
পাকিস্তানের
তৎকালীন শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে বাঙালি প্রথম বিদ্রোহ
রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে। সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা বাংলার পরিবর্তে পূর্ব
পাকিস্তানের মানুষের উপর উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল
পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী।
এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে তৎকালীন
পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিরা। ১৯৪৮ থেকে ১৯৫২ সাল পর্যন্ত চলা এই ভাষা
আন্দোলনের সামনে থেকে নেতৃত্বে দেয় আওয়ামী লীগ ও এর ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ। এই দুই রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এই গণআন্দোলনে অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেন। এক্ষেত্রে শেখ মুজিবুর রহমানের নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
১৯৪৮
সালের ১১ মার্চ, পূর্ব পাকিস্তান সচিবালয় অবরোধ কর্মসূচিতে নেতৃত্ব দিতে
গিয়ে কয়েকজন অনুসারীর সাথে পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হন শেখ মুজিব। সেই বছরেরই ২১
মার্চ, ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক
জনসভায় পাকিস্তানের প্রথম গভর্নর জেনারেল মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ঘোষণা দেন,
“উর্দু এবং একমাত্র উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা।”
সাথে সাথেই জোরালো প্রতিবাদ জানান বঙ্গবন্ধুসহ বেশ কয়েকজন তরুণ
নেতা-কর্মী। এর পর থেকেই তৎকালীন মুসলিম লীগ সরকারের চক্ষুশূলে পরিণত হন
শেখ মুজিবুর রহমান। বার বার কারাগারে পাঠানো হয় তাঁকে। তবে জেল থেকেও ১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলনের উত্তাল দিনগুলোতে নেতা-কর্মীদের কাছে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা পাঠাতেন মুজিব। অবশেষে ১৯৫২
সালের ২১ ফেব্রুয়ারি, পুলিশের গুলিতে কয়েকজন ভাষা আন্দোলনকর্মী শহীদ
হওয়ার পর তীব্র আন্দোলনের মুখে বাঙালিদের দাবি মেনে নিয়ে উর্দুর পাশাপাশি
বাংলাকেও রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য হয় পশ্চিম পাকিস্তানি
শাসকগোষ্ঠী। ভাষার জন্য বাঙালিদের এই সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করে।