বঙ্গবন্ধুর বাণী সম্পর্কে



বঙ্গবন্ধু কি বন্দুকবাজ পলিটিশিয়ান ছিলেন? সন্ত্রাসের মাঝে কি তার বেড়ে ওঠা? মার্চের অহিংস আন্দোলন কি সশস্ত্র ছিলো? ওয়েল ওরিয়ানা ফালাচি বলছিলো, আর বলছিলো অ্যান্থনি মাসকারেনহাস। কথাগুলা বললাম একটা বিশেষ কারণে। আমাদের অনেকেই নীচের কথাগুলা লেখা একটা ছবি কাভার পিক হিসেবে ব্যবহার করেন:
When you play with the gentlemen, you play like a gentlemen.
But When you play with bastards, make sure you play like a bigger bastard.
Otherwise you will lose….


এই কাভারপিক আমিও ব্যবহার করছি, অনলাইনে এইটার আমদানি আমার হাতেই, কিন্তু ইদানিং ব্যাপক অপব্যবহার হইতে দেইখা কিছু কথা বলা প্রয়োজন মনে করতেছি। একটু আগে এক বন্ধু আমার এক স্ট্যাটাসে এই কথাগুলা লেইখা সঙ্গে জুইড়া দিছেন এইটা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্পিচ! বক্তৃতা! ওহ নো ম্যান!
এই কথাগুলা অ্যান্থনি মাসকারেনহাসের লেখা, আ লিগেসি অব ব্লাড বইয়ের ‘দ্য ফলস স্টার্ট’ শিরোনামের দ্বিতীয় অধ্যায়ে আছে। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সখ্যতা বুঝাইতে গিয়া মাসকারেনহাস জানাইছিলো তারা ৫৪ সালে একসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমনে গেছিলেন। বঙ্গবন্ধু রাজনৈতিক ক্যাটাগরিতে আর মাসকারেনহাস সাংবাদিক ক্যাটাগরিতে। প্রোগ্রামটার নাম আইভিপি, কম্যুনিজমের অসাড়তা দেখাইতে এবং তাগো ফ্রি ওয়ার্ল্ডের ধারণা বুঝাইতেই বিভিন্ন দেশের মার্কিন দুতাবাস সব খাতের প্রমিজিং লোকগুলারে মার্কিনবান্ধব বানাইতে হাওয়াইয়ে পনেরো দিনের একটা সফরে পাঠাইতো।
তো সেই সফরে গ্র্যান্ড ক্যানিয়ন থেকে লসঅ্যাঞ্জেলস যা্ওয়ার সময় কিছু ইন্দোনেশিয়ানের সঙ্গে থ্রি কার্ড খেলতে বসেন বঙ্গবন্ধু আর মাসকারেনহাস। তারা ছিলো পাকা জুয়াড়ি এবং চিট করতেছিলো। বঙ্গবন্ধু এরপর নতুন এক প্যাকেট তাস আনায়া খেলা ঘূরায়া দিলেন। দেখাইলেন পাল্টা কেরামতি, যা হারছিলেন দুইজন তা তো তুললেনই জিতলেন সঙ্গে জিতলেন ৩৮৬ ডলার, একটা ঘড়ি, সোনার ক্যাপওয়ালা পার্কার ৫১ কলম আর একটা সোনার আংটি। মাসকারেনহাস এরপর তারে জিগাইলেন ক্যামনে কি, বঙ্গবন্ধু উত্তর দিলেন উপরের কথাগুলা।
এখন এই গল্পটার উপলক্ষ্যে আসলে মাসকারেনহাস বঙ্গবন্ধুরে জোচ্চোর বানাইছেন। রাষ্ট্রপরিচালনায় তিনি জুয়াড়ির মতো করতেছিলেন, অর্থাৎ চিটিং। তাই তিনি বঙ্গবন্ধুরে সুপরামর্শ দেন এই বলে যে তুমি এইসব ছাইড়া কার্ড খেললে ভালো রোজগার করতে পারবা। এবং মাসকারেনহাস এও জানাইছেন যে বঙ্গবন্ধু তারে কানে কানে একটা গোপন সংবাদ দিছেন যে ভুট্টোর সঙ্গে তার একটা গোপন সমঝোতা হইছে। বাংলাদেশ পাকিস্তান তলে তলে বন্ধুই থাকবে!
তো প্রচুর আজগুবি গল্পে ভরপুর লিগেসি অব ব্লাড আসলে বঙ্গবন্ধু হত্যা জায়েজ করতে ফরমায়েশি কিতাব। আমরা মাসকারেনহাসরে চিনি তার জেনোসাইড নামে রিপোর্টটার জন্য। গণহত্যার মাসখানেক পর সেটা টেলিগ্রাফে ছাপায়া তিনি আলোচনায় আসেন। তার আগ পর্যন্ত মর্নিং নিউজের হইয়া পাকিস্তানের সেনাবান্ধব লেখালেখি চালায়া গেছিলেন, বাংলাদেশে ঘুইরা গিয়া রিপোর্ট করেন সব স্বাভাবিক।
বঙ্গবন্ধু তার কথিত দোস্তরে অপছন্দ করতেন তার লোভ এবং অসততার কারণে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মাসকারেনহাস বঙ্গবন্ধুর কাছে ২৪ লাখ টাকা চাইছিলেন লন্ডনে একটা বাড়ি কেনার জন্য, বিভিন্ন দেশ থিকা আসা সাহায্য তহবিল থেকে টাকাটা দিতে বলছেন। বঙ্গবন্ধু কইছিলেন আমার দেশের মানুষ না খাইয়া আছে আর তোমারে আমি বাড়ি কিনার টাকা দিমু! কেমনে দিমু? আমার তো টাকা নাই, আর তুমি যেখান থেকে টাকা খুজতেছো সেই টাকা জনগনের, আমার না। এর কিছুদিন পর শুরু হয় বাংলাদেশে দূর্ভিক্ষ এবং আওয়ামী লীগ সরকারের দূর্নীতি নিয়া সিরিজ রিপোর্টিং। ফার ইস্টার্ন ইকোনোমিক রিভিউতে ছদ্মনামে বিশাল বিশাল লেখা লিখছেন তখন মাসকারেনহাস।
তো যাই হোক। বঙ্গবন্ধু জুয়া খেলতেন না। তাসই খেলতেন না। জেলখানায় কয়েকবার যাও খেলছেন সেটা স্পেডট্রাম্প কিংবা টুয়েন্টি নাইন। জুয়া না। আমি অত্যন্ত দুঃখিত না বুইঝা কথাটা ওইভাবে ব্যবহার করার জন্য। কাভারপিকটা প্রত্যাহার করে নিছি। এবং আশা করতেছি যারা জানেন না তারা ঘটনাটা জানার পর, আর এটি ব্যবহার করবেন না, অন্তত বঙ্গবন্ধুর নামে। যদি লিখতেই হয়, লিখবেন অ্যান্থনি মাসকারেনহাস, বঙ্গবন্ধু না…
বইয়ের পঞ্চম পৃষ্টাটা তুলে দিলাম, নিজের প্রজ্ঞা এবং বিবেচনাবোধ ব্যবহার করার জন্য…
জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু…
^উপরে যেতে ক্লিক করুন