১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর প্রেসিডেন্ট ইস্কান্দার মির্জা পাকিস্তানে সামরিক শাসন জারি করেন। এর ২০ দিনের মাথায় পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর তৎকালীন প্রধান আইয়ুব খান পাল্টা অভ্যুত্থান ঘটিয়ে ক্ষমতা দখল করেন।
এভাবেই
শুরু হয় আইয়ুব খানের এক দশকব্যাপী সামরিক শাসন। এসময় সংবিধান স্থগিত
করা হয়, প্রাদেশিক পরিষদ বিলুপ্ত করা হয় এবং সকল রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড
নিষিদ্ধ করা হয়। শেখ মুজিবসহ বিপুল সংখ্যক রাজনীতিবিদদের বন্দী করা হয়। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ প্রায় ৭৮ জন জনপ্রিয় রাজনীতিবিদকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুপযোগী হিসেবে ঘোষণা করা হয়। সংবাদপত্রের স্বাধীনতাকে খর্ব করা হয়। এছাড়া সামরিক প্রশাসনের ছত্রছায়ায় ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ প্রবর্তন করেন আইয়ুব খান। প্রত্যক্ষ নির্বাচনের বদলে চালু করা হয় ‘ইলেক্টোরাল কলেজ’ ব্যবস্থা।
এমন কঠোর দমননীতি সত্ত্বেও আওয়ামী লীগ তার কার্যক্রম
গোপনে চালিয়ে যেতে থাকে। একইসাথে আইয়ুববিরোধী আন্দোলনও ক্রমশঃ জোরদার
হতে থাকে। এই আন্দোলন আরও দুর্বার হয়ে ওঠে যখন ১৯৬২ সালের জুন মাসে হোসেন
শহীদ সোহরাওয়ার্দীকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই সংবাদ শোনার সঙ্গে সঙ্গে
ক্ষোভে ফেটে পড়ে সমস্ত পূর্ব পাকিস্তান, রাস্তায় নেমে আসে লাখো
ছাত্র-জনতা।
১৯৬৫
সালের ২ জানুয়ারি, পাকিস্তানে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মৌলিক
গণতন্ত্রের ভিত্তিতে, ইলেক্টোরাল কলেজ ব্যবস্থায় আশি হাজার ভোটারের
অংশগ্রহণে এই নির্বাচন হয়। বিজয়ের সম্ভাবনা ক্ষীণ
হওয়া সত্ত্বেও তৎকালীন বিরোধী দলগুলো জোটগতভাবে এতে অংশগ্রহণ করে।
আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ সহায়তায় ১৯৬৪ সালের ২১ জুলাই গঠিত হয় ‘কম্বাইন্ড অপোজিশন পার্টি’ তথা সিওপি। এই জোট মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর ফাতেমা জিন্নাহ’কে
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়। যদিও এই
নির্বাচনে ফাতেমা জিন্নাহ পরাজিত হলেও এই নির্বাচনকে ঘিরে আইয়ুববিরোধী
আন্দোলন আরও জোরদার হয়। একইসাথে আইয়ুব খানের ‘মৌলিক গণতন্ত্র’ ব্যবস্থার অন্তঃসারশূণ্যতা প্রমাণিত হয়।