( সূত্র ; বইয়ের নাম- বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও সর্বাধিনাক ওসমানী।
লেখক ; মোঃ আব্দুল আজিজ, সময় প্রকাশন থেকে, এপ্রিল ২০০০ সালে প্রথম প্রকাশিত হয়েছে এখানে বইটির আট অধ্যায়ের
কিছু অংশের বর্ণনা হুবহু এখানে উল্লেখিত হলো)
২৬ মার্চ ’৭১ সকালের দিকে ইংরেজিতে লেখা একটা হ্যান্ডবিল চট্রগ্রামে লোকের হাতে হাতে পৌঁছে যায়৷
এ হ্যান্ডবিলটির বঙ্গানুবাদ করেছিলেন ডাক্তার মনজুর৷এর ভাষ্যটি ছিলো নিম্নরূপ :
বাঙ্গালী ভাইবোনদের কাছে এবং বিশ্ববাসীর কাছে আমার আবেদন, রাজরবাগ পুলিশ ক্যাম্প ও পিলখানা ইপিআর ক্যাম্পে রাত ১২ টায় পাকিস্তানী সৈন্যরা অতর্কিতে হামলা চালিয়ে হাজার হাজার লোককে হত্যা করেছে ৷ হানাদার পাকিস্তানী সৈন্যদের সঙ্গে আমরা লড়ে যাচ্ছি৷আমাদের সাহায্য প্রয়োজন এবং পৃথিবীর যে স্থান থেকেই হোক৷এমতবস্তায় আমি বাংলাদেশকে স্বাধীন সার্বভোম রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করছি৷ তোমরা তোমাদের সমস্ত শক্তিদিয়ে মাতৃভূমিকে রক্ষাকর৷আল্লাহ্ তোমাদের সহায় হউন৷
( শেখ মুজিবুর রহমান)
( সূত্র; দৈনিক বাংলা, ২৬ মার্চ, চৌধুরী, শামসুল হুদা , একাত্তরের রণাঙ্গন, প্রকাশ ১৯৮৪ , পৃ, ১৫ )
ওই দিন চট্রগ্রামের কালুরঘাটে সংগঠিত‘ স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্রে’র প্রথম সান্ধ্য অধিবেশনে আবুল কাশেম সন্দীপের উপস্থাপনায় এ হ্যান্ডবিলটি প্রচারিত হয়েছিল৷ ইতিপূর্বে চট্রগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি জনাব আব্দুল হান্নান অপরাহ্ন প্রায় দু’টার সময় চট্রগ্রাম বেতার (আগ্রাবাদ) থেকে আনুমানিক পাঁচ মিনিটের এক সংক্ষিপ্ত ভাষণ রেখেছিলেন দেশবাসীর উদ্দেশ্যে৷বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণার বাণীর আলোকেই ছিল জনাব এম , এ , হান্নানের এই ভাষণ৷স্পষ্টতঃই চট্রগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণার পক্ষে বিপ্লবী ভাষণ প্রচারের গৌরব অর্জন করেছিলেন জনাব এম,এ, হান্নান ৷
( সূত্র; চৌধুরী শামসুল হুদা, একাত্তরের রণাঙ্গন, প্রকাশ- ১৯৮৪ , পৃ , ১৬ , ৩০-৩১)
বেলাল মোহাম্মদ ও আবুল কাশেম সন্দ্বীপ প্রমুখের উদ্যেগে ২৬মার্চ সন্ধ্যা ৭-৪০মিঃ কালুরঘাটের বেতার কেন্দ্রে কে স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র চালু করা হয়। সেখানে এসেও জনাব এম,এ হান্নান নিজ নাম ঘোষণা ছাড়াই একটি ভাষণ প্রচার করেছিলেন ৷
পরদিন এই বেতার কেন্দ্রটির প্রহরার ব্যবস্থা করার জন্যে বেলাল মোহাম্মদ ও আরো কয়েকজন পটিয়ায় গেলেন এবং সেখান থেকে মেজর জিয়াকে নিয়ে আসেন ৷
বেলাল মোহাম্মদের পরামর্শে মেজর জিয়া ২৭ মার্চ বেতারের সান্ধ্য অধিবেশনে স্বকণ্ঠে ইংরেজিতে একটি ঘোষণা প্রচার করেন৷ বেলাল মোহাম্মদের স্মৃতি অনুযায়ী সেদিন মেজর জিয়া ঘোষণা করেছিলেন,
I , Major Zia , on behalf of our great national leader Bangabandhu Sheickh Mujibur Rahman , do hereby declare Independence of Bangladesh” (আমি মেজর জিয়া আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করছি)
( সূত্র; মোহাম্মদ বেলাল, স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, অনুপম প্রকাশনী , ১৯৯৭ , পৃ, ৪০)
৩০ মার্চ প্রভাতী অধিবেশনে মেজর জিয়ার আরেকটি ইংরেজী ভাষণ প্রচার করা হয়৷এতে এ কে খানের পরামর্শে পূর্বতম ঘোষণা মতে মহান নেতা বঙ্গবন্ধুর নামে ঘোষিত হয়েছিলো৷সেদিন দুপুরে ২-৩০ মিঃ কালুরঘাট বেতার ভবনে হানাদার বাহিনী বোমা বর্ষণ করে৷ এতে বেতারের ৩১ কলোওয়াট শক্তির প্রেরক যন্ত্রটি ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়৷ এরপর সেই ভবনে রক্ষিত ১ কিলোওয়াট শক্তিসম্পন্ন প্রেরকযন্ত্রটি খুলে রামগড় নিয়ে যাওয়া হয় ৷ সেখান থেকে ৩ এপ্রিল অন্যসূত্র থেকে পাওয়া ২০০ কিলোওয়াট শর্টওয়েভ প্রেরকযন্ত্র থেকে রাতের বেলা ১ ঘন্টা স্থায়ী একটি অধিবেশন চালানো হয়৷ ৪ এপ্রিল ১ কি.ওয়াট যন্ত্রটি স্থাপন করে সমবেত কর্মীরা দু’দলে ভাগ হয়ে দু’টি কেন্দ্রের অনুষ্ঠান প্রচার শুরু করেন৷ ২৫ মে সকাল পর্যন্ত এ ব্যবস্থা অব্যাহত থাকে ওই দিন সন্ধ্যায় মুজিব নগরে ৫০ কি. ওয়াট শক্তির একটি কেন্দ্র চালু হলে বেতার কর্মীরা সে কেন্দ্রে যোগদানের উদ্দেশ্যে পরদিন মুজিব নগর পৌছেন৷
এই সময়ে চট্রগ্রামের ষোল শহর ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট ও চট্রগ্রাম সেনানিবাসে রেজিমেন্টাল সেন্টারে প্রায় ২০০০ নতুন রিক্রুট বাঙালি সৈন্য ছিল৷ রাত ১১-৩০ মিঃ বেলুচ রেজিমেন্টের সৈন্যরা অতর্কিতে রেজিমেন্ট সেন্টারে আক্রমণ চালায় এবং এতে এক হাজারের বেশী বাঙালি সৈন্য নিহিত হয়৷ কিছু সৈনিক পালিয়ে গিয়ে ষোল শহরে ৮ম ইস্টবেঙ্গলে সাহায্য প্রার্থী হলে ও তারা প্রত্যাশিত সাহায্য পায়নি৷ রেজিমেন্টের উপ-প্রধান মেজর জিয়াকে তখন পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিলো বন্দরে এম , ভি , সোয়াত থেকে অস্ত্র খালাসে সাহায্য করার জন্য৷
তিনি পথে ব্যারিকেডের সম্মুখীন হন৷ ব্যারিকেড পরিস্কার করার সময় তিনি খবর পান যে বেলুচ রেজিমেন্ট কর্তৃক রেজিমেন্ট সেন্টার আক্রান্ত হয়েছে ৷
এ খবর পাওয়া মাত্র তিনি সিদ্ধান্ত পাল্টে ষোল শহর যাত্রা করেন এবং সেখানে পৌঁছে ব্যাটালিয়ান কম্যাণ্ডারকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে গ্রেফতার করেন৷ তখন মিলিটারি টেলিফোন অকেজো হয়ে গেছে৷ তাই সিভিল টেলিফোন অপারেটরকে ফোনে পেয়ে অনুরোধ জানান যে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ব্যাটালিয়ান স্বাধীনতা যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এ সংবাদটি যেন চট্রগ্রামের কমিশনার , পুলিশের ডি আই জি আর রাজনৈতিক নেতাদের জানিয়ে দয়া হয়৷ মার্চের ২৬ তারিখে পায়ে হেঁটে তিনি পটিয়া পাহাড়ে পৌঁছে গেলেন ৷ তাঁর ভাষায় স্বাধীনতা যুদ্ধের প্রথম পাহাড়৷
( সূত্র; চৌধুরী শামসুল হুদা, পূর্বোক্ত , পৃ. ১৮ )
অন্যদিকে ই পি আর এর চট্রগ্রাম সেক্টরের এডজুটেন্ট ক্যাপ্টেন রফিক পূর্ব থেকেই যোগাযোগ রক্ষা করে চলছিলেন ই পি আর বাহিনী এবং আরো কিছু কর্মকর্তা ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সাথে৷ ২৫ মার্চ রাতে যখনই খবর পাওয়া গেল যে ঢাকার রাস্তায় ট্যাঙ্ক নেমেছে তখনই তিনি রওয়ানা হয়ে গেলেন ওয়ারলেস কলোনীর দিকে৷ সেখানে অবস্থানরত ক্যাপ্টেন হায়াত একটি প্লাটুন কম্যাণ্ড করছিলেন৷ তিনি অতর্কিত আক্রমনে বিনা রক্তপাতে ক্যাপ্টেন হায়াত ও তার পাকিস্তানী সাঙ্গোপাঙ্গোদের বন্দি করতেই বাঙালি সেন্যরা তাদের সাথে যোগ দিল৷ সেখান থেকে হালিশহরে এসে ৩০০ পাকিস্তানী সেনাকে গ্রেফতার করেন৷ এখানকার তটি অস্ত্রাগার তাদের নিয়ন্ত্রনে আসে৷ “ রাতের অন্ধকারে ক্যাপ্টেন রফিক প্রায় সারা চট্রগ্রাম শহর নিজ দখলে আনেন৷ তিনি কাপ্তাই ও রামগড়ে ওয়ারলেস বার্তা পাঠান এবং বাঙালি ই পি আর সৈন্যদের চট্রগ্রাম এসে তাঁর সঙ্গে যোগ দিতে আহ্বান জানান৷ কিন্তু কাপ্তাই ও রামগড় থেকে আগত ইপিআর সৈন্যদের মেজর জিয়া কালুরঘাটে থামিয়ে দেন৷
( সূত্র ; হক , কায়সুল , সম্পাদক পাক্ষিক শৈলী , ১৬ ড়িসেম্বর ’ ৯৯ প্রবন্ধ : মেজর অবসরপ্রাপ্ত রফিকুল ইসলাম পিএসসি , মুক্তিযুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিরোধ’ )
২৫ মার্চ রাতের প্রথম প্রহরে ক্যাপ্টেন এস এম ভূইয়া ছিলেন চট্রগ্রামের শেরশাহ কলোনীতে৷ গুলির শব্দে তিনি জেগে ওঠেন এবং তখনই একজন বাঙালি হাবিলদার ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্ট সেন্টার থেকে দৌড়াতে দৌড়াতে এসে জানায় যে সকল বাঙালি সৈন্যকে হত্যা করা হয়েছে৷ প্রতিরোধের স্পৃহা নিয়ে তিনি মুহূর্তেই ফোনে ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টে মেজর জিয়ার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হন৷ পরে ভোরের দিকে পায়ে হেঁটে হাজির হন ৮ম বেঙ্গল রেজিমেন্টে৷ কিন্তু সেখানে কারো সাথে দেখা হয়নি৷ চলে আসেন শহরে ৷ সেখানে তিনি বেঙ্গল রেজিমেন্টর কিছু জোয়ান , ই পি আর ও পুলিশ বাহিনীর লোক জড়ো করে ক্যান্টনমেন্ট আক্রমন করবেন সাব্যস্ত করেন৷ কিন্তু ক্যাপ্টেন রফিকের পরামর্শে সে পরিকল্পনা বাদ দিয়ে সন্ধ্যার দিকে কুমিরায় পৌঁছান কুমিল্লা থেকে চট্রগ্রামগামী হানাদার বাহিনীর মোকাবিলা করতে৷৭টার দিকে শত্রুবাহিনী সেখানে পৌঁছলে অধিনায়ক ইকবাল শফি তাঁর জীবনের সবচেয়ে মারাত্মক চ্যালেঞ্জের মুখামুখি হয়ে গেলেন৷ সুশিক্ষিত এবং আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত তার সৈন্যদের অর্ধেকের বেশি নিয়ে আমাদের এমবুশের মধ্যে ধরা পড়ে গেলেন ইকবাল শফি৷ কুমিরায় মহাসড়কটির এই অংশে স্থানীয় জনগণ আগ থেকেই ব্যারিকেড স্থাপন করেছিল৷ তখন সন্ধ্যা ৭টা৷ আমাদের সব সৈন্যরা একযোগে পাকিস্তানীদের উপর ব্যাপক গুলিবর্ষণ শুরু করে৷ ডান, বাম, ও সম্মুখ তিন দিক থেকেই ঝাঁকে ঝাঁকে গুলি ছুটে আসতে থাকে৷ কুমিরায় এই এমবুশে পাকিস্তানীদের অনেক যানবাহন ধ্বংস হয় এবং ৭০ জনের অধিক হতাহত হয়৷পার্শ্ববর্তী এক পাহাড়ের দিকে পালিয়ে প্রাণ বাঁচালেন ইকবাল সফি৷ কুমিরায় এমবুশ এবং পরবর্তী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে আমাদের ১৪ জন হতাহত হয়৷
এক পর্যায়ে মেশিনগানের গুলি শেষ হয়ে যাওয়ায় ও ক্যাপ্টেন রফিক সহ অন্যান্যদের সাথে যোগাযোগে ব্যর্থ হওয়ায় ক্যাপ্টেন ভুইয়া শহরে প্রত্যাবর্তন করেন এবং মেজর জিয়ার বাহিনীর সাথে যোগ দেন৷
( সূত্র; বীর উত্তম, রফিকুল ইসলাম, লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে, অন্যান্য , প্রকাশ ১৯৯৭ , পৃ , ১২০-২১)
পকিস্তানবাহিনী নৌ ও বিমানযোগে চট্রগ্রামে নতুন শক্তি সষ্ণয় করে৷ ২৮ মার্চ তারিখের মধ্যে পাক সেনারা চট্রগ্রাম সার্কিট হাউসে হেডকোয়ার্টার স্থাপনে সক্ষম হয়৷৩১ মার্চ বীরত্বপূর্ণ সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে হালিশহর ইপিআর সদর দফতরের পতন ঘটে৷ক্যাপ্টেন রফিক তখন সাহায্যের আশায় ছিলেন সীমান্তের ওপারে৷
চট্রগ্রাম শহর ছেড়ে মুক্তিযুদ্ধারা কালুরঘাটে সমবেত হয়৷ক্যাপ্টেন হারুন এবং লেফটেন্যান্ট শমসের মবিন চৌধুরীর নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধারা এখানে প্রতিরক্ষাব্যুহ রচনা করে৷
( সূত্র; হক , কায়সুল পূর্বোক্ত প্রবন্ধ)
১০ এপ্রিল নাগাদ পাকিস্তানীরা কালুরঘাট ব্রিজের কাছাকাছি এসে অবস্থান নেয়৷১১ এপ্রিল সকাল ৮ টায় পাকিস্তানীদের আর্টিলারি এবং নৌবাহিনীর কামান সমূহ মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের ওপর তীব্র আক্রমন শুরু করে৷পাকিস্তানী বাহিনী কালুরঘাট ব্রিজ এলাকা দখলের জন্য মরণপণ লড়াইয়ে অবতীর্ণ হয়৷ ক্যাপ্টেন হারুন এই যুদ্ধে গুরুতরভাবে আহত হন এবং লেফটেন্যান্ট শমসের মবিন চৌধুরী শত্রুর হাতে ধরা পড়েন৷অষ্টম ইষ্ট বেঙ্গল তিনটি দলে বিভক্ত হয়ে পিছনে সরে আসে৷মেজর মীর শওকত আলীর নেতৃত্বে একটি দল রাঙামাটি, দ্বিতীয় দলটি ক্যাপ্টেন মাহফুজের নেতৃত্বে কাপ্তাই এবং তৃতীয় দলটি ক্যাপ্টেন খালিকুজ্জামানের নেতৃত্বে কক্সবাজারের দিকে অগ্রসর হয়৷ অবশেষে তারা সবাই ভারতীয় এলাকায় অবস্থান করে ৷
( সূত্র ; হক, কায়সুল….পূর্বোক্ত )
মেজর জিয়া ৩০ মার্চ সীমান্তবর্তী রামগড়ে পৌছেন৷ এ সম্পর্কে ফারুক আজিজ খান লিখেছেন, Maj….Zia’s quick departure from the scene had a disasterous effect on the morale of the fighting men who were now in total disarray . It is an anticlimax after the inspiration and courage his radio broadcast had given to the freedom fighters and many others like us .
( মেজর জিয়ার তড়িঘড়ি করে ঘটনাস্থল ত্যাগ করায় সৈন্যদের নৈতিক মনোবলের ওপর প্রভাব পড়ে এবং তারা সম্পূর্ণ বিশৃঙ্খল হয়ে পড়ে৷ বিশেষ করে উৎসাহ ব্যঞ্জক রেডিও ঘোষণায় মুক্তিযোদ্ধা ও অন্যান্যদের মনে সাহস যোগানোর পর এটি ছিলো একটি বৈপরিত্যমূলক ঘটনা )
( সূত্র ; khan , F . A . ….পূর্বোক্ত,.. পৃ, ৯৮)
এর পর চট্রগ্রামের নানাস্থানে বিক্ষিপ্তভাবে লড়াই করে মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটে ভারতীয় এলাকা সাব রুমে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়৷
সারা চট্রগ্রাম চলে যায় হানাদার বাহিনীর কবলে৷
ইতোমধ্যে ৩ এপ্রিল মেজর জিয়া চট্রগ্রাম থেকে সিলেটের তেলিয়াপাড়া এসে মেজর খালেদ মোশাররফ ও সফিউল্লার যৌথ কমান্ড থেকে দু’কোম্পানি সৈন্য চেয়ে নেন৷
মুক্তিযুদ্ধের প্রাথমিক পর্যায়ে ৪ এপ্রিল তেলিয়াপাড়া চা বাগানে মেজর সফিউল্লার সদরদফতরে এক সভায় অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানী , লে. ক .আব্দুর রব , মেজর জিয়াউর রহমান, মেজর খালেদ মোশাররফ, মেজর সফিউল্লাহ্, মেজর কাজী নুরুজ্জামান, মেজর নুরুল ইসলাম, মেজর মমিন চৌধুরী, মেজর শাফায়াত জামিল, মেজর মঈনুল হোসেন চৌধুরী এবং আরও কয়েকজন উপস্থিত হন৷ সেখানে তারা মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে সরকার গঠনের জন্যে অপেক্ষা না করে সমস্ত বিদ্রোহী ইউনিটের সমবায়ে সম্মিলিত মুক্তিফৌজ গঠন করেন এবং কর্নেল ওসমানীকে তা পরিচালনার দায়িত্ব অর্পন করেন৷ এ সভায় যুদ্ধ সম্পর্কিত এলাকার দায়িত্ব বন্টন করা হয়৷মেজর জিয়াউর রহমানের কম্যাণ্ডে আসে চট্রগ্রাম পার্বত্য এলাকা৷
( সূত্র ; হাসান, মঈদুল, মূলধারা’ ৭১ , ইউ , পি , এল , ১৯৮৬, পৃ , ১৫ এবং সফিউল্লা বীরউত্তম , মে. জে . কে এম , মুক্তিযুদ্ধে বংলাদেশ , আগামী , ১৯৯৫ , পৃ, ৯০-৯১)
লিখা গুলো বিভিন্ন বই ও দলিল থেকে সংগ্রহন করা হয়েছে।
সংগ্রহনকারী ও লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিষয়ক গবেষক।