সুন্নাহ অনুযায়ী ফরয গোসলের বর্ণনা

সুন্নাহ অনুযায়ী ফরয গোসলের বর্ণনাঃ

গোসল ফরয হওয়ার কারণ সমূহ নিম্নরূপঃ
১. জাগ্রত বা নিদ্রা অবস্থায় উত্তেজনার সাথে ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত বীর্যপাত হওয়া। কিন্তু নিদ্রা অবস্থায় উত্তেজনার অনুভব না হলেও গোসল করা ফরয। কেননা নিদ্রা অবস্থায় স্বপ্নদোষ হলে মানুষ অনেক সময় তা বুঝতে পারে না।
২. স্ত্রী সহবাস। সহবাসের ক্ষেত্রে স্বামী-স্ত্রীর লজ্জাস্থান একত্রিত হলেই গোসল করা ফরয হয়ে যাবে, স্বামী অথবা স্ত্রীর বীর্যপাত হোক বা নাহোক।
৩. নারীদের ঋতু বা নেফাস (সন্তান প্রসবের পরের স্রাব) হওয়া। ঋতুবতী নারীর স্রাব বন্ধ হলে, গোসলের মাধ্যমে তাকে পবিত্র হতে হবে। এই গোসলও ফরয গোসলের অন্তর্ভুক্ত।
তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইস্তেহাজা (অসুস্থতার কারণে রক্তপাত) বিশিষ্ট নারীকে নির্দেশ দিয়েছেন, ঋতুর নির্দিষ্ট দিন সমূহ সে নামায-রোযা থেকে বিরত থাকবে, তারপরে গোসল করবে। নেফাস থেকে পবিত্র হওয়ার ক্ষেত্রেও একই বিধান। তার উপরও গোসল করা ফরয।
হায়েয ও নেফাস থেকে গোসল করার পদ্ধতি জানাবাত বা নাপাকী থেকে ফরয গোসল করার পদ্ধতির অনুরূপ। ঋতুবতী নারীর পবিত্রতার জন্য ফরয গোসলের জন্য বড়ই পাতা ব্যবহার করা মুস্তাহাব। এতে অধিক পরিস্কার ও পবিত্র হওয়া যায়। বরই পাতার পরিবর্তে সাবান বা শ্যম্পু ব্যবহার করলেও হবে।
৪. অনেক আলেমের মতে, মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেওয়া জীবিতদের জন্য ফরয।
৫. হস্তমৈথুন দ্বারা বীর্যপাত হলেও গোসল করা ফরয হয়ে যাবে। উল্লেখ্য হস্তমৈথুন হারাম ও কবীরা গুনাহ।
৬. যৌন উত্তেজনার কারণে মজি (পানির মত পাতলা বীর্য যা অল্প পরিমানে বের হয়, কিন্তু উত্তেজনা হ্রাস হয়না) বের হলে ওযু ভাংবে, কিন্তু গোসল করা ফরয হবেনা। কারো মজি বের হলে, সে নামাযের আগে লজ্জাস্থান ধৌত করে ওযু করে নামায পড়বে। আর যদি কাপড়ে মজি লাগে আর ভেজা থাকে তাহলে যে জায়গায় লাগে ঐ জায়গা পানি দিয়ে ধুয়ে নেবে, শুকিয়ে গেলে কিছুই করতে হবেনা, ঐ কাপড়েই নামায পড়তে পারবে। আর উত্তেজনার সাথে মজী (ঘন আঠালো সাদা বীর্য) বের হলে ওযু-গোসল দুটোই ফরয হয়।

সুন্নাহ অনুযায়ী গোসল করার পদ্ধতিঃ
গোসল করার পরিপূর্ণ পদ্ধতি হচ্ছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেভাবে গোসল করেছেন ঠিক সেইভাবে গোসল করা।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেইভাবে গোসল করেছেনঃ
১. পবিত্রতা অর্জনের জন্য গোসল করার “নিয়ত” করে নিতে হবে। এরজন্য কোনো দুয়া পড়তে হবেনা বা মুখে কিছু বলতে হবেনা। শুধু গোসল শুরু করার আগে এই বিষয়টা অন্তরে খেয়াল থাকলেই হবে।
২. “বিসমিল্লাহ” বলে শুরু করতে হবে। ওযু বা গোসলের পূর্বে বিসমিল্লাহ বলে শুরু করা সুন্নত, ফরয নয়। সবসময় চেষ্টা করতে হবে বলার জন্য, তবে শুরুতে বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে গেলেও ওযু/গোসল হয়ে যাবে। আর বাথরুমে ওযু করও বিসমিল্লাহ বলবে।
৩. প্রথমে দুই হাত কব্জি পর্যন্ত ২বার অথবা ৩বার ধৌত করতে হবে। দুই হাত কবজি পর্যন্ত না ধুয়ে পানির পাত্রে হাত দেওয়া যাবেনা।
৪. তারপর নাপাকী সংশ্লিষ্ট স্থান এবং লজ্জাস্থান বাঁ হাতে দিয়ে পানি দিয়ে ধৌত করে নিতে হবে।
৫. এর পরে বাঁ হাত মাটিতে ঘষে বা সাবান দিয়ে পানি দিয়ে ধৌত করতে হবে।
৬. এরপর পরিপূর্ণরূপে সঠিক পদ্ধতি অনুযায়ী ওযু করে নিবে। যেহেতু আমাদের প্রচলিত বাথরুমগুলো পরিষ্কার থাকে, তাই পূর্ণাংগ ওযু করে নিবে, ওযুর সর্বশেষ পাও ধুয়ে নিবে। কিন্তু গোসল করার জায়গাটা যদি মাটির হয় বা এমন ময়লা থাকে যাতে করে গোসল করার সময় পায়ে লাগে তাহলে ওযুর পা ধৌত করবেনা। গোসলের সবার শেষে পায়ে পানি ঢেলে পায়ের ময়লা পরিষ্কার করবে।
ওযুর সংক্ষিপ্ত বর্ণনাঃ
ক. এক আজলা পানির কিছুটা মুখে নিয়ে কুলি করবে আর বাকি অংশ নাকে পানি দিবে। কুলি করা ও নাকে পানি দেওয়া একবার পানি নিয়েই করবে, আলাদা আলাদা নয়। ওযুর বিস্তারিত বর্ণনায় বিস্তারিত দেওয়া হয়েছে।
খ. মুখমন্ডল ধৌত করবে ৩ বার। কপালের গোড়া থেকে দুই কানের লতি পর্যন্ত ও থুতনীর নিচ পর্যন্ত সমস্ত মুখমন্ডল ধৌত করবে।
গ. কনুই পর্যন্ত দুই হাত ধৌত করবে ৩ বার। প্রথমে ডান হাত পরে বাম হাত।
ঘ. মাথা মাসা করবে একবার
ঙ. টাখনু পর্যন্ত পা ধৌত করবে ৩ বার। প্রথমে ডান পা পরে বাম পা।
ওযুর পূর্ণাংগ বর্ণনা জানার জন্য এই নোটটা পড়ুনঃ

https://www.facebook.com/notes/তোমরা-তোমাদের-পালনকর্তার-অভিমূখী-হও-এবং-তাঁর-আজ্ঞাবহ-হও/ওযু-সম্পর্কে-বিস্তারিত-বর্ণনাঃ/715436018468460 

৭. ওযু শেষ করে মাথায় তিনবার পানি ঢেলে তা ভালভাবে ভিজিয়ে নিবে। ফরয গোসলের সময় মহিলাদের মাথার বেনী খুলতে হবে না। মাথায় কেবল তিন আজলা পানি ঢেলে চুলের গোড়া ভেজালেই চলবে। তবে মহিলাদের ঋতুস্রাব পরবর্তী গোসলের সময় বেনী খোলা মুস্তাহাব বা উত্তম।
৮. সবশেষে সমস্ত শরীরে পানি ঢেলে ধুয়ে নিবে। প্রথমে শরীরের ডান দিকে, পরে বাঁ  দিকে।
এটাই হচ্ছে গোসলের পরিপূর্ণ পদ্ধতি।
উল্লেখ্য, এইভাবে গোসল করলে এর পরে নামায পড়তে চাইলে আলাদা করে ওযু করতে হবেনা, যদিনা গোসল করার সময় ওযু ভংগের কোনো কারণ ঘটে থাকে। ওযু ভংগের কারণ যদি ঘটে তাহলে গোসল শেষ করে শুধু ওযু করবে, আবার গোসল করে গায়ে পানি ঢালতে হবেনা। আর খেয়াল রাখতে হবে, গোসলের জন্য ওযু করার পরে কোনো কিছুর আড়াল ব্যতীত লজ্জাস্থান স্পর্শ করা যাবেনা। কারণ কামনা সহকারে লজ্জাস্থান স্পর্শ করলে ওযু ভেঙ্গে যায়। আর কামনা ব্যাতীত, এমনিতে স্পর্শ করলে ওযু ভাংবেনা। কিন্তু তার জন্য মুস্তাহাব বা উত্তম হচ্ছে আবার ওযু করে নেওয়া। গোসলের পরে কাপড় চেঞ্জ করলে বা হাঁটুর উপরে কাপড় উঠে গেলে ওযু ভাংবেনা, এটা ওযু ভংগের কারণ না।
যেই হাদীসগুলো থেকে দলীল নেওয়া হয়েছেঃ
বুখারীঃ ১, ১৬৮, ২৪৩, ২৪৮, ২৪৯, ২৫৭, ২৬৬, ২৮০, ২৮১।  
মুসলিমঃ ৬২৫, ৬২৮, ৬৩১, ৬৫০, ৬৫৬, ৬৭০, ৬৭৩।
নাসায়ীঃ ৪২২, ইবনে মাজাহঃ ৬৩৭, আবু দাউদঃ ২৪৩।
গোসলের উপরে শায়খ সাইফুদ্দিন বেলাল এর ছোট্ট এই লেকচারটি খুবই সুন্দর ও উপকারী। 
http://www.youtube.com/watch?v=IfKCFy_NwCY
^উপরে যেতে ক্লিক করুন