ এটি ব্যয়বহুল পরীক্ষা। সাধারণ জ্বর যদি উচ্চ
তাপমাত্রায় (১০৩ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি) হয় তাহলে প্রথমেই রক্তের একটি
রুটিন পরীক্ষা করে অণুচক্রিকা বা প্লেটলেট কাউন্ট দেখে নেওয়াটা জরুরি। যদি
প্লেটলেট বা অণুচক্রিকা সংখ্যায় এক লাখের কম হয় তাহলে পরবর্তী পরীক্ষার
জন্য চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
চিকিৎসা
বেশিরভাগ ডেঙ্গুজ্বর ই সাত দিনের মধ্যে সেরে যায়,
অধিকাংশই ভয়াবহ নয়। প্রয়োজন যথেষ্ট পরিমাণে পানিপান, বিশ্রাম ও প্রচুর তরল
খাবার। সঙ্গে জ্বর কমানোর জন্য এসিটামিনোফেন (প্যারাসিটামল) গ্রুপের ওষুধ।
সাধারণ ডেঙ্গুর চিকিৎসা এ-ই। তবে ব্যথানাশক ওষুধ হিসেবে এসপিরিন বা
ক্লোফেনাক-জাতীয় ওষুধ দেওয়া যাবেনা। এতে রক্তক্ষরণ বেড়ে যেতে পারে।
হেমোরেজিক বা রক্তক্ষয়ী ডেঙ্গু, যা খুবই কম হয়ে থাকে, বেশি ভয়াবহ। এতে
মৃত্যুও হতে পারে।জ্বর, সঙ্গে রক্তক্ষরণের লক্ষণ দেখামাত্র হাসপাতালে ভর্তি
করাতে হবে বিশেষ চিকিৎসার জন্য। জ্বর কমানোর জন্য বারবার গা মোছাতে হবে
ভেজা কাপড় দিয়ে।
মশা কখন কামড়ায় ?
ডেঙ্গুমশা, মানে এডিস মশা সকাল-সন্ধ্যায় কামড়ায়।
মানেহলো এই, ভোরে সূর্যোদয়ের আধ ঘণ্টার মধ্যে এবং সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের
আধঘণ্টা আগে এডিস মশা কামড়াতে পছন্দ করে। তাই এই দুই সময়ে মশার কামড় থেকে
সাবধান থাকবে হবে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধে থ্রি-‘ভি ’ব্যবস্থাপনা
ডেঙ্গু হবেনা, যদি পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন থাকি,
দৈনন্দিন স্বাস্থ্য-অভ্যাস পরিবর্তন করি। ভেক্টর (এডিসমশা), ভিকটিম (রোগী),
ভাইরাস (ডেঙ্গুভাইরাস) এই তিন ‘ভি’ডেঙ্গু-ব্যবস্থাপনার সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে
জড়িত। এডিস মশা ডেঙ্গুর ভেক্টর বা বাহক।কাজেই প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে নিজের
ঘর, আঙিনায় মশার উৎস ধ্বংস করুন।ফুলের টব, পুরোনো ক্যান বা পাত্র, গামলা,
গাছের কোটরে যাতে চার-পাঁচ দিন পানি জমে না থাকে, ছোট আবদ্ধ জায়গায় যাতে
বৃষ্টির পানি জমে না থাকে, সে দিকে খেয়াল রাখুন।নিজেই উদ্যোগী হোন, কারও
আশায় বসে থাকবেন না।