আলী, সৈয়দ আমীর


আলী, সৈয়দ আমীর (১৮৪৯-১৯২৮) আইনজীবী, ভারতীয় মুসলমানদের স্বার্থ সংরক্ষণে উদ্যোগী এবং ইসলামের ইতিহাস ও সমাজ বিষয়ক লেখক। তিনি ১৮৪৯ সালের ৬ এপ্রিল উড়িষ্যার কটকে জন্মগ্রহণ করেন। ইরানের মেশেদ থেকে আগত এক শিয়া পরিবারের বংশধর সৈয়দ সা’দাত আলীর পাঁচ পুত্রের মধ্যে তিনি ছিলেন চতুর্থ। আমীর আলীর প্রপিতামহ ১৭৩৯ সালে নাদির শাহের সৈন্যদলের সাথে ইরান পরিত্যাগ করে ভারতীয় উপমহাদেশে আসেন এবং অতঃপর মুগল ও অযোধ্যার দরবারে চাকরি করেন।
তাঁর পিতা ছিলেন ইউনানি চিকিৎসায় প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত এবং পান্ডিত্যের অনুরাগী। আমীর আলীর জন্মের অল্প কিছুকাল পরে তাঁর পিতা বাসস্থান পরিবর্তন করে পরিবার-পরিজনসহ প্রথমে কলকাতায় আসেন এবং পরে চুঁচুড়ায় চলে যান। সেখানে তাঁরা আশরাফ অভিজাতদের মতো সংযত আরামপ্রদ জীবন যাপনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েন। তাঁর পরিবারের ঐতিহ্যপূর্ণ বৈশিষ্ট্যসমূহ আমীর আলীকে তাঁর নিজস্ব পরিচিতি সম্পর্কে প্রবলভাবে প্রভাবিত করে। তিনি তাঁর শৈশবাবস্থায় নিজেকে পারিপার্শ্বিকতা থেকে অনেকটা গুটিয়ে নিয়েছিলেন। একারণে তাঁর সমালোচনাও হয়েছিল।
সৈয়দ আমীর আলী
এ সময় অনেক মুসলমান পরিবার ইংরেজ সরকারের শিক্ষাগত সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগাতে অনীহা প্রকাশ করছিলেন। কিন্তু সৈয়দ সা’দত আলী তাঁর পুত্রদের জন্য নতুন সুবিধাদি সাগ্রহে গ্রহণ করেন। কারণ তাঁর অনেক ইংরেজ বন্ধু ছিলো। আমীর আলীর বড় তিন ভাই প্রথমে কলকাতা মাদ্রাসা ও পরবর্তী সময়ে হুগলি কলেজিয়েট স্কুল ও মাদ্রাসায় শিক্ষা লাভ করেন। এরপর তাঁরা সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন। আমীর আলী শীঘ্রই তাঁর ভাইদের শিক্ষাগত সাফল্য ও সুনামকে অতিক্রম করেন। হুগলি মাদ্রাসায় ব্রিটিশ শিক্ষকদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠার সুবাদে তাদের সহায়তায় এবং কিছু প্রতিযোগিতামূলক বৃত্তি লাভের কারণে তিনি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল অর্জন করেন। তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৮৬৭ সালে স্নাতক ও ১৮৬৮ সালে ইতিহাসে সম্মানসহ এম.এ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৮৬৯ সালে এল.এল.বি ডিগ্রি নেওয়ার পর তিনি কলকাতায় আইন ব্যবসায় শুরু করেন।
তাঁর সমকালীন ব্যক্তিবর্গের যে কয়েকজন মুসলমান বিশেষ সাফল্যলাভ করেছিলেন, তাদের মধ্যে তিনি একজন বিশেষ ব্যক্তি হিসেবে পরিগণিত হয়েছিলেন। অপরদিকে তাঁর ইসলামি শিক্ষাও অবহেলিত হয় নি। ধর্মীয় ব্যাপারে তাঁর উপর প্রবল প্রভাব বিস্তার করেছিলেন তাঁর মা, বিশেষ করে তাঁর সাত বছর বয়সে তাঁর পিতার অকাল মৃত্যুর পর থেকে। তাঁর পরিবার একজন মৌলভিকে গৃহশিক্ষক নিয়োজিত করে, যিনি তাঁকে কুরআন, আরবি ও ফারসি শিক্ষা দিতেন। পরবর্তীসময়ে গৃহের বাইরে তিনি অধিকতর উচ্চ পর্যায়ে আরবি ভাষা শেখেন। ইসলামি সমাজের উদ্ভব, অগ্রগতি ও প্রকৃতি সম্পর্কে তাঁর আজীবন কৌতূহল গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রেখেছে নিকটবর্তী হুগলি ইমামবারা। আমীর আলী স্কুল ছাত্র থাকাকালেই এ ইমামবারার মুতাওয়াল্লি মৌলভি সৈয়দ  কেরামত আলী জৌনপুরী তাঁকে বন্ধু হিসেবে গ্রহণ করেন এবং স্থানীয় ধর্মীয় পন্ডিতদের সাথে সাপ্তাহিক আলোচনাসমূহে তাঁকে অন্তর্ভুক্ত করেন। এর ফলস্বরূপ, সতেরো বছর বয়স্ক আমীর আলী গ্রিক, ইসলামি ও ইউরোপীয় সমাজের মধ্যে জ্ঞানের আদান-প্রদানের উপর লিখিত কেরামত আলীর উর্দু রচনাবলি ইংরেজিতে অনুবাদ করায় সাহায্য করেন। পরবর্তীসময়ে এ বিষয়টি তিনি তাঁর নিজস্ব ইতিহাস সম্পর্কিত পুস্তকে প্রকাশ করেন (মাখাজ-ই উলুম অথবা এ ট্রিটিজ অন দি অরিজিন অব দি সাইন্সেস, অনুবাদ মৌলভি ওবায়েদ উল্লাহ আল-ওবায়েদী ও মৌলভি সৈয়দ আমীর আলী, কলকাতা, ১৮৬৭)। বাংলায় তাঁর কর্মজীবন কালে তিনি হুগলি ইমামবারার সাথে সবসময় যোগাযোগ রক্ষা করে চলেছেন।
তাঁর এল.এল.বি সমাপ্ত হওয়ার পর ব্রিটেনে পড়াশুনার জন্য আমীর আলী সরকারি বৃত্তি লাভ করেন। লন্ডনে তাঁর প্রথমবার বসবাসের সময় (১৮৬৯ থেকে ১৮৭৩) তিনি আইন ব্যবসায়ে যোগ দেন। কিন্তু একই সাথে তিনি বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংস্কারমূলক কর্মকান্ডে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়েন। তাঁর কর্মকান্ড ভারতীয় মুসলমানদের সমস্যাবলি নিয়ে ভারত সচিবের সাথে আলোচনা থেকে শুরু করে ব্রিটিশ নারীদের সম্পত্তিতে ও নাগরিক অধিকার আদায়ের জন্য সদ্য শুরু হওয়া ভোটাধিকার আন্দোলনের পক্ষে প্রচার অভিযান চালানো পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। ভারতীয় মুসলমানদের সমস্যাবলির ওপর তিনি উন্মুক্ত বক্তৃতাও দেন এবং পরবর্তীকালে তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত গ্রন্থের, দি স্পিরিট অব ইসলাম, যার প্রাথমিক শিরোনাম ছিল এ ক্রিটিকাল একজামিনেশন অব দি লাইফ অ্যান্ড টিচিংস অব মোহাম্মদ (লন্ডন, ১৮৭৩), প্রথম সংস্করণ প্রকাশ করেন। ইসলামি বিধানের প্রগতিশীল প্রকৃতি, এর যৌক্তিকতা, মধ্যযুগীয় খ্রিস্টান জগতের তুলনায় মধ্যযুগীয় ইসলামি সমাজের শ্রেষ্ঠত্ব, কিন্তু উনিশ শতকের শেষ দিকে কিছু সমাজিক পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা, বিশেষত নারীদের অবস্থান সংক্রান্ত বিষয়ে তাঁর সবচেয়ে বৈশিষ্ট্যমূলক ধ্যান-ধারণাসমূহ প্রকাশিত যুগোপযোগী গ্রন্থে স্পষ্টভাবে বিবৃত হয়েছে।
কলকাতায় ফিরে আসার পর আমীর আলী অতি দ্রুত সুনাম অর্জন করেন। তিনি চীফ প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট (১৮৭৯) থেকে কলকাতা হাইকোর্টের জজ (১৮৯০-১৯০৪) পদে উন্নীত হয়েছিলেন। তবে তাঁর এ সুনাম শুধু আইন ব্যবসাতেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং একজন শিক্ষক এবং ‘মুসলমানদের  ব্যক্তিজীবন সম্পর্কিত আইন’ বিষয়ের লেখক হিসেবেও তা সমভাবে প্রযোজ্য ছিল। ১৮৭০ ও ১৮৮০-র দশকে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্রদের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত তাঁর বক্তৃতাসমূহ দুখন্ডে প্রকাশিত হয় (১৮৮০ ও ১৮৮৪) এবং তখন থেকে অদ্যাবধি তা ক্রমাগতভাবে মোহামেডান ল, কম্পাইল্ড ফ্রম অথরিটিজ ইন দি ওরিজিনাল অ্যারাবিক (উদাহরণস্বরূপ, পঞ্চম সংস্করণ, পুনর্মুদ্রিত, নতুন দিল্লি, ১৯৮৫) হিসেবে মুদ্রিত হয়ে আসছে। বিচারকের ভূমিকায় তিনি কতিপয় সামাজিক বিষয়ের ওপর, বিশেষকরে বহুবিবাহ, যে সম্পর্কে তিনি তাঁর পূর্বেকার ক্রিটিকাল একজামিনেশন গ্রন্থে সমালোচনা করেছেন, মুসলমান মতামতকে প্রভাবিত করতে সমর্থ হন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রেই তিনি তখনকার বিতর্কসমূহে সবচেয়ে দৃঢ়ভাবে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন। বাংলায় অন্যান্য মুসলমানগণ ইতঃপূর্বেই তাদের নিজ সম্প্রদায়ের সংস্কারসাধনের প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে মতামত সংগঠিত করতে শুরু করেছিলেন। তবে আমীর আলী এ বিষয়ের সবচেয়ে বড় সমর্থক নওয়াব আবদুল লতিফ এর (১৮২৮-৯৩) সাথে, যিনি রক্ষণশীল সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিসহ অধিকতর মৌলিক পরিবর্তনের পক্ষপাতী ছিলেন, ভিন্নমত পোষণ করেন। আবদুল লতিফের মোহামেডান লিটারেরি সোসাইটিকে (১৮৬৩ সালে প্রতিষ্ঠিত), যেটি সামাজিক এবং সেই সাথে সাহিত্যিক বিষয়সমূহের ওপর মাসিক বৈঠকের আয়োজন করত, অগ্রাহ্য করে আমীর আলী ১৮৭৭ সালে ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন প্রতিষ্ঠা করেন। এটিকে তিনি ভারতের অন্যান্য প্রদেশসমূহের শাখাগুলি অধিভুক্তির পর সেন্ট্রাল ন্যাশনাল মোহামেডান অ্যাসোসিয়েশন নামে নতুন নামকরণ করেন।
পঁচিশ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক হিসেবে আমীর আলী যে কর্মকান্ড পরিচালনা করেন তাতে এ দাবির যথার্থতাই প্রমাণ করে যে, উনিশ শতকের আশির দশকে তিনি ভারতীয় মুসলমানদের রাজনৈতিক জাগরণের উদ্যোক্তা ছিলেন। এ সময় স্যার সৈয়দ আহমদ খান মুসলমানদেরকে রাজনীতিতে জড়িত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। ইলবার্ট বিল নিয়ে চরম উত্তেজনার সময় আপোস করার জন্য তিনি তাঁর সম্মতি প্রদান করেন। নারী শিক্ষার মতো সামাজিক সংস্কারসমূহ, যেগুলির পক্ষে পূর্বে তার সমর্থন ছিল, বাস্তবায়িত করার ব্যাপারে সক্রিয় ভূমিকা পালনে তাঁর অনীহা থাকলেও এটা তাঁর কৃতিত্বের পরিচায়ক যে, বিচারক হিসেবে ও রাজনৈতিক কর্মজীবনে তিনি ব্রিটিশ ও ইংরেজি-জানা ভারতীয়দের মধ্যে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক মতামতকে প্রচার করার জন্য সংবাদপত্রগুলিকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে সক্ষম হয়েছিলেন। তাঁর ভবিষ্যতে প্রকাশিতব্য গ্রন্থের মধ্যে ছিল ক্রিটিকাল একজামিনেশন (তাঁর স্ত্রীর পরামর্শে দেওয়া বর্তমান শিরোনাম দি স্পিরিট অব ইসলাম) এর ১৮৯১ সালের নতুন সংস্করণ এবং এ শর্ট হিস্ট্রি অব দি সারাসিনস (১৮৯৯)। অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়সমূহ জোরালো যুক্তিসহকারে তিনি শীর্ষস্থানীয় ব্রিটিশ পত্রিকা - যেমন নাইনটিন্থ সেঞ্চুরিতে প্রকাশ করেন। এ প্রবন্ধগুলির মধ্যে ‘এ ক্রাই ফ্রম দি ইন্ডিয়ান মোহামেডানস’ (১৮৮২) ও ‘দি রিয়েল স্ট্যাটাস অব উইমেন ইন ইসলাম’ (১৮৯১) উল্লেখযোগ্য।
ব্রিটেনের সাথে তাঁর যোগাযোগ জোরদার হয়েছিল লন্ডনে বারবার সফরের মাধ্যমে। লন্ডনে তিনি ১৮৮৪ সালে একেশ্বরবাদী চার্চে ইসাবেল ইডা কনস্ট্যামকে বিয়ে করেন, যিনি তাঁর বাকি বিশ বছরের কর্মজীবনে তাঁর সঙ্গে কলকাতায় বসবাস করেন। ১৯০৪ সালে ইংল্যান্ডে স্থায়িভাবে তাঁর চলে যাওয়ার সিদ্ধান্তে (১৯২৮ সালে তাঁর মৃত্যুর পূর্বে তিনি কদাচিৎই বাংলায় এসেছেন) সম্ভবত তাঁর স্ত্রীর প্রভাব প্রতিফলিত হয় (তাঁদের দুই পুত্র ইংল্যান্ডের পাবলিক স্কুলে লেখাপড়া করত)। কিন্তু তাঁর নিজেরও পশ্চিমাধাঁচে পারিবারিক ও সামাজিক জীবন অতিবাহিত করা অধিকতর পছন্দনীয় ছিল। তাঁর চবিবশ বছরব্যাপী অবসর জীবনযাপন কালে তিনি ইসলামি বিষয়ের সমর্থনে এবং ভারতীয় মুসলমানদের উন্নতি বিধানে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। দি স্পিরিট অব ইসলাম গ্রন্থে খ্রিস্টান সভ্যতা সম্পর্কে লিখিত তাঁর সমালোচনাকে কেন্দ্র করে ইংল্যান্ডের সরকার অনুমোদিত গির্জার যাজক ক্যানন ম্যালকম ম্যাকলের সাথে তাঁকে প্রকাশ্য বিতর্কে জড়িয়ে ফেলে। উইলফ্রিড স্ক্যাওয়েন ক্লন্ট তাঁর নিজের প্রকাশনাসমূহে তাঁর উদ্দেশ্যাবলির সত্যতা অস্বীকার করেন এবং তথাকথিত ‘বুলগেরিয়ায় নৃশংসতা’ ও মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্কের ভূমিকার সাথে জড়িত অন্যান্য বিষয়াবলির ব্যাপারে ব্রিটিশ জনমতের এক ব্যাপক অংশের সাথেও তিনি বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। ১৯০৮ সালে তিনি মুসলিম লীগের লন্ডন শাখা প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর সভাপতি হন। তিনি মুসলমাদের জন্য আলাদা নির্বাচকমন্ডলীর জন্য চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন, যা ১৯০৯ সালে মেনে নেওয়া হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত সংঘটিত ঘটনাবলি ব্রিটিশ রাজের প্রতি তাঁর সমর্থন অব্যাহত রাখার পক্ষে হুমকি স্বরূপ ছিল। তিনি যে ব্রিটিশ রাজের সমর্থক ছিলেন তা স্পষ্টভাবে বোঝা যায় ১৯০৯ সালে প্রিভি কাউন্সিলে তাঁর নিয়োগের ফলে। ব্রিটিশ সরকারের সাথে তাঁর প্রভূত যোগাযোগকে কাজে লাগিয়ে তিনি মুসলমানদের স্বার্থে ওকালতি চালিয়ে যেতে থাকেন, বিশেষকরে ব্রিটিশ রেড ক্রিসেন্ট স্থাপন ও পরবর্তী সময়ে খিলাফত আন্দোলন এর প্রতি তাঁর সমর্থন দানের মাধ্যমে। তথাপি যখন স্বাধীনতা সংগ্রাম তীব্রতর হচ্ছিল তখন ভারত থেকে তাঁর অনুপস্থিতি কার্যত তাঁকে ১৯২০-এর মাঝামাঝিতে রাজনৈতিকভাবে বাইরে সরিয়ে ফেলে।
আমীর আলীর শ্রেষ্ঠ অবদান রাজনৈতিক ক্ষেত্রে নয়, বরং তাঁর প্রধান প্রকাশনাবলির দৃঢ়প্রত্যয়ী ফলাফলে নিহিত ছিল। তাঁর প্রকাশিত গ্রন্থাদিতে ইসলামের স্বর্ণযুগের প্রশংসা করা হয়েছে এবং উপনিবেশবাদ ও পাশ্চাত্যায়নের ফলে উদ্ভূত কতিপয় পরিবর্তনের সাথে মুসলমানদের আপোস করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। ইসলামের অর্জনসমূহকে চোখের সামনে তুলে ধরা ও অন্যান্য সংস্কৃতিসমূহের ত্রুটি-বিচ্যুতিকে নিন্দা করা উভয়ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক প্রমাণাদিতে যদি আইনবিদের পদ্ধতি অবলম্বন করা হয়ে থাকে, তাহলে এধরনের মুসলিম আত্মসম্মানের ভিত্তি অবশ্যই সে সময়ে প্রয়োজনীয় ছিল। ইসলামে নারীর মর্যাদা ও অধিকারের বিষয়ে তাঁর প্রগতিশীল মনোভাব তাঁর সবচেয়ে স্মরণীয় অবদানসমূহের অন্যতম। এ সকল ব্যাপারে তাঁর নেতৃত্ব ইসলামি আধুনিকতাবাদীদের প্রশংসা অর্জন করলেও বাঙালি সাধারণ জনগণের বিষয়ে তাঁর উদাসীনতা অন্যান্যদের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। বিশেষ করে ১৮৭০-এর জটিল সময়ে, যখন মুসলিম মুখপাত্রদের সংখ্যা ছিল অত্যন্ত কম, তখন ইসলামের ইতিহাস ও সমাজ সম্পর্কে ত্রুটিপূর্ণ অথবা কুসংস্কারে পূর্ণ পশ্চিমা সমালোচনার ব্যাপারে তিনি বলিষ্ঠভাবে প্রতিবাদ করেন।
সৈয়দ আমীর আলী ১৯২৮ সালের ৩ আগস্ট ইংল্যান্ডে মারা যান। সন্তানেরা তাঁর নির্দেশানুযায়ী তাঁর ব্যক্তিগত কাগজপত্র নষ্ট করে ফেলেন। তাঁর ‘আত্মজীবনী’, (ইসলামিক কালচার-এর পাঁচটি সংখ্যায় (১৯৩১-৩২) প্রকাশিত) তাঁর পরিবার কর্তৃক সঙ্কলিত হয়েছিল। [এ্যাভ্রিল এ. পাওয়েল]
গ্রন্থপঞ্জি  KK Aziz, Ameer Ali: His Life and Work, Lahore, 1968; SR Wasti, Memoirs and Other Writings of Syed Ameer Ali, and Syed Ameer Ali on Islamic History and Culture, Lahore, 1968; Abdullah Ahsan, ‘A Late Nineteenth Century Muslim Response to the Western Criticism of Islam- an Analysis of Amir Ali’s Life and Works’, American Journal of Islamic Social Sciences, 11:2, 1985, 179-206; Martin Forward, The Failure of Islamic Modernism? Syed Ameer Ali’s Interpretation of Islam,Bern, 1999.

^উপরে যেতে ক্লিক করুন