এই প্রতিষ্ঠানের অধিভুক্ত হবে এক হাজার ২৬০ ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসা
জাতীয় শিক্ষানীতির সুপারিশ ও মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠীর পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বহু বছরের দাবি অবশেষে
পূরণ হতে চলেছে। শীঘ্রই আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হচ্ছে ইসলামী আরবী
বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম। যেটি হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো
অনুমোদনকারী বা এ্যাফিলিয়েটিং ক্ষমতাসম্পন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। দেশের
এক হাজার ২৬০টি ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসা নতুন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত
হিসেবে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালাবে। এর আগে এসব মাদ্রাসা প্রথমে
মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড ও সর্বশেষ কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত
হয়ে কার্যক্রম চালিয়েছে। এদিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, রাজধানীর
ধানম-িতে শিক্ষা বোর্ডের কম্পিউটার কেন্দ্র ভবনেই হবে ইসলামী আরবী
বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানিয়েছেন, আজ সকাল ১০টায় শিক্ষা বোর্ড কম্পিউটার কেন্দ্র ভবনে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস পরিদর্শন করবেন তিনি। এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আহসান উল্লাহসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা সভায় মিলিত হবেন। নতুন প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের পাশাপাশি অধিভুক্ত এক হাজার ২৬০টি ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসার শিক্ষকের প্রশিক্ষণসহ পেশাগত উন্নয়নেও ব্যবস্থা নেবে। বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশে ইসলামী শিক্ষার প্রসারসহ ইসলামী মূল্যবোধ জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন মন্ত্রী। জানা গেছে, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে পাসকৃত আইনের আওতায় ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে জাতীয় শিক্ষানীতির সুপারিশ ও মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশাল জনগোষ্ঠীর পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বহু বছরের দাবি পূরণ হচ্ছে। এটি হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অনুমোদনকারী বা এ্যাফিলিয়েটিং ক্ষমতাসম্পন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সব ডিগ্রী দেয়া হবে এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরূপ কার্য সম্পাদন করবে বিশ্ববিদ্যালয়টি। মাদ্রাসার উচ্চ শিক্ষা অর্থাৎ ফাজিল এবং কামিল বিশ্ববিদ্যালয়টির কাজ হবে ফাজিল এবং কামিল পর্যায়ের মাদ্রাসাগুলোর অনুমোদন দেয়া, অনুমোদন বাতিল করা, গবেষণা, প্রশিক্ষণ, পরীক্ষা গ্রহণ, ডিগ্রী প্রদান করা। তবে সরকারী কারিকুলাম অনুযায়ী না চলার কারণে দেশের কওমী মাদ্রাসাগুলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হবে না। দেশে কামিল এবং ফাজিল পর্যায়ের এক হাজার ৯০০ মাদ্রাসা রয়েছে।
মাদ্রাসা শিক্ষকদের বৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন বহু বছর যাবত মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য পৃথক একটি এফিলিয়েটিং ক্ষমতাসম্পন্ন ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছিল। জাতীয় শিক্ষানীতির শিক্ষা প্রশাসন অধ্যায়েও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় পৃথক একটি মাদ্রাসা অধিদফতর গঠন করতে হবে। আর মাদ্রাসা শিক্ষা অধ্যায়ে বলা হয়েছে, মাদ্রাসা শিক্ষার উচ্চ অর্থাৎ ফাজিল ও কামিল পর্যায়ে শিক্ষাক্রম/পাঠ্যপুস্তক অনুমোদন, শিক্ষাঙ্গনগুলোর তদারকি ও পরিবীক্ষণ এবং পরীক্ষা পরিচালনাসহ সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব বর্তমানে কুষ্টিয়ার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ন্যস্ত। কিন্তু একটি নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে এ বিশাল দায়িত্ব পালন দুরূহ। সঙ্গত কারণে কর্মকা- সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য একটি অনুমোদনকারী (এফিলিয়েটিং) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্য, একজন উপ-উপাচার্য ও একজন কোষাধ্যক্ষ থাকবেন। উচ্চশিক্ষা প্রদানকারী মাদ্রাসাগুলোর অনুমোদন এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেয়া হবে।
পাশাপাশি কোরান, হাদিস, ফিকাহ, তাজবিদ, শরিয়তসহ নানা বিষয়ের কোর্স কারিকুলাম তৈরি, পাঠদান ও ডিগ্রী দেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২০০৬ সালের আগে দেশে মাদ্রাসা শিক্ষার সব ধরনের ডিগ্রী দিত মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। বর্তমানে মাদ্রাসা ধারার শিক্ষাব্যবস্থায় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত ডিগ্রী দেয় বাংলাদেশ মদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। আর ‘ফাজিল’ (স্নাতক) ও কামিল (স্নাতকোত্তর) ডিগ্রী দেয় কুষ্টিয়ার বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রতিষ্ঠানটির জন্য বহুদিন ধরে আন্দোলন করছে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন। সংগঠনটির মহাসচিব মাওলানা সাব্বির আহমেদ মমতাজী সরকারের অবস্থানে সন্তোষ প্রকাশ করে বলছিলেন, ইসলামী শিক্ষার উন্নয়নে নতুন এ বিশ্ববিদ্যালয় হবে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। স্বতন্ত্র ইসলামিক আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এখন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সব ডিগ্রী এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেয়া হবে। দেশে এ ধরনের বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় এটাই প্রথম। তিনি একে যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে অভিহিত করে এর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে অভিনন্দন জানান।
অবশেষে অফিস পেল মাদ্রাসা অধিদফতর ॥ ঘোষণা দেয়ার প্রায় পাঁচ বছর পর মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য আলাদা অধিদফতর হলেও কয়েক মাস ধরেই জায়গা নিয়ে ছিল সঙ্কট। কোথায় হবে এর অফিস তা নিয়ে আলোচনা আর বিতর্কেই চলে গেছে প্রায় এক বছর। একবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের একটি ফ্লোরে অফিসের কার্যক্রমের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তা বাধার মুখে পড়ে। একই ভবনে দুইজন মহাপরিচালকসহ নানা প্রশ্নে ভেস্তে যায় উদ্যোগ। এরই মধ্যে নতুন এ অধিদফতরের মহাপরিচালক পদে প্রশাসান ক্যাডারের কর্মকর্তাকে পদায়ন করায় শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে অসন্তোষ। এ অসন্তোষে নতুন মাত্রা যোগ করে ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত কয়েকজনের নতুন এ অধিদফতরের পদায়নের ঘটনা। আরবী জানেন-এমন লোকদের যোগ্য বলে ঘোষণা দিয়ে এখানে ইতোমধ্যেই পদায়ন করা হয়েছে জামায়াতপন্থী কয়েক কর্মকর্তাকে। এ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে আপত্তিও জানিয়েছেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। সাবেক ছাত্র লীগের নেতারা এ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। একই আপত্তির কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন নেতৃবৃন্দও। তারা বলেছেন, এটা সরকারী একটি অধিদফতর। সেখানে আরবীতে ফাইল লেখা হবে না। তবু আরবী জানা লোক নিয়োগের নামে জামায়াতীদের বসানো হচ্ছে। এমন অবস্থায় কোথায় হবে এর অফিস? এ প্রশ্নে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা রীতিমতো জায়গার অভাবে বসেই সময় কাটাচ্ছিলেন। জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত এ অধিদফতরের অফিস হিসাবে নির্বাচন করা হয়েছে কাকরাইলের ন্যাশনাল স্কাউট ভবনকে। এই ভবনের একটি ফ্লোরকে অফিসের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যারা নিয়োগ পেয়েছেন তারা আসা শুরু করেছেন। এখানও আসবাবপত্র গোছানো হয়নি। তবে শিক্ষা অধিদফতরের কাছ থেকে মাদ্রাসা শাখার কাজ কবে বুঝে নেবে নতুন এ অধিদফতর? এ প্রশ্নে কর্মকর্তারা বলছেন, শীঘ্রই। হয়ত সামনের মাসের এমপিও থেকেই কাজ শুরু হবে এখানে।
যুগ্ম সচিব মোঃ বিল্লাল হোসেন অধিদফতরের প্রথম মহাপরিচালক হিসাবে কাজ শুরু করেছেন। বর্তমানে এমপিওভুক্ত সকল মাদ্রাসা শিক্ষার কার্যক্রম পরিচালিত হয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) অধীনে। এ জন্য মাউশির একটি আলাদা শাখাও আছে। ইবতেদায়ী থেকে কামিল পর্যন্ত শিক্ষার জন্য মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। এগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৬৫ লাখ। মাদ্রাসাগুলোর মধ্যে বেতন-ভাতা বাবদ সরকার থেকে অনুদান (এমপিওভুক্ত) যায় সাড়ে সাত হাজারটি। মাউশির পক্ষে বিদ্যালয় ও কলেজগুলোর পাশাপাশি এসব মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যথাযথভাবে দেখভাল করা সম্ভব হয় না বলে অভিযোগ করে মাদ্রাসার শিক্ষকেরা দীর্ঘদিন ধরে আলাদা অধিদফতর করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। শিক্ষকরা মাদ্রাসা অধিদফতরের কার্যক্রম শুরুতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলছেন, এর ফলে মাউশিকে ঘিরে লাখ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর হয়রানি যেমন কমবে তেমনি মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়নেও পড়বে ইতিবাচক প্রভাব। মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।
শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ জানিয়েছেন, আজ সকাল ১০টায় শিক্ষা বোর্ড কম্পিউটার কেন্দ্র ভবনে ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী ক্যাম্পাস পরিদর্শন করবেন তিনি। এ সময় তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আহসান উল্লাহসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা সভায় মিলিত হবেন। নতুন প্রতিষ্ঠিত এ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ও গবেষণা কার্যক্রমের পাশাপাশি অধিভুক্ত এক হাজার ২৬০টি ফাজিল ও কামিল মাদ্রাসার শিক্ষকের প্রশিক্ষণসহ পেশাগত উন্নয়নেও ব্যবস্থা নেবে। বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশে ইসলামী শিক্ষার প্রসারসহ ইসলামী মূল্যবোধ জোরদার করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলেও আশাবাদ ব্যক্ত করেন মন্ত্রী। জানা গেছে, ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদে পাসকৃত আইনের আওতায় ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে জাতীয় শিক্ষানীতির সুপারিশ ও মাদ্রাসা শিক্ষার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিশাল জনগোষ্ঠীর পৃথক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বহু বছরের দাবি পূরণ হচ্ছে। এটি হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো অনুমোদনকারী বা এ্যাফিলিয়েটিং ক্ষমতাসম্পন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সব ডিগ্রী দেয়া হবে এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুরূপ কার্য সম্পাদন করবে বিশ্ববিদ্যালয়টি। মাদ্রাসার উচ্চ শিক্ষা অর্থাৎ ফাজিল এবং কামিল বিশ্ববিদ্যালয়টির কাজ হবে ফাজিল এবং কামিল পর্যায়ের মাদ্রাসাগুলোর অনুমোদন দেয়া, অনুমোদন বাতিল করা, গবেষণা, প্রশিক্ষণ, পরীক্ষা গ্রহণ, ডিগ্রী প্রদান করা। তবে সরকারী কারিকুলাম অনুযায়ী না চলার কারণে দেশের কওমী মাদ্রাসাগুলো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত হবে না। দেশে কামিল এবং ফাজিল পর্যায়ের এক হাজার ৯০০ মাদ্রাসা রয়েছে।
মাদ্রাসা শিক্ষকদের বৃহৎ সংগঠন বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন বহু বছর যাবত মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য পৃথক একটি এফিলিয়েটিং ক্ষমতাসম্পন্ন ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়ে আসছিল। জাতীয় শিক্ষানীতির শিক্ষা প্রশাসন অধ্যায়েও স্পষ্ট করে বলা হয়েছে, মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থাপনায় পৃথক একটি মাদ্রাসা অধিদফতর গঠন করতে হবে। আর মাদ্রাসা শিক্ষা অধ্যায়ে বলা হয়েছে, মাদ্রাসা শিক্ষার উচ্চ অর্থাৎ ফাজিল ও কামিল পর্যায়ে শিক্ষাক্রম/পাঠ্যপুস্তক অনুমোদন, শিক্ষাঙ্গনগুলোর তদারকি ও পরিবীক্ষণ এবং পরীক্ষা পরিচালনাসহ সার্বিক তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব বর্তমানে কুষ্টিয়ার ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর ন্যস্ত। কিন্তু একটি নিয়মিত বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে এ বিশাল দায়িত্ব পালন দুরূহ। সঙ্গত কারণে কর্মকা- সুষ্ঠুভাবে সম্পাদনের জন্য একটি অনুমোদনকারী (এফিলিয়েটিং) ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে। বিশ্ববিদ্যালয়টির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আইন অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন উপাচার্য, একজন উপ-উপাচার্য ও একজন কোষাধ্যক্ষ থাকবেন। উচ্চশিক্ষা প্রদানকারী মাদ্রাসাগুলোর অনুমোদন এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেয়া হবে।
পাশাপাশি কোরান, হাদিস, ফিকাহ, তাজবিদ, শরিয়তসহ নানা বিষয়ের কোর্স কারিকুলাম তৈরি, পাঠদান ও ডিগ্রী দেবে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। ২০০৬ সালের আগে দেশে মাদ্রাসা শিক্ষার সব ধরনের ডিগ্রী দিত মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। বর্তমানে মাদ্রাসা ধারার শিক্ষাব্যবস্থায় উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত ডিগ্রী দেয় বাংলাদেশ মদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। আর ‘ফাজিল’ (স্নাতক) ও কামিল (স্নাতকোত্তর) ডিগ্রী দেয় কুষ্টিয়ার বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়।
প্রতিষ্ঠানটির জন্য বহুদিন ধরে আন্দোলন করছে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন। সংগঠনটির মহাসচিব মাওলানা সাব্বির আহমেদ মমতাজী সরকারের অবস্থানে সন্তোষ প্রকাশ করে বলছিলেন, ইসলামী শিক্ষার উন্নয়নে নতুন এ বিশ্ববিদ্যালয় হবে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক। স্বতন্ত্র ইসলামিক আরবী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় এখন স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের সব ডিগ্রী এ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দেয়া হবে। দেশে এ ধরনের বিশেষায়িত বিশ্ববিদ্যালয় এটাই প্রথম। তিনি একে যুগান্তকারী পদক্ষেপ বলে অভিহিত করে এর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে অভিনন্দন জানান।
অবশেষে অফিস পেল মাদ্রাসা অধিদফতর ॥ ঘোষণা দেয়ার প্রায় পাঁচ বছর পর মাদ্রাসা শিক্ষার জন্য আলাদা অধিদফতর হলেও কয়েক মাস ধরেই জায়গা নিয়ে ছিল সঙ্কট। কোথায় হবে এর অফিস তা নিয়ে আলোচনা আর বিতর্কেই চলে গেছে প্রায় এক বছর। একবার মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদফতরের একটি ফ্লোরে অফিসের কার্যক্রমের সিদ্ধান্ত নেয়া হলেও তা বাধার মুখে পড়ে। একই ভবনে দুইজন মহাপরিচালকসহ নানা প্রশ্নে ভেস্তে যায় উদ্যোগ। এরই মধ্যে নতুন এ অধিদফতরের মহাপরিচালক পদে প্রশাসান ক্যাডারের কর্মকর্তাকে পদায়ন করায় শিক্ষা ক্যাডারের সদস্যদের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে অসন্তোষ। এ অসন্তোষে নতুন মাত্রা যোগ করে ছাত্রদল ও ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত কয়েকজনের নতুন এ অধিদফতরের পদায়নের ঘটনা। আরবী জানেন-এমন লোকদের যোগ্য বলে ঘোষণা দিয়ে এখানে ইতোমধ্যেই পদায়ন করা হয়েছে জামায়াতপন্থী কয়েক কর্মকর্তাকে। এ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদসহ সরকারের সংশ্লিষ্টদের কাছে আপত্তিও জানিয়েছেন শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তারা। সাবেক ছাত্র লীগের নেতারা এ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। একই আপত্তির কথা জানিয়েছে বাংলাদেশ জমিয়াতুল মোদার্রেছীন নেতৃবৃন্দও। তারা বলেছেন, এটা সরকারী একটি অধিদফতর। সেখানে আরবীতে ফাইল লেখা হবে না। তবু আরবী জানা লোক নিয়োগের নামে জামায়াতীদের বসানো হচ্ছে। এমন অবস্থায় কোথায় হবে এর অফিস? এ প্রশ্নে নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তারা রীতিমতো জায়গার অভাবে বসেই সময় কাটাচ্ছিলেন। জানা গেছে, শেষ পর্যন্ত এ অধিদফতরের অফিস হিসাবে নির্বাচন করা হয়েছে কাকরাইলের ন্যাশনাল স্কাউট ভবনকে। এই ভবনের একটি ফ্লোরকে অফিসের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যারা নিয়োগ পেয়েছেন তারা আসা শুরু করেছেন। এখানও আসবাবপত্র গোছানো হয়নি। তবে শিক্ষা অধিদফতরের কাছ থেকে মাদ্রাসা শাখার কাজ কবে বুঝে নেবে নতুন এ অধিদফতর? এ প্রশ্নে কর্মকর্তারা বলছেন, শীঘ্রই। হয়ত সামনের মাসের এমপিও থেকেই কাজ শুরু হবে এখানে।
যুগ্ম সচিব মোঃ বিল্লাল হোসেন অধিদফতরের প্রথম মহাপরিচালক হিসাবে কাজ শুরু করেছেন। বর্তমানে এমপিওভুক্ত সকল মাদ্রাসা শিক্ষার কার্যক্রম পরিচালিত হয় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) অধীনে। এ জন্য মাউশির একটি আলাদা শাখাও আছে। ইবতেদায়ী থেকে কামিল পর্যন্ত শিক্ষার জন্য মাদ্রাসার সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার। এগুলোতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৬৫ লাখ। মাদ্রাসাগুলোর মধ্যে বেতন-ভাতা বাবদ সরকার থেকে অনুদান (এমপিওভুক্ত) যায় সাড়ে সাত হাজারটি। মাউশির পক্ষে বিদ্যালয় ও কলেজগুলোর পাশাপাশি এসব মাদ্রাসা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে যথাযথভাবে দেখভাল করা সম্ভব হয় না বলে অভিযোগ করে মাদ্রাসার শিক্ষকেরা দীর্ঘদিন ধরে আলাদা অধিদফতর করার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। শিক্ষকরা মাদ্রাসা অধিদফতরের কার্যক্রম শুরুতে সন্তোষ প্রকাশ করে বলছেন, এর ফলে মাউশিকে ঘিরে লাখ লাখ শিক্ষক-কর্মচারীর হয়রানি যেমন কমবে তেমনি মাদ্রাসা শিক্ষার আধুনিকায়নেও পড়বে ইতিবাচক প্রভাব। মাদ্রাসা শিক্ষার ক্ষেত্রে এটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ।