এনডিপি’র নেত্রী নাবিহা রহমানের ইতিহাস গবেষণার জবাব || মোহাম্মদ হেলাল মিয়া


এনডিপি’র নেত্রী নাবিহা রহমানের ইতিহাস গবেষণার জবাব || মোহাম্মদ হেলাল মিয়াসম্পাদনায়,খোরশেদ আলম, বাংলাদেশপ্রেস || বাংলাদেশের রাজনীতিতে জোটের খেলা অনেক পুরনো। সেই জোটের খেলা নিয়ে কিছদিন আগে প্রথম আলো পত্রিকায় "বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটে চলছে অণু-পরমাণু নিয়ে টানাটানি" শিরোনামে একটি সংবাদ ছাপা হয়। সংবাদ বিশ্লেষণে অণু-পরমাণু সহ সাড়ে ১৬ দলের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। অণু-পরমাণু নিয়ে গঠিত সাড়ে ১৬ দলের জোটের একটি হলো এনডিপি। অনলাইন পত্রিকা ‘বাংলাদেশ প্রেসে’ মহান বিজয় দিবসের দিন এনডিপির প্রেসিডিয়াম সদস্য নাবিহা রহমান এর "স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে ইতিহাস বিকৃতি করায় শেখ হাসিনার জবাব দিলেন এনডিপি'র নাবিহা" শীর্ষক লেখা পড়ে ইতিহাস গবেষক হিসেবে তারেক রহমানের যোগ্য উত্তরসূরি মনে হল।

নাবিহা রহমান কোথায় পেলেন ২৬ শে মার্চ জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছেন? নাবিহা রহমান এর অবগতির জন্য বলছি, ১৯৭২ সালের ২৩ এপ্রিল বাংলাদেশ অবজারভার-এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধ অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ সন্ধ্যায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণা প্রথম ইংরেজিতে পাঠ করেন ওয়াপদার প্রকৌশলী আশিকুল ইসলাম। আর প্রথম বাংলায় পাঠ করেন আবুশ কাশেম সন্দ্বীপ। সন্ধ্যায় এম এ হান্নান ও জহুর হোসেন চৌধুরী আবার ঘোষণাটি পাঠ করেন। জিয়া ২৬ শে মার্চ নয়, ২৭ শে মার্চ "On behalf of our great national leader Bongobondhu Shekh Mujibur Rohman " বলে ঘোষণা পাঠ করেন। ১৯৭১ সালের ২৭ শে মার্চ থেকে ৩১ শে মার্চ পর্যন্ত বিশ্ব সংবাদমাধ্যম:- ●ভারতের দ্য স্টেটসম্যান এবং দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া; ●আর্জেন্টিনার বুয়েন্স এয়ার্স হেরাল্ড ●অস্ট্রেলিয়ার দ্য এজ এবং দ্য সিডনি মর্নিং হেরাল্ড; ●মিয়ানমারের দ্য গার্ডিয়ান; ●কানাডার দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল; ●হংকংয়ের দ্য হংকং স্ট্যান্ডার্ড; ●ইন্দোনেশিয়ার দ্য জাকার্তা টাইমস; ●জাপানের আসাহি ইভিনিং নিউজ; ●নেপালের দ্য রাইজিং নেপাল; ●ফিলিপাইনের ম্যানিলা টাইমস; সিঙ্গাপুরের দ্য স্ট্রেইটস টাইমস; ●দক্ষিণ আফ্রিকার দ্য প্রিটোরিয়া নিউজ; ●থাইল্যান্ডের দ্য ব্যাংকক পোস্ট; ●যুক্তরাজ্যের দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফ, দ্য গার্ডিয়ান, দ্য টাইমস অব লন্ডন; ●যুক্তরাষ্ট্রের বাল্টিমোর সান, দ্য বোস্টন গ্লোব, শিকাগো টাইমস, ক্রিস্টিয়ান সায়েন্স মনিটর, লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমস, দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, দ্য ফিলাডেলফিয়া ইনকুরিয়ার, সানফ্রান্সিসকো ক্রোনিকেল এবং ●দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট এর দু একটিতে ২৮ শে মার্চ জিয়ার বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা পাঠের খবর প্রকাশিত হয়েছিল। তাও মেজর জিয়াউর রহমানকে ‘জিয়া খান’ হিসেবে উল্লেখ করা হয়।

২৮ শে মার্চ ভারতীয় সংবাদপত্রগুলো খবর প্রকাশ করে, ‘জিয়া খান’ নামে এক মেজর ২৭ শে মার্চ একটি ঘোষণা পাঠ করেন। ঘোষক জিয়া খানকে ‘বাংলাদেশ মুক্তি সেনার প্রধান’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। ২৮ মার্চ নয়াদিল্লি থেকে প্রকাশিত দ্য স্টেটসম্যান জানায়: আরেকটি ঘোষণায় রেডিওটি দাবি করেছে, বাংলাদেশের পর পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ বেলুচিস্তানের স্বাধীনতাকামী জনগণ এবং পাখতুনিস্তান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েছে। রেডিওতে কথা বলা ওই ব্যক্তিটি হলেন বাংলাদেশ মুক্তি সেনার প্রধান মেজর জিয়া। ২৮ মার্চ মুম্বাই থেকে প্রকাশিত দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া জানায়: বাংলাদেশ মুক্তি সেনার প্রধান মেজর জিয়া খান আজ রাতে স্বাধীন বাংলা রেডিওতে ঘোষণা দেন, দু-তিন দিনের মধ্যেই পাকিস্তানি সামরিক প্রশাসন থেকে বাংলাদেশ মুক্ত হবে। তিনি বলেন, আত্মসমর্পণ না করলে পশ্চিম পাঞ্জাবি সৈনিকেরা ‘নিশ্চিহ্ন হবে’।

যাই হোক, ১৯৭২ সালের ১৬ ই ডিসেম্বর মেজর জিয়াউর রহমান (জিয়া খান) একাত্তের স্মৃতিচারণ মূলক "একটি জাতির জন্ম" শিরোনামে একটি প্রবন্ধ লিখেন যার মধ্যে পুরো মার্চ মাসের বর্ণনা করেছেন কিন্তু কোথাও ২৬ শে মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণার কথা উল্লেখ নেই।

সম্প্রতি, তারেক রহমান বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে পাকবন্ধু ও রাজাকার বললে ও তার বাবা জিয়াউর রহমান সেই প্রবন্ধে শেখ মুজিবুর রহমানকে বঙ্গবন্ধু এবং জাতির পিতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এছাড়া জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্র সংরক্ষণের জন্য মফিজ উল্লাহ কবিরকে সভাপতি, হাসান হাফিজুর রহমানকে সম্পাদক করে একটি কমিটি গঠন করেন। যে কমিটির মাধ্যমে ১৫ খন্ডে প্রকাশিত বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ: দলিল পত্রের তৃতীয় খন্ডে মেজর জিয়ার ২৭ শে মার্চের ঘোষণা "বাংলাদেশ মুক্তি সেনার প্রাদেশিক কমান্ডার ইন চিফ মেজর জিয়া এতদ্বারা শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে স্বাধীনতা ঘোষণা করছি" সন্নিবেশিত আছে।

খালেদা জিয়া ক্ষমতায় এসে ইতিহাস বিকৃতি করে করে ২৭ শে মার্চ থেকে ২৬শে মার্চ বানায়। কারণ স্বাধীনতা দিবসের সাথে জিয়ার ঘোষণার অমিল। খালেদা জিয়ার এই পরিবর্তনকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্ট এ মামলা হয় এবং জিয়া ঘোষক নয় বলে হাইকোর্ট রায় দেয়।

বঙ্গবন্ধুকে কাপুরুষ আর ক্ষমতালোভী বলেছেন নাবিহা রহমান। তারেক রহমানের মত নেতার শিষ্য নাবিহা, রহমানের কাছ থেকে বঙ্গবন্ধুকে কাপুরুষ আর ক্ষমতালোভী বলা ছাড়া আর আশা করা যায়। বঙ্গবন্ধুকে জানার মত ক্ষমতা সবার থাকে না। মতিউর রহমান রেন্টুর বই পড়ে বঙ্গবন্ধুকে জানা যাবে না। বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী পড়েন, জানতে পারবেন।

বঙ্গবন্ধু ক্ষমতালোভী হলে পাকিস্তানের ২২ পরিবারের সাথে আরেক পরিবার যুক্ত হয়ে থাকতেন। ৬ দফার সাথে আপোষ করে ওদের কথা মত আজীবন গাড়িতে, বাড়িতে পতাকা উড়িয়ে থাকতে পারতেন। শিশু পুত্র রাসেল সহ পরিবারের সবাইকে জীবন দিতে হত না। ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, নিধিরাম যেমন সর্দার ঠিক তেমনি অনু-পরমাণু মার্কা দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য হওয়া যেত না।

তারেক রহমান নিজেকে মুক্তিযুদ্ধার সন্তান দাবী করেন আবার বঙ্গবন্ধুকে কাপুরুষ বলেন। বঙ্গবন্ধুকে কাপুরুষ বলার আগে মুক্তিযুদ্ধা বাবাকে জিজ্ঞাসা করেন যে, ৭১ রনাঙ্গনে গুলি করে "জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু" বলতেন না "বাংলাদেশ জিন্দাবাদ জিয়াউর রহমান জিন্দাবাদ" বলতেন।

শ্রী মতি ইন্দিরা গান্ধী ১ কোটি মানুষকে আশ্রয় দিয়েছিল, ৯ মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামে সহযোগিতা করেছিল, দেশে দেশে ঘুরে পূর্ব বাংলার মানুষের নায্য দাবির পক্ষে জনমত তৈরী করেছিল, তা কোন অখ্যাত মেজরের এক দিনের ঘোষণায় বা বাংলাদেশ জিন্দাবাদের মন্ত্রে উদ্ভুদ্ধ হয়ে করে নাই।

বঙ্গবন্ধুর ধারাবাহিক সঠিক নেতৃত্বের ফসল হল আমাদের স্বাধীনতা। নাবিহা রহমান কোথায় পেলেন, সিরাজুল আলম খান ও নুরে আলম সিদ্দিকী ৭ ই মার্চের ভাষণ লিখে দিয়েছেন? মনগড়া কথা লিখে তারেকের মত ইতিহাসবিদ হতে চান? তথ্য সুত্র দিয়ে ইতিহাসের গবেষক হওয়ার চেষ্টা করবেন। কলামে দেশপ্রেমিক অনেকের নাম উল্লেখ করছেন। ৭১ থেকে আজ অবদি তাদের ভুমিকা কি কখনো বিশ্লেষণ করে দেখেছেন? কাজী আরেফ মন্ত্রিত্ব না নেয়ায় জীবন দিয়ে খেসারত দিতে হয়েছে, এ রকম উদ্ভট তত্ত্ব কোথায় পেলেন? কাজী আরেফ হত্যা মামলায় সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক আসামীদের সাজা হয়েছে তা কি দেখেন নাই? এরা করা?

কার্ল মার্কসের আদর্শে অনুপ্রাণিত সিরাজ শিকদার গঠন করে ছিলেন পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি। যার নাম শুনলে আজও বৃহত্তম বরিশালের মানুষ শিউরে উঠে। একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে যেখানে নতুন করে সাজানোটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ, সেখানে সেই উন্নয়ন কাজে সহযোগিতা না করে খুন, হত্যা, সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করে সারা বাংলার মানুষই অতিষ্ঠ করে তুলে ছিলেন। বৃহত্তর বরিশালের কাকচিড়া গ্রামের ও বরিশাল কলেজের ছাত্র কমরেড সেলিম শাহনেওয়াজ ছিলো সিরাজ শিকদারের পার্টির সদস্য। ১৯৭১-এর পরে ১৯৭৩-এ পার্টির সঙ্গে মতানৈক্য হওয়ায় সিরাজ সিকদারের নির্দেশে এই আত্মত্যাগী তরুণকে হত্যা করা হয়, যেমন হত্যা করা হয়েছিলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হুমায়ুন কবিরকে। এটা প্রমানিত যে, সিরাজ শিকদার একজন সন্ত্রাসী, দেশদ্রোহী। দেশপ্রেমিক হলে ১৯৭৩ ও ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের দিনে সর্বহারা পার্টি সারাদেশে হরতালের ডাক দেয় কীভাবে?

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন মুজিব বাহিনী বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। এতে অবাক হওয়ার কিছু নাই। কারণ ঠাকুর গায়ের কুখ্যাত রাজাকার জিয়াউর রহমান কর্তৃক ছেড়ে দেওয়া কোলাবেটার আইনে আটক ১১ হাজার রাজাকারের একজন, স্বৈরাচার এরশাদ সরকরের ভূমি মন্ত্রী, রাজাকার মির্জা রুহুল আমিন উরফে চোখা মিয়ার ছেলে হলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। স্বাভাবিক ভাবে উনার বাবার ভাই চাচা আলবদর বাহিনীর মতিউর রহমান নিজামী, আলী আহসান মোজাহিদ, চৌধুরী মঈন উদ্দিনদের বাচানোর জন্য বলতে পারেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধার সন্তান নাবিহা রহমান কেন ১৭ ই ডিসেম্বর মিরপুর বিহারীদের হাতে মারা যাওয়া জহির রায়হান নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন?

ইনকিলাবের সম্পাদক মাওলানা মান্নান ছিল ডা: আলিম চৌধুরীর হত্যাকারী। যে মান্নানকে জিয়া করেছিল প্রতিমন্ত্রী আর এরশাদের করেছিল পুর্ণমন্ত্রী। আজকে ডা: আলিম চৌধুরীর মেয়ে ডা: নুজহাত চৌধুরী মির্জা ফখরুল এর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করেছে তার বাবার হত্যাকারী মান্নান যে মুজিব বাহিনীর সদস্য ছিল তা প্রমান করার জন্য। মুক্তিযুদ্ধার সন্তান নাবিহা রহমান কি পারবেন আরেক শহীদ বুদ্ধিজীবির সন্তানের প্রশ্নের জবাব দিতে?

নুরে আলম সিদ্দিকীর নিস্ক্রিয়তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নাবিহা রহমান। স্বাধীনতার পর জামাত নিয়ন্ত্রিত একমাত্র ইসলামী ব্যাঙ্ক কে জঙ্গি অর্থায়নের জন্য জরিমানা করেছে। যদি ও নামে ইসলামী কিন্তু এর ৭০ ভাগ মালিকানা বিধর্মী ইহুদি নাসারাদের। আর অবশিষ্ট ৩০ ভাগ মালিকানার সিংহ ভাগ শেয়ারের মালিক হলেন নুরে আলম সিদ্দিকী। আশা করি নিস্ক্রিয়তার কারণ কি বুঝতে পারবেন।

মুক্তিযুদ্ধার সন্তান নাবিহা রহমান খালেদা জিয়ার মত জামায়াত-শিবিরকে সাথে নিয়ে নিজেকে "নব্য মুক্তিযুদ্ধা" বলেন? আপনার কি সাহস আছে জোটের জনসভায় দাড়িয়ে মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগান জয় বাংলা বলার, যে শ্লোগান দিয়ে আপনার বাবা যুদ্ধ করেছিলেন? পারবেন না, কারণ এই জোট রাজাকর নিয়ন্ত্রিত। পারলেও সাথে সাথে শওকত হোসেন নীলুর মত আপনাকে জোট থেকে বের করে দিয়ে আপনার দল থেকে একজন নিয়ে আরেকটি দল গঠন করে ২০ দলের হিসাব ঠিক রাখবে।

নাবিহা রহমানের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কথায় কথায় বলেন, এ সরকার ৭১’ এর পাক হানাদার বাহিনীকেও হার মানিয়েছে। যে হানাদার বাহিনীর জামসেদ জান্জুয়ার অধীনে নয় মাস সেনা ছাউনিতে ছিলেন, প্রধানমন্ত্রী থাকা কালে, সকল প্রকার নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে সেই জান্জুয়ার মৃত্যুতে শোক বার্তা পাঠান। খালেদা জিয়ার কাছে জামসেদ জান্জুয়ার হানাদার বাহিনী কি রকম আশা করি সবাই বুঝতে পারে। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধার সন্তান নাবিহা রহমান যখন খালেদা জিয়ার মত "এ সরকার ৭১’ এর পাক হানাদার বাহিনীকেও হার মানিয়েছে" বলেন তখন প্রশ্ন জাগে ৪৩ বছর আগে বয়স কত ছিল? কি দেখেছেন? ইতিহাস পড়েন তারেক জিয়ার মত? মুক্তিযুদ্ধা বাবাকে জিজ্ঞাসা করলে জানতে পারতেন? মনোয়ারা ক্লার্ক কি চুখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে যায়নি পাক হানাদাররা কি করেছিল?

আজকে নাবিহা রহমান গণতন্ত্র রক্ষার ও অর্থনৈতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক, খুন, গুম ধর্ষণের প্রতিবাদসহ দুর্নীতি মুক্তির আন্দোলন করে যাচ্ছেন বলে একালের মুক্তিযোদ্ধা দাবি করছেন। কিন্তু আমার মনে প্রশ্ন জাগে ২০০১-২০০৬ সাল পর্যন্ত সময়ে কি রাজাকার ছিলেন?

বিএনপি-জামায়াতের ২০০১-২০০৬ সালের শাসনামলের কথা মনে পড়ে? কিভাবে শতাব্দীর জঘন্যতম নৃশংসতায় নির্মমভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় অধ্যক্ষ গোপাল কৃষ্ণ মুহুরীকে মাথার মগজ বের করে করে হত্যা করেছিল, ঘুমন্ত অবস্থায় ১১ দিনের শিশু কার্তিকশীলদের ১৭ সদস্যের গোটা পরিবারকে ঘরে তালা মেরে গান-পাউডার দিয়ে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করেছিল, মায়ের হাত থেকে কেড়ে নিয়ে পূর্ণিমা, ইয়াসমিনদের মত গ্রাম-গঞ্জের হাজার হাজার মেয়েকে নির্যাতন এবং গণধর্ষণের লোম শিউরে উঠা সন্ত্রাসের ঘটনার, নিজ নিজ এলাকার সাধারণ আওয়ামীলীগ নেতা-কর্মী-সমর্থকদেরকে এলাকা থেকে বিতাড়িত করেছিল, সম্পত্তি-দখল, বাড়ি-ঘরে অগ্নি সংযোগ, অন্তত ৬৫জন সাংবাদিককে হত্যা-নির্যাতন-নিপীড়ন করেছিল, সাবেক সফল অর্থমন্ত্রী শাহ এমএস কিবরিয়া এমপি, নাটোরের মমতাজ উদ্দিন এমপি, গাজীপুরের আহসানউল্লাহ মাস্টার এমপি, খুলনার মনজুরুল ইমাম এমপি, নড়াইলের আমজাদ হোসেন এমপিকে গ্রেনেড মেরে হত্যা করেছিল, তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরী কে গ্রেনেড মেরে হত্যার চেষ্টা করেছিল, ২১ শে আগষ্টে অসংখ আরজেস-৮৪ গ্রেনেড মেরে আওয়ামীলীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ ২৪ জনকে হত্যা করেছিল [আরজেস-৮৪ গ্রেনেড অস্ট্রিয়ায় তৈরি হয়। দক্ষিণ এশিয়ায় এর একমাত্র বৈধ আমদানিকারক দেশ পাকিস্তান। পাকিস্তানের সাথে সংশ্লিষ্টতা কাদের? পাকিস্তান আর্মির আমদানিকৃত গ্রেনেড কাদের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসতে পারে আশা করি সবারই বোধগম্য]

বিএনপি-জামায়াত জোটের ২০০১-২০০৬ শাসনামলে ৫০০ স্থানে একযোগে বোমা হামলা করেছিল, আদালতে আইনজীবী এবং বিচারককে হত্যা করেছিল ইত্যাদি এর আরও হাজার রকমের জঙ্গী-আক্রমন, অপহরণ, গুম, খুন, লুটপাট, অগ্নি-সংযোগের মত নৃশংস ঘটনা ঘটিয়েছিল তখন একালের মুক্তিযুদ্ধ সাজলেন না কেন?

নাবিহা রহমানের উদ্দেশে একটি কথা বলতে চাই, হাওয়া ভবন বানিয়ে এতিমের টাকা চুরি করে বিদেশে পালিয়ে বাঁচা যায়, ইতিহাসবিদ হওয়া যায় না। আরো অনেক কিছু লেখার ইচ্ছা, লিখলাম না। যদি আমার লেখার প্রতি উত্তরে কিছু লিখেন তখন না হয় লিখব।

বি: দ্র: নাবিহা রহমানের লেখার লিংক দিলাম সেটাও সবাই পড়ে নেবেন, বুঝতে সুবিধা হবে।
লিঙ্কঃ স্বাধীনতার ঘোষক নিয়ে ইতিহাস বিকৃতি করায় শেখ হাসিনার জবাব দিলেন এনডিপি'র নাবিহা
^উপরে যেতে ক্লিক করুন