আল্লাহ কোথায়? তিনি কি সর্ব জায়গায় বিরাজমান??



আল্লাহ কোথায়? তিনি কি সর্ব জায়গায় বিরাজমান??

সমগ্র জাহানের পালনকর্তা ও সংরক্ষক মহান আল্লাহ্‌ তাআ’লা সাত আকাশের উপর অবস্থিত সুমহান আরশের উপর সমুন্নত, তিনি সর্বস্থানে বিরাজমান নন। তাঁর ক্ষমতা অসীম ও সর্বব্যাপী। তিনি সব কিছু দেখেন ও শোনেন। কোন কিছুই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। তিনি আরশে আযীমে থেকেই সব কিছু সুচারু€রূপে পরিচালিত করেন। কুরআন ও সুন্নাহ থেকে তার প্রমানঃ

১. মহান আল্লাহ্‌ এরশাদ করেনঃ
নিশ্চয় তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহ্‌, যিনি আকাশ সমূহ এবং পৃথিবীকে ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন। অতঃপর তিনি আরশে অধিষ্ঠিত হয়েছেন
সুরা আল-আরাফঃ ৫৪।

২. আল্লাহ্‌ তাআলা আরও বলেনঃ
রহমান (আল্লাহ্‌) আরশে সমুন্নত
সুরা ত্বহাঃ ৫।
এ কথায় কোনই সন্দেহ নেই যে আরশ আসমান রয়েছে, জমিনে নয়।

৩. তাই মহান আল্লাহ্‌ অন্যস্থানে বলেনঃ
তেমরা কি নিরাপদ হয়ে গেছো যে, যিনি আকাশে রয়েছেন তিনি তোমাদেরকে ভূগর্ভে বিলীন করে দিবেন না
সুরা মুলকঃ ১৬।

এ ছাড়া আরো বহু আয়াতে আল্লাহ্‌ তাআ’লা নিজের পরিচয়ে বলেছেন যে, তিনি আকাশের উপর মহান আরশেই রয়েছেন। এ ক্ষেত্রে অধিক প্রমাণের জন্য নিম্ন লিখিত আয়াত গুলো দেখা যেতে পারে।
(ইউনুস-৩, রাদ-২, ফুরক্বান- ৫৯, সাজদাহ্-৪, হাদীদ-৪)

৪. হাদীসে রাসুলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ
তোমরা কি আমাকে আমানতদার মনে কর না, অথচ যিনি আসমানে আছেন আমি তাঁর আমানতদার। আমার কাছে আসমানের খবর সকাল-সন্ধ্যায় আসেবুখারী ও মুসলিম
আসমানে যিনি আছেন নিশ্চয় তিনি মহান আল্লাহ্‌। কোন সন্দেহ আছে কি ?

৫. মুয়াবিয়া বিন হাকাম আস্ সুলামী রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতরাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জনৈক দাসীকে প্রশ্ন করেছিলেনঃ আল্লাহ্‌ কোথায়? উত্তরে সে বলেছিলঃ আল্লাহ্‌ আসমানে। তিনি বললেন, আমি কে? সে বললঃ আপনি আল্লাহ্‌র রাসুল। তখন রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার মনিবকে বললেনঃ তাকে আজাদ করে দাও। কেননা সে ঈমানদার।
সহীহ মুসলিম।  

৬. রাসূলুল্লাহ্ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরও বলেন:
যারা জমিনে আছে তোমরা তাদের প্রতি দয়াশীল হও যিনি আকাশে আছেন তিনিও তোমাদের প্রতি দয়াশীল হবেন
তিরমিযী, হাদীস সহীহ।

৭. সুপ্রসিদ্ধ মেরাজের ঘটনা বুখারী-মুসলিম সহ বহু হাদীস গ্রন্থে রয়েছে।
হে বিবেকবান মুসলিম ভাই! আল্লাহ্‌ যদি সর্বত্র সবকিছুতেই বিরাজমান থাকেন, তবে মেরাজের কি দরকার ছিল? মেরাজের রাত্রে বোরাকে চড়ে সপ্তাকাশের উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহ্‌র দরবারে গমনই তো প্রমাণ করে যে মহান আল্লাহ্‌ সাত আসমানের উপর অবস্থিত আরশেই রয়েছেন। নতুবা মেরাজ অর্থহীন হয়ে যায় না কি?

অনেকে কুরআনের কিছু আয়াতের অপব্যখ্যা করে বলে, আল্লাহ সব জায়গায় বিরাজমান। আর এর জন্য দলীল দেয়ঃ আল্লাহ তোমাদের সাথেই আছেন, আল্লাহ তোমাদের গ্রীবাস্থিত ধমনীর নিকটবর্তী, এমন কিছু আয়াত।
এখানে আল্লাহ তোমাদের সাথে বা তোমাদের কাছে বলতে অর্থ হচ্ছে আল্লাহর জ্ঞান, তাঁর কুদরত ও ক্ষমতা সব জায়গায় বিরাজমান। দলীল -
“আপনি বলুনঃ আমার পালনকর্তাই প্রত্যেক বস্তুকে স্বীয় জ্ঞান দ্বারা বেষ্টন করে আছেন। তোমরা কি চিন্তা কর না?
সুরা আল-আনআ'মঃ ৮০।
অর্থাত, আল্লাহর জ্ঞান ও আল্লাহর ক্ষমতা সব জায়গায় বিরাজমান, কিন্তু তিনি নিজে সবজায়গায় বিরাজমান না। তিনি আরশে আযীমে সমুন্নত।

একটি সংশয় নিরসনঃ
কুরআনের বিভিন্ন আয়াতে আল্লাহ্‌ বান্দার সাথেরয়েছেন বলা হয়েছে। এর অর্থ এই নয় যে তিনি তাদের সাথে মিলিত ও সংযুক্ত অবস্থায় রয়েছেন। কেননা এরূপ অর্থ পূর্বসূরী আলেমদের কেউই করেন নি। পক্ষান্তরে এটা ভাষাগতভাবেও আবশ্যক নয়। আল্লাহ্‌ তাআ'লা সাথেথাকার ব্যাখ্যা নিজেই দিয়েছেন। যেমন- তিনি বলেনঃ
তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি তোমাদের সাথেই রয়েছেন। আল্লাহ্‌ তোমাদের কৃতকর্মের সম্যক দ্রষ্টা"।
সুরা হাদীদঃ ৪।
অর্থা তাঁর দৃষ্টির মাধ্যমে তিনি আমাদের সাথে আছেন, নিজের অস্তিত্বে নয়। মুসা ও হারুন আলাইহিমুস সালাম কে আল্লাহ্‌ ফেরাউনের কাছে যাওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেনঃ
আমি তোমাদের সাথেই রয়েছি শুনছি ও দেখছি"।
সূরা ত্বা-হাঃ ৪৬।
এই আয়তে আল্লাহ্‌ সাথে থাকার অর্থ নিজেই করেছেন, দেখা ও শোনার মাধ্যমে। অর্থা আমি তোমাদের সাহায্যকারী ও রক্ষাকারী। যেমন- সাধারণভাবে আমরা বলে থাকি "আপনি অমুক কাজটি করুন আমরা আপনার সাথে আছি"
অর্থা আমরা আপনাকে সমর্থন ও সহযোগিতা করব। যেমনঃ টেলিফোনে কথা বলার সময় একজন অপরজনকে বলে থাকেঃ কে আপনি আমার সাথে? জবাবে বলে আমি উমুক আপনার সাথে। অথচ এখানে দুজন অঙ্গা-অঙ্গী হয়ে থাকে না। দুইজন দুইদেশ থেকে কথা বলে। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে সাথে থাকার অর্থ মিশে থাকা নয় বরং মহান আল্লাহ্‌ সেই আরশে আযীমে থেকেই তাঁর সাহায্য-সহযোগিতা, দেখা-শোনা ও জ্ঞানের মাধ্যমে আমাদের সাথে রয়েছেন। তিনি অসীম ক্ষমতাবান এবং যা চান তাই করতে পারেন।
^উপরে যেতে ক্লিক করুন