এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ: অর্থনৈতিক সাফল্যের পাঁচ বছর


এটা সর্বজন স্বীকৃত যে বাংলাদেশ সামাজিক অগ্রগতি এবং মানব উন্নয়নের সূচকে ব্যাপক উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে সাফল্যের ধারাতেই আছে।
বাংলাদেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি নিয়ে বিশ্ব উন্নয়ন রিপোর্ট ২০১৩ বলছে: "কিছু দেশ মানব উন্নয়ন সূচকে বেশ ভালো করেছে, এবং অন্যরা ভালো করেছে অর্থনৈতিক সূচকে, কিন্তু বাংলাদেশ সেই ক্ষুদ্রতর গ্রুপে পড়ে যারা উভয়ক্ষেত্রেই বেশ ভালো করেছে"। এই বিশেষ রিপোর্টে আমরা সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির চিত্রটি তুলে ধরার চেষ্টা করেছি, বিশেষ করে যখন থেকে বাংলাদেশের বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করে এবং দেশের অর্থনীতি চালিকাশক্তি যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এক স্বপ্নদর্শী ও বিচক্ষণ নেতৃত্বে এবং তাঁর যোগ্যতম অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের হাতে।

দূরদৃষ্টি এবং নীতিমালা
বর্তমান সরকারের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক লক্ষ্য ছিল ভিশন ২০২১ (যার স্বপ্ন হচ্ছে ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা) এবং ভিশন ২০৪১(বাংলাদেশকে ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা) এর বাস্তবায়ন। সেই উদ্দেশ্যে সরকার একটি পারস্পেক্টিভ প্ল্যান (২০১০-২০২১) এবং ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক প্ল্যান (২০১০-২০১৫) প্রণয়ন করে যার লক্ষ্য হচ্ছে প্রদর্শিত সময়সীমার মধ্যে বাংলাদেশকে প্রযুক্তি চালিত মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত করা। বাংলাদেশের ইতিহাসে দেশের সার্বিক উন্নয়নকল্পে এমন দীর্ঘমেয়াদী ও বিস্তৃত পরিকল্পনা গ্রহণ নজীরবিহীন। এরপর থেকে প্রতি বছরের বাজেটগুলো প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন ঘটে চলেছে সেই সকল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখেই।
বিশ্বব্যাপী মন্দা সত্ত্বেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির অব্যাহত ধারা
আওয়ামী লীগ যখন ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসে, সার্বিক আভ্যন্তরীণ উৎপাদন (জিডিপি) তখন স্থিত হয়েছিল ৫.৭৪ শতাংশে। GDPতার পর থেকে গত পাঁচ বছরে, দেশের প্রবৃদ্ধি গড়ে ছিল ৬.২%, ২০১১ সালে এই প্রবৃদ্ধির পরিমাণ সর্বোচ্চ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ৬.৭১ শতাংশে। জিডিপির পরিমাণও গত পাঁচ বছরে বেড়েছে, ২০০৯ সালে যা ছিল ৮৯.৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, ২০১৪ সাল নাগাদ তার পরিমাণ হয়েছে ১২৯.৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। এই প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশ গোল্ডম্যান স্যাকসএর নেক্সট ইলেভেন (N-11), জেপি মরগ্যানের ফ্রন্টিয়ার ফাইভে এবং গ্লোবাল গ্রোথ জেনারেটরস (3G) তে অন্তর্ভূক্তি পাচ্ছে। বৈশ্বিক মন্দা সত্ত্বেও এই উচ্চ প্রবৃদ্ধির হার অর্জনের কারণে, জাতিসংঘের অর্থনীতি ও সামাজিক বিষয়াদির পরিচালক ড. রব ভস ২০১২ সালে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও শৃঙ্খলার 'উদীয়মান তারা' হিসেবে অভিহিত করেন।
উঠতি মাথাপিছু আয় এবং জীবনমানের সমুন্নত
নতুন পেস্কেলের সূচনা, সরকারী কর্মচারীদের মহার্ঘ্য ভাতা, আয় সৃষ্টিকারি কর্মকাণ্ড, ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি, সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পের বিস্তার এবং অন্যান্য মধ্যবর্তীতা ইত্যাদি উদ্যোগের ফলে জনগণের প্রকৃত আয় এবং ক্রয়ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (BBS) এর সূত্রে ২০১৪ এর প্রথমার্ধে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় দাঁড়িয়েছে ১,১৯০ মার্কিন ডলার। যা গত ২০১২/১৩ অর্থবছরে ছিল ১,০৪৪ মার্কিন ডলার আর তা ২০০৫/০৬ তে ছিল মাত্র ৯২৩ মার্কিন ডলার। বর্তমান সরকার এই মাথা পিছু আয় ২০২১ নাগাদ ২০০০ মার্কিন ডলারে উন্নীত করতে ইচ্ছুক।
সমৃদ্ধ বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ
Foreign Exchangeবাংলাদেশ আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই প্রতিবছর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ স্থিতিশীল গতিতে এগিয়ে চলেছে। গত তিনটি অর্থ-বছরে রিজার্ভের পরিমাণ ২০১২ সালে জুন মাসে ১৫.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে ২১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয় ২০১৩ সালের জুনে, যা ২২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়ায় ২০১৪ সালের জুনে যা কিনা ৩৭% এর বেশি বৃদ্ধি এবং এযাবৎকালের সর্বোচ্চ। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়ে চলেছে মূলত রপ্তানি বৃদ্ধি এবং বাংলাদেশি প্রবাসীদের রেমিট্যান্স পাঠানোর ফলে। এই সূচক স্পষ্টভাবেই নির্দেশ করে বাংলাদেশ এখন অর্থনৈতিক ও আর্থিক খাতে কতটা বলিষ্ঠতা অর্জন করেছে।
রেমিট্যান্স আয়ের সুস্থিত বৃদ্ধি
বিদেশে প্রবাসীদের থেকে সবচেয়ে বেশি আয় করা দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ এখন বিশ্বে ৭ম স্থানে। আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে, বাংলাদেশি প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স একটা স্থির গতি পেয়েছে এবং এর বৃদ্ধিও বেশ লক্ষণীয়। ২০০৯/১০ অর্থবছরে বাংলাদেশ রেমিট্যান্সের মাধ্যমে আয় করে ১০.৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০১০/১১ অর্থবছরে তা দাঁড়ায় ১১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। ২০১১/১২ অর্থবছরে ১২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০১২/১৩ ও ২০১৩/১৪ অর্থবছরের প্রতিটিতেই ১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি। রেমিট্যান্সের এই বৃদ্ধির কারণগুলোর অন্যতম হচ্ছে বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে বেশি বেশি জনশক্তি বিশ্বের নতুন নতুন দেশে পাঠানো।
Remittances
বর্ধিত রপ্তানি আয়
বাংলাদেশের রপ্তানি আয় স্বাধীনতার পরে প্রথমবারের মতো ৩০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছে ২০১৩/১৪ অর্থবছরের হিসেব মতে। বাংলাদেশ রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (EPB) কর্তৃক প্রদত্ত তথ্য মতে, Exports বাংলাদেশ তার বিভিন্ন পন্য বিদেশে বিক্রি করে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে (অর্থবছর শেষ হয়েছে জুন ১৩, ২০১৪) আয় করেছে ৩০.১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আর এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, কারণ রপ্তানী আয় আওয়ামী লীগের অধীনে প্রতি অর্থবছরেই নিয়মিত হারে বেড়ে চলেছে, রপ্তানীকারকদেরও বিভিন্ন অনুপ্রাণনা দেয়া হচ্ছে। ২০১০-১১ অর্থ বছরে রপ্তানির আয় ছিল ২০.৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা ২০১১/১২ অর্থবছরে হয়েছিল ২২.৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০১২/১৩ অর্থবছরে ২৩.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি।
বর্ধনশীল সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ
জাতিসংঘের ইউনাইটেড ন্যাশনস কনফারেন্স অন ট্রেড অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (UNCTAD) এর প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, বাংলাদেশে বৈদেশিক সরাসরি বিনিয়োগের (এফডিআই) পরিমাণ গত ছয় বছরেই ক্রমাগত বৃদ্ধি পেয়ে এসেছে। আগের বছরের চাইতে ২০১৩/১৪ অর্থবছরে এফডিআই ২৪% বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১.৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। আর ২০১২/১৩ অর্থবছরে আগত এফডিআইয়ের পরিমাণ আগের বছরের চাইতে ছিল ১৩.৭৫% বেশি ১.২৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ১.১৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ বিনিয়োগ বান্ধব গন্তব্য হিসেবে ভারতেই পরেই দ্বিতীয় অবস্থান অর্জন করেছে। এই সুস্থিত ধারাবাহিক বিদেশি বিনিয়োগ আমাদের দেশের প্রতি আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারিদের আস্থারই প্রতিফলন, যা নির্দেশ করে দেশের কার্যকারিতা এবং সরকারের সামর্থ্যও। অতি সম্প্রতি, বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ ব্যাপক হারে বেড়েছে, বিশেষত উৎপাদনশিল্পে এবং সেবাখাতসমূহে যেমন বিদ্যুৎ, জ্বালানী এবং অবকাঠামো বিনির্মাণে। বাংলাদেশ এখন প্রধানতম আইটি আউটসোর্সিংয়ের গন্তব্যও।
FDIসর্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি: গরীব সহায়ক নীতিমালার পরিকল্পনা
সরকার সম্প্রতি ৪.৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের একটি স্কিম হাতে নিয়েছে অর্থনৈতিক পরিকল্পনাগুলোকে গরীব সহায়ক করতে। যার নাম হচ্ছে সাপোর্ট টু ইনক্লুসিভ অ্যান্ড সাস্টেইনেবল প্ল্যানিং (SSIP) প্রকল্প, যে স্কিমটি জাতিসংঘের বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক অর্থায়নকৃত, বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে জুন ২০১৩ থেকে ডিসেম্বর ২০১৩ এর মধ্যে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে পরিচালিত এই প্রকল্পের অভীষ্ট হচ্ছে, পরিকল্পনা কমিশনের জেনারেল ইকোনমিক ডিভিশন (GED), অর্থমন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এর ক্ষমতা এবং সামর্থ্য বৃদ্ধি। এই প্রকল্প সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার নথিপত্র প্রস্তুতিতেও কারিগরি সহায়তা দেবে। লক্ষণীয় যে, বাংলাদেশের এই অর্থনৈতিক উন্নয়ন কোনো নির্দিষ্ট শ্রেণীর আওয়তায় সীমাবদ্ধ নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দারিদ্র্য বিমোচনেও এটি ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর মতে, ২০১০ থেকে ২০১৪ এর মধ্যে, বাংলাদেশ দারিদ্র্য বিমোচন করেছে ৫.৯ শতাংশ, যা অতিশয় দরিদ্রের ক্ষেত্রে ৪.২ শতাংশ।
সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী দেশের অর্থনৈতিক প্রগতিতে সন্তুষ্ট
যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনভিত্তিক এক গবেষণা প্রতিষ্ঠান, পিউ রিসার্চ সেন্টারের সাম্প্রতিকতম রিপোর্টে প্রকাশ, ৭১ শতাংশ বাংলাদেশি দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক স্বাস্থ্য পরিস্থিতি নিয়ে সন্তুষ্ট, যা প্রকারান্তরে বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের সরকারের অর্তনৈতিক ব্যবস্থাপনার প্রতি আস্থারই প্রকাশ। এটি দেশবাসীর আশাবাদীতাই নির্দেশ করে, যদিও বৈশ্বিক প্রবনতায় এই রিপোর্টেই দেখা যাচ্ছে অন্যান্য অনেক দেশের মানুষ তাদের দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা নিয়ে তেমন সন্তুষ্ট নয়, ৬৬ শতাংশ বাংলাদেশি আশা করছে আগামী ১২ মাস সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আরো উন্নতি সাধিত হবে।
বিশ্বে বাংলাদেশ অন্যতম শীর্ষে: বাণিজ্যিক আস্থায়
এইচএসবিসি ব্যাংকের সর্বশেষ বাণিজ্যিক আস্থা সূচকে, বাংলাদেশ বৈশ্বিক বাণিজ্যিক আস্থায় স্পষ্টভাবে এগিয়েছে, গত ৬ মাসে ৩৬টি পয়েন্টে, যা বিশ্বের এই ধারার ২৩টি শীর্ষ দেশের মধ্যে দ্বিতীয়। এই সূচকে প্রকাশ বাংলাদেশ ২০১৪ সালের প্রথমার্ধে ১৪১ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০১৩ সালের দ্বিতীয়ার্ধে ছিল ১০৩ পয়েন্ট। বাংলাদেশ যে দেশগুলোকে এই প্রতিযোগিতায় হারিয়ে দিয়েছে সেগুলোর মধ্যে রয়েছে ভারত, তুরস্ক, চীন, যুক্তরাজ্য, ব্রাজিল, কানাডা, মালেশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুর, জার্মানী, হংকং, অস্ট্রেলিয়া এবং ফ্রান্স। এই রিপোর্টে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের গার্মেন্টস এবং টেক্সটাইল রপ্তানীও একটি বলিষ্ঠ গতি পেতে যাচ্ছে, ২০১০ সালের ২.৮ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০২০ সালে যা ৩.৮ শতাংশে দাঁড়াবে, যা সাম্প্রতিকতম উদ্যোগগুলোর ফলশ্রুতিতে এর স্বাস্থ্য ও সুরক্ষার মান আরো উন্নত হয়েছে। এতে আরো পূর্বাভাস করা হয়েছে বর্তমান দশকের বাকি বছরগুলোতেও বাংলাদেশ দ্রুত বর্ধনশীল হবে এর বিনিয়োগ, বিশেষত অবকাঠামোগত দিকে।
আর্থিক ব্যবস্থাপনার সূচকও আশাপ্রদ
গত ৫ বছরে, রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পেয়েছে মূল জিডিপির ১০.৭ শতাংশ থেকে ১৩.৩ শতাংশে। সরকার আগামী ৫ বছরে দেশের আভ্যন্তরীণ সম্পদ সংহতি ১৭ শতাংম বাড়াবার লক্ষ্য নিয়েছে। একই সময়ে, জনগণের ব্যয়ের মাত্রা মূল জিডিপির ১৫.৭ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ১৮.৩ শতাংশ। সরকার এই বৃদ্ধিকে আগামী ৫ বছরের মধ্যে মূল জিডিপির ২২ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়েছে। সরকার সাফল্যের সাথে দেশের মুদ্রাস্ফীতিরও রাশ টেনে ধরতে সক্ষম হয়েছে। জুন ২০১৩/১৩ তে, পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট মুদ্রাস্ফীতি ছিল ৮ শতাংশ, যা ২০১৩/১৪ অর্থবছরের শেষ নাগাদ ৭.৪ শতাংশে কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। সরকার এই হারকে এবছরের শেষ নাগাদ ৭ শতাংশে কমিয়ে আনতে আশাবাদী।
২০১৪/১৫ অর্থবছরে বৃদ্ধির লক্ষমাত্রা এবং তা অর্জনের পরিকল্পনা
মাননীয় অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত তার বার্ষিক বাজেট বক্তৃতায়, ২০১৪/১৫ অর্থবছরে ৭.৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি এবং ২০২১ সাল নাগাদ তা ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের রূপরেখা ব্যক্ত করেছেন। এটি উচ্চাভিলাষী শোনালেও, সরকার এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তার নীতি ও কৌশলসমূহের রূপরেখা দিয়েছে, যেমন: ক) বিদ্যুৎ, গ্যাস ও বন্দর উন্নয়নে অগ্রাধিকার প্রয়োগ; খ) সার্বিক জাতীয় বৃদ্ধিতে শিল্পখাতে ২৫ শতাংশ থেকে ৪০ শতাংশে উন্নীতকরণ; গ) পাবলিক-পাবলিক পার্টনারশীপ (PPP) এর দ্বারা অবকাঠামো উন্নয়নে প্রাইভেট বিনিয়োগ বৃদ্ধি; ঘ) বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টি এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারের মাধ্যমে ব্যবসায়ের ব্যয় কমিয়ে আনা; ঙ) বড় বড় প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে বিশেষ বরাদ্দ; চ) আইটি, জাহাজ নির্মাণ, চামড়া, তৈরি পোশাক, ঔষধশিল্পে উদ্দীপনা প্যাকেজের মাধ্যমে রপ্তানী আরো গতিশীল করা; ছ) কৃষিখাতের জন্য ভর্তুকি প্রদান; জ) কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য দক্ষতা উন্নয়ন; ঝ) গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন; ঞ) জলাভূমি ও উপকূলীয় বেষ্টনীর উন্নয়ন।
উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন শেখ হাসিনার সরকারের আমলে বিস্ময়কর প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হয়েছে। এই সব অর্জন সম্ভব হয়েছে যখন পুরো ২০১৩ সাল জুড়ে বিএনপি এবং তাদের মৌলবাদি তাবেদার জামাত-ই-ইসলামি দেশব্যাপী ব্যাপক তাণ্ডব ও নাশকতা চালিয়ে যাচ্ছিল তা সত্ত্বেও। অর্থনীতির এই সকল সূচকের বলিষ্ঠতা, দেশবাসীর সহনশীলতা এবং সরকারের দৃঢ়সংকল্প নির্দেশ করে, যার ফলস্বরূপ বৈরি পরিস্থিতেও উন্নয়ন সম্ভব হয়েছে। যদি বর্তমানের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অব্যাহত থাকে, তবে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার নিশ্চিতভাবেই তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়নে সক্ষম হবে, অর্থাৎ ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে একটি প্রযুক্তিনির্ভর মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তর করা। বাংলাদেশ, গর্জে উঠছে যার অর্থনীতি।
^উপরে যেতে ক্লিক করুন