মুজাহিদের ফাঁসি

মুজাহিদের ফাঁসি

তারিখ: ১৮/০৬/২০১৫
ইতিহাস যাদের ক্ষমা করেনি, জাতি হিসেবে বাঙালীও তাদের ক্ষমা করতে পারে না। ইতিহাসের দায় তাকে মেটাতেই হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিলেন তাদের বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছে চার দশক পরও। জাতি কোনদিন ভাবেনি বাঙালী নিধন, নারী ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সহযোগী সশস্ত্রবাহিনী রাজাকার, আলবদররা তালিকা করে এ দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষকে হত্যা করবে।
এদের মধ্যে শিক্ষক, সাংবাদিক, সঙ্গীতজ্ঞ, কবি, চিকিৎসক, বিজ্ঞানী এবং প্রকৌশলীসহ নানা পেশার মানুষ রয়েছেন। সাংবাদিক সিরাজউদ্দিন হোসেন, সুরকার আলতাফ মাহমুদসহ বুদ্ধিজীবী হত্যার অন্যতম আসামি আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের অবশেষে ফাঁসি বহাল রেখেছে আপীল বিভাগ। তৎকালীন ইসলামী ছাত্রসংঘের সভাপতি, রাজাকার ও আলবদর বাহিনীর জল্লাদ এই নেতা ১৯৭১-এর ২৫ মার্চের পর আবির্ভূত হয় পাকিস্তানী হানাদার সেনাদের সহযোগী হিসেবে। সেনা ক্যাম্পে বসে হানাদারদের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাকামীদের হত্যা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ষড়যন্ত্র করত সে। মুজাহিদ ১৯৭১-এর ১০ ডিসেম্বর থেকে পরিচালনা করে বুদ্ধিজীবী নিধন অভিযান। মুজাহিদের পরিচালনায় ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবীদের নৃশংস হত্যাকা- চালানো হয়। বুদ্ধিজীবী হত্যার মাস্টার মাইন্ড, প্যানেল তৈরি, নির্যাতন ও খুনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত পরবর্তীকালে হন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মুজাহিদ। এই নরাধমকে রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করা হয় পঁচাত্তর-পরবর্তী সামরিক জান্তা শাসক জেনারেল জিয়ার আমলে। আর বেগম খালেদা জিয়া কোন নির্বাচনেই না জেতা মুজাহিদকে সমাজকল্যাণমন্ত্রী বানিয়ে তার গাড়িতে স্বাধীন বাংলাদেশের রক্তমাখা পতাকা উড়িয়েছেন। যে পতাকায় মুজাহিদের হাতে নিহত বাঙালীর রক্তের দাগ লেগে আছে। এই প্রথম বিএনপি-জামায়াত জোটের মন্ত্রিসভার এক সদস্য মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে ফাঁসিতে ঝুলতে যাচ্ছে। আপীল বিভাগের রায়েও মুজাহিদের মৃত্যুদ- বহাল রাখা হয়েছে।
২০১৩ সালের ১৭ জুলাই মুজাহিদকে যুদ্ধাপরাধী হিসেবে মৃত্যুদ- দেয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। তার বিরুদ্ধে আনা ৭টি অভিযোগের মধ্যে ৫টিতে মৃত্যুদ--কারাদ-ের শাস্তি ঘোষণা করা হয়েছে। মুজাহিদ এ রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করে। আপীলেও ফাঁসির রায় বহাল রইল। এখন রিভিউ পিটিশন মীমাংসিত হওয়ার পর রায় কার্যকর হবে। যে কটি অভিযোগ প্রমাণ করা যায়নি, তার নেপথ্য কারণ দুর্বল তদন্ত। তদন্তকারী কর্মকর্তাদের অদক্ষতা, অযোগ্যতা, গাফিলতি, কর্তব্য অবহেলার নজির এর আগেও মিলেছে। আদালত এ জন্য তাদের ভর্ৎসনাও করেছে।
একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী ও তাদের সহযোগী অনেকে আত্মসমর্পণ করলেও মুজাহিদের নেতৃত্বাধীন আলবদররা তা না করে আত্মগোপনে চলে যায়। ’৭৫-এর পর আত্মপ্রকাশ ঘটে তাদের। এই জল্লাদ খুনীর ফাঁসির রায়ে দেশবাসী সন্তোষ প্রকাশ করেছে। জনগণ চায় সব যুদ্ধাপরাধীর বিচার করে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করা হোক।


^উপরে যেতে ক্লিক করুন