একটি ছবির গল্প


বায়ে শেখ কামাল। ডানের জন আমাদের রুহেল ভাই। জার্মানি, মিউনিখ, ১৯৭।
বায়ে শেখ কামাল। ডানের জন আমাদের রুহেল ভাই। জার্মানি, মিউনিখ, ১৯৭।
ছবির দুজনের পরিচয়টা দিই আগে। বায়ে শেখ কামাল। ডানের জন আমাদের রুহেল ভাই। জায়গাটা জার্মানি, মিউনিখ, ১৯৭২ সালে সেখানেই বসেছিলো অলিম্পিকের আসর। এই ছবিটার সঙ্গে বেশ কয়েকটা গল্প জড়িত। সংক্ষেপে তা তুলে ধরছি বন্ধুদের জন্য । রুহেল ভাই তখন জার্মানি। মুক্তিযুদ্ধে আহত পায়ের চিকিৎসা করাচ্ছেন। হুমায়ুন রশীদ চৌধুরী পশ্চিম জার্মানিতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত। রুহেল ভাই তার সম্পর্কে ভাতিজা,এমবেসিতে অবৈতনিক পিআরও, খুনসুটি লেগে আছে। অলিম্পিকের ভিভিআইপি টিকেট এসেছে হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর কাছে। তিনি সেগুলো দেখিয়ে মজা নিচ্ছেন। রুহেল ভাই বললেন একটা দিন যেতে চান, চাচা বললেন, নট ইন ইউর লাইফ টাইম।
ব্যাপারটা বদলে গেলো কদিন পর। চৌধুরী সাহেবের চেম্বারে ডাক পড়লো রুহেল ভাইর। তার দিকে সব টিকেট ছুড়ে দিলেন রাষ্ট্রদূত। মুখ গম্ভীর। ব্যাপার কি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তখন অসুস্থ্য, চিকিৎসা করাতে গেছেন লন্ডনে। সেখানে তাকে বলা হলো এটা স্নায়ু চাপের কারণে হয়েছে, স্ট্রেস থেকে। তো তাকে রেস্টে থাকতে হবে একটা মাস। সপরিবারে বঙ্গবন্ধু চলে গেলেন সুইজারল্যান্ড। দিন তিনেক কাটিয়েই তার হাঁসফাস শুরু হয়ে গেলো। এভাবে কি থাকা যায়। বললেন, ইউরোপে রাষ্ট্রদুত কে কে আছে তাদের খবর দাও। তো হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর অলিম্পিক দেখাও চাঙ্গে।
রুহেল ভাইর তো পোয়াবারো ভিভিআইপি গ্যালারিতে যাচ্ছেন অলিম্পিক দেখছেন। এর মধ্যে খবর এলো বড় অতিথি এসেছেন, হি নিডস টু এটেন্ড দেম। হোটেলে গিয়ে নক করলেন। বললেন স্যার আমি এমবেসি থেকে এসেছি। দরজা খুলে শেখ কামাল বললেন, তুই!দু্ই বন্ধুর দেখা হয়ে গেলো বহুদিন পর। রুহেল ভাই কামালকে নিয়ে ঘুরছেন। বললেন বিয়ার টিয়ার খাবি কিছু? হুইস্কি? শেখ কামাল বলেন, ছিঃ কি বলিস এইসব!রুহেল ভাই বলেন, ক্লাবে যাবি, ড্যান্স দেখবি? বা ডিস্কোতে।শেখ কামাল বলেন, তুই তো ব্যাটা নষ্ট হয়ে গেছিস বিদেশে এসে। পুরাই খবিশ।
রুহেল ভাই বলেন, এইটা কি ড্রেস পড়ছিস, পুরাই ফকিরা। তুই একটা দেশের প্রধানমন্ত্রীর ছেলে। শেখ কামাল বলেন, আমি বিশ্বের সবচেয়ে গরীব দেশটার প্রধানমন্ত্রীর ছেলে। এই কোটটা নিউমার্কেটের মাস্টার টেইলার্স থেকে বানানো। রুহেল ভাই অবাক হন এবং এখন যখন শেখ কামালের বিরুদ্ধে নানা কল্পকথা শুনেন, খেপে যান। কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকাতে দেখেননি। শুধু বললেন কামাল গালি জানতো ভালো। পাকিস্তান জার্মানি ফাইনালের দিন গ্যালারি থেকে ধুমসে এমন গালি দিয়েছেন পাকিদের…!
শেখ কামাল বললেন, দোস্ত একটা ক্লাব দিয়েছি, নাম আবাহনী ক্রীড়া চক্র। রুহেল ভাই বললেন এটা কেমন নাম? কামাল বললেন, পুরা বাংলা নাম, তুর্য (সালাহউদ্দিন) আছে আমাদের সাথে। রুহেল ভাই বললেন জার্সির কালার কি? কামাল জানালেন ঠিক করিনি এখনও। তখন প্লেয়াররা শার্ট পড়ে খেলেন। রুহেল ভাই বললেন এখন তো টিশার্টের যুগ। দুজনে কথা বলতে বলতে তখন বিএমডব্লুর সদরের সামনে। রুহেল ভাই বললেন দেখ আকাশী সাদার কম্বিনেশনটা কিরকম? তারপর এডিডাসের শো রুম থেকে কিনে দিলেন ২২ সেট জার্সি। আবাহনীর প্রথম জার্সি সেই যুগে অত্যন্ত আধুনিক!জার্সি নিলেন কিন্তু বন্ধুর গিফট কোনো ড্রেস নিতে রাজী হলেন না শেখ কামাল।
গল্পটা এখানে শেষ হয়নি। এই ছবিটা তোলার পরদিন মিউনিখ অলিম্পিক ঘটে সেই কুখ্যাত গোলাগুলির ঘটনা। পিএলও গেরিলারা হত্যা করে ইসরায়েলি অ্যাথলেটদের। শেখ কামাল জোর করে চুল কাটিয়ে দেন রুহেল ভাইর। যার আরব মার্কা চেহারা অহেতুক লোকজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছিলো…
^উপরে যেতে ক্লিক করুন