সংশয়ের কথা প্রকাশ করে সোমবার রাজধানীতে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেছেন,
“আজকে বলা হয়, এতো লক্ষ লোক শহীদ হয়েছেন। এটা নিয়েও অনেক বিতর্ক আছে যে
আসলে কত লক্ষ লোক মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। নানা বই-কিতাবে নানারকম তথ্য
আছে।”
এর আগে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর বিভিন্ন লেখায়
মুক্তিযুদ্ধে নিহতের সংখ্যা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বাংলাদেশে অবস্থানরত
ব্রিটিশ নাগরিক ডেভিড বার্গম্যান, যিনি ব্লগ লিখে যুদ্ধাপরাধের বিচারের
বিরুদ্ধে প্রচার চালান। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অবমাননার দায়ে
শাস্তি পেয়েছিলেন তিনি।
বাংলাদেশে ৩০ লাখ শহীদ ও দুই লাখ নারী ধর্ষিত হওয়ার তথ্যের ‘কোনো ভিত্তি নেই’ বলে বার্গম্যান তার লেখায় দাবি করেছিলেন।
বক্তব্যে
মুক্তিযোদ্ধার তালিকা প্রসঙ্গে কথা তোলেন খালেদা জিয়া: “সরকার নানারকম
মুক্তিযোদ্ধা তালিকা তৈরি করছে। যাদের অন্যায়ভাবে মুক্তিযোদ্ধার তালিকা
থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে; আমরা ক্ষমতায় আসলে সত্যিকারের মুক্তিযোদ্ধার তালিকা
করে তাদের যথাযথ সন্মান ও সন্মাননা দেব।”
একাত্তরে আওয়ামী লীগ
স্বাধীনতা নয়, ক্ষমতা চেয়েছিল দাবি করে মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সেক্টর
কমান্ডার জেনারেল জিয়াউর রহমানের স্ত্রী বলেন, “তিনি (জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু
শেখ মুজিবুর রহমান) পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে চেয়েছিলেন, স্বাধীন
বাংলাদেশ চাননি।”
এর আগে খালেদা ও জিয়াউর রহমানের বড় ছেলে তারেক রহমান এই দাবি তুলে সমালোচিত হয়েছিলেন।একাত্তরে
মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী দল জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে জোট করে সমালোচিত
বিএনপির প্রধান বলেছেন, তাদের দলে রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধারা আছেন।
বহু
আলোচিত যুদ্ধাপরাধের বিচার নিয়ে নিজের আগের বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি করে
খালেদা বলেন, “যারা প্রকৃত রাজাকার, যারা স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়
সত্যিকারভাবে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করেছে, অত্যাচার করেছে, হত্যা করেছে,
তাদের শাস্তি হতে হবে, বিচার হতে হবে।
“সেই বিচার আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ও স্বচ্ছ হতে হবে।”
আওয়ামী লীগ মুক্তিযোদ্ধা নাম দিয়ে যুদ্ধাপরাধী পালছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
তার দাবি, “যারা যুদ্ধ করেনি, যারা নানাভাবে অপরাধের সঙ্গে সাহায্য করছে, তারা এখন আওয়ামী লীগের প্রিয় ও কাছের লোক। এরকম বহু আছে।
“আওয়ামী
লীগের নিজের ঘরে মুক্তিযোদ্ধা নাম দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের পালছে, মন্ত্রী
বানায়, ওমুক বানায়। অনেক রাজাকার আছে তাদের দলে। তাদের কিন্তু তারা চোখে
দেখছে না। তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই। সরিষাবাড়ীর মাওলানা নুরুল
ইসলাম- সে কি মুক্তিযোদ্ধা? এই রাজকারকে পতাকা কে দিয়েছিল, হাসিনা দেয়নি?
তাহলে কেন আমাদের কথা বলে?”
মাওলানা নুরুল ইসলাম দলের সঙ্গে জড়িত না
থাকলেও সারের দাবিতে কৃষকদের আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে
জামালপুরের সরিষবাড়ী আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পান। ওই নির্বাচনে জয়ের পর
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারে ধর্ম প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয় তাকে।
নুরুল ইসলামের একাত্তরের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ বলে এলাকাবাসী জানিয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের
উপঅধিনায়ক এয়ার ভাইস মার্শাল একে খন্দকার মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস নিয়ে
বই লেখার পর সরকার নানা মামলা দিয়ে তাকে হয়রানি করছে বলে দাবি করেন খালেদা
জিয়া।
১৯৭৫ সালের আগে সিরাজ শিকদারকে হত্যার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড শুরু করে বলে মন্তব্য করেন খালেদা জিয়া।তিনি
বলেন, “১৯৭১-৭৫ সাল পর্যন্ত দেশের কী অবস্থা করেছে, তা নতুন প্রজন্মকে
জানাতে হবে। সরকারের কারণে এ নিয়ে বই-পুস্তক পাওয়া যায় না। কাজেই
মুক্তিযোদ্ধাদের ওই সময়ের বিষয়গুলো নতুন প্রজন্মকে জানাতে হবে।”
রাজধানীর
রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী মুক্তিযোদ্ধা দলের
সভাপতি ইশতিয়াক আজিজ উলফাতের সভাপতিত্বে সমাবেশে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত
মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ,
কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম, গণস্বাস্থ্যের
প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মুক্তিযোদ্ধা দলের ফজলুর রহমান,
অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল জয়নুল আবেদীন, এসএম শফিউজ্জামান খোকন, হাজী আবুল হোসেন,
সাদেক আহমদে খান, বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, যুব দলের সৈয়দ
মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, মহিলা দলের শিরিন সুলতানা, জাতীয়তাবাদী
মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের শামা ওবায়েদ বক্তব্য রাখেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের
মধ্যে কামালউদ্দিন, নুরুল ইসলাম, আবদুস সামাদ মোল্লা, হাজী মিজানুর রহমান
ভুঁইয়া, আবদুল মান্নান খান, চৌধুরী আবু তালেব, আবদুল মান্নান, গাউস মিয়া,
এস এ জলিল, আবদুর রাজ্জাক রাজা, আমানউল্লাহ আমান প্রমুখ বক্তব্য দেন।