এই
পৃথিবীতে যার কাছে কিছুই নেই, তার কাছে আছে শূন্য! শূন্য আমাদের সবারই খুব
আপন। যেকোনো হিসাবের ক্ষেত্রে হোক, ঈদের দিনের সালামি হোক কিংবা ফেইসবুক
স্ট্যাটাসের লাইক সংখ্যা হোক- আমরা এমন একটি সংখ্যা কামনা করি যার শেষে
থাকবে শূন্য! কিন্তু, যেকোনো সংখ্যার শেষে শূন্য আমাদের কাম্য হলেও,
শুধুমাত্র শূন্য আমাদের কারোই কাম্য নয়! শূন্যকে একা দেখতে আমরা নারাজ।
কারণ, তখন কি যেন একটা নেই বলে মনে হয়। আর, এমনটি মনে হবেই বা না কেন?
শূন্য মানেই তো 'কিছুই নেই'.
# শূন্যের যোগ বিয়োগ
# শূন্যের গুণ
# শূন্যের ভাগ
# শূন্য কি ধনাত্মক নাকি ঋণাত্মক?
# শূন্য কি জোড় নাকি বিজোড়?
# শূন্যের পাওয়ার বা ঘাত শূন্য হলে কি হয়?
এখন আমরা শূন্যের যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ সহ আরো কয়েকটি জিনিস দেখবো। এর জন্যে আমাদেরকে সংখ্যারেখা বুঝতে হবে। কারণ, সংখ্যারেখা দিয়ে যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ আরো ভালোমত বুঝা যায়।
# শূন্যের যোগ বিয়োগ
# শূন্যের গুণ
# শূন্যের ভাগ
# শূন্য কি ধনাত্মক নাকি ঋণাত্মক?
# শূন্য কি জোড় নাকি বিজোড়?
# শূন্যের পাওয়ার বা ঘাত শূন্য হলে কি হয়?
এখন আমরা শূন্যের যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ সহ আরো কয়েকটি জিনিস দেখবো। এর জন্যে আমাদেরকে সংখ্যারেখা বুঝতে হবে। কারণ, সংখ্যারেখা দিয়ে যোগ, বিয়োগ, গুণ, ভাগ আরো ভালোমত বুঝা যায়।
নিচের চিত্রের মত একটি সংখ্যারেখা নিলাম। সংখ্যারেখার ডানে আছে সকল ধনাত্মক
সংখ্যাসমুহ এবং বামে রয়েছে সকল ঋণাত্মক সংখ্যাসমুহ। অর্থাৎ, ডান দিক
ধনাত্মক অসীম (+∞) এবং বাম দিক ঋণাত্মক অসীম (-∞) পর্যন্ত বিস্তৃত। আর, এই
সংখ্যারেখার একদম মাঝে বা কেন্দ্রে রয়েছে আমাদের 'শূন্য'!
শূন্য কেন +১ এবং -১ এর মাঝেই থাকবে? কারণ, +১ মানে হচ্ছে "আমার কাছে কিছু
একটা বেশি আছে", আর -১ মানে হচ্ছে "আমার কাছে কিছু একটা কম আছে"
তাহলে, যার কাছে কিছুই নেই, সে অবশ্যই এই দুজনের মাঝে হবে? আর তাই, শূন্য হচ্ছে সংখ্যারেখার কেন্দ্রবিন্দু। ফলে, সংখ্যারেখায় +১ এবং -১ এর মাঝে শূন্য অবস্থিত।
"সংখ্যারেখা" |
তাহলে, যার কাছে কিছুই নেই, সে অবশ্যই এই দুজনের মাঝে হবে? আর তাই, শূন্য হচ্ছে সংখ্যারেখার কেন্দ্রবিন্দু। ফলে, সংখ্যারেখায় +১ এবং -১ এর মাঝে শূন্য অবস্থিত।
শূন্যের যোগ বিয়োগ
শূন্যের সাথে কোন সংখ্যার যোগ বা বিয়োগ করলে ফলাফল সেই সংখ্যাই হয়। কিন্তু কেন?
ধরি, প্রথমে আমরা ৩ এর সাথে ৫ যোগ করবো এরপর ৩ হতে ৫ বিয়োগ করবো।
তাহলে, সংখ্যারেখায় ৩ চিহ্নিত করি। এর সাথে ৫ যোগ করা মানে সংখ্যারেখার ডানদিকে ৫ ঘর সামনে যাওয়া। ৫ ঘর সামনে যাওয়ার পর আমরা যেই অবস্থানে পৌঁছবো, সেই অবস্থানের মানই হবে আমাদের ৩ ও ৫ এর যোগফল। অর্থাৎ, নির্ণেয় যোগফল=৮
আবার, ৩ হতে ৫ বিয়োগের ক্ষেত্রে বাম দিকে ৫ ঘর যেতে হবে। ফলে, নির্ণেয় বিয়োগফল=-২
চিত্রে ভালোভাবে দেখা যাকঃ
ধরি, প্রথমে আমরা ৩ এর সাথে ৫ যোগ করবো এরপর ৩ হতে ৫ বিয়োগ করবো।
তাহলে, সংখ্যারেখায় ৩ চিহ্নিত করি। এর সাথে ৫ যোগ করা মানে সংখ্যারেখার ডানদিকে ৫ ঘর সামনে যাওয়া। ৫ ঘর সামনে যাওয়ার পর আমরা যেই অবস্থানে পৌঁছবো, সেই অবস্থানের মানই হবে আমাদের ৩ ও ৫ এর যোগফল। অর্থাৎ, নির্ণেয় যোগফল=৮
আবার, ৩ হতে ৫ বিয়োগের ক্ষেত্রে বাম দিকে ৫ ঘর যেতে হবে। ফলে, নির্ণেয় বিয়োগফল=-২
চিত্রে ভালোভাবে দেখা যাকঃ
"সংখ্যারেখায় ৩ + ৫ = ৮ এবং ৩ - ৫ = - ২" |
অতএব, যেকোনো সংখ্যা ± 0 = ঐ সংখ্যা। একইভাবে, ০+০=০ এবং, ০-০=০
শূন্যের গুণ
যেকোনো সংখ্যার সাথে শূন্য গুণ করলে ফলাফল শূন্য(০). কিন্তু কেন?ধরি, দুইটি সংখ্যা ৩ ও ২. এদের গুণফল আমরা বের করবো। ৩ কে ২ দ্বারা গুণ করা মানে হচ্ছে ৩ টা ২ কে যোগ করা বা ২ টা ৩ কে যোগ করা। অর্থাৎ,
3 x 2 = 2+2+2 = 3+3 = 6
একইভাবে, কোন সংখ্যা a কে শূন্য(০) দিয়ে গুণ করা মানে হচ্ছে a সংখ্যক শূন্য(০) কে যোগ করা। ধরি, a=10
তাহলে, 10 x 0 মানে হচ্ছে ১০ টি ০ যোগ করা বা, ০ টি ১০ যোগ করা। একটু আগে আমরা দেখলাম যে, ০+০=০
অর্থাৎ, ১০ টি শূন্য(০) এর যোগফল-ও শূন্য। আবার, ০ টি ১০ এর যোগফল-ও শূন্য। কেননা, ০ টি ১০ মানে, কোন ১০ নেই। অতএব, 10 x 0 = 0.
আর, এই কারণেই যেকোনো সংখ্যা (a) x 0 = 0
শূন্যের ভাগ
এই বিষয়টা ভালোভাবে বুঝতে হবে।শূন্যের ভাগ তিনভাবে হতে পারে। যথাঃ
১. শূন্য(০) কে যেকোনো সংখ্যা দিয়ে ভাগ;
২. যেকোনো সংখ্যাকে শূন্য(০) দিয়ে ভাগ;
৩. শূন্য(০) কে শূন্য(০) দিয়ে ভাগ।
প্রথমত, শূন্য কে যেকোনো সংখ্যা দিয়ে ভাগ
শূন্য(০) কে যেকোনো সংখ্যা দিয়ে ভাগ করলে ফলাফল শূন্য। কিন্তু কেন?দুইটি সংখ্যা a ও b. এখন, a কে b দ্বারা ভাগ করা করে যদি ফলাফল z পাওয়া যায়, তবে b ও z গুণ করলে a পাওয়া যাবে। অর্থাৎ, a÷b=z হলে, b x z =a হবে।
উদাহরণ দিয়ে বুঝা যাক। দুইটি সংখ্যা ২০ ও ৫. এখন, ২০ কে ৫ দ্বারা ভাগ করলে ফলাফল হবে ৪. কেননা, ৪ ও ৫ গুণ করলে পুনরায় ২০ পাওয়া যায়। তাই, ২০÷৫=৪.
এখন, দুইটি সংখ্যা ০ ও ২০. ফলে, ০ কে ২০ দ্বারা ভাগ করা মানে ভাগফলকে এমন হতে হবে, যাতে ভাগফলের সাথে ২০ গুণ করলে গুণফল শূন্য(০) হয়। আমরা একটু আগে "শূন্যের গুণ" আলোচনা থেকে জানলাম যে, "কোন সংখ্যার সাথে ০ গুণ করলে ফলাফল ০ হয়।". অতএব, ০ কে ২০ দ্বারা ভাগ করলে যেই ভাগফল পবো, সেই ভাগফল যদি শূন্য(০) ব্যাতিত অন্য কোন সংখ্যা হয়, তাহলে আমরা কখনোই আমাদের 'ভাগফল ও ২০' এর গুণফল শূন্য(০) পাবো না। তাই, ভাগফল হবে শূন্য(০)
অতএব, 0÷20=0
এই কারণেই, শূন্য(0) ÷ যেকোনো সংখ্যা = শূন্য(0)
দ্বিতীয়ত, যেকোনো সংখ্যাকে শূন্য দিয়ে ভাগ
যেকোনো একটি সংখ্যা a হলে আসলে তা শুধুমাত্র a হিসেবে থাকে না। a এর নিচে সর্বদা 1 থাকে ভাগ হিসেবে। কেন?''ছবি কৃতজ্ঞতাঃ mathwithbaddrawings.com'' |
কিন্তু, 1 এর বদলে শূন্য দ্বারা ভাগ করলে কি হত? এটাই এবার দেখা যাক!
ধরি, যেকোনো সংখ্যা=a, শূন্য দ্বারা ভাগ করার পর ভাগফল=y
তাহলে, a÷0=y
এর অর্থ হচ্ছে, "y এর মান এমন হবে যাতে y এর সাথে 0 গুণ করলে পুনরায় a পাওয়া যায়।"
এবার a এর যেকোনো মান হিসেবে আমরা ১৫ নিলাম। তাহলে, 15÷0=y. মানে, y এর মান এমন হতে হবে যাতে এর সাথে শূন্য(০) গুণ করলে পুনরায় ১৫ পাওয়া যায়। কিন্তু, আসলেই কি y এর সুনির্দিষ্ট কোন মান কখনো পাওয়া সম্ভব? না, কখনোই না! কারণ, শূন্যের(০) সাথে আমরা যা-ই গুণ করি না কেন, ফলাফল সর্বদা শূন্যই আসবে। তাই, এক্ষেত্রে y এর কোন মান পাওয়া যাবে না। ফলে, 15÷0 বা a÷0 কথাটি অসংজ্ঞায়িত।
কিন্তু, আমরা তো অংক করার সময় "যেকোনো সংখ্যা(a)÷0=অসীম(∞)" লিখি। কেন? তা এবার একটু লক্ষ করা যাক।
আমরা যেকোনো সংখ্যা a=10 নিলাম। এখন, এই 10 কে আমরা যথাক্রমে 1, 0.1, 0.001, 0.0001, 0.00001, 0.000001, 0.0000001, ....................... এইভাবে ভাগ করতে করতে শূন্যের দিকে এগুবো। প্রথমে ভাগফলগুলো নিচে লিখে ফেলা যাকঃ
10÷1=10
10÷0.1=100
10÷0.01=1000
10÷0.001=10000
10÷0.0001=100000
10÷0.00001=1000000
................................
...................................
......................................
10÷0=?
এবার একটু লক্ষ্য করা যাক। ১০ কে আমরা যত ছোট সংখ্যা দ্বারা ভাগ করছি, ভাগফল ততই বড় সংখ্যা আসছে। এভাবে ছোট সংখ্যা দ্বারা ভাগ করতে করতে আমরা যখন শূন্যে পৌঁছাবো, তখন ভাগফলের মান অবশ্যই সবচেয়ে বড় হবে। কেননা, শূন্যের বাম দিকে গেলে তখন আবার আগের মানগুলোর ঋণাত্মক মানগুলো পুনরাবৃত্তি হবে। তাই, শূন্য(০) হচ্ছে সেই অবস্থান যা দ্বারা ভাগ করলে ভাগফল হবে সব চেয়ে বড়! কিন্তু তা কত বড়?-সেটাই এখন দেখার বিষয়!
১০ কে (1, 0.1, 0.001, 0.0001, 0.00001, 0.000001, 0.0000001, ....................... ) এই ধারা অনুযায়ী ভাগ করতে করতে আমরা ভাগফলের ধারা পেলাম এইরকমঃ (10, 100, 1000, 10000, 100000, 1000000, 10000000, 100000000, ..........................)
এখন, 0.1, 0.001, 0.0001, 0.00001, 0.000001, 0.0000001, ....................... এই ধারার সর্বশেষ পদটি অবশ্যই শূন্য(০) হবে। কেননা, শূন্য অতিক্রম করলে ঋণাত্মক মান আসা শুরু করবে। তাই, ধারাটি এইভাবে লেখা যায়ঃ 0.1, 0.001, 0.0001, 0.00001, 0.000001, 0.0000001, ....................... , 0
আবার, ভাগফলের ধারা বা 10, 100, 1000, 10000, 100000, 1000000, 10000000, 100000000, .......................... এই ধারার শেষে কি আছে? ইহা অসীম পদবিশিষ্ট একটি ধারা। এর কোন শেষ নেই। অতএব এই ধারাটি অসীম পদ পর্যন্ত বিস্তৃত। তাই, ধারাটি 10, 100, 1000, 10000, 100000, 1000000, 10000000, 100000000, .......................... , +∞ এইভাবে লিখা যায়। যেহেতু, ধারাটি ধনাত্মক দিকে অসীম পর্যন্ত বিস্তৃত, তাই এর শেষ পদ হবে ধনাত্মক অসীম বা Positive Infinity বা +∞
সুতরাং, ১০ কে শূন্য(০) দ্বারা ভাগ করলে এর ফলাফল হবেঃ +∞
আবার, ঋণাত্মক ১০ বা -10 কে শূন্য(০) দ্বারা ভাগ করলে ভাগফল হবেঃ -∞
একইভাবে, যেকোনো ধনাত্মক সংখ্যাকে শূন্য(০) দ্বারা ভাগ করলে ভাগফল হয় +∞ এবং যেকোনো ঋণাত্মক সংখ্যাকে শূন্য(০) দ্বারা ভাগ করলে ভাগফল হয় -∞
আমাদের একটা কথা মনে রাখা দরকার, অসীম কিন্তু কোন সংখ্যা নয়। ইহা কেবল একটি ধারণা মাত্র। অসীম বলতে কোন কিছুর আসলে অস্তিত্ব নেই। তাই, হিসাবের ক্ষেত্রে যেই জিনিসগুলার মান অসীম(∞), তারা সবাই আসলে অসংজ্ঞায়িত।
তৃতীয়ত, শূন্য কে শূন্য দিয়ে ভাগ
এতক্ষণ তো আমরা শূন্য কে শূন্য ব্যতীত অন্য সকল সংখ্যা দ্বারা ভাগ করা দেখলাম। যার ভাগফল হচ্ছে অসীম(∞)তাহলে কি আমরা "০÷০=আসীম(∞)" লিখতে পারি না? হ্যাঁ! অবশ্যই পারি! কেন পারবো না?! কিন্তু, কাজটা তো এখানেই শেষ নয়!
ধরি, 0÷0=i
তাহলে, i এর মান এমন হবে যাতে i এর সাথে শূন্য(০) গুণ করলে পুনরায় শূন্য পাওয়া যায়। আমরা জানি যে, শূন্য কে যেই সংখ্যা দ্বারাই গুণ করি না কেন, ফলাফল সর্বদা শূন্যই হবে। তাই, i এর মান যেকোনো কিছুই হতে পারে! কেননা,
i=0 হলে,0x0=0
i=1 হলে, 1x0=0
i=-1 হলে, -1x0=0
i=2 হলে, 2x0=0
i=-2 হলে, -2x0=0
i=3 হলে, 3x0=0
i=-3 হলে, -3x0=0
.....................
.......................
.....................
"গুগল ক্যালকুলেটরে 0÷0 এর মান Error দেখাচ্ছে" |
অতএব, i = (-∞, ........................, -3, -2, -1, 0, 1, 2, 3, ..................... , +∞)
দেখা যাচ্ছে, i এর অসীম সংখ্যক মান রয়েছে! ফলে, 0÷0 এর ভাগফল রয়েছে অসীম সংখ্যক! 0÷0 এর ভাগফলকে নির্দিষ্ট ভাবে বলা কখনো সম্ভব না। তাই, 0÷0 একইসাথে অসংজ্ঞায়িত এবং অনির্ণেয়।
অনির্ণেয় কেন? অনির্ণেয় মানে হচ্ছে, যার মান নির্ণয় করা সম্ভব নয়। এখানে 0÷0 এর অসীম সংখ্যক ফলাফল থাকায়, সুনির্দিষ্টভাবে এর ফলাফল বলা কখনোই সম্ভব নয়। তাই, 0÷0 হচ্ছে অসংজ্ঞায়িত এবং অনির্ণেয়।
শূন্য কি ধনাত্মক নাকি ঋণাত্মক?
শূন্য আসলে এদের কোনটিই নয়! শূন্য হচ্ছে নিরপেক্ষ।"শূন্য হচ্ছে নিরপেক্ষ"- কথাটি বুঝবার আগে পজিটিভ(+) এবং নেগেটিভ(-) কি জিনিস তা বুঝতে হবে। যেকোনো সংখ্যা a=±1 হলে +১ এর মানে হচ্ছে ১ বেশি আছে এবং -১ মানে হচ্ছে ১ কম আছে। কিন্তু, শূন্য(০) মানে 'কিছুই নেই'. আর, যেইখানে কিছুই নেই সেইখানে তো কম বা বেশি হবার প্রশ্নই আসে না। এই কারণে শূন্য(০) হচ্ছে চিহ্ন নিরপেক্ষ। অর্থাৎ, +0 = -0
একই কারণে, 0+0=0 এবং 0-0=0
শূন্য কি জোড় নাকি বিজোড়?
কোন একটি সংখ্যা জোড় কখন হয় আর বিজোড় কখন হয় তা জানা থাকলেই এই প্রশ্নের জবাব দেয়া সম্ভব। শুরুতে কয়েকটা জিনিস লক্ষ্য করা যাকঃ১. বিজোড় এবং জোড় কে যোগ করলে সর্বদা বিজোড় সংখ্যা পাওয়া যায়;
২. জোড় সংখ্যাকে 2n এবং বিজোড় সংখ্যাকে 2n+1 দ্বারা প্রকাশ করা যায়;
৩. দুটি বিজোড় সংখ্যার মাঝে একটি জোড় সংখ্যা অবস্থান করে এবং দুটি জোড় সংখ্যার মাঝে একটি বিজোড় সংখ্যা অবস্থান করে;
১ অনুসারে, যেকোনো বিজোড় সংখ্যা k=3 নিলাম। তাহলে,
৩+০=৩=বিজোড় সংখ্যা।
একইভাবে, ৫+০=৫; ৭+০=৭; ৯+০=৯; ১১+০=১১ .......... ইত্যাদি।
তাহলে, ১ নং অনুসারে 'শূন্য একটি জোড় সংখ্যা'।
২ অনুসারে, যেকোনো পূর্ণসংখ্যা n হলে, জোড় সংখ্যাকে 2n এবং বিজোড় সংখ্যাকে 2n+1 দ্বারা প্রকাশ করা যায়। ফলে, বিজোড় সংখ্যার ক্ষেত্রে সর্বদা 1 অবশিষ্ট থাকে। যেমনঃ
1 = 1x0 + 1 = 0+1
3 = 2x1 + 1 = 2+1
5 = 2x2 + 1 = 4+1
7 = 3x2 + 1 = 6+1
9 = 4x2 + 1 = 8+1
................ এভাবে চলতে থাকবে।
দেখা যাচ্ছে যে, প্রতিটি বিজোড় সংখ্যা একটি জোড় সংখ্যা এবং ১ এর সমষ্টি। প্রত্যেকটি বিজোড় সংখ্যার শেষে ১ অবশেষ থাকে।
জোড় সংখ্যার ক্ষেত্রেঃ
2 = 1x2 = 2
4 = 2x2 = 4
6 = 3x2 = 6
8 = 4x2 = 8
10 = 5x2 = 10
.............. এভাবে চলতে থাকবে।
জোড় সংখ্যার ক্ষেত্রের বিজোড়ের মত কোন ১ অবশিষ্ট থাকে না। এবার শূন্যের ক্ষেত্রেঃ
0 = 0x0 = 0x1 = 0x2 = 0x3 = 0x4 = 0x5 = ................... = 0
অতএব, শূন্যের ক্ষেত্রেও কোন অবশেষ থাকছে না। তাই, ২ অনুসারে "শূন্য একটি জোড় সংখ্যা।"
৩ অনুসারে, পূর্ণসংখ্যার সিরিজ= ....................., -5, -4, -3, -2, -1, 0, 1, 2, 3, 4, 5, .........................
এখানে ৩ বিজোড় সংখ্যা। কেননা, ৩ এর দুই পাশে দুটি বিজোড় সংখ্যা ২ ও ৪ আছে। আবার, ২ জোড় সংখ্যা। কারণ, এর দুইপাশে দুটি বিজোড় সংখ্যা ১ ও ৩ আছে।
এখন, ১ বিজোড় সংখ্যা। এর দুই পাশে ০ ও ২ আছে। ২ জোড় সংখ্যা। ১ কে বিজোড় হতে হলে ০ কে অবশ্যই জোড় হতে হবে। তাই, শূন্য হচ্ছে জোড় সংখ্যা।
আবার, শূন্যের(০) দুই পাশে -১ ও +১ আছে। যারা উভয়েই বিজোড় সংখ্যা। তাই, এদের মাঝখানে অবস্থিত শূন্য(০) কে অবশ্যই জোড় সংখ্যা হবে।
অতএব, শূন্য একটি জোড় সংখ্যা।
শূন্যের পাওয়ার বা ঘাত শূন্য হলে কি হয়?
এই বিষয়টি বুঝার আগে গণিতে "পাওয়ার বা ঘাত" এর কাজ সম্বন্ধে ভালো ধারণা থাকা প্রয়োজন। পাওয়ার বা ঘাতের কাজ কি?
ধরি, a একটি সংখ্যা। এর পাওয়ার বা ঘাত 2 দেয়া মানে দুইটা a গুণ আকারে আছে। একইভাবে তিন দেয়া মানে তিনটা a গুণ আকারে আছে। অর্থাৎ,
a² = a x a
a³ = a x a x a
a এর পাওয়ার 1 থাকা মানে ১ টা a গুণ আকারে আছে। কিন্তু, এই ১ টা a কিসের
সাথে গুণ আকারে? এটি আসলে 1 এর সাথে গুণ আকারে আছে। আমরা যখন কোন সংখ্যা কে
অন্য কোন সংখ্যা দ্বারা গুণ করি, সেখানে আসলে আগে থাকতেই 1 গুণ আকারে
থাকে। কারণ, 1 ব্যতীত অন্য কোন সংখ্যা গুণ করলে গুণফল পরিবর্তন হয়ে যাবে।
তাই, সকল গুণের আগে আমরা 1 কে গুণ আকারে লিখতে পারি। 1 কে গুণ আকারে লিখা,
না লিখে একই কথা হওয়ার আমরা একে সচারচর লিখি না। যদি লিখতাম, তাহলের উপরের
লাইন দুটি এমন হতঃ
a² = 1 x a x a
a³ = 1 x a x a x a
অর্থাৎ, প্রত্যেক গুণের শুরুতেই 1 গুণ আকারে থাকে। সেই হিসেবে, a এর পাওয়ার 1 থাকা মানে, 1 এর সাথে ১ টি a গুণ আকারে আছে।
a¹ = 1 x a = a
"গুগল ক্যালকুলেটরে 00 এর মান 1 দেখাচ্ছে" |
এখন যদি a এর পাওয়ার শূন্য(০) হয়, তাহলে কি হবে?
'a এর পাওয়ার বা ঘাত শূন্য(০)'- এই কথাটির মানে হচ্ছে, "1 এর সাথে ০ টি a গুণ আকারে আছে। বা, 1 এর সাথে কোন a গুণ আকারে নেই।"
ফলে, 1 একাই থাকে। এর সাথে কারো গুণ হয় নি। তাই a এর পাওয়ার শূন্য হলে এর মান 1
a0 = 1
একইভাবে, 00এর মানে হচ্ছে 0 টি 0 গুণ আকারে আছে। মানে, আগে থেকেই যে 1 আছে তার সাথে কোন শূন্য(০) গুণ আকারে নেই। অর্থাৎ, এক্ষেত্রেও উত্তর হবে 1
সুতরাং, 00=1
অতএব, শূন্যের পাওয়ার বা ঘাত শূন্য হলে তার মান এক(১) হয়।সুতরাং, 00=1
আবার, শূন্যের পাওয়ার বা ঘাত যদি শূন্য ব্যতীত অন্য কোন সংখ্যা হয়, তাহলে কিন্তু তার মান হয় শূন্য। যেমন, শূন্যের পাওয়ার ৫ হওয়া মানে "1 এর সাথে ৫ টা শূন্য(০) গুণ আকারে আছে". অর্থাৎ,
05 = 1 x 0 x 0 x 0 x 0 x 0 = 0
তাই, শূন্যের পাওয়ার বা ঘাত শূন্য হলে তার মান এক(১) হয়। আর, শূন্যের পাওয়ার বা ঘাত যদি শূন্য ব্যতীত অন্য কোন সংখ্যা হয়, তাহলে কিন্তু তার মান হয় শূন্য।