- প্রকাশ করা হয়েছে সোমবার, 02 মার্চ 2015 17:46
সকল সংশয়কে মুছে ফেলে শুরু হয়েছে পদ্মাসেতুর নির্মাণকাজ। দেশের সর্ববৃহৎ এই প্রকল্পের কাজ এগিয়ে চলছে দ্রুত গতিতে। ইতোমধ্যেই ১৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। গত পহেলা মার্চ, ২০১৫ তারিখে শুরু হয়েছে টেস্ট পাইলিং এর কাজ।
সংযোগ সড়ক নির্মাণ, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন ও প্রকল্প এলাকার উন্নয়নে ৬ শত কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে।
- ছয় দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতুর ওপর দিয়ে ২০১৮ সালে পদ্মা পার হবে গাড়ি।
- ঢাকাসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে সরাসরি সড়কপথে যুক্ত হবে দক্ষিণ জনপদের ১৯ জেলা।
- সেতুর ওপর দিয়ে ট্রেনও চলবে।
- পদ্মা সেতু এখন আর অবাস্তব স্বপ্ন নয়। এখন দিবালোকের মতো পরিষ্কার। বিশাল কর্মযজ্ঞ চলছে। ২০১৮ সালে এই সেতু যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।”
-সড়ক, পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের
পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে সাতটি ভাগে।
মূল সেতু নির্মাণের দায়িত্বে আছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। চুক্তি অনুযায়ী ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকায় ৪৮ মাসের মধ্যে তাদের কাজ শেষ করার কথা। সেই হিসাবে মূল সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে ২০১৮ সালের মে মাসে। ৮ হাজার ৭০৭ কোটি টাকায় নদী শাসনের জন্য চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হয় গত বছরে ১০ নভেম্বর।নদী শাসনের জন্য যন্ত্রপাতি আনার কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনটি ড্রেজার চীন থেকে রওনা হয়েছে।
মূল সেতু নির্মাণের দায়িত্বে আছে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেড। চুক্তি অনুযায়ী ১২ হাজার ১৩৩ কোটি টাকায় ৪৮ মাসের মধ্যে তাদের কাজ শেষ করার কথা। সেই হিসাবে মূল সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে ২০১৮ সালের মে মাসে। ৮ হাজার ৭০৭ কোটি টাকায় নদী শাসনের জন্য চীনের সিনোহাইড্রো করপোরেশন লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি হয় গত বছরে ১০ নভেম্বর।নদী শাসনের জন্য যন্ত্রপাতি আনার কাজ শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে তিনটি ড্রেজার চীন থেকে রওনা হয়েছে।
১২৯০ কোটি টাকায় বাংলাদেশের আব্দুল মোনেম
লিমিটেড ও মালয়েশিয়াভিত্তিক এইচসিএম যৌথভাবে করছে মাওয়া ও জাজিরায়
সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ। মাওয়ার কাজ ইতোমধ্যে ২২ শতাংশ এবং জাজিরায় ২৯
শতাংশ এগিয়েছে। মূল সেতু ও নদী শাসন কাজের পরামর্শক হিসাবে রয়েছে
কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে। তাদের জন্য ব্যয় হবে ৩৮৩ কোটি টাকা। আর ১৩৩ কোটি
টাকায় সংযোগ সড়ক ও সার্ভিস এলাকার পরামর্শকের কাজ করছে সেনাবাহিনীর
স্পেশাল ওয়ার্কস অর্গনাইজেশন।
কর্মযজ্ঞ দুই তীরে
পুরাতন মাওয়া ঘাটের দিকে এগোলে দূর থেকেই চোখে পড়ে নদীর মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের ফ্লোটিং ক্রেনের মাস্তুল। এ প্রতিষ্ঠানটিই মূল সেতুর ঠিকাদার। মাওয়ার প্রকল্প এলাকায় প্রতিষ্ঠানটি ৩টি ড্রেজার, ৩টি ফ্লোটিং ক্রেন, ২টি টাগবোট ও একটি অ্যাংকর বোট নিয়ে কাজ করছে। তৈরি হচ্ছে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড, ল্যাবরেটরি, ওয়ার্কশেড, লেবারশেড ও জেটি। সেতুর সেন্টার লাইন বরাবর শুরু হয়েছে নেভিগেশন চ্যানেল ড্রেজিং।
পুরাতন মাওয়া ঘাটের দিকে এগোলে দূর থেকেই চোখে পড়ে নদীর মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকা চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডের ফ্লোটিং ক্রেনের মাস্তুল। এ প্রতিষ্ঠানটিই মূল সেতুর ঠিকাদার। মাওয়ার প্রকল্প এলাকায় প্রতিষ্ঠানটি ৩টি ড্রেজার, ৩টি ফ্লোটিং ক্রেন, ২টি টাগবোট ও একটি অ্যাংকর বোট নিয়ে কাজ করছে। তৈরি হচ্ছে কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড, ল্যাবরেটরি, ওয়ার্কশেড, লেবারশেড ও জেটি। সেতুর সেন্টার লাইন বরাবর শুরু হয়েছে নেভিগেশন চ্যানেল ড্রেজিং।
নির্মাণ কাজের সুবিধার জন্য দুই লেনের
নতুন বাইপাস সড়ক করে দেওয়া হয়েছে; যা ব্যবহার করে জট ছাড়াই চলে যাচ্ছে
গাড়ি। ঢাকা-মাওয়া মূল সড়ক ৮৪ মিটার চওড়া করতে বালু-মাটি ফেলে রোলার
দিয়ে পেটানো হচ্ছে। তৈরি হচ্ছে সংযোগ সড়কের কালভার্ট, সেতু এবং মূল সেতুর
টোল প্লাজার পিলার। পুরনো মাওয়া চৌরাস্তায় শুধু দাঁড়িয়ে আছে সেতু
বিভাগের একটি রেস্ট হাউজ। কয়েকবছর আগে পদ্মা সেতুর কাজের জন্য এই রেস্ট
হাউজ নির্মাণ করা হয়েছিল, যা কিছুদিনের মধ্যেই ভেঙে ফেলা হবে। শিমুলিয়ায়
নতুন ফেরি ঘাটের জন্য চওড়া সড়ক নির্মাণের কাজ চলছে পুরোদমে। ঘাটের পাশেই
হচ্ছে নতুন বাস টার্মিনাল। শিমুলিয়াতেই তৈরি হচ্ছে সার্ভিস এলাকা; যেখানে
মূল সেতুর নির্মাণ সামগ্রী রাখা এবং প্রকৌশলী-কর্মীদের থাকার জায়গা হবে।
পদ্মার ওপারে জাজিরা ও শিবচরে চলছে আরো
বড় কর্মযজ্ঞ। মূল সেতু যেখানে নামবে সেই নাওডোবা থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার
এলাকাজুড়ে শুধুই নির্মাণ কাজ। ড্রেজিং পাইপে বালু এনে ফেলা হচ্ছে পুরো
এলাকায়। সংযোগ সড়ক, সংযোগ সেতু, কালভার্ট, সার্ভিস এলাকা ও সেনা ক্যাম্প
নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে পুরোদমে। প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান,
মূল সেতুর পাইলিংয়ের জন্য মাটি পরীক্ষার কাজ চলছে। একইসঙ্গে টেস্ট পাইল ও
স্টিল ফেব্রিকেশনের কাজ চলছে চীনের ন্যানটংয়ের ওয়ার্কশপে। নির্মাণ
এলাকায় ওয়ার্কশপ বসানো হয়ে গেলে সেখানেই পাইল ও স্টিল ফ্রেবিকেশনের কাজ
শুরু হবে। নিরাপত্তা ও প্রকৌশলে সহযোগিতার জন্য সেনাবাহিনীর পুরো একটি
ব্রিগেড মোতায়েন করা হয়েছে পদ্মার দুই পাশে।
অর্থনৈতিক উন্নয়ন
পদ্মা সেতু চালু হলে দেশের আর্থিক
প্রবৃদ্ধি এক দশমিক ২৩ শতাংশ বাড়বে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পে ইতোমধ্যে
২০০ বিদেশিসহ প্রায় ২ হাজার লোকের প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান হয়েছে।কাজ
পুরোদমে শুরু হলে প্রত্যক্ষভাবে ২০ থেকে ২৫ হাজার লোকের সম্পৃক্ততা লাগবে,
যার মধ্যে ২ হাজার বিদেশি থাকবে
পদ্মা ঘিরে হংকংয়ের আদলে শহর
পদ্মা সেতুর দুই তীরে হংকংয়ের আদলে শহর
গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছে সরকার। সম্প্রতি যোগাযোগ
মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে মন্ত্রী ও কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে
প্রধানমন্ত্রী তার এই পরিকল্পনা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, 'সেখানে আমরা নতুন
একটা শহর গড়ে তুলতে পারি। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে ইতোমধ্যে কথা হয়েছে। সেখানে
একটা ভালো কনভেনশন সেন্টার করা হবে। পাশাপাশি বাণিজ্য মেলাটাও যদি ওখানে
করতে পারি তাহলে ওই জায়গা উন্নত হয়ে যাবে। ওখানে এন্টারটেইনমেন্টের জন্য
ব্যবস্থা করতে পারি।
'ওই জায়গাটা জিরো পয়েন্ট থেকে কাছে,
মাত্র ২৫ কিলোমিটার। কাজেই ওই জায়গাটায় আমরা নতুন একটা আলাদা শহর গড়ে
তুলতে পারি। যে শহরটা হংকং বা ওই ধরনের.... মাথায় রেখে গড়ে তুলতে পারি।
কাজেই সেভাবে আমাদের কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।' এ বিষয়ে যোগযোগমন্ত্রী
ওবায়দুল কাদের বলেন, 'পদ্মার আশেপাশেই নতুন একটি বিমানবন্দর নির্মাণ করা
হবে। অলিম্পিক ভিলেজ এবং দেশের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা
হবে। হংকংয়ের মতো শহর হবে এখানে।'
পুনর্বাসন
মাওয়া ও জাজিরায় পদ্মার দুই পাড়ে প্রায় ২৮০০ একর জমি অধিগ্রহণ করে বিভিন্ন ভাগে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যাদের কাছ থেকে জমি নেওয়া হয়েছে, তাদের নতুন আবাস হচ্ছে মাওয়ায় চারটি ও জাজিরা-শিবচরে তিনটি পুনর্বাসন এলাকায়। পরিকল্পিত রাস্তাঘাট, স্কুল, বাজার, মসজিদসহ বিভিন্ন সুবিধা রেখে এসব পুনর্বাসন এলাকায় প্লট তৈরি করে ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। সেসব প্লটে মাথা তুলছে ঘরবাড়ি।
মাওয়া ও জাজিরায় পদ্মার দুই পাড়ে প্রায় ২৮০০ একর জমি অধিগ্রহণ করে বিভিন্ন ভাগে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যাদের কাছ থেকে জমি নেওয়া হয়েছে, তাদের নতুন আবাস হচ্ছে মাওয়ায় চারটি ও জাজিরা-শিবচরে তিনটি পুনর্বাসন এলাকায়। পরিকল্পিত রাস্তাঘাট, স্কুল, বাজার, মসজিদসহ বিভিন্ন সুবিধা রেখে এসব পুনর্বাসন এলাকায় প্লট তৈরি করে ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে। সেসব প্লটে মাথা তুলছে ঘরবাড়ি।
প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান,
'পাঁচ হাজার পরিবার এ প্রকল্পের জন্য ঘরবাড়ি হারিয়েছেন। তাদের মধ্যে ২
হাজার ৭০০ পরিবারকে আবাসিক এলাকায় প্লট দেওয়া হয়েছে। আরো অনেকে প্লট
পাবেন। তবে অনেকেই ক্ষতিপূরণ নিয়ে নিজস্ব উদ্যোগে অন্যত্র ঘরবাড়ি করে
নিচ্ছেন।' ওয়াবদুল কাদের বলেন, 'পুনর্বাসনের কাজ আমরা ৭০ শতাংশ শেষ করে
ফেলেছি। ক্ষতিপূরণ দিয়ে দিয়েছি। এর বাইরে আর কারো দাবি থাকলে সেটাও
দেওয়া হবে।' নাওডোবায় ২৬ শতক জমির বদলে পুনর্বাসন এলাকায় ৫ শতকের একটি
প্লট পেয়েছেন দানেশ চোকদার। এছাড়া বাড়ি বানানোর জন্য পেয়েছেন নগদ টাকা।
সেই টাকায় চার নম্বর পুনর্বাসন এলাকায় টিনের চাল দিয়ে আধাপাঁকা ঘর
তুলেছেন তিনি।
দানেশ বলেন, 'পৈত্রিক ভিটে হলেও দেশের
স্বার্থে সরকারকে দিতে হয়েছে। সেতু হলে লাভ হবে, দেশ উন্নত হবে।' প্রকল্প
পরিচালক বলেন, যারা ঘড়বাড়ি ছেড়ে পুনর্বাসন এলাকায় এসেছেন, তারা যাতে
আগের অর্থনৈতিক অবস্থা থেকে পিছিয়ে না পড়েন সেজন্য প্রশিক্ষণের উদ্যোগ
নিয়েছে সরকার। এসব এলাকায় কী ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হওয়া
যায়, অথবা ভবিষ্যতে কী কী অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড এখানে হবে- সেভাবেই তাদের
তৈরি করা হচ্ছে।'