কি
মারাত্মক কথা !! মানুষের মনে কতো ভ্রান্ত কথাবার্তা ঢুকে আছে !!
ফরয
নামায আল্লাহর জন্য,
সুন্নত নামায রাসুলের জন্য, যাতে করে
তিনি শাফায়াত করেন??
নাউযুবিল্লাহ
! কি শিরকি চিন্তা-ভবনা...!!
"(হে
নবী) আপনি বলুনঃ নিশ্চয়ই আমার নামায,
আমার কোরবাণী এবং আমার জীবন ও মরন একমাত্র বিশ্ব-প্রতিপালক
আল্লাহর জন্যে।"
সুরা
আল-আন'আমঃ
১৬৩।
"অতএব
আপনি আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায পড়ুন এবং কোরবানী করুন।"
সুরা
আল-কাউসারঃ ২।
*এখানে
কোথায় বলা আছে, কিছু নামায আল্লাহর জন্য আর কিছু নামায রাসুলের জন্য? লা হা'উলা ওয়ালা ক্বুওয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ!!
সমস্ত
নামায, রোযা,
কোরবানি - অর্থাৎ সমস্ত প্রকার ইবাদতের হক্ক বা মালিক একমাত্র
আল্লাহ পাক। আমরা সমস্ত ইবাদত করি একমাত্র আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য।
নামায
পড়া এ শ্রেষ্ঠ ইবাদতের মধ্যে একটা। সমস্ত নামায পড়া হবে একমাত্র আল্লাহর জন্যই।
“সুন্নত নামাযের”
অর্থ কি বা সুন্নত নামায আমরা কেনো পড়ি??
সুন্নত
বা “সুন্নাহ”
অর্থ হচ্ছে পথ বা আদর্শ। এখানে সুন্নত বলতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর
আদর্শকে বুঝায়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কোনো কাজ করেছেন, সাহাবাদেরকে
করতে বলেছেন বা সাহাবারা তাঁর সামনে করেছেন আর তিনি চুপ থেকে তাদের কাজের প্রতি
মৌন সম্মতি দিয়েছেন – এই সবগুলো রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর
সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত।
ইসলাম
বলতে আমরা যেই কাজগুলো বুঝি,
এর সবগুলোই সুন্নতের অন্তর্ভুক্ত হতে হবে। অর্থাৎ হয় রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিজে করেছেন, অথবা সাহাবীদেরকে করতে
বলেছেন অথবা সাহাবারা তাঁর সামনে করেছেন আর তিনি তার অনুমতি দিয়েছেন – এই ৩টার যেকোনো একটা হতে হবে। কিন্তু সুন্নতে নেই অর্থাৎ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) থেকে প্রমানিত নয়, এমন কোনো কাজ কেউ যদি
করে আর সেটা “ইসলাম”, “নেকের কাজ”
বা “ইবাদত” বলে
দাবী করে, সেটা হচ্ছে “বিদাত”
বা ইবাদতের মাঝে নতুন আবিষ্কার।
ইমাম
আল-বারবারাহী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ
“জেনে
রাখ ইসলাম হচ্ছে সুন্নাহ, আর সুন্নাহ হচ্ছে ইসলাম”।
শরাহুস-সুন্নাহ।
সুন্নতের
মাঝে অনেক আমল আছে যা করতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদেরকে আদেশ করেছেন, অত্যন্ত জোর দিয়েছেন –
অর্থাৎ আমাদের
জন্য করা বাধ্যতামূলক বলেছেন। এই কাজগুলো আমদেরকে অবশ্যই পালন করতে হবে। এই কাজগুলো
আমরা “ওয়াজিব/ফরয”
হিসেবে চিনি – যার অর্থ হচ্ছে
বাধ্যতামূলক, কেউ না করলে সে গুনাহগার হবে। এইরকম কাজগুলো
হচ্ছে, ৪ রাকাত নামাযের ২ রাকাত শেষে শেষ বৈঠকে বসা,
দাঁড়ি রাখা, জামাতে নামায পড়া ইত্যাদি।
আবার
সুন্নতের মাঝে অনেক ইবাদত আছে,
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যা কখনো করেছেন আবার কখনো করেন নি। কিন্তু
আমাদের জন্য এইগুলো বাধ্যতামূলক বলে ঘোষণা করেন নি কিন্তু করতে উতসাহ দিয়েছেন। এই
কাজগুলোকে অবস্থা অনুযায়ী কখনো সুন্নত, কখনো নফল
(অতিরিক্ত/ঐচ্ছিক) বা মুস্তাহাব (উত্তম) বলা হয়। কাজগুলোর মর্যাদা অনুযায়ী
এইগুলোকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যেমন- সুন্নত, নফল,
মোস্তাহাব, জায়েজ – এইরকম।
সুন্নত
নামায???
জেনে
রাখুন...
ফরযের
বাইরে সমস্ত নামায (সুন্নত/নফল/বিতির/তাহাজ্জুদ) নামায নফল বা অতিরিক্ত নামাযের
অন্তর্ভুক্ত। এই নামাযগুলোর মধ্যে যেইগুলো রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিয়মিত করতেন, জরুরী কারণ বা বিশেষ ওজর
ছাড়া ছাড়তেন না, এই নামাযগুলোও নফলের মাঝে অন্তর্ভুক্ত।
কিন্তু নফলের মাঝে এই নামাযগুলো সবচেয়ে বেশি উত্তম ও বেশি সওয়াবের। তাই যদিও
এইগুলো নফলের অন্তর্ভুক্ত, কিন্তু মর্যাদা বেশি হওয়ায়
আলাদা একটা নাম, অর্থাৎ “সুন্নত নামায” বলা হয়। এই সুন্নত নামায হচ্ছে ৫ ওয়াক্ত নামাযের সাথে সংশ্লিষ্ট ১২
রাকাত নামায, বিতির নামায, তারাবীর
নামায ইত্যাদি।
আর
যেইগুলো রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কখনো করতেন বা কখনো করতেন না, বা সাহাবারা করতেন
কিন্তু রাসুলুল্লাহ (সাঃ) নিজে করতেন না এইরকম কিছু নামাযকে শুধুই “নফল নামায” বলা হয়। এর উদাহরণ হচ্ছে আসরের আগে
৪ রাকাত ও মাগরিবের ফরযের আগে ২ রাকাত। এইগুলোকে নফল নামায বলা হয়। এইগুলো অনেক
সওয়াব কিন্তু গুরুত্ব ও মর্যাদার দিক থেকে “সুন্নত নামায”
থেকে কম।
***তবে
নামায সেটা যাই হোক,
ফরয সুন্নত অথবা নফল, সমস্ত নামাযই পড়া
হয়ে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, আল্লাহর আদেশ অনুযায়ী আর
তাঁকেই সন্তুষ্ট করার জন্য।
সুন্নত
নামায পড়ি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর আদর্শ অনুযায়ী, কিন্তু সন্তুষ্টির আশা
করি একমাত্র আল্লাহর...
আর, সর্বশেষ...
ফরয
নামায ছাড়া অন্য নামাযগুলোর নিয়ত কিভাবে করবেন?
ফরয
নামাযের বাইরে যেই নামায,
আপনাকে এটা নিয়ে চিন্তা করতে হবেনা যে এটা সুন্নত, না নফল না মুস্তাহাব নামায। যেমন ধরুন, আপনি
তাহিয়্যাতুল ওযুর নামায পড়বেন। আপনি নামায শুরুর আগে মনে মনে শুধু “সিদ্ধান্ত নিবেন” বা “ইচ্ছা করবেন” এই ২ রাকাত হচ্ছে তাহিয়্যাতুল
ওযুর ২ রাকাত। ব্যস নিয়ত করা হয়ে গেলো, এবার আল্লাহু আকবর
বলে নামায শুরু করবেন বুকে হাত বেঁধে। এটাই হচ্ছে সুন্নত অনুযায়ী নামাযের নিয়ত
করার করার সঠিক পদ্ধতি।
আর
ফরয নামাযের আগে মনে মনে চিন্তা করবেন/ইচ্ছা করবেন/সিদ্ধান্ত নিবেন এটা আমার ফরয
নামায। খালাস, নাওয়াতু টাওয়াইতু পড়ার কোনো ঝামেলা নেই। এটাই হচ্ছে নিয়ত করার সহীহ
পদ্ধতি।
অনুরূপ
তাহাজ্জুদ/বিতির পড়লে আপনাকে চিন্তা করতে হবেনা, এটা নফল না সুন্নত। শুধু
মনে মনে সিদ্ধান্ত নিবেন এটা হচ্ছে ২ রাকাত তাহাজ্জুদ অথবা ১/২ রাকাত বিতির।
আল্লাহ তাআ’লা তাঁর রহমত অনুযায়ী ১০-৭০০ গুণ, অথবা যদি চান তারও বেশি সওয়াব আপনার আমল নামায় লিখে দেবেন।