কেউ কেউ জানি, কেউ কেউ জানি না
বেশ অনেকদিন ধরেই এলাকার লোকজন হোজ্জাকে অনুরোধ জানাচ্ছিল যে তাদের স্কুলে গিয়ে ছাত্রদের উদ্দেশে কিছু জ্ঞানের কথা শোনানোর জন্য। ওদের যন্ত্রণায় থাকতে না পেরে হোজ্জা শেষমেষ ওদের সঙ্গে গেল স্কুলে। তারপর উপস্থিত ছাত্রদের উদ্দেশ্য করে হোজ্জা বলল, “আমি আজ তোমাদের যা বলতে চাই, তা কি তোমরা জানো?”
খুব স্বাভাবিকভাবেই ছাত্ররা জবাব দিল, “না মোল্লা সাহেব, আমরা কেউই জানি না আপনি কী বলবেন।”
হোজ্জা তখন বলল, “জানোই না যখন, তখন আর জেনে কী হবে?”
এই কথা বলে হোজ্জা গটগট করে হেঁটে চলে আসল।
পরের সপ্তাহে স্কুল থেকে আবার কয়েকজন এল হোজ্জাকে নিয়ে যেতে। হোজ্জা আবারও ওদের সামনে গিয়ে বলল, “আমি আজ তোমাদের যা বলতে চাই, তা কি তোমরা জানো?”
এবার কিন্তু ছাত্ররা খুব হুশিয়ার। ওরা সবাই একসঙ্গে বলল, ‘জি মোল্লা সাহেব, আমরা সবাই জানি আপনি কী বলবেন।”
হোজ্জা তখন বলল, “জানোই যখন, তখন আর আমার বলার দরকার কী?”
এই কথা বলে হোজ্জা আবার গটগট করে হেঁটে চলে আসল।
স্কুলের ছাত্ররা তো দমবার পাত্র না। ওরা করল কি, পরের সপ্তাহে আবার হোজ্জাকে ধরে নিয়ে গেল ওদের উদ্দেশে কিছু বলার জন্য। হোজ্জা এবারও ওদের সামনে গিয়ে বলল, “আমি আজ তোমাদের যা বলতে চাই, তা কি তোমরা জানো?”
ছাত্রদের মধ্যে কেউ কেউ বলল, ‘জি মোল্লা সাহেব, জানি।”
আর কেউ কেউ বলল, “না মোল্লা সাহেব জানি না।”
ভাবখানা এমন, এবার বাছাধন কোথায় যাবে? কিন্তু হোজ্জা তো যে সে পাত্র না। হোজ্জা বলল, “তোমাদের মধ্যে যারা জানো-- যারা জানে না, তাদের তা জানিয়ে দাও।” এই কথা বলে আবার হোজ্জা গটগট করে হেটে বাসায় চলে আসল।
জোব্বার ভেতর আমিও ছিলাম একরাতে হোজ্জার প্রতিবেশী
হোজ্জার বাসা থেকে ভারী কিছু পড়ার শব্দ পেল। পরদিন সকালে তাদের দেখা হলে
প্রতিবেশী হোজ্জাকে জিজ্ঞাস করলেন, “ভাই সাহেব, গতকাল আপনার বাসা থেকে ভারী
কিছু পতনের শব্দ শুনলাম কী হয়েছে?”
হোজ্জা বলল, “আর বলবেন না, কালকে আমার বিবি রাগ করে আমার জোব্বা উপর থেকে নিচে ফেলে দেয়।”
“জোব্বা ফেলে দিলে এত শব্দ হয়!” প্রতিবেশী অবাক।
“আরে ভাই, জোব্বার ভেতর তো আমিও ছিলাম!” হোজ্জার ত্বরিত উত্তর।
বেশ অনেকদিন ধরেই এলাকার লোকজন হোজ্জাকে অনুরোধ জানাচ্ছিল যে তাদের স্কুলে গিয়ে ছাত্রদের উদ্দেশে কিছু জ্ঞানের কথা শোনানোর জন্য। ওদের যন্ত্রণায় থাকতে না পেরে হোজ্জা শেষমেষ ওদের সঙ্গে গেল স্কুলে। তারপর উপস্থিত ছাত্রদের উদ্দেশ্য করে হোজ্জা বলল, “আমি আজ তোমাদের যা বলতে চাই, তা কি তোমরা জানো?”
খুব স্বাভাবিকভাবেই ছাত্ররা জবাব দিল, “না মোল্লা সাহেব, আমরা কেউই জানি না আপনি কী বলবেন।”
হোজ্জা তখন বলল, “জানোই না যখন, তখন আর জেনে কী হবে?”
এই কথা বলে হোজ্জা গটগট করে হেঁটে চলে আসল।
পরের সপ্তাহে স্কুল থেকে আবার কয়েকজন এল হোজ্জাকে নিয়ে যেতে। হোজ্জা আবারও ওদের সামনে গিয়ে বলল, “আমি আজ তোমাদের যা বলতে চাই, তা কি তোমরা জানো?”
এবার কিন্তু ছাত্ররা খুব হুশিয়ার। ওরা সবাই একসঙ্গে বলল, ‘জি মোল্লা সাহেব, আমরা সবাই জানি আপনি কী বলবেন।”
হোজ্জা তখন বলল, “জানোই যখন, তখন আর আমার বলার দরকার কী?”
এই কথা বলে হোজ্জা আবার গটগট করে হেঁটে চলে আসল।
স্কুলের ছাত্ররা তো দমবার পাত্র না। ওরা করল কি, পরের সপ্তাহে আবার হোজ্জাকে ধরে নিয়ে গেল ওদের উদ্দেশে কিছু বলার জন্য। হোজ্জা এবারও ওদের সামনে গিয়ে বলল, “আমি আজ তোমাদের যা বলতে চাই, তা কি তোমরা জানো?”
ছাত্রদের মধ্যে কেউ কেউ বলল, ‘জি মোল্লা সাহেব, জানি।”
আর কেউ কেউ বলল, “না মোল্লা সাহেব জানি না।”
ভাবখানা এমন, এবার বাছাধন কোথায় যাবে? কিন্তু হোজ্জা তো যে সে পাত্র না। হোজ্জা বলল, “তোমাদের মধ্যে যারা জানো-- যারা জানে না, তাদের তা জানিয়ে দাও।” এই কথা বলে আবার হোজ্জা গটগট করে হেটে বাসায় চলে আসল।
হোজ্জা বলল, “আর বলবেন না, কালকে আমার বিবি রাগ করে আমার জোব্বা উপর থেকে নিচে ফেলে দেয়।”
“জোব্বা ফেলে দিলে এত শব্দ হয়!” প্রতিবেশী অবাক।
“আরে ভাই, জোব্বার ভেতর তো আমিও ছিলাম!” হোজ্জার ত্বরিত উত্তর।
কাজীর চিঠি - মোল্লা নাসিরউদ্দিন
গ্রামের এক ধনী জমিদার মোল্লাকে পছন্দ করতেন না। মোল্লার মত একটা
গরীব লোক, অথচ কিনা সবাই তার প্রশংসায় পঞ্চমুখ। জমিদারের তাই এহেন অবজ্ঞা।
.
একবার তার বাড়ীতে ছেলের বিয়ে; সবাইকে নেমন্তন্ন করা হল, শুধু তাকেই বাদ দেওয়া হল।
মোল্লা সাহেব এক মতলব ঠাওরালেন। একটা খাম জমিদারের নামে লিখে, ভেতরে
সাদা এক টুকরো কাগজ দিয়ে, খামের মুখ এঁটে জমিদারের বাড়ীতে হাজির ৷ তখন
সবাই খেতে বসেছে।
‘মশাই, এই চিঠিটা কাজী সাহেব পাঠিয়েছেন। —‘ও, তাই নাকি, আমার কি
সৌভাগ্য, কাজী সাহেব নিশ্চয়ই এই বিয়েতে ছেলেকে আশীৰ্বাদ জানিয়েছেন।
আসুন, আপনি দয়া করে ঐ পংক্তিতে খেতে বসুন’—এতক্ষণে সাদর অভ্যর্থনা করা হয়
মোল্লার।
মোল্লার খাওয়া শেষ হবার পর, তিনি বিদায় নিতে গেলেন জমিদারের কাছে।
আর, তখনি তার মনে পড়লো কাজীর চিঠিটার কথা। তাড়াতাড়ি খুলে দেখেন—ভেতরে
শুধু একটা সাদা কাগজ, কিছু লেখা নেই।
‘কি ব্যাপার মোল্লাজী, কাজী তো কিছুই লেখেননি।’
'ত আমি কি করে জানবো? আমার কাজ ছিল চিঠিটা দেবার, অামি তা করেছি, ব্যস!’ 155
ঘোড়া চেনার উপায় - মোল্লা নাসিরউদ্দিন
বিদেশে গিয়ে নাসিরউদ্দিন এক সরাইখানায় ওঠলেন রাত কাটাবার জন্যে।
খুব ভোরে উঠে আস্তাবলে গিয়ে নিজের ঘোড়াটাকে অন্ধকারে চিনতে পারলেন না
অন্যান্য যাত্রীদের ঘোড়ার পাল থেকে। মোল্লা খুব চিন্তায় পড়লেন—কোনটা তার
নিজের ঘোড়া, কি করে বেছে নেওয়া যায়?
হঠাৎ মাথায় এক বুদ্ধি খেলে যায়। বন্দুক তুলে আকাশের দিকে তাক করে গুলি ছুঁড়লেন।
সবাই ভাবলো ঘোড়া-চোরেরা এসেছে। অমনি আর সবাই দল বেঁধে নিচে নেমে
যে-যার ঘোড়ার লাগাম ধরে নিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ে। অবশিষ্ট ঘোড়াটার পিঠে চড়ে
নিশ্চিন্ত মনে নাসিরউদ্দিন পথে বেরিয়ে পড়লেন।
দড়ি ধরে টান মারলি কেন - মোল্লা নাসিরউদ্দিন
মোল্লা নাসিরউদ্দিন তার প্রিয় গাধটিতে চড়ে খুশীমত ঘুরে বেড়াতেন
এদেশে-ওদেশে। একবার এক দেশে গিয়ে দেখেন সে দেশের বাদশাটি মহামূর্খ। তাঁকে
যুক্তি-পরামর্শ যিনি দেন, তার বুদ্ধিসুদ্ধিও ঠিক তদ্রুপ।
নাসিরউদ্দিনের নাম-ডাক সে দেশে ও গিয়ে পৌঁছেছে। হঠাৎ নাসিরউদ্দিনকে
দেখে বাদশা বললেন, “আপনি আসায় আমি বাঁচলাম। তাঁরা নিশ্চয়ই আমাকে কিছু না
কিছু জিজ্ঞেস করবেন। এখন আপনার পরামর্শ চাই।”
‘বেশ তো, বেশ তো, আমি অবশ্যই সাহায্য করবো, তবে আমাকে পঞ্চাশ মোহর দিতে হবে।’
“অবশ্যই পাবেন ।’
পরদিন ইতিমধ্যে বাদশার পায়ের জুতোয় একটা লম্বা কালে ও টেকসই সূতো
বেঁধে মোল্লা নিজের হাতে রেখেছেন। বলা আছে বাদশাকে, যখন তিনি আজে বাজে কথা
বলতে যাবেন, তখন মোল্লা সূতো ধরে টান মারবেন, আর, বাদশা চুপ করে যাবেন। যা
বলবার তখন মোল্লাই বলবেন ।
রাজদূতেরা এসে গেলেন। প্রশ্ন করলেন, ‘আচ্ছা, আপনার দেশের
কুকুর-বেড়ালরা কি খুব সুখী? গরু-ছাগলেরা কি শান্ত ও সুস্থ শরীরে আছে?
এছাড়া’–বাদশা কি উত্তর দিতে যাচ্ছেন, এটুকু শোনামাত্রই মোল্লা নাসিরউদ্দিন
কালো সূতোয় টান দিতে বাদশ চুপ করে থাকেন। তখন মোল্লা নাসিরউদ্দিন বাদশার
হয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে থাকেন ।
‘দেখুন, আমাদের বাদশা এমন পণ্ডিত যে তিনি নিজে নিজের বিদ্যে বুদ্ধি
জাহির করতে ইচ্ছুক নন। —তাই, আমি বাদশার রাজসভার তরফ থেকে উত্তর দিচ্ছি
শুনুন,—ঐ যে আপনি বেড়ালকুকুরের সম্বন্ধে বললেন, এতে বোঝা যায় আপনি আমাদের
দেশের সামরিক, অ-সামরিক কর্মচারীদের সম্বন্ধে বোঝাতে চাইছেন। আর, গরু-ছাগল
বলা মাত্রই বুঝে নিয়েছি—ওরা হোল দেশের প্রজা সাধারণ। তাই না?
—এই ব্যাখ্যা শুনেই না, রাজদূতেরা বলে ওঠেন ‘মারহাব্বা ! মারহাব্বা !!—সত্যই আপনার ব্যাখ্যা প্রশংসনীয়।”
আর, বলতে লজ্জাও করে, ঠিক এমনি সময়েই কিনা, ঐ বাদশাটা বোকার মত
মোল্লা নাসিরউদ্দিনকে চেঁচিয়ে ভংসনা করেন: ‘দূর ব্যাটা বোকা, কোত্থেকে এ
এসেছে? ওদের কথার উত্তরে যদি এমন সব জ্ঞানের কথাই ছিল,তবে দড়ি ধরে টান
মারলি কেন বেকুব?
ক্ষতি উশুল - মোল্লা নাসিরউদ্দিন
গত হস্তায় যখন মোল্লা দোকানে ময়দা কিনতে গিয়েছিলেন তখন কে একজন তার থলি থেকে ময়দা বের করে নিয়েছে।
ক্ষতি উশুল করার জন্য এবারে দোকানে গিয়ে মোল্লা পাশের একজনের থলি থেকে কিছুটা ময়দা বের করে নিজের থলিতে ভরে ফেলেছেন।
পাশের লোকটির চোখ এড়ায় নি । মোল্লাকে এহেন কাজের জন্য কৈফিয়ৎ চাইলো।
"ওহে ভাই, চেপে যাও ব্যাপারট। আমি বোকা গবেট মানুষ, পরের ময়দার সঙ্গে নিজের ময়দার তফাৎট বুঝতে পারিনি, দুঃখিত, ভাই।”
‘তাই যদি হয়, তাহলে নিজের থলি থেকে ময়দা নিয়ে অন্যের থলিতেও তো ভরতে পারতেন!’ গজগজ করে লোকটি।
বাঃ রে, নিজের ময়দার সঙ্গে পরের ময়দার তফাৎ বুঝবো না আমি?—আমি কি এতই হাঁদারাম?
হুমম, তোমার কথাই ঠিক'
গাধার কথা
একজন প্রতিবেশি এসে হোজ্জাকে বলল, ভাই আপনার গাধাটা ধার দেবেন। একটু বাইরে যাওয়া প্রয়োজন ছিল।
হোজ্জা বললেন, দেয়া যাবে না। গাধাটা আরেকজনকে ধার দিয়েছি।
তক্ষুনি ভেতর থেকে হোজ্জার গাধাটা ডেকে উঠল। লোকটা বলল, ওই তো গাধা বাড়িতেই আছে।
হোজ্জা বললেন, যে আমার কথার চেয়ে গাধার কথা বেশি বিশ্বাস করে তাকে ধার দেয়া যায় না।
সহজ হিসাব
নাসিরুদ্দিন হোজ্জা নিজের বাগানে মাটি খুড়ছিলেন। একজন প্রতিবেশি এসে জিজ্ঞেস করল, ও মোল্লাসাব, মাটি খোড়েন কেন?
হোজ্জা বললেন, রাস্তায় একটা গর্ত হয়েছে। ওটা ভরাট করব।
লোকটা জিজ্ঞেস করল, আর এখানে যে গর্ত হবে সেটা?
হোজ্জা বললেন, আরেক যায়গা থেকে মাটি এনে ফেলব।
হোজ্জার অঙ্ক কষা
পাড়ার এক ছেলে হোজ্জার কাছে অঙ্ক বুঝতে এসেছে। হোজ্জা আবার অঙ্কে একেবারে অজ্ঞ। তাই বলে ছেলেটির কাছে ছোটও হওয়া যায় না। তিনি বিজ্ঞের মতো বললেন, 'বল, কোন অঙ্কটা বুঝতে পারছিস না?'
ছেলেটা বলল, 'একটা ঝুড়িতে ৫০টা কমলালেবু ছিল। ১৫ জন ছাত্রকে সমান ভাগ করে দিতে হবে। ঝুড়ি খুলে দেখা গেল তার মধ্যে ১০টা কমলালেবু পচে গেছে। তাহলে কয়টা কমলালেবু কম বা বেশি হবে?'
নাসিরুদ্দিন হোজ্জা তখন কাজী।
বিচার আচার করেন। একদিন বিচারে বসেছেন। বাদি মামলার আসামির সম্পর্কে যেসব
অভিযোগ করছেন হোজ্জা তা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন। বাদীর বলা শেষ হয়ে মাথা ঝাকিয়ে
বললেন, হুমম, তোমার কথাই ঠিক।
এ কথা শুনে আসামি বলে উঠল,
হুজুর, আমার কিছু কথা ছিল। হোজ্জা বললেন, ঠিকাছে, বলো তুমি কী বলতে চাও?
আসামির বক্তব্যও মনোযোগ দিয়ে শোনার পর হোজ্জা বললেন,হুমম, তোমার কথাও ঠিক।
হোজ্জার স্ত্রী পর্দার আড়ালে
এতক্ষণ সব কথা শুনছিলেন। বিরক্ত হয়ে স্বামীকে তিনি বললেন, দুইজনের কথাই ঠিক
হয় কিভাবে? হয় আসামির কথা ঠিক না হয় বাদির কথা ঠিক।
হোজ্জা স্ত্রীর দিকে ফিরে হাসি দিয়ে বললেন, হুমম, তোমার কথাই ঠিক।
'আমি বাজিতে জিতে গেছি'
একবার নাসিরুদ্দিন হোজ্জা
অসুস্থ হওয়া স্ত্রীকে বলল গাধাটাকে খাবার দিতে। স্ত্রী গাধাকে খাবার দিতে
অস্বীকার করল। দুজনের মধ্যে এ নিয়ে তুমুল ঝগড়া শুরু হল। ঝগড়া শেষে তারা
সিদ্ধান্ত নিল, দুজনের মধ্যে যে আগে কথা বলবে সে-ই গাধাকে খাবার খাওয়াবে।
বাজিতে জেতার আশায় তারা কেউ কারো সাথে কথা বলল না। ওই দিনই বিকেলে হোজ্জার
স্ত্রী বাইরে গেল। এ সময় ঘরে একটা চোর ঢুকল। হোজ্জা ঘরেই ছিল কিন্তু বাজিতে
হেরে যাওয়ার ভয়ে সে চোরকে কিছু বলল না। চোর নির্বিঘ্নে ঘরের সব কিছু
নিয়ে চলে গেল। হোজ্জার স্ত্রী বাসায় ফিরে এসে যখন দেখল সব কিছু খালি তখন
চিৎকার দিয়ে বলল, ‘হায় আল্লাহ! একি হল! ঘরে চোর এসেছিল নাকি?’
হোজ্জা স্ত্রীর কথার কোনো উত্তর
না দিয়ে খুশিতে লাফিয়ে উঠল, আমি বাজিতে জিতে গেছি, এখন গাধাকে খাওয়ানোর
দায়িত্ব তোমাকেই পালন করতে হবে। হা হা হা।
'প্রস্তুত প্রণালী তো আমার কাছে'
একদিন হোজ্জা বাজার থেকে গরুর
কলিজা কিনে বাসায় যাচ্ছিল। দোকানদার একটা কাগজে তাকে কলিজাভূনা করার পদ্ধতি
লিখে দিয়েছিল, যাতে বাসায় গিয়ে রান্না করতে পারেন। হঠাৎ একটি বাজপাখি উড়ে
এসে কলিজার ব্যাগটা ছিনিয়ে নিয়ে উড়ে চলে গেল।
এসময় হোজ্জা চেঁচিয়ে বলল, 'আরে বোকা!’ কলিজা নিয়ে গেলে কী হবে? প্রস্তুত প্রণালী তো আমার কাছে!’
'কে মারা গেছে-তুমি না, তোমার ভাই?'
হোজ্জার গ্রামে যমজ ভাই ছিল।
একদিন শোনা গেল, ওই যমজ ভাইদের একজন মারা গেছে। রাস্তায় ওই যমজ তাদের
একজনকে দেখে হোজ্জা দৌড়ে গেলেন তার দিকে। জিজ্ঞেস করলেন, ‘তোমাদের মধ্যে
কে মারা গেছে-তুমি না, তোমার ভাই?’
'বেড়ালটা গেল কোথায়?'
মোল্লা নাসিরউদ্দিন একবার বাজার
থেকে খাসির গোশত কিনে আনলেন। স্ত্রীর হাতে দিয়ে বললেন,"অনেকদিন গোশত
খাইনি। ভালো করে রাঁধো যেন খেয়ে মজা পাই।"
মোল্লা'র স্ত্রীও অনেকদিন গোশত
খায়নি। তাই রান্নার পর একটু একটু করে খেতে খেতে সবটা গোশতই খেয়ে ফেলল।
মোল্লা খেতে বসলে তাঁর স্ত্রী মুখ কাঁচুমাচু করে বললেন, "আজ আর তোমার বরাতে
গোশত নাই, সব গোশত বিড়ালে খেয়ে ফেলেছে।"
নাসিরউদ্দিন অবাক হয়ে বলল: পুরো এক সের গোশতই বিড়াল খেয়ে ফেলল?'
জি বলল: তাহলে আমি বলছি কি!
স্ত্রীর কথা মোটেই বিশ্বাস করল
না মোল্লা। তখনই বিড়ালটাকে দাঁড়িপাল্লায় ওজন করে দেখল র ওজন ঠিক এক সের।
মোল্লা বলল,'এটাই যদি সেই বেড়াল হয়, তাহলে গোশত কোথায়? আর এটা যদি
গোশতের ওজন হয় তাহলে বেড়ালটা গেল কোথায়?'
'আলখাল্লা'র পরিবর্তে জোব্বা'
একদা মোল্লা নাসিরউদ্দিন নিজের
জন্য একটা জোব্বা কিনতে গেল একটি দোকানে। তো পছন্দ করার পর দোকানদার
জোব্বাটা প্যাকেট করে দিল। মোল্লা জোব্বা নিয়ে চলে আসার সময় ভাবলেন জোব্বা
না নিয়ে বরং একটি আলখাল্লা নিয়ে যাই। দোকানীকে বলল, আপনি বরং আমাকে একটি
আলখাল্লা দাও। দোকানী আলখাল্লা দেয়ার পর মোল্লা নাসিরউদ্দিন তা নিয়ে বের
হয়ে আসার সময় দোকানী ডেকে বলল, হোজ্জা সাহেব আপনিতো আলখাল্লা'র মূল্য
পরিশোধ করেননি। তখন মোল্লা উত্তর দিল আমি তো আলখাল্লা'র পরিবর্তে
জোব্বা'টা রেখে গেলাম। তখন দোকানী বললেন, আপনিতো জোব্বা'র জন্যও মূল্য
পরিশোধ করেননি। প্রতি উত্তরে মোল্লা বললেন, যেটা আমি নেইনি তার জন্য মূল্য
পরিশোধ করব কেন?
'জামা-কাপড় দিয়ে কী হবে?'
নাসিরুদ্দীন হোজ্জা খুব যত্ন
করে একটা খাসি পুষত। নাদুস-নুদুস সেই খাসিটার ওপর পড়শিদের একবার বদনজর
পড়ল। একদিন কয়েকজন মিলে হোজ্জার বাড়িতে গিয়ে হাজির হল। হোজ্জাকে ডেকে
বলল: "ও মোল্লা সাহেব, বড়ই দুঃসংবাদ। আগামীকাল নাকি এ দুনিয়া ধ্বংস হয়ে
যাবে। হায়! এত সাধের ঘরবাড়ি, সহায়সম্পদ, এমনকি আপনার ওই প্রিয় খাসিটাও
থাকবে না!"
হোজ্জা বুঝলেন তাদের মতলবখানা
কী? কিন্তু এতগুলো লোকের বদনজর থেকে খাসিটাকে রক্ষা করা সহজ ছিল না। তাই
তিনি মুচকি হেসে পড়শিদের বললেন,তাই নাকি? তাহলে দুনিয়া ধ্বংসের আগে
খাসিটা জবাই করে খেয়ে ফেলাই ঠিক কাজ হবে। তোমরা কী বলো?
মতলববাজ পড়শিরা তো এ সুযোগের
অপেক্ষায়ই ছিল। তাই তারা মোল্লার প্রস্তাবে খুশি হল এবং খাসিটা জবাই করে
মহা ধুমধামে পেট পুরে খেল। তারপর গায়ের জামা খুলে হোজ্জারই বৈঠকখানায়
সবাই ঘুমিয়ে পড়ল। ঘুম থেকে উঠে সবাই দেখল তাদের জামা উধাও! সারা ঘর
তন্নতন্ন করে জামা খুঁজতে লাগল তারা। হোজ্জা তখন বললেন, ভাইয়েরা! দুনিয়াই
যদি ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে জামা-কাপড় দিয়ে কী হবে? তাই আমি সবার জামা
আগুনে পুড়িয়ে ফেলেছি!
আগে মারলে
-----------
||||||||||||||||||
-----------
নাসিরুদ্দিন হোজ্জা কাজের ছেলেকে কলসি দিয়ে পাঠালেন কুয়ো থেকে পানি তুলে আনতে। গালে ঠাস করে একটা চড় মেরে বললেন, খবরদার কলসিটা ভাঙিস না যেন।
একজন সেটা দেখে প্রশ্ন করল, মোল্লা সাহেব, কলসিতো ভাঙেনি। শুধুশুধু চড় মারলেন কেন?
হোজ্জা বললেন, ভাঙার পর চড় মারলে লাভ কি? তাতে কি কলসি জোড়া লাগবে? আগেই মারলাম যেন না ভাঙে।
-----------
||||||||||||||||||
-----------
নাসিরুদ্দিন হোজ্জা কাজের ছেলেকে কলসি দিয়ে পাঠালেন কুয়ো থেকে পানি তুলে আনতে। গালে ঠাস করে একটা চড় মেরে বললেন, খবরদার কলসিটা ভাঙিস না যেন।
একজন সেটা দেখে প্রশ্ন করল, মোল্লা সাহেব, কলসিতো ভাঙেনি। শুধুশুধু চড় মারলেন কেন?
হোজ্জা বললেন, ভাঙার পর চড় মারলে লাভ কি? তাতে কি কলসি জোড়া লাগবে? আগেই মারলাম যেন না ভাঙে।
একজন প্রতিবেশি এসে হোজ্জাকে বলল, ভাই আপনার গাধাটা ধার দেবেন। একটু বাইরে যাওয়া প্রয়োজন ছিল।
হোজ্জা বললেন, দেয়া যাবে না। গাধাটা আরেকজনকে ধার দিয়েছি।
তক্ষুনি ভেতর থেকে হোজ্জার গাধাটা ডেকে উঠল। লোকটা বলল, ওই তো গাধা বাড়িতেই আছে।
হোজ্জা বললেন, যে আমার কথার চেয়ে গাধার কথা বেশি বিশ্বাস করে তাকে ধার দেয়া যায় না।
সহজ হিসাব
নাসিরুদ্দিন হোজ্জা নিজের বাগানে মাটি খুড়ছিলেন। একজন প্রতিবেশি এসে জিজ্ঞেস করল, ও মোল্লাসাব, মাটি খোড়েন কেন?
হোজ্জা বললেন, রাস্তায় একটা গর্ত হয়েছে। ওটা ভরাট করব।
লোকটা জিজ্ঞেস করল, আর এখানে যে গর্ত হবে সেটা?
হোজ্জা বললেন, আরেক যায়গা থেকে মাটি এনে ফেলব।
হোজ্জার অঙ্ক কষা
পাড়ার এক ছেলে হোজ্জার কাছে অঙ্ক বুঝতে এসেছে। হোজ্জা আবার অঙ্কে একেবারে অজ্ঞ। তাই বলে ছেলেটির কাছে ছোটও হওয়া যায় না। তিনি বিজ্ঞের মতো বললেন, 'বল, কোন অঙ্কটা বুঝতে পারছিস না?'
ছেলেটা বলল, 'একটা ঝুড়িতে ৫০টা কমলালেবু ছিল। ১৫ জন ছাত্রকে সমান ভাগ করে দিতে হবে। ঝুড়ি খুলে দেখা গেল তার মধ্যে ১০টা কমলালেবু পচে গেছে। তাহলে কয়টা কমলালেবু কম বা বেশি হবে?'
একটু মাথা চুলকে হোজ্জা বললেন, 'অঙ্কটা কে দিয়েছে রে?'
ছেলে জবাব দিল, 'স্কুলের মাস্টারমশাই।'
হোজ্জা রেগে বললেন, 'তোর কেমন স্কুল রে! এমন বাজে অঙ্ক দিয়েছে? আর তোর মাস্টারমশাইয়েরও জ্ঞানবুদ্ধি একেবারেই নেই। আমাদের ছেলেবেলায় এ রকম অঙ্ক কখনো দিত না। আমাদের অঙ্ক থাকত আপেল নিয়ে। কমলালেবু তো পচবেই। আপেল হলে পচত না, আর অঙ্কটাও তাহলে সোজা হয়ে যেত। যেমন তোর পচা মাস্টার তেমনি তোর পচা অঙ্ক। এখন কেটে পড় দেখি, পচা কমলালেবুর বিশ্রী গন্ধ বেরোচ্ছে!'
ছেলেটা আর কী করে! অঙ্ক না করেই বাড়ি ফিরে গেল।
পুরস্কার
::::::
::::::
ছেলে জবাব দিল, 'স্কুলের মাস্টারমশাই।'
হোজ্জা রেগে বললেন, 'তোর কেমন স্কুল রে! এমন বাজে অঙ্ক দিয়েছে? আর তোর মাস্টারমশাইয়েরও জ্ঞানবুদ্ধি একেবারেই নেই। আমাদের ছেলেবেলায় এ রকম অঙ্ক কখনো দিত না। আমাদের অঙ্ক থাকত আপেল নিয়ে। কমলালেবু তো পচবেই। আপেল হলে পচত না, আর অঙ্কটাও তাহলে সোজা হয়ে যেত। যেমন তোর পচা মাস্টার তেমনি তোর পচা অঙ্ক। এখন কেটে পড় দেখি, পচা কমলালেবুর বিশ্রী গন্ধ বেরোচ্ছে!'
ছেলেটা আর কী করে! অঙ্ক না করেই বাড়ি ফিরে গেল।
পুরস্কার
::::::
::::::
মোল্লা নাসিরুদ্দিন নতুন একটা গাধা কিনে তার পিঠে পড়েছেন। কিছুতেই তাকে
বাগে আনতে পারছেন না। নামতেও পারছেন না। গাধাটা তাকে নিয়ে নিজের খুশিমত
লাফালাফি করছে। একবার রওনা দিল সোজা পুকুরের দিকে। পানিতেই নেমে পড়ে।
তক্ষুনি একঝাক ব্যাঙ প্রচন্ড চিৎকার শুরু করল। ভয় পেয়ে গাধাটা থামল।
তিনি নেমে পকেট থেকে পয়সা বের করে ছুড়ে দিলেন পুকুরের দিকে। ব্যাঙদের উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘নাও বাবারা, তোমাদের পুরস্কার।’
মাথাকোথায়
যুদ্ধের সময় কে কত বিরত্ব দেখিয়েছে তাই নিয়ে গল্প হচ্ছে। কে কিভাবে কতজন শত্রুসৈন্যকে মেরেছে সেই গল্প। নাসিরুদ্দিন হোজ্জাও ছিলেন সেখানে। একসময় তার পালা এল।
হোজ্জা বললেন, একবার যুদ্ধের মধ্যে এক কোপে একজনের পা কেটে ফেলেছি।
একজন বলল, ওটা ছিল ভুল কাজ। কাটা উচিত ছিল মাথা।
হোজ্জা বললেন, মাথা কাটব কিভাবে। ওটা যে আগেই কাটা ছিল।
নিজেই
মোল্লা নাসিরুদ্দিন তখন কাজী। একদিন দুজন লোক এল বিচার নিয়ে। একজনের অভিযোগ, আরেকজন তার কান কামড়ে দিয়েছে।
অভিযুক্ত বলল, না হুজুর। ও নিজেই নিজের কান কামড়েছে।
বাদি বলল, তা-ই সম্ভব। কেউ কি নিজের কান কামড়াতে পারে?
মোল্লা দোটানায় পড়লেন। বললেন, আগামীকাল এসো। কাল রায় দেব।
তিনি বাড়ি ফিরে নিজের কান কামড়াতে চেষ্টা করলেন। লাফিয়ে নিজের কান মুখে আনার চেষ্টা করেন।
একসময় উল্টে পরে মাথা ফেটে গেল।
পরদিন রায় দিলেন, ও নিজেই নিজের কান কামড়েছে। নিজে শুধু কান কামড়ানো যায় না মাথাও ফাটানো যায়।
কে অপয়া??
শিকারে বেরিয়েছেন রাজা। যাত্রাপথে প্রথমেই পড়ে গেলেন নাসিরুদ্দীন হোজ্জার সামনে। রাজা ক্ষেপে গেলেন। পাইক-পেয়াদারের ডেকে বললেন, 'হোজ্জা একটা অপয়া। যাত্রাপথে ওকে দেখলাম, আজ নির্ঘাত আমার শিকার পণ্ড। ওকে চাবুক মেরে দূর করে দাও।'
রাজার হুকুম তামিল হলো। কিন্তু সেদিন রাজার শিকারও জমে উঠলো বেশ। গুণে গুণে ছাবি্বশটা নাদুসনুদুস হরিণ মারলেন তিনি।
প্রাসাদে ফিরে রাজা অনুতপ্ত হয়ে ডেকে পাঠালেন হোজ্জাকে। হোজ্জা দরবারে আসতেই রাজা বললেন, 'কিছু মনে কোরো না, আমি তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম। ভেবেছিলাম তুমি অপয়া, আমার শিকার জুটবে না। কিন্তু এখন দেখছি আমার ধারণা উল্টো।'
'উল্টো তো বটেই।' এবার মওকা পেয়ে হোজ্জাও রাগ দেখাল। 'আপনি আমাকে অপয়া ভেবেছিলেন। অথচ দেখুন, আমাকে দেখার পর আপনি ছাবি্বশটা হরিণ পেলেন, আর আপনাকে দেখে আমি খেলাম বিশ ঘা চাবুক। তাহলে অপয়া যে কে, সেটা বুঝতে পেরেছেন তো?'
টাকার ঝনঝনানী------------
একদিন নাসিরউদ্দিন হোজ্জা একটি মিষ্টির দোকানের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ মিষ্টির দিকে চোখ পড়াতে তার খেতে ইচ্ছে হলেও টাকা না থাকায় শুধু মিষ্টির ঘ্রাণ নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। কিন্তু দায় সাধল দোকানদার। তিনি মিষ্টির ঘ্রাণ নেওয়াতে হোজ্জার কাছে তার দাম চাইলেন। হোজ্জা পরে দিবেন বলে সেদিনের মত চলে আসলেন। পরের দিন তিনি কিছু মুদ্রার কয়েন থলেতে নিয়ে তার দোকানে গেলেন এবং ঝাঁকাতে শুরু করলেন। দোকারদার বললেন দাও আমার টাকা দাও। হোজ্জা উত্তরে বললেন টাকার ঝনঝনানি শুনতে পাচ্ছেন না? দোকারনদার বললেন হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি। হোজ্জা বললেন তো শোধ হয়ে গেল।
সুখের সন্ধানে -------------------------
এক লোকের বউয়ের সাথে খুব ঝগড়াঝাটি হতো। বঊটি ছিলো ভীষণ ঝগড়াটে।কোনদিন সে তার স্বামীকে সুখে থাকতে দিতো না। একদিন সেই ভদ্রলোক কোন উপায় না দেখে কিছু পয়সা ও জামাকাপড় পোঁটলায় বেঁধে কোথাও চলে যাওয়ার জন্য মনস্থ করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লো।
নাসিরুদ্দিন সেই লোকটিকে মুখ ভার করে রাস্তার ধারে এমনভাবে বসে থাকতে দেখে প্রশ্ন করলেন, ' তোমার কী হয়েছে? কেন তুমি এমনভাবে রাস্তার ধারে বসে আছো?'
তক্ষুনি একঝাক ব্যাঙ প্রচন্ড চিৎকার শুরু করল। ভয় পেয়ে গাধাটা থামল।
তিনি নেমে পকেট থেকে পয়সা বের করে ছুড়ে দিলেন পুকুরের দিকে। ব্যাঙদের উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘নাও বাবারা, তোমাদের পুরস্কার।’
মাথাকোথায়
যুদ্ধের সময় কে কত বিরত্ব দেখিয়েছে তাই নিয়ে গল্প হচ্ছে। কে কিভাবে কতজন শত্রুসৈন্যকে মেরেছে সেই গল্প। নাসিরুদ্দিন হোজ্জাও ছিলেন সেখানে। একসময় তার পালা এল।
হোজ্জা বললেন, একবার যুদ্ধের মধ্যে এক কোপে একজনের পা কেটে ফেলেছি।
একজন বলল, ওটা ছিল ভুল কাজ। কাটা উচিত ছিল মাথা।
হোজ্জা বললেন, মাথা কাটব কিভাবে। ওটা যে আগেই কাটা ছিল।
নিজেই
মোল্লা নাসিরুদ্দিন তখন কাজী। একদিন দুজন লোক এল বিচার নিয়ে। একজনের অভিযোগ, আরেকজন তার কান কামড়ে দিয়েছে।
অভিযুক্ত বলল, না হুজুর। ও নিজেই নিজের কান কামড়েছে।
বাদি বলল, তা-ই সম্ভব। কেউ কি নিজের কান কামড়াতে পারে?
মোল্লা দোটানায় পড়লেন। বললেন, আগামীকাল এসো। কাল রায় দেব।
তিনি বাড়ি ফিরে নিজের কান কামড়াতে চেষ্টা করলেন। লাফিয়ে নিজের কান মুখে আনার চেষ্টা করেন।
একসময় উল্টে পরে মাথা ফেটে গেল।
পরদিন রায় দিলেন, ও নিজেই নিজের কান কামড়েছে। নিজে শুধু কান কামড়ানো যায় না মাথাও ফাটানো যায়।
কে অপয়া??
শিকারে বেরিয়েছেন রাজা। যাত্রাপথে প্রথমেই পড়ে গেলেন নাসিরুদ্দীন হোজ্জার সামনে। রাজা ক্ষেপে গেলেন। পাইক-পেয়াদারের ডেকে বললেন, 'হোজ্জা একটা অপয়া। যাত্রাপথে ওকে দেখলাম, আজ নির্ঘাত আমার শিকার পণ্ড। ওকে চাবুক মেরে দূর করে দাও।'
রাজার হুকুম তামিল হলো। কিন্তু সেদিন রাজার শিকারও জমে উঠলো বেশ। গুণে গুণে ছাবি্বশটা নাদুসনুদুস হরিণ মারলেন তিনি।
প্রাসাদে ফিরে রাজা অনুতপ্ত হয়ে ডেকে পাঠালেন হোজ্জাকে। হোজ্জা দরবারে আসতেই রাজা বললেন, 'কিছু মনে কোরো না, আমি তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম। ভেবেছিলাম তুমি অপয়া, আমার শিকার জুটবে না। কিন্তু এখন দেখছি আমার ধারণা উল্টো।'
'উল্টো তো বটেই।' এবার মওকা পেয়ে হোজ্জাও রাগ দেখাল। 'আপনি আমাকে অপয়া ভেবেছিলেন। অথচ দেখুন, আমাকে দেখার পর আপনি ছাবি্বশটা হরিণ পেলেন, আর আপনাকে দেখে আমি খেলাম বিশ ঘা চাবুক। তাহলে অপয়া যে কে, সেটা বুঝতে পেরেছেন তো?'
টাকার ঝনঝনানী------------
একদিন নাসিরউদ্দিন হোজ্জা একটি মিষ্টির দোকানের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ মিষ্টির দিকে চোখ পড়াতে তার খেতে ইচ্ছে হলেও টাকা না থাকায় শুধু মিষ্টির ঘ্রাণ নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। কিন্তু দায় সাধল দোকানদার। তিনি মিষ্টির ঘ্রাণ নেওয়াতে হোজ্জার কাছে তার দাম চাইলেন। হোজ্জা পরে দিবেন বলে সেদিনের মত চলে আসলেন। পরের দিন তিনি কিছু মুদ্রার কয়েন থলেতে নিয়ে তার দোকানে গেলেন এবং ঝাঁকাতে শুরু করলেন। দোকারদার বললেন দাও আমার টাকা দাও। হোজ্জা উত্তরে বললেন টাকার ঝনঝনানি শুনতে পাচ্ছেন না? দোকারনদার বললেন হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি। হোজ্জা বললেন তো শোধ হয়ে গেল।
সুখের সন্ধানে -------------------------
এক লোকের বউয়ের সাথে খুব ঝগড়াঝাটি হতো। বঊটি ছিলো ভীষণ ঝগড়াটে।কোনদিন সে তার স্বামীকে সুখে থাকতে দিতো না। একদিন সেই ভদ্রলোক কোন উপায় না দেখে কিছু পয়সা ও জামাকাপড় পোঁটলায় বেঁধে কোথাও চলে যাওয়ার জন্য মনস্থ করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লো।
নাসিরুদ্দিন সেই লোকটিকে মুখ ভার করে রাস্তার ধারে এমনভাবে বসে থাকতে দেখে প্রশ্ন করলেন, ' তোমার কী হয়েছে? কেন তুমি এমনভাবে রাস্তার ধারে বসে আছো?'
লোকটি
বললো, 'জীবন একেবারে বিষের মত হয়ে গেছে আমার স্ত্রীর জন্য মোল্লা সাহেব!
হাতে কিছু পয়সা আছে বটে কিন্তু মনে সুখ নেই। তাই দেশে দেশে ঘুরতে
বেরিয়েছি। যেখানে কোন সুখের সন্ধান পাব, সেখানেই থেকে যাবো।'
লোকটির পাশে তার পোঁটলায় টাকাকড়ি জিনিসপত্র সব রাখা ছিলো। তার কথা শেষ হতে না হতেই নাসিরুদ্দিন সেই বোঁচকাটা নিয়ে দৈড়ে পালাতে লাগলেন। মোল্লাকে পোঁটলাটা নিয়ে পালিয়ে যেতে দেখে লোকটিও তার পেছনে প্রাণপণ দৌড়াতে লাগলো। কিন্তু মোল্লা খুব দৌড়াতে পারতেন এবংন বুদ্ধিও আছে- এমন অবস্থায় নাসিরুদ্দিনকে ধরে কার সাধ্য! দেখতে দেখতে তিনি রাস্তা ছেড়ে জঙ্গলে ঢুকে হাওয়া হয়ে গেলেন। এভাবে লোকটিকে ধোঁকা দিয়ে তিনি আবার সেই রাস্তায় ফিরে পোঁটলাটা রাস্তার মাঝখানে রেখে একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে রইলেন। এদিকে লোকটিও কিছুক্ষণ পরে সেখানে এসে হাজির। তাকে এখন আগের চেয়েও বেশি দুঃখিত দেখাচ্ছে। কিন্তু রাস্তায় তার পোঁটলাটি পড়ে আছে দেখে মহা আনন্দে চিৎকার করে পোঁটলার উপর ঝাপিয়ে পড়লো।
এতক্ষণে সে যেন প্রাণ ফিরে পেলো। গাছের আড়াঁল থেকে নাসিরুদ্দিন বেরিয়ে এসে বললেন, "দুঃখীকে সুখের সন্ধান দেয়ার এও একটা উপায় দেখতে পেলাম, কী বলো ভাইয়া।" এই বলে মোল্লা সাহেব লোকটির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলেন।
১।
সকাল সকাল হোজা চলেছে , বাহন একটি গাধা। পেছন পেছন আরো দুটো গাধা বয়ে নিয়ে আসছে নাসিরুদ্দিনের মালপত্র। সেই দেখে গ্রামের মোড়ল ফুট কাটল, “নিজের বাচ্চাদের নিয়ে চললে কোথায় হোজা”?
অম্লানবদনে জবাব দিল নাসিরুদ্দিন, “পাঠাশালায় নিয়ে যাচ্ছি, সব কটাই মোড়ল হতে চাইছে কিনা”।
২।
নাসিরুদ্দিনের বাড়িতে নাকি চল্লিশ বছরের পুরনো এক বোতল শরাব আছে, এমনতর খবর পেয়ে হোজার পড়শী দৌড়ে গেছে। কড়া নাড়ার শব্দ শুনে হোজা দরজা খুলতেই পড়শীর মিনতি “চল্লিশ বছরের শরাব একটু পেতে পারি জনাব?”। গম্ভীরমুখে নাসিরুদ্দিন জানাল “সে শরাব আছে বটে আমার কাছে তবে দেওয়া টেওয়া যাবে না”। পড়শীর বিরস বদন দেখে হোজা বললে, “চাইলেই পাওয়া গেলে কি ‘চল্লিশ বছরের শরাব’ তৈরী হত?”।
৩।
নিজের পোষা মুরগীটাকে বাজারে বিক্রি করার মতলব নাসিরুদ্দিনের, কিন্তু সে মুরগী ধরা দিতে চায় না কিছুতেই। শেষমেশ কয়লার গাদার মধ্যে অনেক হুটোপাটি করে তাকে ধরা হল, মাঝখান থেকে কয়লার গুঁড়োয় গেল মুরগীর রঙ কালো হয়ে।
বাজারে পাওয়া গেল এক খদ্দের কিন্তু সে অনেক দেখে টেখে হোজাকে জানাল, “মুরগীটা সাদা হলে তবেই না নিতাম! কালো মুরগী চাই না”। শোনা মাত্র নাসিরুদ্দিন দিয়েছে মুরগীকে এক রাম চিমটি, মুরগী কোঁকর কোঁ করে ঝটপটিয়ে উঠেছে, আর কয়লার গুঁড়োর মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে পড়েছে একটু সাদা রং ।
“তোমার জন্য রঙ অবধি বদলে ফেলছে এ মুরগী, তুমি মুরগী না চাইলে কি হবে মুরগী কিন্তু তোমাকে চায়” – জানাল নাসিরুদ্দিন।
৪।
বাজারে ঘুরতে ঘুরতে হোজা দেখে একটা পুঁচকে পাখির দাম উঠল দশ মোহর। সেই দেখে দৌড়ে বাড়ি এসে নিজের পোষা টার্কি টা কে নিয়ে ফের বাজারে গেল নাসিরুদ্দিন, দর চাইল কুড়ি মোহর। বাজারের লোকেরা বলল, “কি যে বল হোজা, একটা টার্কির দাম কখনো কুড়ি মোহর হয়?” নাসিরুদ্দিন তর্ক জুড়ে দিল, “অতটুকু ছোট একটা পাখির দাম দশ মোহর হলে আমার এই প্রমাণ সাইজ টার্কিটার দাম বেশক্ কুড়ি মোহর”। “বলো কি হোজা, ও তো কথা বলা টিয়া – ওর দাম তো দশ মোহর উঠবেই”। “কিন্তু সে টিয়া তো আমার টার্কির মতন চিন্তা করতে পারে না”।
৫।
একদিন আড্ডার মধ্যে সবাই মিলে হোজাকে শুধোল, “নাসিরুদ্দিন, তোমার ক’জন সত্যিকারের দোস্ত আছে?” “এ বছর সেটা বলা মুশকিল খুব”, জানাল হোজা। সবাই তো অবাক, “কেন কেন, এ বছর বলা যাবে না কেন?” “আর বোলো না, এ বছর আমার ক্ষেতে বিস্তর ফসল হয়েছে যে”।
৬।
নাসিরুদ্দিনের নাপিত দাড়ি কামাতে গেলেই হোজার গাল কেটে ফেলে, সে এক মহা সমস্যা। একদিন দাড়ি কামানোর সময় শোনা গেল বিকট শব্দ, নাপিত-ও চমকে উঠে দিয়েছে ক্ষুরের এক লম্বা টান। যন্ত্রণা সহ্য করে নাসিরুদ্দিন জিজ্ঞাসা করল, “কিসের শব্দ হে?”। “ঘোড়ার পায়ে নাল পরাচ্ছে তো, তাই ঘোড়াটা চেঁচাচ্ছে” – জানাল নাপিত। “তাই বলো, আমি ভাবলাম কেউ দাড়ি কাটাচ্ছে বোধ হয়”।
৭।
আজান পড়তে পড়তেই একজন প্রাণপণে দৌড়চ্ছিল। মাথামুন্ডু বুঝতে না পেরে সবাই এসে নাসিরুদ্দিনকে শুধোল ব্যাপারটা কি। ক্ষণেক মাথা চুলকে নাসিরুদ্দিন জানাল, “ও দেখতে চায় ওর গলার স্বর কতদূর অবধি পৌঁছয়”।
৮।
“তোমার কি মনে হয় হোজা, গ্রামের আগা সাহেব স্বর্গে যাবে না নরকে?” নাসিরুদ্দিনকে দেখে সবাই একসঙ্গে জিজ্ঞাসা করে উঠল। নাসিরুদ্দিন ভারিক্কী চালে জবাব দিল, “কোত্থাও না, এখানেই থাকবে”। “সে আবার কি?”, সবাই ভারী অবাক। “আরে, কফিনে ঢোকার জন্য ঠিক একটা গরীবকে পেয়ে যাবে আগা, খুব চিনি ওকে।”
৯।
চমৎকার একটা বিকালে মাঠে শুয়ে শুয়ে চারপাশ দেখছিল আমাদের হোজা – পাশেই একটা গরু চরছে আর উড়ে বেড়াচ্ছে একটা কাক। দেখে ঈশ্বরের কাছে অনুযোগ জানাল নাসিরুদ্দিন, “এ তোমার কেমনধারা বিচার! কাক তো কোনো কাজেই আসে না কিন্তু ওকে দিলে উড়তে, আর যে এত কাজে আসে তাকে আটকে রাখলে মাটিতে”। বলতে বলতেই সেই কাক বিষ্ঠা ত্যাগ করেছে নাসিরুদ্দিনের ওপর। নাসিরুদ্দিন ভারী অবাক হয়ে বলল, “তোমার বিচার নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন নয় খোদা! ভাগ্যিস, গরু ওড়ে না”।
১০।
ঝমঝম করে বৃষ্টি নেমেছে, নাসিরুদ্দিন জানলার পাশে বসে তাই দেখছিল – চোখে পড়ল এক পড়শী পড়ি কি মড়ি করে দৌড়চ্ছে। হোজা ডাক ছাড়ল, “কি হে, এত দৌড়ও কেন?” “দেখতে পাও না নাকি হোজা? বৃষ্টি পড়ছে যে, ভিজে মরব নাকি?”
নাসিরুদ্দিন গম্ভীর হয়ে বলল, “বৃষ্টি হল আল্লার আশীর্বাদ, তার থেকে এরকম ভাবে দৌড়ে পালানো কি ঠিক?”
পড়শী পড়ল লজ্জায়, দৌড় থামিয়ে চুপচুপে ভিজে ফিরল বাড়ি।
পরের দিন-ও বৃষ্টি, এদিন কিন্তু পড়শী বাড়ির ভেতরে, দেখে নাসিরুদ্দিন তড়িঘড়ি করে দৌড়চ্ছে। পড়শী হেঁকে বলল, “কি গো, নিজের উপদেশ যে ভুলে গেলে বড়?” পা চালাতে চালাতে নাসিরুদ্দিনের জবাব, “আমি তো শুধু চেষ্টা করছি ঈশ্বরের আশীর্বাদের ওপর পা না ফেলতে”।
১১।
সুলতানের নতুন চাকর চাই কিন্তু পছন্দ হচ্ছে না কাউকেই, লাইন ধরে বাতিল করে যাচ্ছেন সবাইকেই। রাজদরবারে সেদিন হোজা-ও উপস্থিত, আর থাকতে না পেরে বলল, “জাহাঁপনা, শেষের জন কিন্তু দিব্যি ছিল”।
“ও হাসার সময় বত্রিশ পাটি বার করে রেখেছিল যে, পছন্দ হয় নি মোটেই” – বিরস বদনে জানালেন সুলতান।
মাথা নেড়ে নাসিরুদ্দিন বলল, “নিশ্চিন্ত থাকুন, আপনার কাজ শুরু করে দিলে বত্রিশ পাটির একটিও বেরোবে না”।
১২।
নিজের ক্ষেতে কাজ করছিল আমাদের হোজা। এমন সময় কে একজন হেঁকে বলল, “পাশের গাঁয়ে যেতে কতক্ষণ লাগবে বাপু?” কোনো উত্তর নেই। আবার প্রশ্ন করল সে, আবারো কোনো উত্তর নেই। বার বার তিনবার হওয়ার পর রেগেমেগে সে ব্যক্তি হাঁটা লাগাল।
এবার নাসিরুদ্দিন পেছন থেকে ডেকে বলল, “ঘন্টা তিনেক মতন লাগবে।”
“তুমি কি আমার সঙ্গে মস্করা করছ নাকি? এতক্ষণ ধরে জবাব দিলে না যে বড় আর এখন পিছু ডাকছ।”
নাসিরুদ্দিন হাতের কাজ সারতে সারতে বলল, “তোমার হাঁটা না দেখলে কি করে জানব কতক্ষণ লাগবে”।
১৩।
শিকার করে ফিরছিলেন সুলতান, দেখেন কনকনে শীতের দিনে হোজা একটা পাতলা জামা গায়ে বেড়াতে বেরিয়েছে।
“কি ব্যাপার হে ? পুরু পশমের জামা পরে আমি কেঁপে যাচ্ছি আর এত পাতলা জামা পরেও তোমার কোনো হেলদোল নেই। রহস্যটা কি?”
“আজ্ঞে আপনার যত কটা জামা আছে তার সবগুলো পরে ফেললেই ল্যাঠা চুকে যেত, ঠান্ডা লাগত না মোটেই; আমি তো তাই করেছি”, হেসে জানাল নাসিরুদ্দিন।
১৪।
রাজদরবারে পৌঁছে সুলতান দেখেন হোজা খুব মন দিয়ে সভাসদদের সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত।
সুলতানের একটু পেছনে লাগার ইচ্ছে হল, সবাইকে ডেকে বললেন “ওহে, নাসিরুদ্দিন বড় মিথ্যা কথা বলে, ওর কথা শুনো না”।
নাসিরুদ্দিন সম্মতি জানিয়ে বলল, “যা বলেছেন খোদাবন্দ, আপনার দরবারে ন্যায়বিচার পাওয়া কত সহজ সে কথাই জানাচ্ছিলাম”।
১৫।
পড়শীর বাড়ির পাশ দিয়ে যেতে যেতে নাসিরুদ্দিনের কানে আওয়াজ এল, জানলার দিকে সরে গিয়ে দেখে পড়শী বিছানায় শুয়ে প্রার্থনা করছে “হে আল্লা, আমাকে স্বর্গের পথ দেখাও”।
সেই দেখে নিজের বাড়িতে ফিরে এসে হোজা বাড়ির চালের উপর উঠে “কই রে, কই” বলে চিৎকার শুরু করে দিল।
চেঁচামেচিতে বিরক্ত হয়ে এবার পড়শী বেরিয়ে এসেছে, “সকাল সকাল এত হট্টগোল কিসের?”
“আরে, আমার গাধা টাকে খুঁজে পাচ্ছি না যে”।
পড়শী আরো বিরক্ত হয়ে বলল, “তোমার মাথা খারাপ নাকি! বাড়ির চালে গাধা খুঁজছ?”
“তুমি বাড়ির বিছানায় স্বর্গ খুঁজতে পারো আর আমি বাড়ির চালে গাধা খুঁজলেই দোষ?” শান্ত স্বরে উত্তর নাসিরুদ্দিনের।
লোকটির পাশে তার পোঁটলায় টাকাকড়ি জিনিসপত্র সব রাখা ছিলো। তার কথা শেষ হতে না হতেই নাসিরুদ্দিন সেই বোঁচকাটা নিয়ে দৈড়ে পালাতে লাগলেন। মোল্লাকে পোঁটলাটা নিয়ে পালিয়ে যেতে দেখে লোকটিও তার পেছনে প্রাণপণ দৌড়াতে লাগলো। কিন্তু মোল্লা খুব দৌড়াতে পারতেন এবংন বুদ্ধিও আছে- এমন অবস্থায় নাসিরুদ্দিনকে ধরে কার সাধ্য! দেখতে দেখতে তিনি রাস্তা ছেড়ে জঙ্গলে ঢুকে হাওয়া হয়ে গেলেন। এভাবে লোকটিকে ধোঁকা দিয়ে তিনি আবার সেই রাস্তায় ফিরে পোঁটলাটা রাস্তার মাঝখানে রেখে একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে রইলেন। এদিকে লোকটিও কিছুক্ষণ পরে সেখানে এসে হাজির। তাকে এখন আগের চেয়েও বেশি দুঃখিত দেখাচ্ছে। কিন্তু রাস্তায় তার পোঁটলাটি পড়ে আছে দেখে মহা আনন্দে চিৎকার করে পোঁটলার উপর ঝাপিয়ে পড়লো।
এতক্ষণে সে যেন প্রাণ ফিরে পেলো। গাছের আড়াঁল থেকে নাসিরুদ্দিন বেরিয়ে এসে বললেন, "দুঃখীকে সুখের সন্ধান দেয়ার এও একটা উপায় দেখতে পেলাম, কী বলো ভাইয়া।" এই বলে মোল্লা সাহেব লোকটির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলেন।
১।
সকাল সকাল হোজা চলেছে , বাহন একটি গাধা। পেছন পেছন আরো দুটো গাধা বয়ে নিয়ে আসছে নাসিরুদ্দিনের মালপত্র। সেই দেখে গ্রামের মোড়ল ফুট কাটল, “নিজের বাচ্চাদের নিয়ে চললে কোথায় হোজা”?
অম্লানবদনে জবাব দিল নাসিরুদ্দিন, “পাঠাশালায় নিয়ে যাচ্ছি, সব কটাই মোড়ল হতে চাইছে কিনা”।
২।
নাসিরুদ্দিনের বাড়িতে নাকি চল্লিশ বছরের পুরনো এক বোতল শরাব আছে, এমনতর খবর পেয়ে হোজার পড়শী দৌড়ে গেছে। কড়া নাড়ার শব্দ শুনে হোজা দরজা খুলতেই পড়শীর মিনতি “চল্লিশ বছরের শরাব একটু পেতে পারি জনাব?”। গম্ভীরমুখে নাসিরুদ্দিন জানাল “সে শরাব আছে বটে আমার কাছে তবে দেওয়া টেওয়া যাবে না”। পড়শীর বিরস বদন দেখে হোজা বললে, “চাইলেই পাওয়া গেলে কি ‘চল্লিশ বছরের শরাব’ তৈরী হত?”।
৩।
নিজের পোষা মুরগীটাকে বাজারে বিক্রি করার মতলব নাসিরুদ্দিনের, কিন্তু সে মুরগী ধরা দিতে চায় না কিছুতেই। শেষমেশ কয়লার গাদার মধ্যে অনেক হুটোপাটি করে তাকে ধরা হল, মাঝখান থেকে কয়লার গুঁড়োয় গেল মুরগীর রঙ কালো হয়ে।
বাজারে পাওয়া গেল এক খদ্দের কিন্তু সে অনেক দেখে টেখে হোজাকে জানাল, “মুরগীটা সাদা হলে তবেই না নিতাম! কালো মুরগী চাই না”। শোনা মাত্র নাসিরুদ্দিন দিয়েছে মুরগীকে এক রাম চিমটি, মুরগী কোঁকর কোঁ করে ঝটপটিয়ে উঠেছে, আর কয়লার গুঁড়োর মধ্যে দিয়ে বেরিয়ে পড়েছে একটু সাদা রং ।
“তোমার জন্য রঙ অবধি বদলে ফেলছে এ মুরগী, তুমি মুরগী না চাইলে কি হবে মুরগী কিন্তু তোমাকে চায়” – জানাল নাসিরুদ্দিন।
৪।
বাজারে ঘুরতে ঘুরতে হোজা দেখে একটা পুঁচকে পাখির দাম উঠল দশ মোহর। সেই দেখে দৌড়ে বাড়ি এসে নিজের পোষা টার্কি টা কে নিয়ে ফের বাজারে গেল নাসিরুদ্দিন, দর চাইল কুড়ি মোহর। বাজারের লোকেরা বলল, “কি যে বল হোজা, একটা টার্কির দাম কখনো কুড়ি মোহর হয়?” নাসিরুদ্দিন তর্ক জুড়ে দিল, “অতটুকু ছোট একটা পাখির দাম দশ মোহর হলে আমার এই প্রমাণ সাইজ টার্কিটার দাম বেশক্ কুড়ি মোহর”। “বলো কি হোজা, ও তো কথা বলা টিয়া – ওর দাম তো দশ মোহর উঠবেই”। “কিন্তু সে টিয়া তো আমার টার্কির মতন চিন্তা করতে পারে না”।
৫।
একদিন আড্ডার মধ্যে সবাই মিলে হোজাকে শুধোল, “নাসিরুদ্দিন, তোমার ক’জন সত্যিকারের দোস্ত আছে?” “এ বছর সেটা বলা মুশকিল খুব”, জানাল হোজা। সবাই তো অবাক, “কেন কেন, এ বছর বলা যাবে না কেন?” “আর বোলো না, এ বছর আমার ক্ষেতে বিস্তর ফসল হয়েছে যে”।
৬।
নাসিরুদ্দিনের নাপিত দাড়ি কামাতে গেলেই হোজার গাল কেটে ফেলে, সে এক মহা সমস্যা। একদিন দাড়ি কামানোর সময় শোনা গেল বিকট শব্দ, নাপিত-ও চমকে উঠে দিয়েছে ক্ষুরের এক লম্বা টান। যন্ত্রণা সহ্য করে নাসিরুদ্দিন জিজ্ঞাসা করল, “কিসের শব্দ হে?”। “ঘোড়ার পায়ে নাল পরাচ্ছে তো, তাই ঘোড়াটা চেঁচাচ্ছে” – জানাল নাপিত। “তাই বলো, আমি ভাবলাম কেউ দাড়ি কাটাচ্ছে বোধ হয়”।
৭।
আজান পড়তে পড়তেই একজন প্রাণপণে দৌড়চ্ছিল। মাথামুন্ডু বুঝতে না পেরে সবাই এসে নাসিরুদ্দিনকে শুধোল ব্যাপারটা কি। ক্ষণেক মাথা চুলকে নাসিরুদ্দিন জানাল, “ও দেখতে চায় ওর গলার স্বর কতদূর অবধি পৌঁছয়”।
৮।
“তোমার কি মনে হয় হোজা, গ্রামের আগা সাহেব স্বর্গে যাবে না নরকে?” নাসিরুদ্দিনকে দেখে সবাই একসঙ্গে জিজ্ঞাসা করে উঠল। নাসিরুদ্দিন ভারিক্কী চালে জবাব দিল, “কোত্থাও না, এখানেই থাকবে”। “সে আবার কি?”, সবাই ভারী অবাক। “আরে, কফিনে ঢোকার জন্য ঠিক একটা গরীবকে পেয়ে যাবে আগা, খুব চিনি ওকে।”
৯।
চমৎকার একটা বিকালে মাঠে শুয়ে শুয়ে চারপাশ দেখছিল আমাদের হোজা – পাশেই একটা গরু চরছে আর উড়ে বেড়াচ্ছে একটা কাক। দেখে ঈশ্বরের কাছে অনুযোগ জানাল নাসিরুদ্দিন, “এ তোমার কেমনধারা বিচার! কাক তো কোনো কাজেই আসে না কিন্তু ওকে দিলে উড়তে, আর যে এত কাজে আসে তাকে আটকে রাখলে মাটিতে”। বলতে বলতেই সেই কাক বিষ্ঠা ত্যাগ করেছে নাসিরুদ্দিনের ওপর। নাসিরুদ্দিন ভারী অবাক হয়ে বলল, “তোমার বিচার নিয়ে আর কোনো প্রশ্ন নয় খোদা! ভাগ্যিস, গরু ওড়ে না”।
১০।
ঝমঝম করে বৃষ্টি নেমেছে, নাসিরুদ্দিন জানলার পাশে বসে তাই দেখছিল – চোখে পড়ল এক পড়শী পড়ি কি মড়ি করে দৌড়চ্ছে। হোজা ডাক ছাড়ল, “কি হে, এত দৌড়ও কেন?” “দেখতে পাও না নাকি হোজা? বৃষ্টি পড়ছে যে, ভিজে মরব নাকি?”
নাসিরুদ্দিন গম্ভীর হয়ে বলল, “বৃষ্টি হল আল্লার আশীর্বাদ, তার থেকে এরকম ভাবে দৌড়ে পালানো কি ঠিক?”
পড়শী পড়ল লজ্জায়, দৌড় থামিয়ে চুপচুপে ভিজে ফিরল বাড়ি।
পরের দিন-ও বৃষ্টি, এদিন কিন্তু পড়শী বাড়ির ভেতরে, দেখে নাসিরুদ্দিন তড়িঘড়ি করে দৌড়চ্ছে। পড়শী হেঁকে বলল, “কি গো, নিজের উপদেশ যে ভুলে গেলে বড়?” পা চালাতে চালাতে নাসিরুদ্দিনের জবাব, “আমি তো শুধু চেষ্টা করছি ঈশ্বরের আশীর্বাদের ওপর পা না ফেলতে”।
১১।
সুলতানের নতুন চাকর চাই কিন্তু পছন্দ হচ্ছে না কাউকেই, লাইন ধরে বাতিল করে যাচ্ছেন সবাইকেই। রাজদরবারে সেদিন হোজা-ও উপস্থিত, আর থাকতে না পেরে বলল, “জাহাঁপনা, শেষের জন কিন্তু দিব্যি ছিল”।
“ও হাসার সময় বত্রিশ পাটি বার করে রেখেছিল যে, পছন্দ হয় নি মোটেই” – বিরস বদনে জানালেন সুলতান।
মাথা নেড়ে নাসিরুদ্দিন বলল, “নিশ্চিন্ত থাকুন, আপনার কাজ শুরু করে দিলে বত্রিশ পাটির একটিও বেরোবে না”।
১২।
নিজের ক্ষেতে কাজ করছিল আমাদের হোজা। এমন সময় কে একজন হেঁকে বলল, “পাশের গাঁয়ে যেতে কতক্ষণ লাগবে বাপু?” কোনো উত্তর নেই। আবার প্রশ্ন করল সে, আবারো কোনো উত্তর নেই। বার বার তিনবার হওয়ার পর রেগেমেগে সে ব্যক্তি হাঁটা লাগাল।
এবার নাসিরুদ্দিন পেছন থেকে ডেকে বলল, “ঘন্টা তিনেক মতন লাগবে।”
“তুমি কি আমার সঙ্গে মস্করা করছ নাকি? এতক্ষণ ধরে জবাব দিলে না যে বড় আর এখন পিছু ডাকছ।”
নাসিরুদ্দিন হাতের কাজ সারতে সারতে বলল, “তোমার হাঁটা না দেখলে কি করে জানব কতক্ষণ লাগবে”।
১৩।
শিকার করে ফিরছিলেন সুলতান, দেখেন কনকনে শীতের দিনে হোজা একটা পাতলা জামা গায়ে বেড়াতে বেরিয়েছে।
“কি ব্যাপার হে ? পুরু পশমের জামা পরে আমি কেঁপে যাচ্ছি আর এত পাতলা জামা পরেও তোমার কোনো হেলদোল নেই। রহস্যটা কি?”
“আজ্ঞে আপনার যত কটা জামা আছে তার সবগুলো পরে ফেললেই ল্যাঠা চুকে যেত, ঠান্ডা লাগত না মোটেই; আমি তো তাই করেছি”, হেসে জানাল নাসিরুদ্দিন।
১৪।
রাজদরবারে পৌঁছে সুলতান দেখেন হোজা খুব মন দিয়ে সভাসদদের সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত।
সুলতানের একটু পেছনে লাগার ইচ্ছে হল, সবাইকে ডেকে বললেন “ওহে, নাসিরুদ্দিন বড় মিথ্যা কথা বলে, ওর কথা শুনো না”।
নাসিরুদ্দিন সম্মতি জানিয়ে বলল, “যা বলেছেন খোদাবন্দ, আপনার দরবারে ন্যায়বিচার পাওয়া কত সহজ সে কথাই জানাচ্ছিলাম”।
১৫।
পড়শীর বাড়ির পাশ দিয়ে যেতে যেতে নাসিরুদ্দিনের কানে আওয়াজ এল, জানলার দিকে সরে গিয়ে দেখে পড়শী বিছানায় শুয়ে প্রার্থনা করছে “হে আল্লা, আমাকে স্বর্গের পথ দেখাও”।
সেই দেখে নিজের বাড়িতে ফিরে এসে হোজা বাড়ির চালের উপর উঠে “কই রে, কই” বলে চিৎকার শুরু করে দিল।
চেঁচামেচিতে বিরক্ত হয়ে এবার পড়শী বেরিয়ে এসেছে, “সকাল সকাল এত হট্টগোল কিসের?”
“আরে, আমার গাধা টাকে খুঁজে পাচ্ছি না যে”।
পড়শী আরো বিরক্ত হয়ে বলল, “তোমার মাথা খারাপ নাকি! বাড়ির চালে গাধা খুঁজছ?”
“তুমি বাড়ির বিছানায় স্বর্গ খুঁজতে পারো আর আমি বাড়ির চালে গাধা খুঁজলেই দোষ?” শান্ত স্বরে উত্তর নাসিরুদ্দিনের।
বেড়াল ও মোল্লা
মোল্লার মাংস খাওয়ার ইচ্ছা হওয়ায় বাজার থেকে এক সের খাসির মাংস কিনে বাড়িতে এনে বললেন," বেশ ভাল করে রাঁধো অনেকদিন মাংস খাইনি।'
মোল্লাহর বিবিও অনেকদিন মাংস খাননি। রাঁধার পর একটু একটু করে খেতে খেতে সবটা মাংসই খেয়ে ফেললেন তিনি।
মোল্লা খেতে বসলে তাঁর বিবি মুখ কাঁচুমাচু করে বললেন, "আজ আর তোমার বরাতে মাংস নেই, সব মাংস বেড়ালে খেয়ে ফেলেছে।"
'পুরো এক সের মাংসই বেড়াল খেয়ে ফেললো?'
'হ্যাঁ'
মোল্লার সঙ্গে চালাকি? তখনই বেড়ালটাকে দাঁড়িপাল্লায় ওজন করে দেখলেন বেড়ালটার ওজন ঠিক এক সের।
মোল্লা বললেন,"এটাই যদি সেই বেড়াল হয়, সেই মাংস হয়, তাহলে বেড়ালটা গেল কোথায়?'
বিবি বুঝলেন আর যাই হোক মোল্লার সাথে চালাকি করে পার পাওয়া যাবে না।
হেকিম সাহেব
নাসিরুদ্দিন জীবনে অনেক কিছু করেছেন তাই তাঁর অভিজ্ঞতার জুলি অনেক বড়। একবার এক বৃদ্ধের বাড়িতে চাকরের কাজ নিয়েছেন। বৃদ্ধের যা কিছু কাজ তাঁকেই করতে হয়।
সেই বৃদ্ধ একদিন নাসিরুদ্দিনকে ডেকে বললেন, 'তুমি কাজে এত ঢিলে কেন? একবারে যেখানে কয়েকটা কাজ করা যায় তুমি সেখানে বারেবারে করো। এবার থেকে সব কাজ একসঙ্গে করে আসবে, এভাবে সময় নষ্ট করবে না।"
একদিন বৃদ্ধ শয্যা নিলেন। অবস্থা খুবই খারাপ।
তিনি নাসিরুদ্দিনকে বললেন, হেকিমকে ডেকে আনতে।
বৃদ্ধের কথামতো নাসিরুদ্দিন হেকিম ডাকতে বেরোলেন।
বেরিয়েছেন তো বেরিয়েছেন, ফেরার নাম নেই। অনেক সময় কাটিয়ে নাসিরুদ্দিনফিরলেন সঙ্গে অনেক লোকজন নিয়ে।
'কী ব্যাপার? হেকিম কোথায়? এত লোক দিয়ে কি হবে?'
' আজ্ঞে, হেকিম যা চাইবেন তার জন্য লোকের দরকার হবে। আপনার শেষ সময় উপস্থিত হলে কোরআন পড়ার জন্য লোক দরকার হবে। আর আপনার মৃত্যু হলে কবরখানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য লোকের দরকার হবে।'
সুখের সন্ধানে
এক লোকের বউয়ের সাথে খুব ঝগড়াঝাটি হতো। বঊটি ছিলো ভীষণ ঝগড়াটে।কোনদিন সে তার স্বামীকে সুখে থাকতে দিতো না।
একদিন সেই ভদ্রলোক কোন উপায় না দেখে কিছু পয়সা ও জামাকাপড় পোঁটলায় বেঁধে কোথাও চলে যাওয়ার জন্য মনস্থ করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লো।
নাসিরুদ্দিন সেই লোকটিকে মুখ ভার করে রাস্তার ধারে এমনভাবে বসে থাকতে দেখে প্রশ্ন করলেন, ' তোমার কী হয়েছে? কেন তুমি এমনভাবে রাস্তার ধারে বসে আছো?'
লোকটি বললো, 'জীবন একেবারে বিষের মত হয়ে গেছে আমার স্ত্রীর জন্য মোল্লা সাহেব! হাতে কিছু পয়সা আছে বটে কিন্তু মনে সুখ নেই। তাই দেশে দেশে ঘুরতে বেরিয়েছি। যেখানে কোন সুখের সন্ধান পাব, সেখানেই থেকে যাবো।'
লোকটির পাশে তার পোঁটলায় টাকাকড়ি জিনিসপত্র সব রাখা ছিলো। তার কথা শেষ হতে না হতেই নাসিরুদ্দিন সেই বোঁচকাটা নিয়ে দৈড়ে পালাতে লাগলেন। মোল্লাকে পোঁটলাটা নিয়ে পালিয়ে যেতে দেখে লোকটিও তার পেছনে প্রাণপণ দৌড়াতে লাগলো। কিন্তু মোল্লা খুব দৌড়াতে পারতেন এবংন বুদ্ধিও আছে- এমন অবস্থায় নাসিরুদ্দিনকে ধরে কার সাধ্য! দেখতে দেখতে তিনি রাস্তা ছেড়ে জঙ্গলে ঢুকে হাওয়া হয়ে গেলেন।
এভাবে লোকটিকে ধোঁকা দিয়ে তিনি আবার সেই রাস্তায় ফিরে পোঁটলাটা রাস্তার মাঝখানে রেখে একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে রইলেন।
এদিকে লোকটিও কিছুক্ষণ পরে সেখানে এসে হাজির। তাকে এখন আগের চেয়েও বেশি দুঃখিত দেখাচ্ছে। কিন্তু রাস্তায় তার পোঁটলাটি পড়ে আছে দেখে মহা আনন্দে চিৎকার করে পোঁটলার উপর ঝাপিয়ে পড়লো। এতক্ষণে সে যেন প্রাণ ফিরে পেলো।
গাছের আড়াঁল থেকে নাসিরুদ্দিন বেরিয়ে এসে বললেন, "দুঃখীকে সুখের সন্ধান দেয়ার এও একটা উপায় দেখতে পেলাম, কী বলো ভাইয়া।"
এই বলে মোল্লা সাহেব লোকটির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলেন।
নাসিরুদ্দীন হোজ্জা খুব যত্ন করে একটা খাসি পুষতেন। নাদুসনুদুস সেই খাসিটার ওপর পড়শিদের খুব লোভ_আহা! কবে যে এর মাংস খাওয়া যাবে!
একদিন কয়েকজন লোভী পড়শি শলাপরামর্শ করে জোট বেঁধে এল হোজ্জার বাড়িতে। হোজ্জাকে ডেকে বলল, 'ও মোল্লা সাহেব, বড়ই দুঃসংবাদ। আগামীকাল নাকি এ দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে। হায়! এত সাধের বাড়িঘর, সহায়সম্পদ, এমনকি তোমার ওই প্রিয় খাসিটাও থাকবে না, সব শেষ হয়ে যাবে।' হোজ্জা বুঝলেন তাদের মতলবখানা কী? তিনি মুচকি হেসে পড়শিদের বললেন, 'তবে খাসিটাকেও ধ্বংস করা হোক। দুনিয়া ধ্বংসের আগে এসো একে জবাই করে খেয়ে ফেলি।'
পড়শিরা তো এ সুযোগের অপেক্ষায়ই ছিল। খাসি জবাই করে মহা ধুমধামে রান্না করে পেট পুরে খেলো। তারপর গায়ের জামা খুলে আরাম করে সবাই ঘুমিয়ে পড়ল হোজ্জারই বৈঠকখানায়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে সবাই দেখে তাদের জামা উধাও। খালি গায়ে সারা ঘর তন্নতন্ন করে জামা খুঁজতে লাগল তারা। হোজ্জা তখন বললেন, 'ভাইয়েরা, দুনিয়াই যদি ধ্বংস হয়ে যায়, জামা দিয়ে কী হবে? তাই তোমরা ঘুমানোর পর আমি সবার জামা আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করে ফেলেছি!'
টকার ঝনঝনানী
একদিন নাসিরউদ্দিন হোজ্জা একটি মিষ্টির দোকানের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ মিষ্টির দিকে চোখ পড়াতে তার খেতে ইচ্ছে হলেও টাকা না থাকায় শুধু মিষ্টির ঘ্রাণ নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। কিন্তু দায় সাধল দোকানদার। তিনি মিষ্টির ঘ্রাণ নেওয়াতে হোজ্জার কাছে তার দাম চাইলেন। হোজ্জা পরে দিবেন বলে সেদিনের মত চলে আসলেন। পরের দিন তিনি কিছু মুদ্রার কয়েন থলেতে নিয়ে তার দোকানে গেলেন এবং ঝাঁকাতে শুরু করলেন। দোকারদার বললেন দাও আমার টাকা দাও। হোজ্জা উত্তরে বললেন টাকার ঝনঝনানি শুনতে পাচ্ছেন না? দোকারনদার বললেন হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি। হোজ্জা বললেন তো শোধ হয়ে গেল।
কে অপয়া?
শিকারে বেরিয়েছেন রাজা। যাত্রাপথে প্রথমেই পড়ে গেলেন নাসিরুদ্দীন হোজ্জার সামনে। রাজা ক্ষেপে গেলেন। পাইক-পেয়াদারের ডেকে বললেন, 'হোজ্জা একটা অপয়া। যাত্রাপথে ওকে দেখলাম, আজ নির্ঘাত আমার শিকার পণ্ড। ওকে চাবুক মেরে দূর করে দাও।'
রাজার হুকুম তামিল হলো। কিন্তু সেদিন রাজার শিকারও জমে উঠলো বেশ। গুণে গুণে ছাবি্বশটা নাদুসনুদুস হরিণ মারলেন তিনি।
প্রাসাদে ফিরে রাজা অনুতপ্ত হয়ে ডেকে পাঠালেন হোজ্জাকে। হোজ্জা দরবারে আসতেই রাজা বললেন, 'কিছু মনে কোরো না, আমি তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম। ভেবেছিলাম তুমি অপয়া, আমার শিকার জুটবে না। কিন্তু এখন দেখছি আমার ধারণা উল্টো।'
'উল্টো তো বটেই।' এবার মওকা পেয়ে হোজ্জাও রাগ দেখাল। 'আপনি আমাকে অপয়া ভেবেছিলেন। অথচ দেখুন, আমাকে দেখার পর আপনি ছাবি্বশটা হরিণ পেলেন, আর আপনাকে দেখে আমি খেলাম বিশ ঘা চাবুক। তাহলে অপয়া যে কে, সেটা বুঝতে পেরেছেন তো?'
মূর্খ!
এক তর্কবাগীশের সঙ্গে কোনো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতানৈক্য দেখা দিল নাসিরুদ্দীন হোজ্জার। শেষে স্থির হলো দুজনের মধ্য ওই বিষয়ে তর্কযুদ্ধ হবে। যে জিতবে, তার মতটাকেই মেনে নিতে হবে অপরজনকে। এরপর তর্কবাগীশ যতই হোজ্জাকে খুঁজেন, হোজ্জা ততই পালিয়ে বেড়াতে লাগলেন। শেষে রেগেমেগে তর্ববাগীশ খবর পাঠালেন তিনি হোজ্জার বাড়িতেই যাবেন বিতর্কের মাধ্যমে ব্যাপারটার ফয়সালা করে ফেলতে। নির্দিষ্ট দিনে এসে দেখেন- হোজ্জা আগেই কেটে পড়েছেন, সদর দরজায় তোলা। মহা বিরক্ত হয়ে তর্কবাগীশ দরজার উপরে চক দিয়ে বড় করে লিখে গেলেন 'মূর্খ'।
সারা দিন টো টো করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলেন হোজ্জা। দরজার দিকে চোখ পড়তেই তিনি জিভ কাটলেন। তারপর সোজা দৌড়ে গেলেন তর্কবাগীশের বাড়ি। বিনয়ের সঙ্গে বললেন, 'মাফ করবেন পণ্ডিতমশাই, আমি বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম যে আপনি আমার বাড়িতে আসবেন। মনে থাকলে কী আর বাইরে বেরোই? কিন্তু দিনের শেষে বাড়ি ফিরে দেখি আমার দরজায় আপনার নামটা লিখে এসেছেন। তখুনি আমার মনে পড়ল আপনার কথা!'
মোল্লার মাংস খাওয়ার ইচ্ছা হওয়ায় বাজার থেকে এক সের খাসির মাংস কিনে বাড়িতে এনে বললেন," বেশ ভাল করে রাঁধো অনেকদিন মাংস খাইনি।'
মোল্লাহর বিবিও অনেকদিন মাংস খাননি। রাঁধার পর একটু একটু করে খেতে খেতে সবটা মাংসই খেয়ে ফেললেন তিনি।
মোল্লা খেতে বসলে তাঁর বিবি মুখ কাঁচুমাচু করে বললেন, "আজ আর তোমার বরাতে মাংস নেই, সব মাংস বেড়ালে খেয়ে ফেলেছে।"
'পুরো এক সের মাংসই বেড়াল খেয়ে ফেললো?'
'হ্যাঁ'
মোল্লার সঙ্গে চালাকি? তখনই বেড়ালটাকে দাঁড়িপাল্লায় ওজন করে দেখলেন বেড়ালটার ওজন ঠিক এক সের।
মোল্লা বললেন,"এটাই যদি সেই বেড়াল হয়, সেই মাংস হয়, তাহলে বেড়ালটা গেল কোথায়?'
বিবি বুঝলেন আর যাই হোক মোল্লার সাথে চালাকি করে পার পাওয়া যাবে না।
হেকিম সাহেব
নাসিরুদ্দিন জীবনে অনেক কিছু করেছেন তাই তাঁর অভিজ্ঞতার জুলি অনেক বড়। একবার এক বৃদ্ধের বাড়িতে চাকরের কাজ নিয়েছেন। বৃদ্ধের যা কিছু কাজ তাঁকেই করতে হয়।
সেই বৃদ্ধ একদিন নাসিরুদ্দিনকে ডেকে বললেন, 'তুমি কাজে এত ঢিলে কেন? একবারে যেখানে কয়েকটা কাজ করা যায় তুমি সেখানে বারেবারে করো। এবার থেকে সব কাজ একসঙ্গে করে আসবে, এভাবে সময় নষ্ট করবে না।"
একদিন বৃদ্ধ শয্যা নিলেন। অবস্থা খুবই খারাপ।
তিনি নাসিরুদ্দিনকে বললেন, হেকিমকে ডেকে আনতে।
বৃদ্ধের কথামতো নাসিরুদ্দিন হেকিম ডাকতে বেরোলেন।
বেরিয়েছেন তো বেরিয়েছেন, ফেরার নাম নেই। অনেক সময় কাটিয়ে নাসিরুদ্দিনফিরলেন সঙ্গে অনেক লোকজন নিয়ে।
'কী ব্যাপার? হেকিম কোথায়? এত লোক দিয়ে কি হবে?'
' আজ্ঞে, হেকিম যা চাইবেন তার জন্য লোকের দরকার হবে। আপনার শেষ সময় উপস্থিত হলে কোরআন পড়ার জন্য লোক দরকার হবে। আর আপনার মৃত্যু হলে কবরখানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য লোকের দরকার হবে।'
সুখের সন্ধানে
এক লোকের বউয়ের সাথে খুব ঝগড়াঝাটি হতো। বঊটি ছিলো ভীষণ ঝগড়াটে।কোনদিন সে তার স্বামীকে সুখে থাকতে দিতো না।
একদিন সেই ভদ্রলোক কোন উপায় না দেখে কিছু পয়সা ও জামাকাপড় পোঁটলায় বেঁধে কোথাও চলে যাওয়ার জন্য মনস্থ করে রাস্তায় বেরিয়ে পড়লো।
নাসিরুদ্দিন সেই লোকটিকে মুখ ভার করে রাস্তার ধারে এমনভাবে বসে থাকতে দেখে প্রশ্ন করলেন, ' তোমার কী হয়েছে? কেন তুমি এমনভাবে রাস্তার ধারে বসে আছো?'
লোকটি বললো, 'জীবন একেবারে বিষের মত হয়ে গেছে আমার স্ত্রীর জন্য মোল্লা সাহেব! হাতে কিছু পয়সা আছে বটে কিন্তু মনে সুখ নেই। তাই দেশে দেশে ঘুরতে বেরিয়েছি। যেখানে কোন সুখের সন্ধান পাব, সেখানেই থেকে যাবো।'
লোকটির পাশে তার পোঁটলায় টাকাকড়ি জিনিসপত্র সব রাখা ছিলো। তার কথা শেষ হতে না হতেই নাসিরুদ্দিন সেই বোঁচকাটা নিয়ে দৈড়ে পালাতে লাগলেন। মোল্লাকে পোঁটলাটা নিয়ে পালিয়ে যেতে দেখে লোকটিও তার পেছনে প্রাণপণ দৌড়াতে লাগলো। কিন্তু মোল্লা খুব দৌড়াতে পারতেন এবংন বুদ্ধিও আছে- এমন অবস্থায় নাসিরুদ্দিনকে ধরে কার সাধ্য! দেখতে দেখতে তিনি রাস্তা ছেড়ে জঙ্গলে ঢুকে হাওয়া হয়ে গেলেন।
এভাবে লোকটিকে ধোঁকা দিয়ে তিনি আবার সেই রাস্তায় ফিরে পোঁটলাটা রাস্তার মাঝখানে রেখে একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে রইলেন।
এদিকে লোকটিও কিছুক্ষণ পরে সেখানে এসে হাজির। তাকে এখন আগের চেয়েও বেশি দুঃখিত দেখাচ্ছে। কিন্তু রাস্তায় তার পোঁটলাটি পড়ে আছে দেখে মহা আনন্দে চিৎকার করে পোঁটলার উপর ঝাপিয়ে পড়লো। এতক্ষণে সে যেন প্রাণ ফিরে পেলো।
গাছের আড়াঁল থেকে নাসিরুদ্দিন বেরিয়ে এসে বললেন, "দুঃখীকে সুখের সন্ধান দেয়ার এও একটা উপায় দেখতে পেলাম, কী বলো ভাইয়া।"
এই বলে মোল্লা সাহেব লোকটির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চলে গেলেন।
প্রলয়কাণ্ড
নাসিরুদ্দীন হোজ্জা খুব যত্ন করে একটা খাসি পুষতেন। নাদুসনুদুস সেই খাসিটার ওপর পড়শিদের খুব লোভ_আহা! কবে যে এর মাংস খাওয়া যাবে!
একদিন কয়েকজন লোভী পড়শি শলাপরামর্শ করে জোট বেঁধে এল হোজ্জার বাড়িতে। হোজ্জাকে ডেকে বলল, 'ও মোল্লা সাহেব, বড়ই দুঃসংবাদ। আগামীকাল নাকি এ দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে। হায়! এত সাধের বাড়িঘর, সহায়সম্পদ, এমনকি তোমার ওই প্রিয় খাসিটাও থাকবে না, সব শেষ হয়ে যাবে।' হোজ্জা বুঝলেন তাদের মতলবখানা কী? তিনি মুচকি হেসে পড়শিদের বললেন, 'তবে খাসিটাকেও ধ্বংস করা হোক। দুনিয়া ধ্বংসের আগে এসো একে জবাই করে খেয়ে ফেলি।'
পড়শিরা তো এ সুযোগের অপেক্ষায়ই ছিল। খাসি জবাই করে মহা ধুমধামে রান্না করে পেট পুরে খেলো। তারপর গায়ের জামা খুলে আরাম করে সবাই ঘুমিয়ে পড়ল হোজ্জারই বৈঠকখানায়।
সকালে ঘুম থেকে উঠে সবাই দেখে তাদের জামা উধাও। খালি গায়ে সারা ঘর তন্নতন্ন করে জামা খুঁজতে লাগল তারা। হোজ্জা তখন বললেন, 'ভাইয়েরা, দুনিয়াই যদি ধ্বংস হয়ে যায়, জামা দিয়ে কী হবে? তাই তোমরা ঘুমানোর পর আমি সবার জামা আগুনে পুড়িয়ে ধ্বংস করে ফেলেছি!'
টকার ঝনঝনানী
একদিন নাসিরউদ্দিন হোজ্জা একটি মিষ্টির দোকানের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন। হঠাৎ মিষ্টির দিকে চোখ পড়াতে তার খেতে ইচ্ছে হলেও টাকা না থাকায় শুধু মিষ্টির ঘ্রাণ নিয়ে চলে যাচ্ছিলেন। কিন্তু দায় সাধল দোকানদার। তিনি মিষ্টির ঘ্রাণ নেওয়াতে হোজ্জার কাছে তার দাম চাইলেন। হোজ্জা পরে দিবেন বলে সেদিনের মত চলে আসলেন। পরের দিন তিনি কিছু মুদ্রার কয়েন থলেতে নিয়ে তার দোকানে গেলেন এবং ঝাঁকাতে শুরু করলেন। দোকারদার বললেন দাও আমার টাকা দাও। হোজ্জা উত্তরে বললেন টাকার ঝনঝনানি শুনতে পাচ্ছেন না? দোকারনদার বললেন হ্যাঁ শুনতে পাচ্ছি। হোজ্জা বললেন তো শোধ হয়ে গেল।
কে অপয়া?
শিকারে বেরিয়েছেন রাজা। যাত্রাপথে প্রথমেই পড়ে গেলেন নাসিরুদ্দীন হোজ্জার সামনে। রাজা ক্ষেপে গেলেন। পাইক-পেয়াদারের ডেকে বললেন, 'হোজ্জা একটা অপয়া। যাত্রাপথে ওকে দেখলাম, আজ নির্ঘাত আমার শিকার পণ্ড। ওকে চাবুক মেরে দূর করে দাও।'
রাজার হুকুম তামিল হলো। কিন্তু সেদিন রাজার শিকারও জমে উঠলো বেশ। গুণে গুণে ছাবি্বশটা নাদুসনুদুস হরিণ মারলেন তিনি।
প্রাসাদে ফিরে রাজা অনুতপ্ত হয়ে ডেকে পাঠালেন হোজ্জাকে। হোজ্জা দরবারে আসতেই রাজা বললেন, 'কিছু মনে কোরো না, আমি তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম। ভেবেছিলাম তুমি অপয়া, আমার শিকার জুটবে না। কিন্তু এখন দেখছি আমার ধারণা উল্টো।'
'উল্টো তো বটেই।' এবার মওকা পেয়ে হোজ্জাও রাগ দেখাল। 'আপনি আমাকে অপয়া ভেবেছিলেন। অথচ দেখুন, আমাকে দেখার পর আপনি ছাবি্বশটা হরিণ পেলেন, আর আপনাকে দেখে আমি খেলাম বিশ ঘা চাবুক। তাহলে অপয়া যে কে, সেটা বুঝতে পেরেছেন তো?'
মূর্খ!
এক তর্কবাগীশের সঙ্গে কোনো একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতানৈক্য দেখা দিল নাসিরুদ্দীন হোজ্জার। শেষে স্থির হলো দুজনের মধ্য ওই বিষয়ে তর্কযুদ্ধ হবে। যে জিতবে, তার মতটাকেই মেনে নিতে হবে অপরজনকে। এরপর তর্কবাগীশ যতই হোজ্জাকে খুঁজেন, হোজ্জা ততই পালিয়ে বেড়াতে লাগলেন। শেষে রেগেমেগে তর্ববাগীশ খবর পাঠালেন তিনি হোজ্জার বাড়িতেই যাবেন বিতর্কের মাধ্যমে ব্যাপারটার ফয়সালা করে ফেলতে। নির্দিষ্ট দিনে এসে দেখেন- হোজ্জা আগেই কেটে পড়েছেন, সদর দরজায় তোলা। মহা বিরক্ত হয়ে তর্কবাগীশ দরজার উপরে চক দিয়ে বড় করে লিখে গেলেন 'মূর্খ'।
সারা দিন টো টো করে সন্ধ্যায় বাড়ি ফিরলেন হোজ্জা। দরজার দিকে চোখ পড়তেই তিনি জিভ কাটলেন। তারপর সোজা দৌড়ে গেলেন তর্কবাগীশের বাড়ি। বিনয়ের সঙ্গে বললেন, 'মাফ করবেন পণ্ডিতমশাই, আমি বেমালুম ভুলে গিয়েছিলাম যে আপনি আমার বাড়িতে আসবেন। মনে থাকলে কী আর বাইরে বেরোই? কিন্তু দিনের শেষে বাড়ি ফিরে দেখি আমার দরজায় আপনার নামটা লিখে এসেছেন। তখুনি আমার মনে পড়ল আপনার কথা!'
মোল্লার সুফী দর্শন - মোল্লা নাসিরউদ্দিন
মোল্লা নাসিরুদ্দিন মুফী-দার্শনিক বলে নিজেকে জাহির করতেন একদিন
অন্য এক সুফী মোল্লাকে নিজের পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আমার এ সংসারে কোনো-কিছুর
প্রতি মোহ নেই। আমি নির্বিকার। শুধু পরের কথাই ভাবি।’
মোল্লার উত্তর, ‘আমি কিন্তু ভাই একেবারে নিরপেক্ষ। সব সময়ে নিজেকে
পর বলে ভাবি। আর, সে-জন্যে নিজের উপকার করতে আমার একটুও আটকায় না।’
পানির সমস্যার সমাধান - মোল্লা নাসিরউদ্দিন
দুর্দান্ত গরম পড়েছে। ওদিকে মেঘের দেখা নেই। কবে বৃষ্টি হবে কে
জানে, কুয়োর জল একেবারে নীচে ঠেকেছে, সবাই কাদাগোলা জল ব্যবহার করতে বাধ্য
হচ্ছে।
এমন সময় গ্রামবাসীরা মোল্লার মত এক বিজ্ঞ, জ্ঞানীজনের পরামর্শ চাইতে আসে।
‘অঃ, এই ব্যাপার ! ঠিক আছে, আগে বাজার থেকে একটা বড় দেখে সাবান এনে দাও দেখি।’
একজন ছুটে গিয়ে নিজের ট্যাঁকের পয়সা খরচ করে ইয়া বড় এক সাবান কিনে আনে।
এরপর মোল্লা বাড়ীর ভেতর গিয়ে বহুদিনের পুরনো সব জামা কাপড়গুলো বের করে বলেন,—‘এবারে এগুলোতে সাবান মাখাও৷’
—সাবান দেয়া হোল ।
অতঃপর হুকুম, “ভাল করে কেচে রোদে শুকুতে দাও।’
মোল্লা যা-যা পরামর্শ দেন, সবই তামিল করা হলে পর একজন আর থাকতে না
পেরে জিগ্যেস করে,—মোল্লাজী, বৃষ্টির সঙ্গে কাপড়-চোপড় কেচে রোদে দেবার
সম্পর্কটা কি?’
বা-রে, দেখেনি, যেই তুমি কোনোকিছু শুকুতে দেবে, অম্নি বৃষ্টি নেমে
নাজেহাল করবে। তাই তোমরাও অপেক্ষা করতে থাকো। আমি ঘুমুতে যাই।
শিকার - মোল্লা নাসিরউদ্দিন
বাদশা শিকারে নিয়ে গেলেন মোল্লাকে। বাঘ-ভালুকের নাম শুনলেই মোল্লার
জ্বর আসে, তবু কি করেন, যেতেই হোল। —পরদিন ফিরে এলেন বাড়ীতে তাঁর প্রিয়
গাধার পিঠে চড়ে।.
আসামাত্রই পাড়া-প্রতিবেশীরা জড়ো হয়, হৈ-হৈ করে ওঠে।
‘মোল্লাজী, শিকার কেমন হল?’
‘বলার নয়।’
‘আপনি কিছু শিকার করলেন মোল্লাসাহেব?’
‘একটাও না।’
‘কটার পেছনে ধাওয়া করেছিলেন?’
'একটাও না।’
‘ক’টা শিকারের দেখা পেয়েছিলেন?’
‘একটারও না।’
‘তাহলে শিকারটা বলার নয়,—বললেন কেন?’
‘এতক্ষণ সত্যি কথাই তো বলে গেলাম ভাইসব –মোল্লা। বাড়ীতে বিশ্রামের জন্য চলে গেলেন।
দরজা বন্ধ কর - মোল্লা নাসিরউদ্দিন
মোল্লা জানালার ধারে বসে আছেন, এমন সময়ে দেখা গেল একদল লোক কফিনের
লাশ কাঁধে করে গোরস্থানে চলেছে কবর দিতে। আত্মীয়স্বজন, পাড়া প্রতিবেশীরা
শব অমুগমনে যোগ দিয়েছে। একটি স্ত্রীলোকের বিলাপ শোনা যাচ্ছে—‘ওগো, তুমি
আমাদের ছেড়ে কোথায় চললে গো! সেখানে যে অন্ধকার, শুধু অন্ধকার, আলো নেই,
হাওয়া নেই, খাবার নেই গো!’
ঐ বিলাপ শোনামাত্রই মোল্লা গিন্নীকে বললেন, ‘আমি শিগগির সব জানালা বন্ধ করছি, তুমি চট্পট, নীচের দরজাটা বন্ধ করগে।’
কেন, জানালা-দরজা বন্ধ করবো কেন?’
‘দেখ, আমার মনে হয় ওরা এই লাশটা আমার বাড়ীতেই ঢোকাতে চাইছে। যেরকম
জায়গার কথা মেয়েটা বলছে, তা আমার বাড়ী না হয়ে যায় না। শিগগির দরজা
বন্ধ করে।’
ভাগেরটা খেয়ে নিলুম - মোল্লা নাসিরউদ্দিন
মোল্লা তার গিন্নীকে পায়েস তৈরীর মাল-মসলা কিনে এনে বলেন—‘আজ জুং করে পয়েস রাঁধ দেখি। দু’জনেই পেট ভরে খবো?’
রাত্রে মোল্লাগিন্নী এক বাটি পায়েস স্বামীকে দিয়ে এক বাটি নিজের জন্যে তুলে রাখলেন, পরে খাবেন বলে।
মোল্লা শুয়ে পড়ে হঠাৎ গিল্পীকে বলেন—‘শোনো গিন্নী, একটা মজার কথা মনে পড়েছে।’
‘কি গো, কি?’
বলছি, বলছি, তার আগে পায়েসের বার্টিটা আনো দেখি।’
গিন্নী তার ভাগের পায়েসের বাটিটা এনে দেয়া মাত্রই চোঁ চোঁ করে সব
পায়েস চেটেপুটে খেয়ে, মোল্লা আবার লেপমুড়ি দিয়ে শুয়ে পড়েন।
গিন্নী কর্তাকে ধমক লাগান, বাঃ, বেশ তো তুমি? মজার কথাটা কি বললে না? না শোনা পর্যন্ত আমার হয়তো ঘুমই আসবে না রাতে?
‘মজার কথাটা এই, তোমাকে ধাপ্পা দিয়ে কেমন তোমার ভাগেরটাও খেয়ে নিলুম।’
একদা মোল্লা নাসিরউদ্দিন হোজ্জা তার নিজের জন্য একটি জোব্বা কিনতে গেলেন
একটি দোকানে। তো পছন্দ করার পর দোকানী জোব্বা'টা প্যাক করে দেয়। মোল্লা তখন
জোব্বা নিয়ে চলে আসার সময় ভাবলেন জোব্বা না নিয়ে বরং একটি আলখাল্লা নিয়ে
যাই। দোকানীকে বললেন, আপনি বরং আমাকে একটি আলখাল্লা দিন। তো দোকানী
আলখাল্লা দেয়ার পর মোল্লা নাসিরউদ্দিন তা নিয়ে বের হয়ে আসার সময় দোকানী
ডেকে বললেন, হোজ্জা সাহেব আপনিতো আলখাল্লা'র মূল্য পরিশোধ করেননি। তখন
মোল্লা উত্তর দিল আমি তো আলখাল্লা'র পরিবর্তে জোব্বা'টা রেখে গেলাম। তখন
দোকানী বললেন, আপনিতো জোব্বা'র জন্যও মূল্য পরিশোধ করেননি। প্রতি উত্তরে
মোল্লা বললেন, যেটা আমি নেইনি তার জন্য মূল্য পরিশোধ করব কেন।
১…..
হোজ্জা এক বিধবাকে বিয়ে করলেন, বিয়ের পাঁচ
দিন পর নতুন বউ একটি ছেলেসন্তান জন্ম দিল। হোজ্জা তাড়াতাড়ি ঘর থেকে
বেরিয়ে বাজারে গিয়ে স্কুলের ব্যাগ, বই থেকে শুরু করে সব কিনতে শুরু করলেন।
মানুষজন তাঁকে জিজ্ঞেস করল, ‘আপনি এসব কিনছেন কেন?’
জবাবে হোজ্জা বললেন, ‘আমার বাচ্চা যদি নয় মাসের সফর পাঁচ দিনে শেষ করতে পারে, তাহলে তো সে স্কুলে যাওয়ার জন্য যেকোনো সময় প্রস্তুত হতে পারে।’
জবাবে হোজ্জা বললেন, ‘আমার বাচ্চা যদি নয় মাসের সফর পাঁচ দিনে শেষ করতে পারে, তাহলে তো সে স্কুলে যাওয়ার জন্য যেকোনো সময় প্রস্তুত হতে পারে।’
২…….
হোজ্জা একটা স্টল খুলে ওখানে নোটিশ টাঙিয়ে দিলেন।
‘যেকোনো বিষয়ে দুই প্রশ্নের জবাবের বিনিময়ে পাঁচ পাউন্ড।’
একজন পথচারী হন্তদন্ত হয়ে তাঁর কাছে এসে টাকাটা হাতে দিয়ে বলল, ‘দুটো প্রশ্নের জন্য পাঁচ পাউন্ড, একটু বেশি নয় কি?’
‘হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন’, হোজ্জা বললেন, ‘এর পরের প্রশ্ন?’
‘যেকোনো বিষয়ে দুই প্রশ্নের জবাবের বিনিময়ে পাঁচ পাউন্ড।’
একজন পথচারী হন্তদন্ত হয়ে তাঁর কাছে এসে টাকাটা হাতে দিয়ে বলল, ‘দুটো প্রশ্নের জন্য পাঁচ পাউন্ড, একটু বেশি নয় কি?’
‘হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন’, হোজ্জা বললেন, ‘এর পরের প্রশ্ন?’
৩…….
রাজার মেজাজ খারাপ।রাজপ্রাসাদ থেকে বেরিয়ে শিকারে যাওয়ার পথে হোজ্জা সামনে পড়ে গেলেন।
শিকারে যাওয়ার পথে হোজ্জার সামনে পড়ে যাওয়াটা আমার ভাগ্যের জন্য খারাপ, প্রহরীদের রাগত গলায় বললেন রাজা।আমার দিকে ওকে তাকাতে দিয়ো না-চাবুকপেটা করে ওকে পথ থেকে সরিয়ে দাও।
প্রহরীরা তা-ই করল।
শিকার কিন্তু ভালোই হলো।
রাজা হোজ্জাকে ডেকে পাঠালেন।
আমি সত্যি দুঃখিত, হোজ্জা।ভেবেছিলাম তুমি অশুভ।কিন্তু তুমি তা নও।
আপনি ভেবেছিলেন আমি অশুভ!হোজ্জা বললেন।আপনি আমাকে দেখার পর ভালো শিকার করেছেন।আর আমি আপনাকে দেখে চাবুকপেটা খেয়েছি।কে যে কার অশুভ, বুঝলাম না।
শিকারে যাওয়ার পথে হোজ্জার সামনে পড়ে যাওয়াটা আমার ভাগ্যের জন্য খারাপ, প্রহরীদের রাগত গলায় বললেন রাজা।আমার দিকে ওকে তাকাতে দিয়ো না-চাবুকপেটা করে ওকে পথ থেকে সরিয়ে দাও।
প্রহরীরা তা-ই করল।
শিকার কিন্তু ভালোই হলো।
রাজা হোজ্জাকে ডেকে পাঠালেন।
আমি সত্যি দুঃখিত, হোজ্জা।ভেবেছিলাম তুমি অশুভ।কিন্তু তুমি তা নও।
আপনি ভেবেছিলেন আমি অশুভ!হোজ্জা বললেন।আপনি আমাকে দেখার পর ভালো শিকার করেছেন।আর আমি আপনাকে দেখে চাবুকপেটা খেয়েছি।কে যে কার অশুভ, বুঝলাম না।
৪…….
একবার নাসিরুদ্দিন হোজ্জা অসুস্থ।নিজের
গাধাটাকে খাওয়ানোর জন্য বিবিকে বললেন।হোজ্জার বিবি একটু ত্যাদড় টাইপের।সে
গাধা কে খাবার দিতে অস্বীকার করল।দুজনের মধ্যে এই নিয়ে তুমুল ঝগড়া।তারপর
একটা সমঝোতা হল, যে আগে কথা বলবে সে গাধাকে খাওয়াবে।হোজ্জা বাজিতে জেতার
ব্যপারে ডিটারমাইন্ড ছিল।
সেইদিনই, হোজ্জার বিবি বাইরে গেছে, খালি বাসা দেখে একটা চোর ঘরে ঢুকল।হোজ্জা বাসায় ছিল, কিন্তু বাজিতে হেরে যাওয়ার ভয়ে চোরকে কিছু বলল না।চোর নির্বিঘ্নে ঘরের সব কিছু নিয়ে চলে গেল।হোজ্জার স্ত্রী বাসায় ফিরে এসে যখন দেখল সব কিছু খালি, চিৎকার দিয়ে বলল, হায় আল্লা! কি হইছে?
হোজ্জা খুশিতে লাফিয়ে উঠল, আমি জিতছি বাজিতে, এখন তোমারেই গাধাকে খাওয়ান লাগবে।
সেইদিনই, হোজ্জার বিবি বাইরে গেছে, খালি বাসা দেখে একটা চোর ঘরে ঢুকল।হোজ্জা বাসায় ছিল, কিন্তু বাজিতে হেরে যাওয়ার ভয়ে চোরকে কিছু বলল না।চোর নির্বিঘ্নে ঘরের সব কিছু নিয়ে চলে গেল।হোজ্জার স্ত্রী বাসায় ফিরে এসে যখন দেখল সব কিছু খালি, চিৎকার দিয়ে বলল, হায় আল্লা! কি হইছে?
হোজ্জা খুশিতে লাফিয়ে উঠল, আমি জিতছি বাজিতে, এখন তোমারেই গাধাকে খাওয়ান লাগবে।
নাসিরুদ্দিনের বউ অবাক হয়ে বললো, “বোকা..আমি কি চোরের বাড়ি গিয়ে গাধাটাকে খাওয়াবো”..
জয়ের লোভে নাসিরুদ্দিনের কিছু খেয়ালই ছিলো না এতক্ষন।
৫……
একদিন হোজ্জা বাজার থেকে কলিজা কিনে বাসায়
যাচ্ছিলেন।এদিকে তাঁর এক বন্ধু তাঁকে কলিজার পাই বানানোর রেসিপি
দিয়েছিলেন, যাতে বাসায় গিয়ে কলিজার পাই রান্না করতে পারেন।কিন্তু হঠাৎ
একটি বাজপাখি উড়ে এসে কলিজা ছিনিয়ে নিয়ে একেবারে নাগালের বাইরে উড়ে চলে
গেল।
বোকা কোথাকার!চেঁচিয়ে হোজ্জা বললেন, কলিজা নিয়ে গেছ ঠিক আছে, কিন্তু প্রস্তুত প্রণালী (রেসিপি )তো আমার কাছে!
বোকা কোথাকার!চেঁচিয়ে হোজ্জা বললেন, কলিজা নিয়ে গেছ ঠিক আছে, কিন্তু প্রস্তুত প্রণালী (রেসিপি )তো আমার কাছে!
৬……..
এক তুর্কির ষাঁড় হোজ্জার বাগানের বেড়া
ভেঙে ভেতরে ঢুকে তছনছ করে দিয়ে মালিকের কাছে ফিরে গেল।হোজ্জা পুরো
ব্যাপারটা লক্ষ করলেন, তারপর একটা বেত নিয়ে বেরিয়ে এসে ষাঁড়টাকে পেটাতে
শুরু করলেন।
কোন সাহসে আমার ষাঁড়কে আপনি পেটাচ্ছেন! তুর্কি চেঁচিয়ে বলল।
কিছু মনে করবেন না আপনি, হোজ্জা বললেন, ও পুরো ব্যাপারটা জানে।এটা ওর আর আমার ব্যাপার!
কোন সাহসে আমার ষাঁড়কে আপনি পেটাচ্ছেন! তুর্কি চেঁচিয়ে বলল।
কিছু মনে করবেন না আপনি, হোজ্জা বললেন, ও পুরো ব্যাপারটা জানে।এটা ওর আর আমার ব্যাপার!
৭…….
হোজ্জার এক প্রতিবেশী শিকারে গিয়ে নেকড়ের
কবল থেকে এক ভেড়াকে বাঁচিয়ে বাড়ি নিয়ে আসে, পালবে বলে। শিকারির যত্নে
ভেড়াটি দিন দিন নাদুস-নুদুস হয়ে উঠল। একদিন শিকারির লোভ হলো ভেড়ার মাংস
খাওয়ার জন্য। তাই জবাই করতে উদ্যত হতেই ভেড়াটি ভয়ে বিকট শব্দে চিত্কার জুড়ে
ছিল। ভেড়ার চিত্কারে হোজ্জার ঘুম গেল ভেঙে। ব্যাপারটা বোঝার জন্য সঙ্গে
সঙ্গে প্রতিবেশীর বাড়িতে ছুটে গেলেন হোজ্জা।
হোজ্জাকে দেখে শিকারি প্রতিবেশী লজ্জিত গলায় বললেন, ‘এই ভেড়াটার প্রাণ বাঁচিয়ে ছিলাম একবার।’
‘তাহলে ও তোমাকে গালি দিচ্ছে কেন?’
‘গালি দিচ্ছে?’
‘ভেড়া বলছে, “তুমি একটা নেকড়ে”।’ –
হোজ্জাকে দেখে শিকারি প্রতিবেশী লজ্জিত গলায় বললেন, ‘এই ভেড়াটার প্রাণ বাঁচিয়ে ছিলাম একবার।’
‘তাহলে ও তোমাকে গালি দিচ্ছে কেন?’
‘গালি দিচ্ছে?’
‘ভেড়া বলছে, “তুমি একটা নেকড়ে”।’ –
৮…….
নাসিরুদ্দিন হোজ্জার বাড়িতে তাঁর কিছু
বন্ধু এসেছেন। অতিথিদের তরমুজ দিয়ে আপ্যায়ন করলেন হোজ্জা। বন্ধুদের সঙ্গে
খেতে বসলেন হোজ্জা নিজেও।
হোজ্জার পাশেই বসেছিলেন তাঁর এক দুষ্টু বন্ধু। তরমুজ খেয়ে খেয়ে বন্ধুটি হোজ্জার সামনে তরমুজের খোসা রাখছিলেন। খাওয়া শেষে দেখা গেল, হোজ্জার সামনে তরমুজের খোসার স্তূপ।
দুষ্টু বন্ধুটি অন্যদের বললেন, ‘দেখেছেন কাণ্ড? হোজ্জা কেমন পেটুক? তার সামনে তরমুজের খোসার স্তূপ হয়ে গেছে’!
হোজ্জা হেসে বললেন, ‘আর আমার বন্ধুটির সামনে দেখছি একটা খোসাও নেই! উনি খোসাশুদ্ধ খেয়েছেন! এখন আপনারাই বলুন, কে বেশি পেটুক!’
হোজ্জার পাশেই বসেছিলেন তাঁর এক দুষ্টু বন্ধু। তরমুজ খেয়ে খেয়ে বন্ধুটি হোজ্জার সামনে তরমুজের খোসা রাখছিলেন। খাওয়া শেষে দেখা গেল, হোজ্জার সামনে তরমুজের খোসার স্তূপ।
দুষ্টু বন্ধুটি অন্যদের বললেন, ‘দেখেছেন কাণ্ড? হোজ্জা কেমন পেটুক? তার সামনে তরমুজের খোসার স্তূপ হয়ে গেছে’!
হোজ্জা হেসে বললেন, ‘আর আমার বন্ধুটির সামনে দেখছি একটা খোসাও নেই! উনি খোসাশুদ্ধ খেয়েছেন! এখন আপনারাই বলুন, কে বেশি পেটুক!’
৯……
হাটবারের দিন রাস্তায় দাঁড়িয়ে
জড়বুদ্ধির মতো আচরণ করতেন হোজ্জা, ফলে নির্বোধ ভেবে মানুষ তাকে মুদ্রা দান
করত। কিন্তু তার সামনে দুটি মুদ্রা তুলে ধরা হলে, সর্বদাই তিনি ছোট
মুদ্রাটি গ্রহণ করতেন, যতবারই, যেভাবেই দেয়া হোক না কেন।
একদিন সদাশয় এক ব্যক্তি তাকে বললেন, “নাসিরুদ্দীন, তুমি তো বড় মুদ্রাটা নিতে পার। এতে তোমার দ্রুত বেশ কিছু টাকা-পয়সা জমে যাবে আর মানুষও আগের মতো তোমাকে নিয়ে তামাশা করতে পারবে না।”
“হুমম, আপনি যা বলছেন তা হয়তো ঠিক হতে পারে। কিন্তু আমি ভাবছি, আমি যদি সবসময় বড় মুদ্রাটা গ্রহণ করি, তাহলে মানুষ আমাকে তাদের চেয়েও নির্বোধ ভেবে যে আনন্দটা পায়, সে আনন্দটা আর পাবে না, ফলে দান হয়তো একেবারেই বন্ধ করে দিবে।” হোজ্জা জবাব দেন।
একদিন সদাশয় এক ব্যক্তি তাকে বললেন, “নাসিরুদ্দীন, তুমি তো বড় মুদ্রাটা নিতে পার। এতে তোমার দ্রুত বেশ কিছু টাকা-পয়সা জমে যাবে আর মানুষও আগের মতো তোমাকে নিয়ে তামাশা করতে পারবে না।”
“হুমম, আপনি যা বলছেন তা হয়তো ঠিক হতে পারে। কিন্তু আমি ভাবছি, আমি যদি সবসময় বড় মুদ্রাটা গ্রহণ করি, তাহলে মানুষ আমাকে তাদের চেয়েও নির্বোধ ভেবে যে আনন্দটা পায়, সে আনন্দটা আর পাবে না, ফলে দান হয়তো একেবারেই বন্ধ করে দিবে।” হোজ্জা জবাব দেন।
১০……..
অভিযোগ নাই
বিবির পিড়াপিড়িতে নাসিরুদ্দিন একটা গরু কিনল। কিন্তু গরু ও গাধার জন্য গোয়াল ঘরে পর্যাপ্ত যায়গা না থাকায়, একটা ঘুমালে আরেকটাকে দাড়িয়ে থাকতে হতো।
প্রিয় গাধার এই দুরবস্থা দেখে হোজ্জা একদিন খোদার কাছে প্রার্থনা করছে, “হে আল্লাহ, দয়া করে গরুটাকে মেরে ফেল যাতে আমার গাধাটা একটু আরাম করে ঘুমাইতে পারে” ।
পরদিন সকালে সে গোয়াল ঘরে গিয়ে দেখে যে গাধাটা মরে পরে আছে।
প্রানপ্রিয় গাধার মৃত্যতুতে হতাশ হয়ে হোজ্জা বিরস বদনে আকাশের দিকে তাকায়ে বলল, “কোন অভিযোগ করবনা, খোদা, কিন্তু তুমি এতদিন ধরে সারা দুনিয়ার মালিক হয়েও, কোনটা গরু কোনটা গাধা এইটা চিনলানা!”
বিবির পিড়াপিড়িতে নাসিরুদ্দিন একটা গরু কিনল। কিন্তু গরু ও গাধার জন্য গোয়াল ঘরে পর্যাপ্ত যায়গা না থাকায়, একটা ঘুমালে আরেকটাকে দাড়িয়ে থাকতে হতো।
প্রিয় গাধার এই দুরবস্থা দেখে হোজ্জা একদিন খোদার কাছে প্রার্থনা করছে, “হে আল্লাহ, দয়া করে গরুটাকে মেরে ফেল যাতে আমার গাধাটা একটু আরাম করে ঘুমাইতে পারে” ।
পরদিন সকালে সে গোয়াল ঘরে গিয়ে দেখে যে গাধাটা মরে পরে আছে।
প্রানপ্রিয় গাধার মৃত্যতুতে হতাশ হয়ে হোজ্জা বিরস বদনে আকাশের দিকে তাকায়ে বলল, “কোন অভিযোগ করবনা, খোদা, কিন্তু তুমি এতদিন ধরে সারা দুনিয়ার মালিক হয়েও, কোনটা গরু কোনটা গাধা এইটা চিনলানা!”
১১……
বিবি তোমার কথাই ঠিক
নাসিরুদ্দিন হোজ্জা তখন কাজী। বিচার আচার করেন। একদিন বিচারে বসেছেন। ফরিয়াদি আসামির সম্পর্কে তার অভিযোগের বয়ান দিতেছে। হোজ্জা মনযোগ দিয়া তার কথা শুনছেন। বাদীর বলা শেষ হয়ে মাথা ঝাকিয়ে বললেন, ‘তোমার কথাই ঠিক’।
নাসিরুদ্দিন হোজ্জা তখন কাজী। বিচার আচার করেন। একদিন বিচারে বসেছেন। ফরিয়াদি আসামির সম্পর্কে তার অভিযোগের বয়ান দিতেছে। হোজ্জা মনযোগ দিয়া তার কথা শুনছেন। বাদীর বলা শেষ হয়ে মাথা ঝাকিয়ে বললেন, ‘তোমার কথাই ঠিক’।
এইবার আসামি বলে উঠল, ‘হুজুর, আমার দুইটা
কথা ছিল’। হোজ্জা বললেন, ‘ঠিকাছে তুমি তোমার বক্তব্য বল’। আসামির বক্তব্যও
মনযোগ দিয়া শোনার পর হোজ্জা বললেন, ‘তোমার কথাই ঠিক’।
হোজ্জার স্ত্রী পর্দার আড়ালে এতক্ষণ সব কথা
শুনছিলেন। বিরক্ত হয়ে স্বামীকে তিনি বললেন, ‘দুইজনই ঠিক হয় কিভাবে? হয়
আসামির কথা ঠিক অথবা ফরিয়াদির কথা ঠিক’।
হোজ্জা স্ত্রীর দিকে ফিরে সমর্থনসূচক হাসি দিয়ে বললেন, ‘বিবি তোমার কথাই ঠিক’।
১২……..
কোর্তার ভিতর আমিও ছিলাম
একদিন রাতে হোজ্জার প্রতিবেশি শুনল হোজ্জার সাথে তার স্ত্রীর ঝগড়া চলছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর ভারী একটা কিছু পড়ার আওয়াজ হলো তারপর সব চুপচাপ।
পরদিন সকালে প্রতিবেশি হোজ্জা কে জিজ্ঞাস করে, ‘কাল রাতে আপনার বাসায় ভারী কিছু একটা পড়ার শব্দ পেলাম’।
‘আমার বিবি রাগ করে আমার কোর্তা জানালা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়’, হোজ্জা জানায়।
‘একটা কোর্তা পড়ায় এত শব্দ হয়’, প্রতিবেশি অবাক।
‘আরে কোর্তার ভিতর তো আমিও ছিলাম’, হোজ্জা বিরস মুখে জানায়।
একদিন রাতে হোজ্জার প্রতিবেশি শুনল হোজ্জার সাথে তার স্ত্রীর ঝগড়া চলছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর ভারী একটা কিছু পড়ার আওয়াজ হলো তারপর সব চুপচাপ।
পরদিন সকালে প্রতিবেশি হোজ্জা কে জিজ্ঞাস করে, ‘কাল রাতে আপনার বাসায় ভারী কিছু একটা পড়ার শব্দ পেলাম’।
‘আমার বিবি রাগ করে আমার কোর্তা জানালা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়’, হোজ্জা জানায়।
‘একটা কোর্তা পড়ায় এত শব্দ হয়’, প্রতিবেশি অবাক।
‘আরে কোর্তার ভিতর তো আমিও ছিলাম’, হোজ্জা বিরস মুখে জানায়।
১৩……
মহিলা বিচার চায়
একদিন একজন পুরুষ ও একজন মহিলা বিচারক হোজ্জার দরবারে এল।
মহিলাটি ফরিয়াদ জানায়, ‘আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, অপরিচিত এই লোকটা হঠাৎ এসে আমাকে চুমু দিয়েছে। আমি বিচার চাই’।
‘আমিও মনে করি তোমার বিচার পাওয়া উচিত’, হোজ্জা বলে। ‘সুতরাং আমি নির্দেশ দিলাম, তুমি লোকটাকে চুমু দাও এবং তোমার প্রতিশোধ নাও’।
একদিন একজন পুরুষ ও একজন মহিলা বিচারক হোজ্জার দরবারে এল।
মহিলাটি ফরিয়াদ জানায়, ‘আমি রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, অপরিচিত এই লোকটা হঠাৎ এসে আমাকে চুমু দিয়েছে। আমি বিচার চাই’।
‘আমিও মনে করি তোমার বিচার পাওয়া উচিত’, হোজ্জা বলে। ‘সুতরাং আমি নির্দেশ দিলাম, তুমি লোকটাকে চুমু দাও এবং তোমার প্রতিশোধ নাও’।
১৪…….
আপনি কি ঘুমাচ্ছেন?
একদিন নাসিরউদ্দিন চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল।
তার শালা এসে জিজ্ঞাস করে, ‘ আপনি কি ঘুমাচ্ছেন?’
‘কেন জিজ্ঞাস করছ’, নাসিরুদ্দিন বলে।
‘আমি ভাবছিলাম আপনি যদি আমাকে কিছু টাকা ধার দিতেন’।
‘ওকে, তাইলে তোমার প্রথম প্রশ্নের উত্তর, আমি ঘুমাচ্ছি’, নাসিরউদ্দিন বলে। ‘ এখন আমাকে একা থাকতে দেও’
একদিন নাসিরউদ্দিন চোখ বন্ধ করে শুয়ে ছিল।
তার শালা এসে জিজ্ঞাস করে, ‘ আপনি কি ঘুমাচ্ছেন?’
‘কেন জিজ্ঞাস করছ’, নাসিরুদ্দিন বলে।
‘আমি ভাবছিলাম আপনি যদি আমাকে কিছু টাকা ধার দিতেন’।
‘ওকে, তাইলে তোমার প্রথম প্রশ্নের উত্তর, আমি ঘুমাচ্ছি’, নাসিরউদ্দিন বলে। ‘ এখন আমাকে একা থাকতে দেও’
১৫……
ভাগ্যিস আমি ছিলামনা
এক রাতে হোজ্জা দেখে বাগানে এক লোক দাড়ায় আছে। চোর ভেবে হোজ্জা ধনুক বের করে চোরের দিকে তীর ছুড়ল। পরদিন সকালে গিয়ে দেখে তারই জামা মেলে দেয়া ছিল। যেটাকে হোজ্জা চোর মনে করে তীর ছুড়েছিল এবং সেই তীর জামাতে বিদ্ধ হয়ে আছে।
সাথে সাথে হোজ্জা মোনাজাত করে আল্লার কাছে শুকরিয়া জানায়।
হোজ্জার বিবি অবাক হয়ে বলে, ‘ তুমি এখন মোনাজাত করছ কেন?’
‘ভাগ্যিস জামার ভিতর আমি ছিলামনা’, হোজ্জার উত্তর।
এক রাতে হোজ্জা দেখে বাগানে এক লোক দাড়ায় আছে। চোর ভেবে হোজ্জা ধনুক বের করে চোরের দিকে তীর ছুড়ল। পরদিন সকালে গিয়ে দেখে তারই জামা মেলে দেয়া ছিল। যেটাকে হোজ্জা চোর মনে করে তীর ছুড়েছিল এবং সেই তীর জামাতে বিদ্ধ হয়ে আছে।
সাথে সাথে হোজ্জা মোনাজাত করে আল্লার কাছে শুকরিয়া জানায়।
হোজ্জার বিবি অবাক হয়ে বলে, ‘ তুমি এখন মোনাজাত করছ কেন?’
‘ভাগ্যিস জামার ভিতর আমি ছিলামনা’, হোজ্জার উত্তর।
একবার হলো কি নাসিরুদ্দিন হোজ্জ্বাকে সবাই মিলে দাঁড় করিয়ে দিলো খুতবা
দেয়ার জন্য। অথচ তিনি তেমন বক্তৃতা দিতে পারতেন না। মিম্বরে দাঁড়িয়ে কোনটা
থেকে কোন কথা বলে ফেলেন, শেষতকে নাকি আবার লজ্জ্বায় পরতে হয়, এসব শংকাই কাজ
করছিলো তার মনে। কিন্তু সবাই এমন করে ধরলো যে তাকে দাঁড়াতেই হলো। কিন্তু
তিনিও কম যাননা। মনে মনে এঁটে নিলেন বিদঘুটে এক বুদ্ধি। প্রথমেই গলা
খাঁকারি দিয়ে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললেন আমি এখন আপনাদের উদ্দেশ্যে কি বলবো
তা কি আপনারা জানেন? সমস্বরে জবাব এলো, না আমরা জানিনা। তার পর তিনি কপট
রাগ দেখিয়ে বললেন, আমি কি বলবো তা যদি আপনারা নাই জানেন তবে সেটা বলে আর
লাভ নেই। তারপর সোজা বেরিয়ে গেলেন মসজিদের বাইরে। মুসল্লিরাতো হা-হুতাশ। এত
কষ্ট করে হোজ্জ্বাকে ধরে এনেও তার মুখ থেকে বক্তৃতা বের করানো গেলোনা!
কিন্তু সহজেই তারা ছেড়ে দিতে রাজি নন। এঁটে নিলেন নতুন এক ফন্দি। অন্য
একদিন আবার হোজ্জ্বাকে বুঝিয়ে সুজিয়ে বক্তৃতার জন্য দাঁড় করানো হলো
মিম্বরে। তখনও তিনি সবার উদ্দেশ্যে আগের প্রশ্নটিই করলেন। উপস্থিত
মুসল্লিরা এবার জবাব দিলেন, হ্যা আপনি কি বলবেন তা আমরা জানি। হোজ্জ্বা
এবারও পেয়ে বসলেন সবাইকে। বললেন আপনারা যেহেতু জানেনই তবে আমার আর বলার কি
প্রয়োজন। তারপর উপস্থিত সবার হা হয়ে যাওয়া মুখের সামনে দিয়েই বেরিয়ে গেলেন
মসজিদ থেকে। কিন্তু তবু হাল ছাড়তে রাজি ছিলেননা তারা। ক্রমেই বুদ্ধি
আঁটছিলেন কি করে কথার জালে আটকানো যায় হোজ্জ্বাকে। অবশেষে ঠিক করা হলো
শেষবারের মতো আরো একবার চেস্টা করে দেখা যাক। বুদ্ধির বাকসো ওই বেটা
হোজ্জ্বার দৌর কতটুকু তা তাদের দেখে নিতে হবেই। আগের মতোই আবার তাকে টেনে
আনা হলো মিম্বরে। এবারও ঠিক আগের প্রশ্নটিই করলেন তিনি। মুসল্লিরা এর জবাব
আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন। তাদের অর্ধেক লোক উত্তর দিলেন, হ্যা আপনি কি
বলবেন তা আমরা জানি। আর বাকি অর্ধেক বললেন, না আমরা জানিনা। তারপর সবাই
তাকিয়ে থাকলেন হোজ্জ্বার মুখের দিকে। ভাবলেন এবার নিশ্চয়ই কোন চালাকি করতে
পারবেননা তিনি। চালাক হোজ্জ্বাকে ফাঁসানো গেলো ভেবে সবার মুখে ফুটে উঠলো
তৃপ্তির হাসি। কিন্তু না হোজ্জ্বা কি এত সহজে হেরে যাবার পত্র নাকি! মুখ
খুললেন তিনি। ধীরে ধীরে সবার উদ্দেশ্যে বললেন, আমি আজ কি বলব এ কথাটি যারা
জানেন, তারা দয়া করে বুঝিয়ে দিন যারা জানেননা তাদেরকে। বলেই আর দেরি করলেন
না দ্রুত নেমে গেলেন মিম্বর ছেড়ে।
কোন এক রমজান মাসের আগে সবার মাঝে ব্যাপক প্রস্তুতি চলছে রোযা রাখার জন্য।
কিন্তু প্রতি রমজানেই রোযা রাখতে বেশ কষ্ট হয় হোজ্জ্বার। তাই এবার ঠিক
করলেন যে, রোযা রাখবেন না। কিন্তু সমস্যা হলো রোযা না রাখলে লোকজনতো তাকে
মন্দ বলবে। তাই কি করা যায, কি করা যায়, চিন্তাভাবনা করে বুদ্ধি ঠিক করলেন
যে সবার সামনে তিনি রোযা রাখার ভান করবেন। আর চুপি চুপি ঠিকই খেয়ে নেবেন।
কিন্তু এ ক্ষেত্রেও দেখা দিলো আরেক সমস্যা। কেউ যদি হঠাৎ তার কাছে জানতে
চায় যে আজ কততম রোযা, তখন তিনি কি বলবেন? নিজে রোজা না রাখলেতো সঠিক হিসাবও
দিতে পারবেন না। তছাড়া তখনতো আর ক্যালেন্ডারও ছিলোনা। অবশেষে হোজ্জ্বা ঠিক
করলেন যে, যত রোযা যাবে তিনি ততটি পাথর একটা বাক্সে জমা করে রাখবেন।
অর্থাৎ প্রতিদিন বক্সে একটা একটা করে পথর জমা হবে। কেউ জিজ্ঞেস করলে
পথরগুলো গুণে বলে দেয়া যাবে আজ কততম রোজা। তিনি ভাবলেন তার এই চালাকি কেউ
ধরতে পারবেনা। কিন্তু সব প্ল্যান কি আর সব সময় সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়! এর
মাঝেও লেগে গেলো গন্ডগোল। তার স্ত্রী খেয়াল করলেন যে হোজ্জ্বা প্রতিদিন
একটি বাক্সে পাথর রাখছেন। স্বামিভক্ত স্ত্রী ভাবলেন নিশ্চয়ই হোজ্জ্বা কোন
মহান কাজ করছেন। তাই তাকেও প্রতিদিন একটি করে পাথর এই বাক্সে রাখতে হবে।
যেই ভাবা সেই কাজ। অবশেষে বাক্সে পাথর রাখার দলে সামিল হলো তার ছেলে এবং
মেয়েও। মোটকথা তারা সবাই বিপুল বিক্রমে পাথর জমাতে শুরু করল। এদিকে কি ঘটছে
এসবের কিছুই কিন্তু হোজ্জ্বা জানেননা। বিপত্তিটা ঘটলো সেদিনই, এক ফাজিল
প্রতিবেশি হোজ্জ্বাকে হঠাৎ জিজ্ঞেস করে বসলো যে, এখন পর্যন্ত কয়টা রোযা
গেলো? অতিচালাক হোজ্জ্বা বললেন, "দাঁড়াও একটু অপেক্ষা করো, আমি আসছি"।
তারপর তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে বাক্স খুলে পাথর গোনা শুরু করলেন তিনি। কিন্তু
তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো, যখন পাথরের সংখ্যা দাঁড়াল মোট ৯৬ টিতে। ভাবলেন
এই কয়দিনেতো এত্তো পাথর হওয়ার কথা না। আবার নিজের হাতে যা গুণলেন তাও তো
সত্যি। এসব সাত পাঁচ ভেবে তিনি ভাবলেন রোজার সংখ্যা কিছুটা কমিয়ে বলাটাই
হবে বুদ্ধিমানের কাজ। অবশেষে প্রতিবেশির সামনে এসে তিনি বিপুল বিক্রমে
জানিয়ে দিলেন যে ইতিমধ্যেই ৫৩ টি রোজা চলে গিয়েছে। প্রতিবেশিতো তাকে পাগল
ঠাওরে নিয়ে বললেন "যান কি যা-তা বলছেন, এতো হতেই পারেনা!"। কি এতো বড়ো
অপমান ভেবে গর্জে উঠলেন হোজ্জ্বা, "চোপরাও! আমি তো তাও কমই বলেছি, পাথর
গুনলে তো আরো বেশিই পেতে"।