তোওবা কিভাবে করতে হবে?


তোওবা কিভাবে করতে হবে?

***তোওবা করার জন্য জন্য কয়েকটি শর্ত পূরণ করতে হবে, তাহলেই আল্লাহ তাআ'লা সেই তোওবা কবুল করবেন।
১. পাপ কাজ করা বন্ধ করতে হবে। এখন শুধু মুখে মুখে তোওবা করে নেই, কয়েকদিন পর থেকে পাপ কাজটা ছেড়ে দেবো এরকম হলে তোওবা কবুল হবেনা।
২. অতীতের সমস্ত পাপ কাজ ও ভুল ত্রুটি আল্লাহর কাছে স্বীকার করে তাঁর কাছে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে।
৩. অন্তরে ঐ কাজগুলোর প্রতি ঘৃণা রেখে সেইগুলোতে আর ফিরে না যাওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞা করতে হবে। তব কসম করবেন না, কসম না করে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করবেন।
৪. লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে সমস্ত গুনাহ-খাতার জন্য ইস্তিগফারকরতে হবে (ক্ষমা চাইতে হবে) + তোওবাকরতে হবে (গুনাহ করা বন্ধ করে আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে হবে)
. কারো হক্ক নষ্ট করে থাকলে যে ভাবেই হোক তাকে তার পাওনা ফিরিয়ে দিতে হবে, সামর্থ্য না থাকলে অনুরোধ করে, ক্ষমা চেয়ে তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নিতে হবে। উল্লেখ্য, তোওবা করলে আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন, এমনকি কারো পাপ জমীন থেকে আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে গেলেও আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন। কিন্তু বান্দার কোনো হক্ক নষ্ট করে থাকলে সেটা বান্দা মাফ না করলে আল্লাহও ক্ষম করবেন না।
. অন্তরে আশা রাখতে হবে যে, আমি গুনাহগার কিন্তু আল্লাহ গাফুরুর রাহীম অতীব ক্ষমাশীল ও দয়ালু। সুতরাং আমি যতবড় গুনাহগার হয়ে থাকিনা কেনো, তিনি আমার তোওবা কবুল করবেন ইন শা’ আল্লাহ।
. তোওবা করার পরে প্রাণপণে চেষ্টা করতে হবে পাপ কাজ থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকতে, এবং সাধ্য অনুযায়ী বেশি বেশি করে নেকীর কাজ করার জন্য।
. যে পাপ কাজ থেকে তোওবা করা হলো (সমস্ত পাপ কাজ থেকেই তোওবা করা ফরয), কোনো ভুলে বা কুপ্রবৃত্তির কারণে পাপ কাজটা আবার করে ফেললে সাথে সাথে আবার তোওবা করে সেটা থেকে ফিরে আসতে হবে। এইভাবে যখনই কোনো পাপ কাজ সংঘটিত হবে, সাথে সাথেই তোওবা করতে হবে, এমনকি মৃত্যু পর্যন্ত।
. কারো তোওবা কবুল হয়েছে কিনা এটা কিভাবে বুঝবেন? অনেক আলেম এ সম্পর্কে বলেনঃ কারো যদি তোওবা করার পরের জীবন আগের জীবন থেকে ভালো হয় অর্থাত পাপের কাজ অনেক কমে যায় ও ভালো কাজ বৃদ্ধি পায় তাহলে আশা করা যেতে পারে তার তোওবা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে।
কিন্তু কারো যদি এমন না হয় অর্থাত, তোওবার আগের ও পরের জীবনে কোনো পার্থক্য না থাকে তাহলে বুঝতে হবে তার তোওবাতে ত্রুটি আছে। তার উচিত হতাশ না হয়ে বার বার আন্তরিকতার সাথে খালেস নিয়তে তোওবা করা, আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া।

***আন্তরিক তোওবা যদি আল্লাহর কাছে কবুল হয় – তাহলে তার আগের সমস্ত গুনাহ আল্লাহ মাফ করে দেন। এমনকি যেই গুনাহগুলো মাফ করে দেন, কেউ যদি সেইগুলো থেকে ফিরে আসে – এইগুলোর বিপরীতে আল্লাহ তাকে সওয়াব দান করেন। যেমনটা আল্লাহ কুরানুল কারীমে উল্লেখ করেছেনঃ
কিন্তু যারা তওবা করে ঈমান আনে এবং সকর্ম করে, আল্লাহ তাদের গোনাহসমূহকে পুন্য দ্বারা পরিবর্তত করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু”।
সুরা ফুরক্বানঃ ৭০।
আল্লাহ আমাদের সবাইকে আন্তরিক তোওবা করার তোওফিক দান করুন।

***কি দুয়া পড়ে তোওবা করতে হবে?
আমাদের দেশের মানুষকে তোওবার দোয়া নামে যে দোয়া শেখানো হয় তা হলোঃ

"আস্তাগফিরুল্লাহা রাব্বি মিন কুল্লি যামবিও ওয়া আতুবু ইলাইহি, লা হাউলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহিল আলায়্যিল আযীম"

এটা একটা দোয়া, কিন্তু সমস্যা হলো কোরান-হাদীসের কোথাও এই দোয়া খুঁজে পাওয়া যায়না! তার মানে এই দোয়া হলো হুজুরের বানানো দোয়া, ম্যান মেইড!!
অনেকে যুক্তি দেখাতে পারেন, দোয়াতো দোয়াই, আল্লাহর কাছে একভাবে চাইলেই হবে। তাদেরকে বলবোঃ
. নবী আমাদেরকে যেই দোয়া শিখিয়ে গেছেন, তা না শিখিয়ে হুজুরের বানানো দোওয়া কেনো শেখানো হবে?
হুজুর কি নবী এর থেকে ভালো দোয়া বানাতে পারে (নাউযুবিল্লাহ)!
. হুজুরের দোয়া পড়লে কতটুকু নেকী পাওয়া যাবে? কোনো গ্যারান্টি আছে হুজুরের বানানো দোয়া আল্লাহ কবুল করবেন?
উত্তর হচ্ছেঃ না, নাই।
আসলে এগুলো একটা ষড়যন্ত্র, মানুষকে কুরান হাদীস ছেড়ে হুজুরের বানানো ভুয়া ইসলাম শেখানোর জন্য।

যেই দোয়া পড়ে রাসুলুল্লাহ তোওবা করতেন ও আমাদেরকে পড়তে বলছেনঃ

أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الْعَظيمَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ القَيّوُمُ وَأَتُوبُ إِلَيهِ

উচ্চারণঃ আসতাগফিরুল্লা-হাল আযীমাল্লাযী লা-ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।
অর্থঃ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ছাড়া ইবাদতের আর কোন যোগ্য উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী। আমি তাঁর কাছে তোওবা করছি।
রাসুলুল্লাহ বলেছেনঃ
যেই ব্যক্তি এই দোয়া পড়বে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন, যদিও সে জিহাদের ময়দান থেকে পলাতক আসামী হয়
(অর্থাত, সে যদি বড় রকমের গুনাহগার হয়, তবুও আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেবেন।)
হিসনুল মুসলিম পৃষ্ঠা ২৮৬।
তিরমিযী ৪/৬৯, আবুদাঊদ ২/৮৫, মিশকাত হা/২৩৫৩, হাদীসটি সহীহঃ সিলসিলা ছহীহাহ হা/২৭২৭।

হুজুরের বানানো দুয়া থেকে রাসুলুলুল্লাহ এর দুয়া বেশি দামী। অলসতা করবেন না। তোওবার মতো এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়, তাই এই দুয়াটা অবশ্যই মুখস্থ করবেন এবং নিয়মিত উঠতে বসতে, যখনই মনে পড়বে বেশি বেশি করে এই দুয়া পড়ে আল্লাহর কাছে মাফ চাইবেন ইন শাআল্লাহ।


উল্লেখ্যঃ এই দুয়াটা আসতাগফিরুল্লা-হাল আযীমাল্লাযী...ও আসতাগফিরুল্লা-হালাল্লাযী...এই দুইভাবেই হাদীসে আছে – দুইটাই সহীহ – যার যেটা ভালো লাগে পড়বেন)।
^উপরে যেতে ক্লিক করুন