মিসরের সাবেক প্রেসিডিন্ট হোসনি মুবারক


মুহাম্মদ হোসনি সাইয়েদ মুবারক
محمد حسنى سيد مبارك
মিশরের রাষ্ট্রপতি
দায়িত্ব
অধিকৃত অফিস
১৪ই অক্টোবর, ১৯৮১
প্রধানমন্ত্রী আহমদ ফুয়াদ মহিয়েদ্দিন
কামাল হাসান আলি
আলি মাহমুদ লুতফি
আতেফ মুহাম্মদ নাগিব সেদকি
কামাল গানজুরি
আতেফ এবেইদ
আহমেদ নাজিফ
পূর্বসূরী সুফি আবু তালিব
ব্যক্তিগত বিবরণ
জন্ম ৪ মে ১৯২৮ (বয়স ৮৭)
কাফর-আল মেসেলহা, মনুফিয়া, মিশর
রাজনৈতিক দল এনডিপি
দাম্পত্য সঙ্গী সুজান মুবারক
সন্তান আলা মুবারক
গামাল মুবারক
ধর্ম ইসলাম
মুহাম্মদ হোসনি সাইদ মুবারাক (আরবি: محمد حسنى سيد مبارك ‎) (জন্ম ৪ই মে, ১৯২৮) মিশরের সামরিক নেতা এবং ১৪ই অক্টোবর, ১৯৮১ থেকে দেশটির রাষ্ট্রপতি। তিনি ১৯৭৫ সালের উপ-রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিযুক্ত হন এবং সাদাত নিহত হবার পর ১৯৮১ সালের ১৪ই অক্টোবর মুবারাক মিশরের রাষ্ট্রপতি হন এবং মোহাম্মদ আলীর পর প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক হচ্ছেন মিসরের সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী শাসক। রাজনীতিতে প্রবেশের পূর্বে মুবারাক মিশরীয় বিমান বাহিনীর একজন কমান্ডার হিসেবে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। জানুয়ারি ৩০ ২০১১ অনুযায়ী মিশরে মুবারাক তার শাসনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখা দিয়েছে।
মুবারাক কাফর-আল মেসেলহা -তে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা ছিলেন বিচার মন্ত্রণালয়ের একজন ইন্সপেক্টর। মুবারাক মিশরের জাতীয় সামরিক অ্যাকাডেমি, বিমানবাহিনী অ্যাকাডেমি এবং মস্কো-র ফ্রুনযে জেনারেল স্টাফ অ্যাকাডেমিতে শিক্ষালাভ করেন। মিশরীয় রাষ্ট্রপতি আনোয়ার আল সাদাতের অধীনে তিনি বেশ কিছু সামরিক পদে দায়িত্বপালন করেন। এর মধ্যে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি উপ-যুদ্ধমন্ত্রী ছিলেন। ১৯৭৫ সালে তিনি মিশরের উপ-রাষ্ট্রপতি হন।
১৯৮১ সালের ৬ই অক্টোবর সাদাতকে হত্যা করা হলে মুবারাক মিশরের রাষ্ট্রপতি হন। ক্ষমতায় এসে তিনি একটি অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন প্রকল্প শুরু করেন। তিনি ১৯৭৯ সালে ইসরায়েলের সাথে সাক্ষরিত শান্তিচুক্তি ধরে রাখার ব্যাপারেও অনমনীয় ছিলেন। মিশরের সাথে ইসরায়েলের শান্তিচুক্তির ফলে অন্যান্য আরব রাষ্ট্রের মধ্যে যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, তিনি তার অনেকটাই সামাল দেন। তিনি বৃহৎ শক্তিগুলির প্রতি "ইতিবাচক নিরপেক্ষতা"-র নীতি গ্রহণ করেন। ১৯৮৭ সালের অক্টোবর মাসে তাঁর নেতৃত্বাধীন রাজনৈতিক দল ন্যাশনাল ডেমোক্র‌্যাটিক পার্টি নির্বাচনে জিতলে তিনি পুনরায় মিশরের রাষ্ট্রপতি হন।
অর্থনৈতিক সমস্যা এবং ইসলামী মৌলবাদের মত আভ্যন্তরীণ সমস্যা থাকলেও মুবারাক ইসরায়েল ও আরবরাষ্ট্রগুলির মধ্যকার অচলাবস্থা নিরসনের উদ্যোগ নেন। ১৯৮৮ সালে তিনি এ ব্যাপারে কথা বলতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যান। ১৯৯০ সালে ইরাক কুয়েত দখল করলে জাতিসংঘের ইরাকের বিরুদ্ধে বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে মুবারাক তা সমর্থন করেন, ইরাকের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আরব লীগকে মত দিতে উদ্বুদ্ধ করেন, ১৯৯১ সালে উপসাগরীয় যুদ্ধে প্রায় ৩৯ হাজার সেনা সরবরাহ করেন এবং মধ্যপ্রাচ্যে শান্তি ফিরিয়ে আনতে যুদ্ধ-পরবর্তী পদক্ষেপগুলিকে সমর্থন দেন।
১৯৯৩ সালে মুবারাক পুনরায় নির্বাচিত হন। এবার মুবারাক মৌলবাদী বিরোধী দলগুলির উপর ধর-পাকড় আরম্ভ করেন। ১৯৯৫ সালের জুন মাসে ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবা-তে তাঁকে হত্যার একটি চেষ্টা চালানো হয়, কিন্তু তিনি বেঁচে যান। পাঁচজন আততায়ীকে হত্যা করা হয় এবং বাকীরা সুদানে পালিয়ে যায়। ধারণা করা হয়, সুদান থেকেই হত্যাকাণ্ডটির পরিকল্পনা করা হয়েছিল। মুবারাকের উপর ছয়বার হত্যাপ্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।  ১৯৯৫ সালের নভেম্বর মাসে সংসদীয় নির্বাচনের ঠিক আগে মুবারক সরকার মুসলিম ব্রাদারহুডের বিরুদ্ধে জঙ্গী ইসলামী দলদের মদদ দেবার অভিযোগ আনেন। মুসলিম ব্রাদারহুডের বহু নেতাকর্মীকে এর জের ধরে গ্রেফতার করা হয়। কিন্তু সমালোচকেরা বলেন যে মুবারাক শান্তিপ্রিয় বিরোধীদেরও নির্মূল করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। নির্বাচনে মুবারাকের দলের বিশাল জয় হয় এবং ১৯৯৯ সালে মুবারাক চতুর্থবারের মত ৬ বছরের জন্য রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হন।
২০০০-এর দশকে মুবারাক চরমপন্থী ইসলামীদের দমনের ধারা অব্যাহত রাখেন এবং কেবল দর্বল বিরোধীদেরই দল গঠনের অনুমতি দেন। তিনি ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরের হামলার নিন্দা জানান। একই সময়ে দেশের মধ্যপন্থী ইসলামী দলগুলি ইসলামী শরিয় অনুসারে দেশ চালানোর জন্য চাপ দিতে থাকে। ২০০৫ সালে ফিলিস্তিনে অনুষ্ঠিত অপেক্ষাকৃত উন্মুক্ত নির্বাচনের পর মিশরীয়রা নিজদেশেও অধিকতর গণতন্ত্রের প্রত্যাশা প্রকাশ করে।
২০০৫ সালে মুবারাকের চতুর্থ মেয়াদ শেষ হয়ে আসলে কিছু দল সংবিধানের সংশোধন কামনা করে। ২০০৫ সালের মে মাসে সংবিধানে সংশোধন আনা হয় এবং মিশরের ইতিহাসে প্রথমবারের মত সরাসরি বহুদলীয় রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ব্যবস্থা করা হয়। সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে মুবারাক ৮৫%-এরও বেশি ভোট পেয়ে পঞ্চমবারের মত ছয় বছর মেয়াদের জন্য রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। কিন্তু বিরোধী প্রার্থীরা তার বিরুদ্ধে ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোর অভিযোগ আনেন এবং রাষ্ট্রায়ত্ত গণমাধ্যমে মুবারাকার নিয়ন্ত্রণের ফলে তাদের প্রচারে বিঘ্ন ঘটেছে বলে দাবী করেন।

দীর্ঘ তিন দশক শাসন শেষে ২০১১ সালে এক গণঅভ্যূর্থানের মাধ্যমে হোসনি মোবারক ক্ষমতাচ্যুত হন। বর্তমানে হোসনি মোবারক একটি মামলায় জেলে রয়েছেন।
^উপরে যেতে ক্লিক করুন