শিশুর পুষ্টিকর খাবার

সুষম খাবারের অভাবে শিশুর বিভিন্ন ধরনের রোগ হতে পারে, যেগুলোকে শিশুর অপুষ্টিজনিত রোগ বলা হয়। অপুষ্টি হলে শিশুর ঘন ঘন অসুখ-বিসুখ হয়ে থাকে। শিশুকে বুকের দুধের পাশাপাশি নিয়মিত পুষ্টিকর খাবার দিতে হবে। প্রত্যেক নবজাতক শিশুর পুষ্টি তিনটি বিষয়ের উপর নির্ভর করে
১.  গর্ভাবস্থায় মায়ের পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ।
২.  ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শিশুকে ঠিকমত শাল দুধ খাওয়ানো।
৩. পরিষ্কার পরিছন্নতা, পুষ্টিকর ও সহজপাচ্য খাবার, পরিবেশ ইত্যাদি যথোপযুক্ত আছে কিনা।


বয়স অনুসারে শিশুর ওজন ও উচ্চতা
একটি শিশুর জন্মের সময় ওজন থাকে ৩ থেকে ৩.৫ কেজি এবং উচ্চতা থাকে ৪৯ সেন্টিমিটার থেকে ৫০ সেন্টিমিটার। ঠিকমত পুষ্টিকর আহার দেয়া যায় তাহলে পাঁচ মাস বয়সে ওজন হয় দ্বিগুন এবং এক বছরে ওজন হয় তিনগুন। এই হিসেবে পাঁচ মাস বয়সে একটি শিশুর ওজন হওয়া উচিত ৫ থেকে ৭ কেজি এবং এক বছরে ৯ থেকে ১০ কেজি। সেই সাথে উচ্চতা হবে পাঁচ মাসে ৬৫ সেন্টিমিটার থেকে ৬৭ সেন্টিমিটার এবং ১২ মাস বয়সে ৭৪ সেন্টিমিটার থেকে ৭৬ সেন্টিমিটার।

পুষ্টিকর খাবার
প্রথম ছয় মাসে কেবলমাত্র মায়ের দুধই শিশুর জন্য একমাত্র পুষ্টিকর খাবার। সাত নম্বর মাস থেকে শিশুকে ২ -৪ চা চামচ কমলার রস, গাঢ় সবুজ রঙের সবজি ও গাজর সিদ্ধ করে ছেঁকে শুধু পানি টুকু ২ -৫ চা চামচ, ডিমের কুসুম ২ - ৩ চা চামচ, ভাত, ডাল, সবজি, তেল এক সঙ্গে রান্না করে ব্লেন্ডারে তরল করে  ছেঁকে তরলটুকু এবং সিদ্ধ চালের গুঁড়া চিনি ও দুধ দিয়ে পায়েসের মত পাতলা করে রান্না করে খাওয়াতে হবে।
এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর শিশুকে গলাভাত ও চিনি একসঙ্গে চট্‌কে ২ টেবিল চামচ করে খাওয়াতে হবে। এছাড়া নরম খিচুড়ী অর্থাৎ ভাত মাছ বা নরম মাংস ও ডাল, সবজি একসঙ্গে রান্না করে ঘুটনি দিয়ে নরম করতে হবে, চাল অথবা সুজির পাতলা হালুয়া, চটকানো আলুসিদ্ধ, নরম করে পানি পোচ ডিম, স্যুপের মতো করে  শাক, সবজি ও ডাল রান্না এবং ফলের মধ্যে পাকা পেঁপে, পাকা কলা, পাকা আম শিশুকে খাবার উপোগী করে খাওয়াতে হবে।

করণীয়
  • শিশুর জন্মের পরই তাকে শালদুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
  • প্রথম ছয় মাস পর্যন্ত শিশুকে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
  • প্রথম ছয় মাসে শিশুকে পানিও দেওয়া যাবে না।
  • ছয় মাস পর থেকে বুকের দুধের পাশাপাশি শিশুকে পুষ্টিকর বাড়তি খাবার দিতে হবে এবং দুই বছর বয়স পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়াতে হবে।
  • শিশুর স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য পুষ্টিকর ও ভিটামিন সমৃদ্ধ সুষম খাবার নিয়মিত  খাওয়াতে হবে।
  • জন্মের দুই বছর পর থেকে প্রত্যেক ৬ মাস অন্তর একবার কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে।
  • শিশু যেন পর্যাপ্ত বুকের দুধ পায় সেজন্য মাকেও পুষ্টিকর আমিষ (মাছ, মাংস, মসুর ডাল), শর্করা (ভাত, রুটি, মুড়ি, চিড়া) ও ভিটামিন সি (দেশী ফল) জাতীয় খাবার খেতে হবে।
  • শিশু সারাদিনে ৬ বার প্রস্রাব করলে বুঝতে হবে সে পর্যাপ্ত দুধ খাচ্ছে।
  • বয়স অনুযায়ী  শিশুর শারীরিকবৃদ্ধি বা মানসিক বিকাশে কোন প্রকার অসুবিধা দেখা দিলে সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
^উপরে যেতে ক্লিক করুন