মওদুদের বইয়ে খালেদা বিষয়ক তথ্যে হতভম্ব বিএনপি

http://www.banglatribune.com/news/show/53781

প্রকাশিত:
সম্পাদিত:
সালমান তারেক শাকিল॥ বিএনপি'র জাতীয় স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ অাহমদের লিখিত ‌'বাংলাদেশ: ইমারজেন্সি অ্যান্ড দ্য আফটারম্যাথ’ বইয়ে উল্লেখিত কিছু তথ্যে বেশ বিব্রত ও হতভম্ব অবস্থা হয়েছে দলটির। প্রতিষ্ঠার পর থেকে বর্তমানে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করা দলটির সিনিয়র আর দায়িত্বশীল একজন নেতার কলমে কয়েক বছর অাগের সময়ের বয়ান এভাবে ওঠে অাসবে-- তা ভাবতেই পারছেন না কয়েকজন নেতা।
বিএনপির এই নেতারা বলছেন, দলের কঠিনতর সময়ে এমন কথা তিনি কীভাবে লিখলেন? মোটকথা, খালেদা বিষয়ক মওদুদের বয়ান রীতিমত হতভম্ব করে দিয়েছে বিএনপিকে। ত‌‌‌ারা এও বলছেন, ব্যারিস্টার মওদুদ অতীতে কয়েকবার বিতর্কিত কথাবার্তা বলেছেন। তবে যেহেতু তিনি বিএনপির শীর্ষনেতাদের একজন, সেহেতু নেতাকর্মীদের মধ্যে এটা একটা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে। তবে মওদুদ অাহমদের বইটি সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলতে পারেননি কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই। তারা বলছেন, এখনও বইটি পড়া হয়নি। ফলে বিস্তারিত কিছু বলা যাবে না। রবিবার দুপুরে মওদুদ অাহমদের গ্রন্থটি সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা, ড. অাব্দুল মঈন খান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু ও দলটির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সঙ্গে অালাপকালে এসব কথা ওঠে অাসে। যদিও গত শনিবার মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে মওদুদ বলেন, 'কোনও ঈর্ষা থেকে নয়, বরং জনগণ যেন ইতিহাস ভুলে না যায়, সে জন্য বইটি লিখেছি।' উল্লেখ্য, গত শনিবার সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে ব্যারিস্টার মওদুদ অাহমদ লিখিত ‘বাংলাদেশ: ইমারজেন্সি অ্যান্ড দ্য আফটারম্যাথ’ শীর্ষক বইয়ে মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইটির এক স্থানে মওদুদ লিখেছেন, 'ওই সময় খালেদা একজন রাজনৈতিক নেতার চেয়ে বেশি একজন মা হয়ে উঠেছিলেন। ২০০৭-০৮ সালের জরুরি অবস্থার সময় খালেদা জিয়া শুধু তার দুই ছেলের মুক্তি নিয়েই চিন্তা করেছেন।' পাশাপাশি গ্রন্থটিতে জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য করার বিষয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করা হয়েছে। বইটি প্রকাশ করেছে ইউনিভার্সিটি প্রেস লিমিটেড (ইউপিএল)। সেনাবাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কারান্তরীন অবস্থায় বইটি রচনা করেন বলে জানান মওদুদ। এ প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা বলেন, 'অামি শু‌‌নেছি। তবে বিস্তারিত বলতে পারবো না। প্রথমত অামি বইটি পড়িনি। দ্বিতীয়ত এই গ্রন্থ নিয়ে কিছু বলতে চাই না। তবে বুঝতে পারছি না, পার্টির কঠিন সময় যাচ্ছে, কিন্তু তিনি কেন এমন করছেন। জানি না। নো কমেন্টস।' স্থায়ী কমিটির অারেক সদস্য বিজ্ঞানী ড. অাব্দুল মঈন খান বলেন, 'অাগে বইটি পড়া দরকার। তবে গণমাধ্যমে যেভাবে প্রকাশ পেয়েছে, তাতে করে ভাবার বিষয়। বিষয়টির ওপর নজর রাখা দরকার। এর চেয়ে বেশি কিছু বলতে পারবো না।' অতীতেও মওদুদ অাহমদের বিতর্কিত বিষয় রয়েছে-- এমন মন্তব্য করে বিএনপির চেয়ারপারসের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু বলেন, 'অামিও বইটি পড়িনি। তবে যা শুনেছি ও সংবাদপত্রে দেখেছি তাতে মনে হচ্ছে, তিনি একজন লেখক হিসেবে ওই সময়ের পরিস্থিতির বর্ণনা করেছেন। একজন মানুষ হিসেবে তিনি স্বাধীন, এবং তিনি লিখতেই পারেন। তবে তিনি যেহেতু জাতীয়তাবাদী দলের একজন সিনিয়র লিডার, সেহেতু তার এই তথ্য দলের কাছে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে।' তিনি বলেন, 'সংবাদপত্রের প্রকাশনা অনুযায়ী যদি তার তথ্য সঠিক হয়, তাহলে বলতে হয়-- ১/১১ এর সময় তো একজন-ই ছিলেন অাপোষহীন। তিনি বেগম খালেদা জিয়া। তিনি রাজনীতির শিক্ষক। এজন্যই তিনি বাড়িহারা, ঘরহারা। অার তিনি একই সঙ্গে একজন মমতাময়ী মাও। ছেলের জন্য মায়ের দরদ থাকবে এটিই তো স্বাভাবিক।' 'জামায়াতের সঙ্গে রাজনৈতিক ঐক্য ভুল' প্রসঙ্গে দুদু বলেন, তিনি একজন লেখক হলেও তার বড় পরিচয় তিনি বিএনপির দায়িত্বশীল নেতা। ফলে, তিনি একটি দলের সঙ্গে নিজ দলের ফ্রন্ট থাকা অবস্থায় এমন মন্তব্য করতে পারেন না। এতে করে দলের অভ্যন্তরে নেতাকর্মীদের মধ্যে প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে।' মওদুদকে ইঙ্গিত করে দুদু প্রশ্ন করেন, 'জামায়াতের সঙ্গে ঐক্য করে খারাপ হলে পুরো দল বুঝতে পারেনি, শুধু উনি-ই বুঝতে পেরেছেন?' রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র দুদুর মতে, ব্যারিস্টার মওদুদ অাগেও বিতর্কমূলক কর্মকাণ্ডে ছিলেন। এবার নতুন করে যুক্ত হলেন। অাগে গ্রন্থটি পুরো পড়তে হবে। এরপর দলীয়ভাবে জানানো যাবে। মওদুদ অাহমদের লিখিত ‘বাংলাদেশ: ইমারজেন্সি অ্যান্ড দ্য আফটারম্যাথ’ বইটির কথা শুনলেও এখন পর্যন্ত না পড়ায় কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। রবিবার দুপুরে তিনি বলেন, 'এই মাত্র বিদেশ থেকে এলাম। বইটি পড়ে জানাব।' /একে/
^উপরে যেতে ক্লিক করুন