দক্ষিণ এশিয়া:
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশ ভুটান ভারতীয় উপমহাদেশে হিমালয় পর্বতমালার
পূর্বাংশে অবস্থিত। দেশটির উত্তরে চীনের তিব্বত অঞ্চল এবং দক্ষিণ, পূর্ব ও
পশ্চিমে ভারত। ভুটান শব্দটি এসেছে সংস্কৃত শব্দ “ভূ-উত্থান” থেকে যার অর্থ
“উঁচু ভূমি”। ভুটানের রাজা জিগমে খেসার নামগিয়েল ওয়াংচুক (৩২) ও রানী
জেতসুন পেমা (২২) দেশ পরিচালনার মূলমন্ত্র: ভুটান সরকারের দেশ পরিচালনার
মূল মন্ত্র হচ্ছে জিএনএইচ বা গ্রস ন্যাশনাল হ্যাপিনেস (মোট জাতীয় সুখ)।
বাংলায় যার ভাবার্থ দাঁড়ায় সকল মানুষকে সুখী রাখাই রাষ্ট্রের প্রধানতম
উদ্দেশ্য। এজন্য দেশটির সরকার অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সুশাসন ও সংস্কৃতিকে
সংরক্ষণের দিকে বেশি মনোযোগী। ভুটানের মানুষগুলো কর্মঠ, তাদের মুখে লেগে
থাকে হাসি। যেভাবে যাবেন ভুটান ভ্রমণকারীদের জন্য ভুটানে যাওয়া বেশ
সুবিধাজনক। দেশটিতে প্রবেশের পরে পাসপোর্ট জমা দিলে স্বল্প সময়ের মধ্যে
পাওয়া যায় ভিসা। ঢাকা থেকে ভুটান যাবার সহজতম পথ হচ্ছে ভুটানী বিমান ড্রুক
এয়ারলাইন্সে যাত্রা করা। এছাড়া ভারতের ভেতর দিয়ে সড়ক পথে ভুটান যাবার অপর
একটি পথ রয়েছে। বিমানে ঢাকা থেকে ভুটানে পৌঁছাতে সময় লাগে আনুমানিক দেড়
ঘণ্টা। বিমান যখন ভুটানের মাটিতে অবতরণ করে, তখন বিমান থেকে বাইরে তাকালে
মনে হবে বিমানটি যেন পাহাড়ের ফাঁকফোকর দিয়ে এঁকেবেঁকে মাটির দিকে নামতে
যাচ্ছে, এই বুঝি পাহাড়ের সঙ্গে ধাক্কা লাগবে।
যারা ভুটান যাবেন বলে ঠিক করেছেন তাদের জন্য প্রয়জনিও কিছু গাইডলাইন ।
কখন যাবেন সুখের দেশ ভুটান?
শীতকাল
ভুটান বেড়াবার উপযুক্ত সময় নয়। আগস্ট থেকে অক্টোবর এই তিন মাস ভুটানে
ঘুরবার উৎকৃষ্ট সময়। বর্ষাকালে ভুটানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় বলে বর্ষা
মৌসুমেও দেশটিতে বেড়ানো কঠিন। ভ্রমনের জন্য দেশটি বেশ নিরাপদ। পর্যটকরা
স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের পছন্দের স্থানগুলোতে ঘুরতে পারেন। থাকার হোটেল পারো
বিমানবন্দর থেকে বাইরে আসলে দেখা মেলে অনেক ট্যাক্সি ও বিভিন্ন হোটেলের
প্রতিনিধিদের, যারা বিদেশী যাত্রীদের নিয়ে যাবার জন্যই অপেক্ষমাণ। এদের
সঙ্গে আলোচনা করেই নিজেদের বেড়াবার ও থাকবার ব্যবস্থা করে নেয়া যেতে পারে।
যে স্থানগুলোতে ঘুরতে পারেন ভ্রমণ
পিপাসুরা থিম্পু :
ভুটানের সব থেকে আকর্ষণীয় এবং নান্দনিক সৌন্দর্যের অবস্থান হল থিম্পুতে।
এই স্থানটি দেশের সংস্কৃতির মূল কেন্দ্র। এখানে আছে সিমতোখা জং। এটি ১৬২৭
সালে তৈরি থিম্পু ভ্যালির গেটওয়ে। এখানে আছে রিগনে স্কুল ফর জঙ্ঘা অ্যান্ড
মোনাস্টিক স্টাডিজ। এছাড়াও ফ্রেশকো এবং স্টেট কার্ভিংস এ অঞ্চলের বিশেষ
আকর্ষণ। রয়েছে রাজধানী থিম্পুর প্রাণ থিম্পু জং। এটি তৈরি হয় ১৬৬১ সালে।
দ্য ন্যাশনাল এসেম্বলি, রাজার থ্রোন রুম, সরকারি ডিপার্টমেন্ট এবং
সেন্ট্রাল মোনাস্টিক বডির গ্রীষ্মকালীন হেডকোয়ার্টার্সের দেখা মিলবে
এখানে। ভুটানের তৃতীয় রাজা জিগমে দরজি ওয়াঙ চুকের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে
১৯৭৪ সালে মেমোরিয়াল কর্টেন নামে এই স্তূপ তৈরি হয়েছিল। এই কর্টেন মূলত
একটি স্মৃতিস্তম্ভ। এর ভেতরে অনেক ধরনের পেইন্টিং এবং স্ট্যাচু রয়েছে, যা
বৌদ্ধ দর্শনের প্রতিবিম্ব। থিম্পু পুনাখা শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে
অবস্থিত পুনাখা। এখান থেকে হিমালয়কেও দেখতে পারবেন আপনি। ভুটানের সব থেকে
উর্বর ভ্যালি এই পুনাখা। পুনাখা জং, ফো ছু এবং মো ছু নদীও দেখতে পাবেন
পুনাখায়। থিম্পুতে আরও রয়েছে হ্যান্ডিক্রাফট এম্পোরিয়াম, ট্র্যাডিশনাল
মেডিকেল ইন্সটিটিউট, পেন্টিং স্কুল এবং ন্যাশনাল লাইব্রেরি।
পারো :
প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থাপনার সম্রাজ্য ভুটানের আরও অজস্র দর্শনীয় স্থান
রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রথম হিমালয়ের কোলে অবস্থিত ছোট্ট শহর পারের কথা বলা
আবশ্যক। বিশেষ করে বসন্তে পারের রূপ হয়ে উঠে এক কথায় অসাধারণ। এখানে
রয়েছে পারো জং, ন্যাশনাল মিউজিয়াম। এ অঞ্চলের সব থেকে বড় আকর্ষণ
টাইগার্স নেস্ট।
বুমথাং : বুমথাংকে বলা
হয় ভুটানের আধ্যাত্মিক হৃদয়ভূমি। কারণ, ভুটানের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ জং
মন্দির এবং মহল এই অঞ্চলে অবস্থিত। আরও দেখা যাবে, ওয়াংগডিচোলিং প্যালেস,
জাম্বে লাখাং মন্দির, সব থেকে বড় ভুটানিজ মন্দির জাকার এবং হট স্প্রিং
এরিয়া। এই এলাকায় বন্টু শিপ, মাস্ক ডিয়ার, হিমালয়ান ভাল্লুক চোখে পড়তে
পারে। সব বুমথাংয়ে একমাত্র জাকারেই ভালো রেস্তোরাঁ পাবেন।
ভিসা:
ভারত-ভূটানের বর্ডার ওপেন তাই তাদের ভিসা লাগে না। ভিসা লাগেনা ভুটানের, তবে এন্ট্রি পারমিট নিতে হয় অবশ্যই, ওটাই ভিসা।
এখানে বলে রাখা ভালো এয়ারপোর্টে অন এ্যরাইভাল যে ভিসা দেয় তা শুধু ভুটানের তিনটি শহর ফুয়েন্টশোলিং, থিম্পু আর পারো র জন্য।
অন্য জায়গায় যেতে হলে তার জন্য আলাদা করে ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট থেকে ভিসা নিতে হয়।
এখানে বলে রাখা ভালো এয়ারপোর্টে অন এ্যরাইভাল যে ভিসা দেয় তা শুধু ভুটানের তিনটি শহর ফুয়েন্টশোলিং, থিম্পু আর পারো র জন্য।
অন্য জায়গায় যেতে হলে তার জন্য আলাদা করে ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট থেকে ভিসা নিতে হয়।
ইন্ডিয়ার ট্রান্জিট ভিসা বা মাল্টিপল
এ্যান্ট্রি ভিসা না থাকলে একটু ঝামেলা করবে। তবে পাসপোর্ট না দেখিয়ে যেতে
পারবেন। ভুটানে ঢোকা তেমন কোন কঠিন ব্যাপার না ।
ভারত এবং বাংলাদেশিদের জন্য ভূটানে ঢুকতে কোন টাকা লাগেনা। পশ্চিমা দেশগুলোর নাগরিকদেরকে প্রতিদিনের জন্য ২০০ ডলার করে ফী দেয়া লাগে ভূটান সরকারকে ।
কিভাবে যাবেন এবং কোথায় থাকবেন –ভারত এবং বাংলাদেশিদের জন্য ভূটানে ঢুকতে কোন টাকা লাগেনা। পশ্চিমা দেশগুলোর নাগরিকদেরকে প্রতিদিনের জন্য ২০০ ডলার করে ফী দেয়া লাগে ভূটান সরকারকে ।
নিজেরা গেলে খরচ অনেক কম পড়বে। প্লেনে
যাওয়াই ভালো, যাওয়া-আসার ভাড়া ট্যাক্স সহ ১৬,৫০০ টাকা ড্রুক এয়ারে। ওখানে
কেনাকাটা করতে যাবার কোন কারন নেই। অসম্ভব বেশি সব কিছুর দাম।
খরচ কমাতে চাইলে বাসে জাওয়ায় ভালো। রাস্তা
খুব ভালো, তবে দীর্ঘ জার্নি, যা মেয়ে ও বুড়োদের জন্য সমস্যা হতে পারে।
ইন্ডিয়ার ভিসা নিতে হবে শুধু, ট্রান্জিট ভিসা। ভুটানের ভিসা বর্ডার অথবা
এয়ারপোর্ট থেকে নিতে হয়, পাসপোর্টে সিল মেরে দেবে, ওটাই ভিসা। ক্রেডিট
কার্ড না থাকলে পাসপোর্টে ডলার এনডোর্স করতে হবে ব্যাংক থেকে, ইন্ডিয়ার
ভিসার এ্যাপ্লিকেশনের জন্য। বুড়িমারি-চেংরাবান্ধা বর্ডার থেকে ডলার
ভাঙ্গিয়ে রুপি করে নিতে পারবেন। ভুটানে ইন্ডিয়ান রুপি ওদের নিজস্ব মূদ্রার
মতোই চলে, একই মান।
শ্যামলি-বিআরটিসির এসি বাস পাবেন বুড়িমারি
পর্যন্ত। রাতে রওনা হলে সকালে গিয়ে পৌছাবেন। বুড়িমারি নিরাপদ। ওখানে
সমস্যা হলো বাথরুম খুবই নোংরা। ঐদিনই ভারত-ভুটান সীমান্ত জয়গাঁও গিয়ে
ভুটানে ঢুকে যেতে পারেন। ফুয়েনশলিং-এ থ্রি-স্টার মানের হোটেলও আছে। রাতটা
ওখানে থেকে সকালে বাসে থিম্পুর উদ্দেশ্যে রওনা হবেন।
ভুটান ঘোরার জন্য ৩ দিনই আমার মনে হয় যথেস্ট। সময় থাকলে বাকি সময়টা বরং দার্জিলিং-কালিম্পং-এ কাটিয়ে আসতে পারেন।