১১ মার্চ, ১৯৪৮। সচিবালয়ের গেটের সামনে মাটিতে শুয়ে ছাত্রদের অবস্থান ধর্মঘটে নেতৃত্ব দিচ্ছেন শেখ মুজিব
আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সঙ্গে, সবার বাঁয়ে তাজউদ্দিন
বাঁ থেকে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, মওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু
১৮ নং কারকুন বাড়ি লেন
ঢাকা, ৩০-৪-৫১
দোয়াবরেষু,
আমি সর্বদাই গ্রাম অঞ্চলে বাস করি কারণ গ্রামের মরণাপন্ন (চিঠিতে বানান মরণাপন্য) কৃষক-মজুরদের অবস্থা ভাল না হইলে এবং পাকিস্তান শুধু কয়েকজন বড় লোকের নহে। সাড়ে সাতকোটি লোকের পাকিস্তানের উন্নতি স্বজনপ্রীতি, দূর্নীতি,অনাচার, অবিচার দমনের ব্যবস্থা আদর্শ রাষ্ট্রে পরিণত করার দায়িত্ব সকলকেই গ্রহণ করিতে হইবে। প্রাণের চেয়ে প্রিয় জিনিস পাকিস্তানের প্রত্যেক নাগরিককে অনুভব করিতে হইবে। তোমার মুক্তির জন্য সরকারের দৃষ্টি বহুবার আকর্ষণ করিয়াছি কিন্তু ছেলে অন্ধ হইলে নাম পদ্মলোচন রাখলে লাভ কি। ধৈর্য্যধারণ করো আল্লাহ তোমার সঙ্গে আছেন।দেশের মুক্তির সঙ্গে তোমার মুক্তি।সরকার অস্থায়ী প্রতিষ্ঠান। রাষ্ট্র স্থায়ী এবং আমাদের।আমার দোয়া জানিও এবং সকল বন্দীদিগকে জানাইও।
আবদুল হামিদ খান ভাসানী
Source: Govt. of East Pakistan, Home poll, F/N, 606-48PF, Part-3
১৯৪৯র
এই ছবিতে পিতা শেখ লুতফর রহমানে এবং আওয়ামী লীগ নেতা শামসুল হক, ইয়ার
মোহাম্মাদ খান। কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে বের হয়েই সোজা কর্মীসভায় যাওয়ার
জন্য জিপে চড়ে বসেছিলেন বঙ্গবন্ধু
রাজনৈতিক বন্দী
ঢাকা জেল
১২-১১-৫৮
আব্বা,
আমার ভক্তিপূর্ণ ছালাম গ্রহণ করবেন ও মাকে দিবেন। মা এবার খুব কষ্ট পেয়েছিল, কারণ এবার তার সামনেই আমাকে গ্রেপ্তার করেছিল। দোয়া করবেন মিথ্যা মামলায় আমার কিছুই করতে পারবে না। আমাকে ডাকাতি মামলার আসামীও একবার করেছিল। আল্লা আছে, সত্যের জয় হবেই। আপনি জানেন বাসায় কিছুই নাই। দয়া করে ছেলেমেয়েদের দিকে খেয়াল রাখবেন।বাড়ি যেতে বলে দিতাম।কিন্তু ওদের লেখাপড়া নষ্ট হয়ে যাবে। আমাকে আবার রাজবন্দী করেছে, দরকার ছিল না। কারণ রাজনীতি আর নাই, এবং রাজনীতি আর করবো না। সরকার অনুমতি দিলেও আর করবো না। যে দেশের মানুষ বিশ্বাস করতে পারে যে আমি ঘুষ খেতে পারি সে দেশে কোনো কাজই করা উচিত না।এ দেশে ত্যাগ আর সাধনার কোনো দামই নাই। যদি কোনদিন জেল হতে বের হতে পারি তবে কোন কিছু একটা করে ছেলেমেয়ে ও আপনাদের নিয়ে ভাল ভাবে সংসার করবো। নিজেও কষ্ট করেছি, আপনাদেরও দিয়েছি। বাড়ির সকলকে আমার ছালাম দিবেন। দোয়া করতে বলবেন। আপনার ও মায়ের শরীরের প্রতি যত্ন নিবেন। চিন্তা করে মন খারাপ করবেন না। মাকে কাঁদতে নিষেধ করবেন। আমি ভাল আছি।
আপনার স্নেহের
মুজিব
NB: গোপালগঞ্জের বাসাটা ভাড়া দিয়া দেবেন। বাসার আর দরকার হবে না।
মুজিব
Source: Govt. of East Pakistan, Home poll, F/N, 606-48PF, Part-9
প্রসঙ্গক্রমেই এসে পড়ে বেগম ফজিলাতুন্নেসার কাছে লেখা শেখ মুজিবের একটি চিঠি যা সাক্ষ্য দেয় সংসারে টানাটানির। বাবার কাছে পাঠানো (এবং না পৌছানো) চিঠির মাস কয়েক পর এটি লিখেছিলেন তিনি । এ চিঠির আরেকটি নজরকাড়া বৈশিষ্ট্য হচ্ছে প্রতিটি সন্তানের প্রতি তার পক্ষপাতহীন ভালোবাসা
ঢাকা জেল
১৬-৪-৫৯
রেনু,
আমার ভালোবাসা নিও। ঈদের পরে আমার সাথে দেখা করতে এসেছো ছেলেমেয়েদের নিয়ে আস নাই। কারণ তুমি ঈদ করো নাই। ছেলেমেয়েরাও করে নাই। খুবই অন্যায় করেছো। ছেলেমেয়েরা ঈদে একটু আনন্দ করতে চায়। কারণ সকলেই করে। তুমি বুঝতে পারো ওরা কতো দুঃখ পেয়েছে। আব্বা ও মা শুনলে খুবই রাগ করবেন। আগামী দেখার সময় ওদের সকলকে নিয়ে আসিও। কেন যে চিন্তা করো বুঝি না। আমার যে কবে মুক্তি হবে তার কোনো ঠিক নাই। তোমার একমাত্র কাজ হবে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া শিখানো।টাকার দরকার হলে আব্বাকে লেখিও, কিছু কিছু মাসে মাসে দিতে পারবেন। হাছিনাকে মন দিয়ে পড়তে বলিও। কামালের স্বাস্থ্য মোটেই ভাল হচ্ছে না। ওকে নিয়ম মতো খেতে বলিও। জামাল যেন মন দিয়ে পড়ে আর ছবি আঁকে। এবার একটা ছবি একে যেন নিয়ে আসে আমি দেখব। রেহানা খুব দুষ্ট ওকে কিছুদিন পর স্কুলে দিয়ে দিও জামালের সাথে।যদি সময় পাও নিজেও একটু লেখাপড়া করিও। একাকী থাকাতে একটু কষ্ট প্রথম হতো। এখন অভ্যাস হয়ে গেছে কোন চিন্তা নাই। বসে বসে বই পড়ি। তোমার শরীরের প্রতি যত্ন নিও।
ইতি-
তোমার মুজিব
সূত্র : জাতির জনক প্রকাশনায়-জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ট্রাস্ট, পৃ: ২১০
বাবাকে জেলে দেখেই অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন মুজিবের চার সন্তান, বা থেকে শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, শেখ কামাল ও শেখ জামাল
ঢাকা জেল
৪-৮-৬৬
জহুর,
আমার ভালবাসা নিও। কেমন আছ জানি না। তোমার বোধহয় খুব কষ্ট হয়েছে। তোমার বাড়ির খবর কিছু পেয়েছ কিনা জানি না। আমার দিন কোনমতে কেটে যাচ্ছে। আমার জন্য চিন্তা করিও না। আল্লা আমাকে যথেষ্ট সহ্য শক্তি দিয়েছে। তুমি ডিআইবি এসবির কাছে দরখাস্ত করতে পার তোমাকে চট্টগ্রাম পাঠাবার জন্য। কারণ তোমার ছেলেমেয়েদের দেখবার কেহ নাই।চিন্তা করে শরীর খারাপ করিও না। খোদা যাহা করে মানুষের ভালর জন্য করে।
ইতি
তোমার মুজিব
Source: Govt. of East Pakistan, Home poll, F/N, 606-48PF, Part-26
’৬৯ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বের হওয়ার পর তাজউদ্দিনের সঙ্গে শেখ মুজিব
ঢাকা জেল৫ম চিঠি: চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা এম এ আজিজকে শেখ মুজিব, ২৩ আগস্ট, ১৯৬৬
১৯/৮/৬৬ (সিল)
স্নেহের তাজউদ্দিন
আমার স্নেহ ও ভালবাসা নিও। কেমন আছ? খবর জানি না।আমাকে খবর দিও। চিন্তা করিও না। সকলকে সালাম দিও। শরীরটা বেশী ভাল না তবে কেটে যাচ্ছে। তোমার শরীরের প্রতি যত্ন নিও।
ইতি-
তোমার
মুজিব ভাই
Source: Govt. of East Pakistan, Home poll, F/N, 606-48PF, Part-26
ঢাকা জেল
২৩/৮/৬৬
ভাই আজিজ
কেমন আছ? বহুদিন খবরা পাই না তোমাদের। বন্ধুবান্ধবরা কেমন আছে? শরীরের প্রতি যত্ন নিও কারণ তোমার শরীর ভাল না। আমি কোনো মতে আছি। জেল গেটেই আমার বিচার শুরু হয়েছে, দেখা যাক কি হয়। আল্লা আমাকে যথেষ্ট সহ্য শক্তি দিয়েছে।তোমার ছেলেমেয়েরা কেমন আছে? সকলকেই ছালাম ও ভালবাসা দিও।
ইতি
তোমার
মুজিব ভাই
Source: Govt. of East Pakistan, Home poll, F/N, 606-48PF, Part-26
বেগম ফজিলাতুন্নেসাকে দেওয়া চিঠিটা বাদে উপরের সবগুলো চিঠিই বাজেয়াপ্ত। আর শেখ হাসিনাকে লেখা নিচের চিঠিটি জেল থেকে বের হওয়ার পর। ১৩ জুন ১৯৬৯ সালে লেখা। স্রেফ পাঠকের আগ্রহের কথা ভেবে পোস্টে এটি সংযুক্ত:
ঢাকাচিঠির হাইলাইট। বাংলাদেশের দুইজন কৃতিসন্তান, পাকিস্তানের নয়।মনে করিয়ে দিই আবার, সালটা ১৯৬৯।
১৩-৬-৬৯
হাচু মনি
আমার স্নেহ ও ভালবাসা নিও।ওয়াজেদের চিঠি পেয়েছিলাম, উত্তরও দিয়েছি বোধ হয় পেয়ে থাকবে।জেল থেকে বের হয়ে তোমাকে ভাল করে দেখতেও পারি নাই। শুধু তোমার শরীরে দিকে চেয়ে তোমাকে যেতে দিয়েছি। শরীরের প্রতি যত্ন নিও। ওয়াজেদের শরীর কেমন? আমরা সকলেই ভাল আছি। চিন্তা করে শরীর নষ্ট করিও না। বোধহয় শুনেছ মানিক ভাই (তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া, দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক) পিন্ডিতে হঠাৎ মারা গেছেন।বুঝতেই পার আমার অবস্থা। প্রফেসর হাই সাহেবও মারা গিয়েছেন। বাংলাদেশের দুইজন কৃতি সন্তান আমরা হারালাম। চিন্তা করিও না। সুইডেন খুব সুন্দর দেশ। তোমাদের খুব ভাল লাগবে।চিঠি দিও।ভ
তোমার
আব্বা
সূত্র : জাতির জনক প্রকাশনায়-জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ট্রাস্ট, পৃ: ২১১