এক অর্থে প্রশ্নটি অর্থহীন, প্রায় সকলেই জানেন ডিজিটাল ছবি কী; অথবা না জানলেও কোথাও কোন অসুবিধা হচ্ছে না। তবে ডিজিটাল ছবি কী বিষয়টি ভালো করে জানার কিছু তাৎপর্য আছে। সে
তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়ের অংশবিশেষ আজকের লেখায় তুলে ধরার চেষ্টা করবো, বাকি অংশ পরের পর্বে।
যে অংশটি আজ বলবো তা হলো:
১। ডিজিটাল ছবি বা ইমেজ হলো অনেকগুলো পিক্সেলের সমষ্ঠি।
২। পিক্সেলগুলো সারি ও কলাম হিসাবে সাজানো থাকে।
৩। প্রতিটি পিক্সেলের নিজস্ব 'রঙ' (রঙ্গীন ছবির ক্ষেত্রে) এবং উজ্জ্বলতা (রঙ্গীন ও সাদাকালো উভয় ছবির ক্ষেত্রে) আছে।
পিক্সেল কী?
উপরের ছবিটি দেখুন। এরকম স্থির বা চলমান ডিসপ্লে বোর্ড প্রায় সবাই দেখেছেন। এখানে ছোট ছোট কিছু বাতি (LED = Light Emitting Diode) ব্যবহার করা হয়েছে, LED গুলো জ্বলে বা নিভে লেখার বা সহজ কোন ছবির প্যাটার্ন ফুটিয়ে তুলতে পারে। রাস্তায় বড় বড় বিজ্ঞাপনী টিভিগুলো কাছ থেকে লক্ষ্য করেছেন? সেখানেও এই রকমেরই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যদিও বহুরঙা। অথবা খেয়াল করে দেখুন, অলিম্পিকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শত শত মানুষ রঙিন পোষাক, কার্ড, বা ছাতা দিয়ে বিভিন্ন প্যাটার্ন ও লেখা ফুটিয়ে তোলে! কিংবা বিভিন্ন রঙের ভাঙ্গা বাসনের টুকরো দিয়ে দেয়ালে মুর্যাল তৈরী করা হয়, তা দেখেছেন। এই সবগুলোরই মূলনীতি একই; ছোট ছোট ইউনিট সাজিয়ে একটি প্যাটার্ন গড়ে তোলা হয়, দূর থেকে দেখলে বোঝা যায়না যে এর মধ্যে ইউনিটগুলো আছে, কাছে আসলেই দেখা যায়। এরকম বিন্যাসকে বলা হয় মোজাইক।
ডিজিটাল ইমেজ বা ছবিও ঠিক এরকমই মোজাইক, অনেকগুলো ছোট ছোট বিন্দু দিয়ে গড়া, কাছে থেকেও ভালোমতো বোঝা যায় না বিন্দুগুলো, কারণ সেগুলো খুবই ছোট। তবে ছবিকে ডিজিটালী জুম বা ম্যাগনিফাই করলে সে বিন্দু বা ইউনিটগুলো আলাদা বোঝা যায়। এই প্রতিটি ইউনিটকে বলা হয় পিক্সেল (Pixel = Picture Element)। নিচের ফুলের ছবিটি দেখুন, এর আকার (dimension) ৫০x৫০ পিক্সেল -
এবার ছবিটিকে ১০ গুণ বড় করে দেখাচ্ছি -
লক্ষ্য করুন, ছোট ছোট অনেকগুলো রঙ্গীন বর্গাকার ইউনিট দিয়ে পুরো ছবিটি তৈরী। আরো ভালোভাবে বোঝার জন্য নিচের ছবিটির সাথে তুলনা করে দেখুন, নিচের ছবিতে প্রতিটি পিক্সেলকে আলাদা আলাদা বোঝা যাবার সুবিধার জন্যই এরকম করা হয়েছে, বাস্তবে পিক্সেল এমন নয়।
এবার একটি মজার কাজ করুন: কী-বোর্ড থেকে Ctrl চেপে ধরে মাউজ হুইলটি ঘুরিয়ে আপনার ব্রাউজারকে ২০% জুম লেভেলে জুম আউট (ছোট) করে দেখুনতো উপরের দুটো ছবিকে আলাদা আলাদা বোঝা যায় কিনা! ২০% জুম অপেরাতে সম্ভব, ক্রোম বা ফায়ারফক্সে আমি পারি নি, ক্রোমে ৫০% ও ফায়ারফকক্সে ৩০% পর্যন্ত ছোট করা যায়, ২০% ছোট করতে না পারলে মজাটা টের পাবেন না। (এখনো যারা অপেরা ব্যবহার করছেন না, আরো বহুবিধ সুবিধার জন্যই এখনই অপেরাতে চলে আসতে পারেন।)
মেগাপিক্সেল কী?
মেট্রিক পরিমাপ পদ্ধতিতে মেগা = মিলিয়ন। কাজেই মেগাপিক্সেল মানে দশ লক্ষ পিক্সেল। আপনার ক্যামেরা যদি ৫ মেগাপিক্সেল হয়, তার অর্থ ক্যামেরাটি সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ পিক্সেল সম্বলিত ছবি তুলতে সক্ষম।
DPI কী?
DPI = Dots Per Inch, এক ইঞ্চিতে কতটি বিন্দু তার হিসাব। এটি প্রযোজ্য মনিটর ও প্রিন্টারের ক্ষেত্রে। লেজারজেট, ইংকজেট, এমনকি পুরনো ডট ম্যাট্রিক্স প্রিন্টারও যখন কোন কিছু প্রিন্ট করে ছোট ছোট বিন্দুর সাহায্যে তা করে থাকে। কোন প্রিন্টার একটি সুক্ষ্ম লাইন প্রিন্ট করার সময় লাইনটির প্রতি ইঞ্চিতে কতটি বিন্দু দিয়ে লাইনটি তৈরী করে তাকে ঐ প্রিন্টারের প্রিন্ট রিজোলুশান বলে, এবং তাকে DPI দিয়ে প্রকাশ করা হয়। কাজেই কোন প্রিন্টারের রিজোলুশান 300 DPI-এর অর্থ একটি লাইন প্রিন্ট করতে প্রিন্টারটি ৩০০টি বিন্দু বসিয়ে তা করে থাকে, কাজেই ১ বর্গ ইঞ্চি মাপের কোন ছবি প্রিন্ট করতে ৩০০x৩০০ = ৯০,০০০ বিন্দু প্রিন্ট করা প্রয়োজন। বুঝতেই পারছেন যে প্রিন্টারের রিজোলুশান যত বেশি DPI, সে প্রিন্টারের প্রিন্ট তত সুক্ষ্ম (ও হয়তো সুন্দর)। আজকাল বেশিরভাগ প্রিন্টারেরই একাধিক dpi সেট করার ব্যবস্থা আছে।
কোন সাইজের প্রিন্টের জন্য কত মেগাপিক্সেল ছবি দরকার?
সাধারণত ফটো প্রিন্টারে ৩০০ dpi তে প্রিন্ট নিলেই তাকে গ্রহণযোগ্য কোয়ালিটির মনে করা হয়ে থাকে। কাজেই একটি ছবি ৩০০ dpi তে দৈর্ঘ্যে ৫ ইঞ্চি প্রিন্ট নিতে হলে ৩০০x৫ = ১৫০০ টি বিন্দু বা পিক্সেল থাকা উচিত; বা উল্টোভাবে হিসাব করলে এভাবে করা যায়, কোন ছবির দৈর্ঘ্য ১৫০০ পিক্সেল হলে এবং তাকে ৩০০ dpi-তে প্রিন্ট করলে ছবিটি ১৫০০/৩০০ = ৫ ইঞ্চি হবে। আশা করি নিচের চার্ট থেকে বিষয়টি বোঝা যাবে।
ডিজিটাল ছবিটি খুব বড় সাইজের নয় অথচ একটু বড় প্রিন্ট চান, সেক্ষেত্রে ২০০ dpi ধরেও হিসাবটি করা যায়, তবে সেই প্রিন্টের মান ৩০০ dpi-এর চেয়ে কম হবে। কমার্শিয়াল ফটো প্রিন্টিং ল্যাব/মেশিনে প্রিন্টের জন্যও উপরের চার্টটি অনুসরণ করা যেতে পারে।
কত মেগাপিক্সেল ছবি দৈর্ঘ্যে-প্রস্থে কত পিক্সেল?
উপরের চার্ট থেকে ছবির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ গুণ করে যেমন মেগাপিক্সেল পাওয়া গেছে, সহজ গাণিতিক বিপরীত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে মেগাপিক্সেল থেকে ছবির দৈর্ঘ্য-প্রস্থ কত পিক্সেল করে তা বের করা যায়। তবে সুবিধার জন্য সূত্রটি আমি দিয়ে দিলাম-
প্রস্থ = (৭৫০,০০০xমেগাপিক্সেল) এর বর্গমূল, এবং দৈর্ঘ্য = ৪xপ্রস্থ/৩
কাজেই ২ মেগাপিক্সেল ছবির প্রস্থ = বর্গমূল(৭৫০,০০০x২) = ১২২৪ এবং দৈর্ঘ্য = ৪x১২২৪/৩ = ১৬৩২ (দশমিকের পরের অংশ বাদ দিয়ে)। বাকি হিসাব নিচের চার্টে দেখুন-