জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জ জেলার টুংগিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫ সন্তানের মধ্যে তিনি সবার বড়। ১৯৭৩ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
শেখ হাসিনা ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতির সংগে যুক্ত ছিলেন। তিনি সরকারি ইডেন কলেজের ছাত্রী সংসদের সহ-সভানেত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। এছাড়া তিনি ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল শাখার সদস্য ছিলেন। ছাত্রজীবনে তিনি সক্রিয়ভাবে বিভিন্ন গণআন্দোলনে অংশ নেন তন্মদ্ধে ৬৯ এর গণআন্দোলন অন্যতম ।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের যে রাতে দেশবিরোধী চক্র বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সকল সদস্যেকে নৃশংসভাবে হত্যা করে সে রাতে শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানা ব্রাসেলসে ছিলেন বলে তারা প্রাণে বেঁচে যান।
শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরে আসেন এবং তার আগেই তিনি আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৮৬ সংসদ নির্বাচনে তিনি ৩টি আসন পান এবং সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হন। বাংলাদেশের সংবিধানের ৫১ ও ৫৬ অনুচ্ছেদের আওতায় শান্তিপূর্ণভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা হস্তান্তরে ১৯৯০ সালে তিনি এক গণআন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ১৯৯১ সালের সাধারণ নির্বাচনের পর তিনি সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হন। রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার ব্যবস্থা থেকে সংসদীয় পদ্ধতির সরকার ব্যবস্থায় ফিরে আসার ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১৯৯৬ সালের ১২ জুনে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করে এবং তিনি সে সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে সরকারের সময় ভারতের সংগে গঙ্গার চুক্তি ও পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তিচুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।
২০০১ সালের সাধারণ নির্বাচনে তার দল দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং তিনি আবারো সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা নির্বাচিত হন। ড. ফকরুদ্দীন আহমেদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্ববধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং ২০০৮ সালের ১১ জুন প্যারোলো মুক্তি পাওয়ার আগ পর্যন্ত কারান্তরীণ থাকেন। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে তার দল বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়ী হয় এবং সরকার গঠন করে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন।
শেখ হাসিনা'র জীবন বৃত্তান্ত
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে তৃতীয়বারের মতো নির্বাচিত হয়ে জননেত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতাগ্রহণ করেন এ বছর শুরুর দিকে।
শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের পাঁচ সন্তানের মধ্যে সবার জ্যেষ্ঠতম। তিনি ১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন।
শেখ হাসিনা এবং তাঁর ছোটবোন শেখ রেহানাই সেই ভয়াল কালোরাত ১৫ই আগস্টে বেঁচে যাওয়া পরিবারের একমাত্র সদস্য, তাঁরা সেদিন জার্মানীতে থাকায় বেঁচে যান। পরবর্তীতে তিনি যুক্তরাজ্যে চলে যান, যেখান থেকে তিনি ১৯৮০ সালে স্বৈরাচারি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করেন। তাঁর অনুপস্থিতিতেই তিনি ১৯৮১ সালে অবিসংবাদিতভাবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত হন। তারপর তিনি দেশে ফেরার উদ্যোগ নিলেও তাঁকে বলপূর্বক ভারতের নয়া দিল্লীতে নির্বাসনে পাঠানো হয়। অবশেষে ১৯৮১ সালের ১৭ই মে তিনি তাঁর ৬ বছরের দীর্ঘ নির্বাসন জীবন কাটিয়ে দেশে ফিরে আসেন।
শেখ হাসিনা ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তিনি ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি সচেতন এবং সক্রিয় ছিলেন। তিনি গভর্নমেন্ট ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজের ছাত্রী ইউনিয়নের সভানেত্রী নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্যা ছিলেন এবং রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। শেখ হাসিনা সকল গণআন্দোলনে তাঁর ছাত্রজীবন থেকেই সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেছেন।
১৯৮৬ সালের সংসদ নির্বাচনে, শেখ হাসিনা তিনটি আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন এবং তিনি সেবার বিরোধী দলীয় নেত্রীও হন। তিনি ১৯৯০ সালের ঐতিহাসিক গণআন্দোলনের নেতৃত্ব দেন এবং শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য সংবিধানের ৫১ ও ৫৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী সাংবিধানিক ফর্মুলার প্রস্তাব দেন।
১৯৯১ সালের নির্বাচনের পরে, শেখ হাসিনা দেশের পঞ্চম সংসদে বিরোধী দলীয় নেত্রী হন। তিনি সংসদের সকল রাজনৈতিক দলকে প্রেসিডেন্সিয়াল সরকার ব্যবস্থা থেকে সংসদীয় গণতন্ত্রে উত্তোরণের জন্য প্ররোচিত করেন। শেখ হাসিনা ১৯৯৪-৯৬ সালে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে একটি তেজোদ্দীপ্ত নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার আন্দোলন পরিচালনা করেন।
তাঁর এই আন্দোলনের ফলে সংবিধানে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা সংবিধানে সংযোজিত হয়। অতঃপর ১৯৯৬ সালের ১২ই জুনের সংসদ নির্বাচন সেই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হলে, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে নির্বাচিত হয়। নির্বাচনের পর ১৯৯৬ সালের ২৩শে জুন শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতাগ্রহণ করেন।
শেখ হাসিনার সরকার বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক এবং রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় সাফল্য পেয়েছে। তাঁর সাফল্যের বিভিন্ন মাইলফলকের মধ্যে আছে ভারতের সাথে ঐতিহাসিক ৩০ বছরের গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি, পার্বত্য চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক শান্তিচুক্তি, যমুনা নদীর উপর বঙ্গবন্ধু সেতুর উদ্বোধন, সর্বোচ্চ পরিমাণের শস্য উৎপাদন এবং নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা। শেখ হাসিনা তার জীবন উৎসর্গ করেছেন নির্যাতিত-নিষ্পেষিতদের হিতের জন্য, তাঁর সমস্ত কর্মকাণ্ডই তাদের উন্নয়নের জন্য। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৯৯৬-২০০১ আমলে, তিনি বেশ কিছু সৃষ্টিশীল ও বাস্তবধর্মী প্রকল্পের সূচনা করেছিলেন কৃষক, ভাগ্যাহত, ভূমিহীন এবং নিষ্পেষিত জনগণের কল্যানের জন্য। আরো অনেক উদ্যোগের মধ্যে রয়েছে, দুস্থ ও বিধবা নারীদের জন্য ভাতাপ্রদান; প্রতিবন্ধী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভাতা প্রদান; দরিদ্র বয়স্ক লোকদের জন্য শান্তি নিবাস বা গৃহ নির্মাণ; আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাস্তবায়ন তথা বাস্তুহারাদের জন্য আশ্রয় প্রদান; 'একটি বাড়ি একটি খামার' প্রকল্পের বাস্তবায়ন এবং আদর্শ গ্রাম প্রতিষ্ঠা। শেখ হাসিনাই বাংলাদেশের প্রথম প্রধান মন্ত্রী যিনি তাঁর ৫-বছর মেয়াদী ক্ষমতা শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে হস্তান্তর করেছিলেন। আওয়ামী লীগের এই সভানেত্রী সবসময়ই তাঁর দলের নেতা-কর্মীদের, সাধারণ জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন, যারা ব্যাপকভাবে হত্যাকাণ্ড, নিপীড়ণ এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ২০০১ এর সাধারণ নির্বাচনের পর থেকে। তিনি শান্তির লক্ষ্যে, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বলিষ্ঠ জনমত গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন।
তিনি জীবনে বেশ কয়েকটি হামলা থেকে অল্পের জন্য রেহাই পেয়েছেন। সবচেয়ে শোচনীয় ছিল ২০০৪ সালের ২১শে আগস্ট, যখন বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউকে তাঁর এক সভাস্থলে, তিনিসহ আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ পর্যায়ের সকল নেতৃবৃন্দকে একসাথে হত্যা করার লক্ষ্যে বৃষ্টির মতো ডজনেরও বেশি সংখ্যক উচ্চ-প্রযুক্তির গ্রেনেড ছুঁড়ে মারা হয়েছিলো। সুপরিকল্পিত এই আক্রমণে সেদিন তাঁর দলের ২২ জন নেতাকর্মী নিহত হন এবং ৫০০জনেরও বেশি আহত হন। শেখ হাসিনা নিজেও এই ঘটনায় কানের পর্দা ফেঁটে গিয়ে আহত হন। কাল্পনিক ও বানোয়াট অভিযোগ এনে শেখ হাসিনাকে ২০০৭ সালের ১৬ই জুলাই গ্রেফতার করে জেলে বন্দী করে রাখা হয়। দেশে ও বিদেশে প্রবল জনমতের চাপে প্রায় বছর খানেক পরে ২০০৭ সালের ১৬ই জুলাই তাকে কর্তৃপক্ষ মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। তিনি ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত ক্ষমতায় থাকাকালীন, তাঁর স্বপ্নদর্শী পররাষ্ট্রনীতি এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ফোরামে সাফল্যমণ্ডিত অংশগ্রহণ দেশের ভাবমূর্তীকে উচ্চে পৌঁছে দিয়েছিল।
একজন শান্তির প্রবক্তা হিসেবে, ১৯৯৮ সালে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যকার নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণ নিয়ে শঙ্কা ও উত্তেজনা প্রশমনে শেখ হাসিনার প্রশংসনীয় ভূমিকা রেখেছিলেন। তিনি ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই ভ্রমণ করে এই দু'দেশের তৎকালীন পরস্পরের প্রতি বিস্ফোরক মনোভাব শান্ত করার যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন তাতে বাংলাদেশের ভাবমূর্তী উজ্জ্বলতর হয়েছিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রথম দেশ হিসেবে কম্প্রেহেনসিভ টেস্ট ব্যান ট্রিটি (সিটিবিটি) চুক্তিতে স্বাক্ষর করে।
১৯৯৭ সালের মার্চে স্বাধীনতার ২৭ বছর পূর্তিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতা যুদ্ধের স্মরণে এক বিশাল স্বাধীনতা স্তম্ভের ভিত্তি প্রস্তর উদ্বোধন করেন। প্যালেস্টাইনের প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত, দক্ষিণ আফ্রিকার কিংবদন্তী নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা এবং তুরস্কের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সোলেমান ডেমিরাল শেখ হাসিনার আমন্ত্রণে এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসেছিলেন।
শেখ হাসিনা তাঁর সামাজিক কর্মকাণ্ড, শান্তি এবং স্থিতিশীলতার প্রতি অসামান্য অবদান রাখার জন্য সম্মানসূচক ডক্টর অফ ল এবং আরো অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন। তিনি ১৯৯৭ সালের ৬ই ফেব্রুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টন ইউনিভার্সিটি কর্তৃক ডক্টর অফ ল ডিগ্রিতে সম্মানিত হন। জাপানের ওয়াসেদা ইউনিভার্সিটি কর্তৃক ১৯৯৭ সালের ৪ঠা জুলাই সম্মানসূচক ডক্টর অফ ল ডিগ্রিতে ভূষিত হন। তাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের ডান্ডিতে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অফ আবার্টে একটি সম্মানসূচক লিবারেল আর্টস বিষয়ে ডক্টর অফ ফিলোসফি ডিগ্রিতে ভূষিত করে ১৯৯৭ সালের ২৫শে অক্টোবর। এছাড়াও ১৯৯৯ সালের ২৮শে জানুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ও সম্মানসূচক দেশিকোত্তম (সম্মানসূচক ডক্টর অফ লিটারেচার) ডিগ্রিতে ভূষিত করে।
শান্তি ও গণতন্ত্রে অসামান্য অবদানের কারণে শেখ হাসিনাকে ১৯৯৯ সালের ২০শে অক্টোবর অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি সমাজসেবায় বিশেষ সৃষ্টিশীল অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ সম্মানসূচক ডক্টর অফ ল ডিগ্রিতে সম্মানিত করে।
বিশ্বখ্যাত ক্যাথলিক ইউনিভার্সিটি অফ ব্রাসেলস শেখ হাসিনাকে গণতন্ত্র, শান্তি ও মানবাধিকারের বিষয়ে তার সিদ্ধান্ত প্রদানকারী বিশেষ ভূমিকার জন্য ২০০০ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি বিশেষ সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি প্রদান করে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্রিজপোর্ট ইউনিভার্সিটি ২০০০ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টর অফ হিউমেন লেটার্স ডিগ্রিতে ভূষিত করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও ১৯৯৯ সালের ডিসেম্বরে তাঁকে একটি সম্মানসূচক ডক্টর অফ ল ডিগ্রি প্রদান করে। কৃষিতে অসামান্য অবদানের জন্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ২০০১ সালের ১৪ই মার্চ তাঁকে সম্মানসূচক ডক্টর অফ সায়েন্স ডিগ্রিতে ভূষিত করে।
পিপল'স ইউনিভার্সিটি অফ রাশিয়া তাঁকে ২০০৫ সালে একটি ডক্টর অফ সায়েন্স ডিগ্রি প্রদান করে। আন্তর্জাতিকভাবে মানবাধিকার উন্নয়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ শেখ হাসিনাকে রাশিয়ার স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ পিটার্সবার্গ ২০১০ সালের ২৪শে নভেম্বর একটি ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়ে সম্মানিত করে। ফ্রান্সের ইউনিভার্সিটি অফ ডফিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়া এবং আরো শক্তিশালি করা সেই সাথে দেশে নারীর ক্ষমতায়নে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১১ সালের ২৫শে মে বিশেষ ডিপ্লোমা এবং মেডেল প্রদান করে।
বাংলাদেশ এবং এতদঞ্চলে বহুসংস্কৃতির গণতন্ত্র এবং শান্তি প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনার বিশেষ অবদান এবং তাঁর রাষ্ট্রনায়কচিত ও স্বপ্নদর্শী নেতৃত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ত্রিপুরা ইউনিভার্সিটি শেখ হাসিনাকে ২০১২ সালের ১২ই জানুয়ারী সম্মানসূচক ডি.লিট ডিগ্রিতে ভূষিত করে।
রাজনৈতিক সাহসিকতা এবং রাষ্ট্রনায়কচিত ভূমিকায় পার্বত্য শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর করার মাধ্যমে ২৫ বছর ব্যাপী পার্বত্য চট্টগ্রামের নৃগোষ্ঠিগুলোর মধ্যে সংঘাত দূর করে শান্তি আনয়নে অসামান্য কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯৮ সালে ইউনেস্কো শেখ হাসিনাকে হউফুয়ে-বোইগনি শান্তি পুরস্কার প্রদান করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০০ সালের ৯ই এপ্রিল বিশেষ মর্যাদাপূর্ণ পার্ল এস বাক অ্যাওয়ার্ড-১৯৯৯ লাভ করেন, যুক্তরাষ্ট্রের র্যানডলফ ম্যাকন উইমেন্স কলেজ থেকে তাঁর দূরদর্শিতা, সাহসিকতা এবং সেই সাথে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানবাধিকারের ক্ষেত্রগুলোতে অর্জনের স্বীকৃতি হিসেবে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) শেখ হাসিনাকে তাঁর ক্ষুধার বিরুদ্ধে সংগ্রামের স্বীকৃতি দিতে অতি মর্যাদাকর সেরেস পদক প্রদান করে ১৯৯৯ সালের ২রা আগস্ট।
অল ইন্ডিয়া পিস কাউন্সিল তাঁকে ১৯৯৮ সালে 'মাদার তেরেসা পুরস্কার'-এ ভূষিত করেন। এছাড়াও নরওয়ের ওসলোতে অবস্থিত মহাত্মা এম কে গান্ধি ফাউন্ডেশন শেখ হাসিনাকে এম কে গান্ধী পুরস্কার-১৯৯৮ এ ভূষিত করেন তার সাম্প্রদায়িক ভ্রাতৃত্ব, অহিংস ধর্মীয় ঐক্য এবং দেশের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত গণতন্ত্রের বিস্তারে তাঁর বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে।
রোটারি ইন্টারন্যাশনালের রোটারি ফাউন্ডেশন শেখ হাসিনাকে পল হ্যারিস খেতাবে সম্মানিত করেছে। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অফ লায়ন্স ক্লাব তাঁকে ১৯৯৬-৯৭ এবং ১৯৯৮-৯৯ সালে পর পর মেডেল অফ ডিসটিংকশন পুরস্কার দেয় এবং ১৯৯৬-৯৭ সালে তারা তাঁকে হেড অফ স্টেট পদকে ভূষিত করে। ২০০৯ সালে জননেত্রী শেখ হাসিনা মর্যাদাপূর্ণ ইন্দিরা গান্ধী শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। বাংলাদেশের আইসিটি সেক্টরকে অগ্রসরমাণ করাতে তাঁর অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে মর্যাদাকর অ্যাসোসিও (এশিয়ান-ওশানিয়ান কম্পিউটিং ইন্ডাস্ট্রি অর্গানাইজেশন) আইটি অ্যাওয়ার্ড ২০১০ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়। ২০১১ সালের ২৭ জানুয়ারি তিনি হাউস অফ কমন্সের স্পিকার জন বারকাউয়ের নিকট থেকে গ্লোবাল ডাইভার্সিটি অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন।
২০১১ সালের ১৯শে সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের ইউএন ইকোনমিক কমিশন ফর আফ্রিকা, অ্যান্টিগুয়া ও বার্বুডা-এর স্থায়ী মিশন, ইন্টারন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়ন (ITU) এবং সাউথ সাউথ নিউজ থেকে সাউথ-সাউথ পুরস্কার লাভ করেন, আর এই পুরস্কার তাঁকে দেয়া হয় নারী ও শিশুর স্বাস্থ্যের উন্নতিতে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহারে তাঁর উদ্ভাবনী ভাবনার কারণে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ২০১১ সালের ৩০শে ডিসেম্বর বাংলা একাডেমি ফেলোশিপ দেয়া হয়। তিনি একজন উৎসুক পাঠক; সাহিত্য এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশিত বই, জার্নাল, সাময়িকী তিনি নিয়মিত পড়ে থাকেন। তিনি নিজেও বেশক'টি গ্রন্থ রচনা করেছেন, 'হোয়াই দে আর স্ট্রিট চিলড্রেন', 'দ্যা অরিজিন অফ অটোক্রেসি', 'মাইলস টু গো', 'এলিমিনেশন অফ পোভার্টি অ্যান্ড সাম থটস', 'পিপল অ্যান্ড ডেমোক্রেসি', 'মাই ড্রিম মাই স্ট্রাগল' এবং 'ডেভেলপমেন্ট ফর দ্যা ম্যাসেস' তাঁর রচনাগুলোর মধ্যে অন্যতম। তিনি বেশ কয়েকবার পবিত্র হজ্জ্ব ও উমরাহ পালন করেছেন।
শেখ হাসিনা 'দ্য ফাদার অফ দ্য ন্যাশন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেমোরিয়াল ট্রাস্ট' এর সভাপতি। তিনি লায়ন্স ক্লাব, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি এবং বাংলাদেশ ন্যাশনাল সোসাইটি ফর দ্য ব্লাইন্ড এর আজীবন সদস্য। শেখ হাসিনা তাঁর চোখ মরণোত্তর দান করে দিয়েছেন। তিনি ঢাকা ইউনিভার্সিটি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন এবং বাংলা একাডেমি'র আজীবন সদস্য এবং বদরুন্নেসা কলেজ অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের একজন পৃষ্ঠপোষক।