জেনে নিন আপনার পেনশনের হিসাব! আর যেন অন্ধকারে না থাকতে হয়.............

আজ একটু ভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করব। নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন উপরের শিরোনাম দেখে! হ্যা আজকে চাকুরীজীবীদের জিবনের একটি গুরুত্বপুর্ন অনুসঙ্গ পেনশন নিয়ে আলোচনা করব। তার আগে পেনশন নিয়ে আমার ছেলে বেলায় দেখা একটি বাংলা ছবির কথা বলব। আমি তথন ৭ম কি ৮ম শ্রেনীর ছাত্র। যতটুক মনে পড়ে ছবিটির নাম ও ছিল ‘পেনশন’ । ছবিটি একটু ব্যতিক্রম ধারার, আমার হৃদয়ে এতটায় দাগ কেটেছিল যে, আজ ও এর কাহিনিটা মনে আছে। ছবিটির প্রধান ভুমিকায় ছিলেন, আমাদের বাংলাদেশের শক্তিমান অভিনেতা আনোয়ার হোসেন। একজন চাকুরীজীবীর শেষ জীবনের প্রা্প্তি পেনশন কে নিয়ে এর কাহিনী আবর্তিত। চাকুরী থেকে সদ্য অবসর নেওয়া আনোয়ার হোসেনের পরিবারে তার স্ত্রী, ফুটবল খেলতে
গিয়ে পঙ্গুত্ব বরন করা এক শিক্ষিত বেকার সন্তান এবং বিবাহ যোগ্যা  এক কন্যা বিদ্যমান। সমস্যার বেড়াজালে আটকা পড়া আনোয়ার হোসেন রোজ একবার যান ট্রেজারি অফিসে পেনশনের টাকা তুলতে। লাল ফিতার দৌরাত্বে আটকে থাকা পেনশনের টাকা কটি যেন তার নিকট আরাধ্য সোনার হরিণ। পঙ্গুত্ব মেনে নেওয়া শিক্ষিত বেকার ছেলের পায়ের চিকিৎসা, আর বিবাহ যোগ্যা কন্যার একটি ভাল পাত্র দেখে বিবাহ দেওয়া, তার সকল আশা-আকাঙ্খা আটকে আছে ঐ পেনশনের টাকা কটির মধ্যে।  একটেবিল হতে আর এক টেবিল পর্যন্ত ফাইল যেতে টাকা ঘুষ দিত হবে। কিন্তু এক অসিতিপর বৃদ্ধের সেই সামর্থ্য কোথায়? বাড়ীতে অভাবের সুয়োগ নিয়ে আনাগোনা বাড়তে থাকে পঙ্গু সন্তানের বন্ধু বড়লোকের বখে যাওয়া মানুষরুপি এক শয়তানের। তার চোখ গিয়ে পড়ে আনোয়ার হোসেনের বিবাহ যোগ্যা সুন্দরী মেয়ের দিকে। প্রেমের ফাদে পড়ে মেযেটি এক সময় গর্ভবতী হয়। এ কলঙ্কিত মুখ বাবা দেখাবেনা বলে সে আত্ম হত্যার পথ বেছে নেয়। তার শোকে বৃদ্ধা মাতাও স্ট্রোক করে কিছু দিন পর মারা যান। রোজ রোজ পেনশনের টাকার জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে ঘুরতে হতাশার আর চিন্তায় আনোয়ার হোসেনের যক্ষা বা ক্ষয় রোগ হয়। কে করবে তার চিকিৎসা? একদিন মাঝরাতে কাশিটা হঠাত করে বেড়ে যায়, কাশি দিতে দিতে মুখ হতে রক্ত বের হতে থাকে। কাশত কাশতে গলা শুকিয়ে যাওয়া আনোয়ার হোসেন একটু দুরে রাখা পানির গ্লাসটা ধরতে যান। হাত লেগে পানির গ্লাসটা উল্টে পড়ে যায় মেঝেতে...............

সকাল বেলা চারিদিক নিস্তব্ধ, বেকার পঙ্গু সন্তানের ঘুম ভাঙ্গে বাইরের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে। কে যেন তার বাবাকে ডাকছে।  বাইরে বেরিয়ে দেখেন পিয়নের হাতে পেনশনের চিঠি। আজ তার বাবার পেনশনের টাকা ছাড় হযেছে। আজ যে তার মহা আনন্দের দিন!আনন্দে উৎফুল্ল সন্তান বাবাকে এ খুশির খবর  দেওয়ার জন্য এগিয়ে যায় তার ঘরের দিকে। আজ বাবা যেন একটু বেশিই ঘুমাচ্ছেন। দরজা ভেতর হতে বন্ধ! বার বার দরজায় কড়া নাড়ার শব্দেও বাবার আজ ঘুম ভাঙছেনা। অজানা আশঙ্কা ছেলের মনে বাসা বাধে, ধাক্কা-ধাক্কিতে দরজা এক সময় খুলে যায়। বাবার নিথর দেহখানি মেঝেতে লুটিয়ে পানির গ্লাস খানি উল্টানো। ডুকরে ডুকরে কাদতে থাকে সন্তান............
ছবিটি দেখে চোখ মুছতে মুছতে বাড়িতে এসে ছিলাম সেদিন।  আজ চাকুরীর মাঝপথে এসে যখনই পেনশনের কথা মনে পড়ে তখনই ছবিটির কথা মনে পড়ে যায়। আসুন আজ, পেনশন নিয়ে টেনশন না বাড়িয়ে আমরা একটু সচেতন হই।



কিভাবে করবেন পেনশনের হিসাব?

চাকুরী ২৫ বছর হলে আপনি আপনার পেনশনের ৮০(%) শতাংশ পাওনাদার হবেন। চাকুরী ১০ বছর হলে আপনি পেনশনের আওতায় আসবেন। আপনি তখন মোট পেনশনের ৩২(%) শতাংশ প্রাপ্ত হবেন। ১০ বছরের নীচে চাকুরী কাল হলে আপনি পেনশনের আওতাভুক্ত বলে গন্য হবেন না।

আপনি কত টাকা পেনশন পাবেন? 

ধরুন আনোয়ার সাহেবের চাকুরী কাল ১৫ বছর। তার বর্তমান বেসিক ১০ হাজার টাকা। তাহলে..........
১. তিনি মোট পেনশনের কত শতাংশ পাবেন?
সুত্রটি হলঃ চাকুরীকাল  x ৩.২= পেনশন প্রাপ্তির শতকরা হার
           সুতরাং- ১৫ x ৩.২= ৪৮%

২. তিনি কত টাকা এককালিন পাবেন?
সুত্রটি হলঃ (বেসিক বেতন শতকরা হার) ÷ ২ ২০০
সুতরাং- (১০০০০ ৪৮%) ÷ ২ ২০০
         = ৪৮০০ ÷  ২ x ২০০
         = ২৪০০ x ২০০
         = ৪৮০০০০ টাকা


৩. তিনি প্রতি মাসে কত টাকা করে পাবেন?
সত্রটি হলঃ (বেসিক বেতন শতকরা হার) ÷ ২ + ৭০০
  সুতরাং- (১০০০০ ৪৮%) ÷ ২ + ৭০০
            = ৪৮০০ ÷  ২+ ৭০০
            = ২৪০০ +৭০০
            = ৩১০০ টাকা
আশা করি বুঝতে পেরেছেন। না বুঝলে কমেন্ট করুন্ আমরা প্রয়োজনে একজন বিশেষজ্ঞের সাথে পরামর্শ করব।
^উপরে যেতে ক্লিক করুন