করল্লার তেতো স্বাদের আড়ালে

বেশী করে পিঁয়াজ দিয়ে ঘিয়ে ভাজা
করল্লা-আলুর যে স্বাদ, তাতে এক থালা ভাত খেয়ে ফেলা যায় অনায়াসেই। কিংবা
করল্লা দিয়ে কুচো চিংড়ি, ডাল দিয়ে করল্লার চচ্চড়ি কিংবা ইলিশ মাছের
কাঁটা কুটো দিয়ে মাখো মাখো করল্লা… আহ! আর ইলিশ বা রুই মাছের ডিম দিয়ে
করল্লা ভাজার যে স্বাদ, মুখের সাথে লেগে থাকবে একবার খেলে। বাঙ্গালির রসনা
বৈচিত্র্যের অনবদ্য উদাহরণ এই সকল খাবার।
হতে পারে করল্লা বিচ্ছিরি তেতো। তবে এই
তেতো হওয়াটাই এর স্বাদ। জেনে রাখা ভালো যে খাবারের শুরুটা তেতো দিয়ে হলে
তা মুখের মাঝে কিছু বিশেষ এনজাইমের সক্রিয়তা বাড়ায়। ফলে খাদ্য হজম হয়
দ্রুত ও সহজে। এবং একারণেই তা ওজন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
শত বছর ধরে চীন এবং ভারতে তথা সম্পূর্ণ
এশিয়াতেই করল্লা ব্যবহৃত হয়ে আসছে ডায়বেটিসের ওষূধ হিসেবে। এতে
প্ল্যান্ট ইনসুলিন আছে যা রক্তে গ্লুকোজ লেভেল কম রাখে। দক্ষিণ আমেরিকার
আমাজান অঞ্চলের আদিবাসীরাও বহু বছর ধরেই করলাকে ডায়াবেটিস, পেটের গ্যাস,
হাম ও হিপাটাইটিসের ওষুধ হিসাবে ব্যবহার করে আসছে। ব্যবহার করে আসছে উচ্চ রক্তচাপ কমাতে, ম্যালেরিয়া জ্বরে এবং মাথা ব্যথায়ও।
করলা জন্মায় ট্রপিক্যাল অঞ্চলে।
যেমন-এশিয়া, পূর্ব আফ্রিকা, ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ, দক্ষিণ আমেরিকা। করলার
আছে পালং শাকের চেয়ে দ্বিগুণ ক্যালশিয়াম আর কলার চেয়ে দ্বিগুণ
পটাশিয়াম। আছে যথেষ্ট লৌহ, প্রচুর ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এবং আঁশ। ভিটামিন
এ এবং ভিটামিন সি এন্টি অক্সিডেন্ট, যা কিনা শরীরের কোষগুলোকে রক্ষা করে
বার্ধক্য ঠেকিয়েও রাখতে পারে! আরও আছে লুটিন আর লাইকোপিন। এগুলো রোগ
প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। লাইকোপিন শক্তিশালী এন্টি অক্সিডেন্টও বটে।
সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি অফ কলোরাডোর
ক্যান্সার সেন্টার কর্তৃক গবেষনায় দেখা গ্যেছে যে করল্লা অত্যন্ত সফল ভাবে
অগ্নাশয়ের ক্যান্সার প্রতিরোধে সক্ষম। গবেষনায় দেখা গেলো যে টেস্ট টিউবে
রাখা মানুষের অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার কোষে করল্লার জুস প্রয়োগে কোষের
মৃত্যুর হার বেড়েছে। কিন্তু কিভাবে? মূলত দ্রূত বর্ধনশীল ক্যান্সার কোষের
বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন প্রচুর গ্লুকোস বা চিনি। করল্লা ইন্সুলিন এর নিঃসরন
বাড়িয়ে এই গ্লুকোস মেটাবলিসম বা ভেঙ্গে ফেলার ব্যবস্থা করে। ফলে
ক্যান্সার কোষ বাড়তে না পেরে মরে যায়। ঠিক একই ভাবে করল্লা নিয়ন্ত্রন
করে ডায়বেটিস ও।
এছাড়াও রক্তের চর্বি তথা ট্রাইগিস্নসারাইড
কমায় করল্লা। এবং ভাল কলেস্টেরল এইচডিএল কে বাড়ায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
কার্যকরী ভূমিকা রাখে। ক্রিমিনাশক হিশাবেও করল্লার তুলনা মেলা ভার।
করল্লা ভাইরাস নাশক হিশাবেও সমান
কার্যকারী। হিপাটাইটিস এ, হারপিস ভাইরাস, ফ্লু, ইত্যাদির বিরুদ্ধে শক্ত
প্রতিরোধ সৃষ্টি করে। লিভার ক্যান্সার, লিউকেমিয়া, মেলানোমা ইত্যাদি
প্রতিরোধ করতে পারে। করল্লার ল্যাক্সেটিভ পায়খানাকে নরম রাখে, ও কোষ্ঠ
কাঠিন্য দূর করে। জীবাণুনাশী-বিশেষ করে ই কোলাই নামক জীবাণুর বিরুদ্ধে
কার্যকর। ফলে ডায়রিয়াও প্রতিরোধ হয়।
এছাড়া করল্লা নানান রকম চর্মরোগ প্রতিরোধ
করতেও অত্যন্ত কার্যকর। করল্লার জুস লিভারের কর্মক্ষমতা বাড়ায়, রক্ত
পরিশোধনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বাংলাদেশে করল্লার আরেকটি নাম
প্রচলিত আছে- “উস্তা” ।