বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্ব ও বাংলাদেশের জন্ম


বাঙালি জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে ২৬ মার্চ সর্বশেষ স্ফুলিঙ্গ। যখন আমরা বাঙালি জাতি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে, একটি ঐক্যবদ্ধ ও শান্তিকামি জাতি হিসেবে পশ্চিম পাকিস্তানিদের ডাকা নির্বাচনে অংশগ্রহন করি এবং বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করি তখন শাসকগোষ্ঠী, সেনাবাহিনী এবং পশ্চিমের পরাজিত নেতারা আমাদের স্বীকৃতি দিতে চায় না।
আমাদের নির্বাচিত প্রতিনিধি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে তারা দেশ পরিচালনার ক্ষমতা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। তারা বরং গণতন্ত্র ও মানবতা বূটের তলায় পিষ্ট করে নিরিস্ত্র নিরীহ বাঙালি জাতির উপর হামলা চালানোর পরিকল্পনায় ব্যস্ত থাকে। বঙ্গবন্ধু বুঝতে পারেন এত মিটিং আসলে সমাধানের পথ নয়, ষড়যন্ত্রের অংশ।

এর আগে ৭ই মার্চে বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে পাকিস্তানি শাসকদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেন এবং সকল বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হওয়ার প্রস্তুতি নিতে বলেন। বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানিদের কূটচাল বুঝতে পেরেও স্বাধীনতা ঘোষণা করার উপযুক্ত সময়ের অপেক্ষায় থাকেন।
এই অল্পসময়ের মধ্যেই পশ্চিমা শাসকেরা গনহত্যার নীলনকশা তৈরী করে ফেলে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে অন্ধকারে আকস্মিকভাবে পশ্চিমের নেতারা বাংলাদেশ ছেড়ে পালাতে থাকেন আর অন্যদিকে সৈন্যরা ভারী ও অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ব্যারাক থেকে বেরিয়ে আসে। তাদের লক্ষ্য ছিল ২৬ মার্চের মধ্যে ঢাকা দখল করা। কিন্তু তাদের সকল প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর তাৎক্ষণিক ও ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে পশ্চিমা শাসক ও তাদের দোসরেরা স্তম্ভিত হয়ে পড়ে।
একদিকে যখন নিরীহ বাঙালিরা নির্বিচারে প্রান হারাচ্ছে তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানে নিজের হাতে তাঁর মাতৃভুমি ও তাঁর সন্তানের মত মানুষদের ভাগ্য তৈরি করছিলেন। দুটি ঐতিহাসিক ঘটনা একইসাথে ঘটতে থাকে। পাকিস্তানিদের এই অপারেশনের সময় বাঙালি জাতি ছিলো পিতার নির্দেশের অপেক্ষায়। এক পর্যায়ে বঙ্গবন্ধুকেও তাঁরা গ্রেফতার করে। কিন্তু ততক্ষনে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা লেখা চিরকুট প্রচারের জন্য পাঠিয়ে দিয়েছেন।
তিনি লিখেন-
“বাঙালি ভাইবোনদের কাছে এবং বিশ্ববাসীর কাছে আমার আবেদন, রাজারবাগ পুলিশ ক্যাম্প ও পিলখানা ইপিআর ক্যাম্পে রাত ১২টায় পাকিস্তানী সৈন্যরা অতর্কিতে হামলা চালিয়ে হাজার হাজার লোককে হত্যা করেছে। হানাদার পাকিস্তানী সৈন্যদের সঙ্গে আমরা লড়ে যাচ্ছি। আমাদের সাহায্য প্রয়োজন এবং পৃথিবীর যে কোনও স্থান থেকেই হোক। এমতাবস্থায় আমি বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র বলে ঘোষনা করছি। তোমরা তোমাদের সমস্ত শক্তি দিয়ে মাতৃভূমিকে রক্ষা কর। আল্লাহ তোমাদের সহায় হউন।”
- শেখ মুজিবুর রহমান।(দৈনিক বাংলা, ২৬শে মার্চ, ‘৮১ বিশেষ সংখ্যা)
এই ঘোষণার সাথে সাথে সারা দেশের প্রতিটি অঞ্চলে শুরু হয়ে যায় প্রতিরোধ, শুরু হয় মহান মুক্তিযুদ্ধের। পশ্চিমের ভারী অস্ত্রের বিরুদ্ধে বাঙ্গালিরা বাঁশের লাঠি হাতে তুলে নেয়। কিছুদিনের মধ্যেই সকল পেশার সকল বয়সের মানুষ এই যুদ্ধে যোগ দেয়। মাতৃভুমিকে মুক্ত করতে, নিজেদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠা করতে তারা অকাতরে নিজের বুক্তের তাজা রক্ত বিলিয়ে দেন। তিরিশ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে নয় মাস পর ১৬ ডিসেম্বর জাতি তার বহুবছরের পুরোনো শিকল থেকে অবশেষে মুক্তি লাভ করে। পশ্চিমা অহঙ্কারকে ধুলায় মিশিয়ে দিয়ে আমরা স্বাদ লাভ করি।
^উপরে যেতে ক্লিক করুন