নবজাতক ও শিশু স্বাস্থ্য


কখন ডাক্তার দেখাবেন
  • অস্বাভাবিক জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ঘাম, বুকে ব্যথা হওয়ার সাথে সাথে ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। এছাড়া
  • যারা বৃদ্ধ এবং শিশু
  • যারা ধূমপান করেন
  • যারা ফুসফুসে কোন আঘাত পেয়েছেন
  • যাদের কেমোথেরাপি (ক্যান্সারের চিকিৎসা) অথবা অন্য কোন ঔষধ খাওয়ার ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেছে
তাদের যদি উপরোক্ত লক্ষণ দেখা দেয় তাহলে তাদের কে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। তা না হলে নিউমোনিয়া মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে
চিকিৎসার জন্য কোথায় যোগাযোগ করতে হবে:

  • ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র
  • উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স
  • জেলা হাসপাতাল
  • মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র
  • বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
  • বেসরকারী হাসপাতাল
কি ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে:
  • শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা
  • বুকের এক্স-রে
  • রক্ত এবং কফ/শ্লেষ্মা (Mucus) পরীক্ষা
কখন হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে :
মারাত্মক নিউমোনিয়া হয়ে থাকলে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে শিরা পথে এ্যান্টিবায়োটিক এবং অক্সিজেন দেয়ার প্রয়োজন হতে পারে। অক্সিজেনের প্রয়োজন না হলে বাড়িতে থেকেও মুখে এ্যান্টিবায়োটিক সেবন করা যেতে পারে তবে এক্ষেত্রে বাড়িতে ভালো ভাবে রোগীর প্রতি যত্ন নিতে হবে।
কি ধরনের চিকিৎসা আছে
  • এন্টিবায়োটিক ঔষধ সেবন
  • ভাইরাস প্রতিরোধী ঔষধ সেবন
  • পর্যাপ্ত পরিমান বিশ্রাম
  • তরল খাদ্য গ্রহণ
  • জ্বর এবং ব্যথা কমানোর জন্য ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবনের পাশাপাশি নিয়মিত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
বিশ্রাম, পথ্য ও বাড়তি সতর্কতা
  • প্রচুর বিশ্রাম গ্রহণ করতে হবে
  • প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার গ্রহণ এবং পানি পান করতে হবে
  • ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঠিকমত ঔষধ সেবন করতে হবে
  • ডাক্তারের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ করতে হবে
নিউমোনিয়া কিভাবে প্রতিরোধ করা যায়
  • ভালো ভাবে পরিস্কার করে হাত ধুতে হবে
  • নিজের প্রতি যত্ন নিতে হবে
  • পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে
  • সুষম খাদ্য গ্রহণ করতে হবে
  • ধূমপান করা যাবে না
  • অন্যের সামনে হাঁচি/কাশি দেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। হাঁচি/কাশিদেয়ার সময় মুখ হাত দিয়ে ঢাকতে হবে বা রুমাল ব্যবহার করতে হবে
মানসিক প্রতিবন্ধী শিশু
আমাদের আশপাশে একটু লক্ষ করলেই দেখা যাবে যে অনেক পরিবারেই মানসিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তি রয়েছে। মানসিক প্রতিবন্ধীদের নিয়ে পরিবারের চিন্তার শেষ নেই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, গড় হিসাবে পৃথিবীর শতকরা যে কোন দেশের ৩ শতাংশ মানুষ মানসিক ভাবে প্রতিবন্ধী।
মানসিক প্রতি বন্ধী কী?
মানসিক প্রতিবন্ধীত্বের অর্থ হলো, বয়স অনুপাতে শিশুটির যে বুদ্ধি থাকার কথা ছিল তা থাকে কম মাত্রায়৷ বুদ্ধি বা আই কিউর (IQ) পরিমাণ কতটুকু কম তার ওপর ভিত্তি করে প্রতিবন্ধিত্বকে মৃদু, মাঝারি ও তীব্র এই তিন ভাগে ভাগ করা যায়৷
মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুর লক্ষণ:
জন্মের পর থেকে মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের হামাগুড়ি দিয়ে হাঁটা, বসতে শেখা, দাঁত ওঠা, কথা বলা ইত্যাদি কিছুটা দেরিতে শুরু হয়। একটু বয়স হয়ে গেলেও তারা নিজেদের পোশাক নিজেরা পড়তে পারে না, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে পারে না, আকস্মিক বিপদ থেকে নিজেকে রক্ষা করতে পারে না। কখনো কখনো আগুন শব্দ বলতে পারে না, পানি শব্দ বলতে পারে না, একটু দূরে ছেড়ে দিলে বাড়িতে একা একা ফিরে আসতে পারে না, রাস্তা ঘাটে ঠিক ঠাক মতো চলাচল করতে পারে না।
মানসিক প্রতিবন্ধীদের মানসিক গঠন, মস্তিস্কের গড়ন, মস্তিস্ক বা ব্রেনের কাজ ইত্যাদি ধীর গতিতে হয়। অন্য সাধারণ দশটি শিশু থেকে মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের কথা বর্তা, চলা ফেরা, শারীরিক গঠন, আচার-আচরণ ও ব্যবহার দ্বারা সহজেই পৃথক করা যায়।
চিকিৎসা ব্যবস্থা
অপ্রিয় হলেও সত্য, মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের মা-বাবার অবগত হওয়া প্রয়োজন যে, পৃথিবীতে কোথাও এখনো কোন ওষুধ বা চিকিৎসা পদ্ধতি আবিষ্কৃত হয় নি, যা দ্বারা এই মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের বুদ্ধি বাড়ানো যেতে পারে। তবে আশ্বস্ত হওয়ার মতো সংবাদ হলো, বিভিন্ন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মানসিক প্রতিবন্ধী শিশুদের মানসিক ও শারীরিক উন্নতি করা সম্ভব।
অপুষ্টি জনিত শিশু রোগ (ম্যারাসমাস ও কোয়াশিয়রকর )
আমিষ ও শর্করা জাতীয় খাদ্যের অভাবে শিশুদের ম্যারাসমাস ও কোয়াশিয়রকর নামক অপুষ্টি জনিত রোগ দেখা দেয়। আমাদের দেশে এ রোগে শিশু মৃত্যুর হার অনেক।  ৫ বছরের কম বয়সী শিশুরা এ রোগে বেশী আক্রান্ত হয়। সাধারণত দুইটি রোগের উপসর্গ একত্রে দেখা যায়।
ম্যারাসমাস :  শর্করা জাতীয় খাদ্যের অভাবে শিশুরা এ রোগে আক্রান্ত হয়। ১ বছরের কম বয়সী শিশুরা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়৷
কোয়াশিয়রকর : প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের অভাবে শিশুরা এরোগে আক্রান্ত হয়। ১ বছরের বেশি বয়সের বাচ্চারা এ রোগে বেশি আক্রান্ত হয়।
কারণ :
ম্যারাসমাস
  • দ্রুত মায়ের দুধ খাওয়ানো বন্ধ করে দেওয়া।
  • ৫ মাসের পূর্বে দুধের বদলে অন্য খাবার শুরু করা
  • অতিরিক্ত পাতলা খাবার খাওয়া নো।
  • সময় মতো খাবার না দেওয়া।
  • বারবার পেটের অসুখ হওয়া।
  • কোয়াশিয়রকর
  • বুকের দুধের সাথে অন্যান্য খাবার (খিচুরী, ডিম, কলা ইত্যাদি) দেরী করে ৬ মাসের বেশি বয়সে শুরু করা।
  • শর্করা জাতীয় খাবার বেশি দেওয়া।
  • অতিরিক্ত রোগে ভুগলে।
উপসর্গ
ম্যারাসমাস
  • অতিরিক্ত শুকিয়ে যাওয়া
  • হাড্ডি চর্মসার চেহারা
  • চামড়ার নিচে কোন চর্বি থাকে না
অন্যান্য
  • মাংস পেশি শুকিয়ে যায়
  • চুল রুক্ষ হয়ে যায়
  • চামড়া খসখসে হয়ে যায়
  • ঘনঘন ডায়রিয়া ও নিওমোনিয়া দেখা দেয়
  • নোখ ভঙ্গুর হয়ে পরে
  • খাওয়ায় অরুচি দেখা দেয়
  • বাচ্চা ঘ্যান ঘ্যানে হয়ে পড়ে
  • যকৃত (লিভার) বড় হয়ে যেতে পারে
কোয়াশিয়রকর
  • শিশু বেশি শুকায় না।
  • চেহারা ফোলা ফোলা থাকে।
  • চামড়ার নিচে চর্বি বর্তমান থাকে।
  • শরীরে পানি জমে।
অন্যান্য
  • মাংস পেশি শুকিয়ে যায়।
  • চুল রুক্ষ হয়ে যায়।
  • চামড়া খসখসে হয়ে যায়।
  • ঘনঘন ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়া দেখা দেয়।
  • নোখ ভঙ্গুর হয়ে পড়ে।
  • খাওয়ায় অরুচি দেখা দেয়।
  • বাচ্চা ঘ্যানঘ্যানে হয়ে পরে।
  • যকৃত (লিভার) বড় হয়ে যেতে পারে।
উপদেশ
  • বাচ্চাকে ২ বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়ানো৷
  • ৬ মাসের পর অন্যান্য খাবার শুরু করা৷
  • বাচ্চাকে নিয়মিত টিকা দেওয়ানো৷
  • বাচ্চার নিয়মিত ওজন নিতে হবে৷
  • পরিবার পরিকল্পনা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে৷
^উপরে যেতে ক্লিক করুন