নাস্তিক কাকে বলে?

নাস্তিক কাকে বলে?
নাস্তিকতা বা এথিজম হল স্রষ্টার অস্তিত্বহীনতা তথা একথার বিশ্বাস
করা যে, স্রষ্টা বলতে কিছু নেই। আসমান,জমিন, গ্রহ-তারা সবই এমনিতেই
প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হয়েছে। এগুলোর কোন স্রষ্টা নেই। এক কথায় স্রষ্টার
অস্তিত্বহীনতার বিশ্বাসের নাম নাস্তিক্যতা।
নাস্তিকতার অর্থ বুঝলে আমাদের অনেক বিষয় বুঝে আসবে। যেমন-

(১) নাস্তিক মানেই কাফের। কারণ কাফের হওয়ার জন্য দ্বীনে ইসলামের যে কোন একটি আবশ্যকীয় বিষয় অস্বিকার করলেই হয়।আর সেখানে নাস্তিক সেতো কোন কিছুই মানে না, তাই সে যে কাফের এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।
(২) নাস্তিক মুরতাদ ও হতে পারে। কারণ কোন ব্যক্তি যদি মুসলমান ছিল প্রথমে, তারপর (আল্লাহ না করুন) স্রষ্টার অস্তিত্বহীনতায় বিশ্বাসী হয়ে যায়, তাহলে লোকটি নাস্তিক ও হল,সাথে সাথে মুরতাদও হল।সেই সাথে কাফেরতো হলোই।
(৩) কাফের ও মুরতাদ হওয়ার জন্য নাস্তিক হওয়া জরূরী নয়। বরং নাস্তিক না হয়েও কাফের বা মুরতাদ হতে পারে। কিন্তু নাস্তিক হলেই কাফের হয়ে যায়।যদি মুসলমানিত্ব থেকে নাস্তিকতার দিকে গেলে সাথে মুরতাদও হয়ে যায়।
এ বিষয়টি আরো ভাল করে বুঝতে হবে।কাফের হলেই তাকে নাস্তিক
হতে হবে এমন শর্ত নয়। কারণ কাফের হল ইসলামের জরূরী বিষয়ের কোন একটি অস্বিকার করা।নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর শান মান অস্বীকার করলে সে কাফের হয়ে যাবে।আর নাস্তিক মানে হল স্রষ্টা অস্বিকার করা।তাহলে কোন ব্যক্তি ইসলামের জরূরী কোন বিষয়ের অস্বিকার করে যদি স্রষ্টা আছে মানে,তাহলে উক্ত ব্যক্তি কাফের, কিন্তু নাস্তিক নয়। এ হিসেবে খৃষ্টান নাস্তিক নয়। নয় ইহুদীরাও।নয় হিন্দুরাও। কারণ তারা সবাই একজন স্রষ্টা আছেন মর্মে বিশ্বাস করে। কিন্তু তারা সবাই কাফের। কারণ তারা ইসলামের জরূরী বিষয় অস্বীকার করেছে।
কোন মুসলমানকে বিনা প্রমাণে কাফের বলা জায়েজ নয়।যদি তাঁর বিষয়ে ১০০% নিশ্চিত হয়ে থাকেন যে,সে কুফরী করেছে তাহলে তাকে কাফের বলা নিরাপদ। কোন ব্যক্তি ইসলামের জরূরী বিষয়কে মান্য করে, কিন্তু গোনাহগার। তাহলে উক্ত গোনাহের কারণে লোকটিকে কাফের বলা জায়েজ নয়। হারাম।
কুরআন ও হাদীসে এ ব্যাপারে কড়া ধমকী এসেছে।
ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﺁﻣَﻨُﻮﺍ ﺇِﺫَﺍ ﺿَﺮَﺑْﺘُﻢْ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻓَﺘَﺒَﻴَّﻨُﻮﺍ ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘُﻮﻟُﻮﺍ
ﻟِﻤَﻦْ ﺃَﻟْﻘَﻰٰ ﺇِﻟَﻴْﻜُﻢُ ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡَ ﻟَﺴْﺖَ ﻣُﺆْﻣِﻨًﺎ ﺗَﺒْﺘَﻐُﻮﻥَ ﻋَﺮَﺽَ ﺍﻟْﺤَﻴَﺎﺓِ ﺍﻟﺪُّﻧْﻴَﺎ
ﻓَﻌِﻨْﺪَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﻣَﻐَﺎﻧِﻢُ ﻛَﺜِﻴﺮَﺓٌ ۚ ﻛَﺬَٰﻟِﻚَ ﻛُﻨْﺘُﻢْ ﻣِﻦْ ﻗَﺒْﻞُ ﻓَﻤَﻦَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻜُﻢْ
ﻓَﺘَﺒَﻴَّﻨُﻮﺍ ۚ ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻛَﺎﻥَ ﺑِﻤَﺎ ﺗَﻌْﻤَﻠُﻮﻥَ ﺧَﺒِﻴﺮًﺍ [ ٤: ٩٤ ]
হে ঈমানদারগণ! তোমরা যখন আল্লাহর পথে সফর কর,তখন যাচাই করে নিও এবং যে,তোমাদেরকে সালাম করে তাকে বলো না যে, তুমি মুসলমান নও।তোমরা পার্থিব জীবনের সম্পদ অন্বেষণ কর,বস্তুতঃ আল্লাহর কাছে অনেক সম্পদ রয়েছে।তোমরা ও তো এমনি ছিলে ইতিপূর্বে; অতঃপর আল্লাহ তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন। অতএব, এখন অনুসন্ধান করে নিও। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের কাজ কর্মের খবর রাখেন। {সূরা নিসা-৯৪}
হাদীসে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)বলেন যে ব্যক্তি কাফের না তাকে কাফের বললে,সেই কুফরী নিজের দিকে প্রত্যাবর্তন করে মর্মে কঠোর হুশিয়ারী উচ্চারণ করেছেন-
ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺫﺭ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻪ ﺃﻧﻪ ﺳﻤﻊ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭ ﺳﻠﻢ
ﻳﻘﻮﻝ ( ﻻ ﻳﺮﻣﻲ ﺭﺟﻞ ﺭﺟﻼ ﺑﺎﻟﻔﺴﻮﻕ ﻭﻻ ﻳﺮﻣﻴﻪ ﺑﺎﻟﻜﻔﺮ ﺇﻻ ﺍﺭﺗﺪﺕ
ﻋﻠﻴﻪ ﺇﻥ ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﺻﺎﺣﺒﻪ ﻛﺬﻟﻚ )
হযরত আবু জর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)থেকে বর্ণিত, রাসুল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন যে, তোমাদের কেউ
যদি কাউকে ফাসেক বলে, কিংবা কাফের বলে অথচ লোকটি এমন
নয়,তাহলে তা যিনি বলেছেন তার দিকে ফিরে আসবে। {সহীহ বুখারী,
হাদীস নং-৫৬৯৮}
কত মারাত্মক হুশিয়ারী, তাই কাউকে কাফের, মুশরিক, নাস্তিক বলার
ক্ষেত্রে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
কাফের বলার ক্ষেত্রে উসূল: 
আল্লামা মোল্লা আলী কারী (রাহমাতুল্লাহে আলাইহি)শরহে ফিক্বহুল
আকবারে বলেন-
ﺍﻥ ﺍﻟﻤﺴﺌﻠﺔ ﺍﻟﻤﺘﻌﻠﻘﺔ ﺑﺎﻟﻜﻔﺮ ﺍﺫﺍ ﻛﺎﻥ ﻟﻪ ﺗﺴﻊ ﻭﺗﺴﻌﻮﻥ ﺍﺣﺘﻤﺎﻻ ﻟﻠﻜﻔﺮ
ﻭﺍﺣﺘﻤﺎﻝ ﻭﺍﺣﺪ ﻓﻰ ﻧﻔﻴﻪ ﻓﺎﻻﻭﻟﻰ ﻟﻠﻤﻔﺘﻰ ﻭﺍﻟﻘﺎﺿﻰ ﺍﻥ ﻳﻌﻤﻞ
ﺑﺎﻻﺣﺘﻤﺎﻝ ﺍﻟﻨﺎﻓﻰ، ﻻﻥ ﺍﻟﺨﻄﺎ ﻓﻰ ﺍﺑﻘﺎﺀ ﺍﻟﻒ ﻛﺎﻓﺮ ﺍﻫﻮﻥ ﻣﻦ
ﺍﻟﺨﻄﺎﺀ ﻓﻰ ﺍﻓﻨﺎﺀ ﻣﺴﻠﻢ ﻭﺍﺣﺪ، (ﺷﺮﺡ ﺍﻟﻔﻘﻪ ﺍﻻﻛﺒﺮ 199- )
কুফরী সম্পর্কিত বিষয়ে, যখন কোন বিষয়ে ৯৯ ভাগ সম্ভাবনা থাকে কুফরীর,আর এক ভাগ সম্ভাবনা থাকে,কুফরী না হওয়ার। তাহলে মুফতী ও বিচারকের জন্য উচিত হল কুফরী না হওয়ার উপর আমল করা। কেননা ভুলের কারণে এক হাজার কাফের বেচে থাকার চেয়ে ভুলে একজন মুসলমান ধ্বংস হওয়া জঘন্য। {শরহু ফিক্বহুল আকবার-১৯৯}
সুতরাং কারো কোন কাজে সন্দেহ হলেই তাকে কাফের, মুরতাদ, নাস্তিক ইত্যাদি বলে প্রচার করা জায়েজ নয়।প্রথমে উক্ত বিষয়টি যাচাই বাছাই করে সত্যাসত্যি জেনে তারপর ফাতওয়া দিতে হবে।কোন কাফেরকে মুসলমান বলাও জায়েজ নেই যদি কোন ব্যক্তি ইসলামের জরূরিয়্যাতের কোন একটিকে অস্বিকার করার মাধ্যমে আসলেই কাফের হয়ে থাকে,
তাহলে তাকে ব্যাখ্যা করে মুসলমান বানানোর ব্যার্থ চেষ্টা করা হারাম। একাজ কিছুতেই জায়েজ নয়। এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা পবিত্র কুরআনে হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেন-
ﺃَﺗُﺮِﻳﺪُﻭﻥَ ﺃَﻥْ ﺗَﻬْﺪُﻭﺍ ﻣَﻦْ ﺃَﺿَﻞَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ۖ ﻭَﻣَﻦْ ﻳُﻀْﻠِﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓَﻠَﻦْ ﺗَﺠِﺪَ ﻟَﻪُ
ﺳَﺒِﻴﻠًﺎ [ ٤: ٨٨ ]
তোমরা কি তাদেরকে পথ প্রদর্শন করতে চাও,যাদেরকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট
করেছেন? আল্লাহ যাকে পথভ্রান্ত করেন,তুমি তার জন্য কোন পথ পাবে না।{সূরা নিসা-৮৮}
শেষ কথা
উল্লেখিত সুদীর্ঘ আলোচনা দ্বারা আশা করি এ বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে যে, কারা কাফের,কারা নাস্তিক, কারা মুরতাদ আর কারা মুসলিম। কাদের কোন বিশেষণে বিশেষায়িত করা যাবে? আর কাকে করা যাবে না।
(এখন দেওবন্দী,সালাফী,ওহাবীরা মনে করবেন না, আমরা তোমাদের হুজুরদের বিনা দলিলে কাফের বলেছি।তা কিন্তু নয়, ১০০% জেনেই কাফের মনে করি)
সুতরাং যে সকল লোক দ্বীনের যে কোন জরূরী বিষয়কে যদি অস্বিকার করে থাকে, তাহলে উক্ত ব্যক্তি পূর্বে মুসলমান হয়ে থাকলে অস্বিকার করার দ্বারা মুরতাদ হয়েছে। আর আল্লাহর অস্তিত্বহীনতায় বিশ্বাসী হলে নাস্তিক ও কাফের হয়েছে।
এখন হজ্ব নিয়ে ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্য মন্ত্রী আব্দুল লতিফ সিদ্দিকী স্ববিরোধী বক্তব্য কুফরী করাতে তাকে কী কাফের বলা যাবে? হ্যা যাবে, ইসলামের পাঁচ স্তম্ভের এক স্তম্ভ হজ্ব নিয়ে কোরআন-সুন্নাহ বিরোধী প্রকাশ্য কুফরী করেছে। তাকে কাফের বলা যাবে।
www.jugantor.com/current-news/2014/09/29/154320
^উপরে যেতে ক্লিক করুন