মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক হিসাব বিজ্ঞানঃ

হিসাব সম্পর্কিত ধারনা ও ডেবিট ক্রেডিট নির্নয়-

হিসাব কে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়- ১) আধুনিক পদ্ধতি ২) সনাতন পদ্ধতি
আজ আমি শুধু আধুনিক পদ্ধতিতে হিসাবের আলোচনা করব। আধুনিক পদ্ধতিতে হিসাব ৬ প্রকার
যথা - ১- সম্পত্তি হিসাব(Asset)=A
২- দায় হিসাব(Liabilities)= L
৩-মূলধন হিসাব(Capital) =C
৪-আয় হিসাব(Revenue)=R
৫-ব্যয়/খরচ হিসাব( Expense)=E
৬- উত্তোলন হিসাব (Drawings)= D
আধুনিক পদ্ধতিতে হিসাবের মূল সূত্র হল- A=L+OE

এখানে OE (Owner's Equity)= মালিকানা স্বত্ব । মালিকান স্বত্ব হচ্ছে মালিকের অধিকার বা স্বত্ব। এই মালিকানা স্বত্বের উপাদান
৪টি যথা- মূলধন, আয়, ব্যয় উত্তোলন অর্থাৎ C, R, E , D
এখানে C এবং R মালিকানা স্বত্ব বৃদ্ধি করে। E এবং D মালিকানা স্বত্ব হ্রাস করে সুতরাং OE= C+R-E-D। তাহলে আমাদের মূল
সূত্রটি ব্যাখ্যা করলে দাঁড়ায় A=L+C+R-E-D বা, A+E+D=L+C+R
লক্ষ করলে দেখা যাবে সম্পদ(A), ব্যয়(E) উত্তোলন(D) এক পাশে আর দায়(L), মূলধন(C) এবং আয় (R) অন্য পাশে। এই টুকু
ভালো ভাবে খেয়াল করতে হবে । ডেবিট যেহেতু বাম পাশের হিসাব তাই বাম পাশের গুলো অর্থাৎ সম্পদ(A), ব্যয়(E), উত্তোলন(D)
বৃদ্ধি পেলে ডেবিট হ্রাস পেলে ক্রেডিট । ক্রেডিট যেহেতু ডান পাশের হিসাব তাই ডান পাশের গুলো অর্থাৎ দায়(L), মূলধন(C) এবং
আয় (R) বৃদ্ধি পেলে ক্রেডিট হ্রাস পেলে ডেবিট।
এখন আমরা জানব কোনটা কোন হিসাব।
১- সম্পত্তি হিসাব(Asset)=A=নগদ, নগদ তহবিল/ নগদ উদ্ধৃত্ত, ব্যাংক জমা, প্রাপ্য বিল, বিবিধ দেনাদার , মজুদপন্য/সমাপনী মজুদ
পন্য, বিনিয়োগ, প্যাটেন্ট, খুচরা যন্ত্রাংশ, মোটর গাড়ী, আসবাবপত্র, কলকব্জা ও যন্ত্রপাতি, ইজারা সম্পত্তি, নিস্কর সম্পত্তি, ভুমি ও দালান
কোঠা, জমি বা ভুমি, সুনাম, ইমারত, প্লট, ভুমি উন্নয়ন, ট্রেডমার্ক, অফিসসরঞ্জাম, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, সঞ্চয় পত্র, অব্যাবহৃ মনিহারি,
হাতে নগদ, প্রাথমিক খরচাবলী, বিলম্বিত বিজ্ঞাপন, শেয়ার অবলেখকের ব্যয়/ শেয়ার দালালি খরচ, ডিবেঞ্চার অবলেখন ব্যয়, ঋনপত্র
অবহার/ বাট্রা,পাওনাদার বাট্রা সঞ্চিতি, প্রদেয়বিল বাট্রা সঞ্চিতি, যাবতীয় অগ্রিম ব্যয় যেমন- অগ্রিম বাড়ি ভাড়া, অগ্রিম বিমা সেলামী,
অগ্রিম কর ইত্যাদি যাবতীয় বকেয়া ব্যয় যেমন- বকেয়া/অনাদায়ী বিনিয়োগের সুদ, বকেয়া প্রাপ্ত ভাড়া, বকেয়া সঞ্চয় পত্রের সুদ,
এছাড়া কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট প্রাপ্য/পাওনা বোঝালে সেটা সম্পত্তি হবে।
২- দায় হিসাব(Liabilities)= L= ব্যাংক জমাতিরিক্ত, বিবিধ পাওনাদার, প্রদেয় বিল, বন্ধকী ঋন/ ঋন/ ব্যাংক ঋন/ %ঋন/
%ব্যাংক ঋন, সঞ্চিতি তহবিল, ব্যাংক ওডি( ওভার ড্রাফ্‌ট) , সাধারন সঞ্চিতি, শেয়ার অধিহার, শেয়ার প্রিমিয়াম, প্রতিপুরক তহবিল,
সিংকিং ফ্রান্ড, লভ্যাংশ সমতা করন তহবিল, ডিবেঞ্চার, অগ্রিম তলব, দাবিহীন লভ্যাংশ, আয়কর সঞ্চিতি, পেনশন তহবিল, ভবিষ্যৎ
তহবিল, কর্মচারী কল্যান তহবিল, বিমা তহবিল, শিক্ষা তহবিল, ত্রান ও দুর্যোগ তহবিল, বিনিয়োগ হ্রাস বৃদ্ধি জনিত তহবিল, অবচয়
সঞ্ছিতি তহবিল, যাবতীয় বকেয়া খরচ/ ব্যয় সমূহ যেমন- বকেয়া বেতন, বকেয়া মজুরি, বকেয়া ভাড়া, বকেয়া ঋনের সুদ, বকেয়া ব্যাংক
জমাতিরিক্তের সুদ, যাবতীয় ইত্যাদি, অগ্রিম আয় সমূহ যেমন- অগ্রিম শিক্ষানবিশ সেলামী, অগ্রিম বাড়ি ভাড়া প্রাপ্ত ইত্যাদি, এছাড়া
কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট প্রদেয়/ দেনা বোঝালে সেটা দায় হবে।
৩-মূলধন হিসাব(Capital) =C= প্রারম্ভিক মূলধন, অতিরিক্ত মূলধন, মালিক কর্তৃক কোন অর্থ বা সম্পত্তি ব্যাবসায়ে আনয়ন( নিজ
তহবিল হতে), মূলধনের সুদ সহ মূলধন।
৪-আয় হিসাব(Revenue)=R= বিক্রয়, ক্রয়ের উপর বাট্রা, ভাড়া প্রাপ্তি, বিনিয়োগের সুদ, সঞ্চয়পত্রের সুদ, উত্তোলনের সুদ, প্রদত্ত
ঋনের সুদ, কমিশন প্রাপ্তি, শিক্ষানবিশ সেলামী, অনাদায়ী পাওনা আদায়, আমানতের সুদ, প্রাপ্ত বাট্রা(নগদ), ভাড়া আদায়, সম্পত্তি
বিক্রয়ে মুনাফা, চালানী কারবারের লাভ, ব্যাংক জমার সুদ, বিবিধ প্রাপ্তি, কুঋন আদায়, পুরাতন কুঋন/অনাদায়ী পাওনা সঞ্চিতি, শেয়ার
হস্তান্তর ফি।
৫-ব্যয়/খরচ হিসাব( Expense)=E= ক্রয়, বিক্রয়ের উপর বাট্রা, ক্রয় পরিবহন/আন্তঃপরিবহন, অন্তর্মুখী পরিবহন, পরিবহন, বিক্রয়
পরিবহন/ বহিঃপরিবহন, শুল্ক, আমদানি শুল্ক, জাহাজ ভাড়া, মাল খালাসের খরচ, ডকচার্জ, মজুরি, গ্যাস, জ্বালানি, ও
বিদ্যুৎ , আলো ও উত্তাপ, কয়লা ও কোক, পানি ও বিদ্যুৎ ,বিশেষ প্যাকিং খরচ, কারখানা খরচ, কুলি খরচ, নগর শুল্ক , জলযান ভাড়া,
মজুরি ও বেতন, বেতন ও মজুরি, বেতন, ভাড়া, খাজনা ও কর, বিমা, বিমা সেলামী, ছাপা ও মনিহারি, ডাক ও তার, বৈদ্যুতিক খরচ,
টেলিফোন খরচ, পরিচালকের ফি, অফিস ব্যবস্থাপকের ফি, মেরামত ও নবায়ন, আইন খরচ, নিরিক্ষা ফি , যাতায়াত খরচ, সাধারন
খরচ, অফিস খরচ, বিবিধ খরচ, কারবার খরচ, শিক্ষানবিশ খরচ, রপ্তানি শুল্ক, বিজ্ঞাপন, ভ্রমন কারীর বেতন ও কমিশন, বিক্রয়
ব্যবস্থাপকের বেতন, কুঋন/ অনাদায়ী দেনা/ অনাদায়ী পাওনা, বাট্রা /প্রদত্ত বাট্রা, মঞ্জুরি কৃত বাট্রা(নগদ), কমিশন/প্রদত্ত কমিশন/
মঞ্জুরিকৃত কমিশন, নমুনা পন্য বিতরন, ব্যাংক জমাতিরিক্তের সুদ, সম্পত্তির অবলোপন, সম্পত্তির অবচয়, ছিনতাই জনিত ক্ষতি, দুর্ঘটনা
জনিত ক্ষতি , সম্পত্তি বিক্রয় জনিত ক্ষতি, বিবিধ ক্ষতি ইত্যাদি সহ যাবতীয় ক্ষতি।
৬- উত্তোলন হিসাব (Drawings)= D= উত্তোলন, নগদ উত্তোলন, পন্য উত্তোলন, নিজ প্রয়োজনে পন্য উত্তোলন, আয়কর, জীবন
বিমার প্রিমিয়াম/ সেলামী প্রদান,মালিকের ব্যাক্তিগত প্রয়োজনে ব্যবসায় হতে কোন কিছু উত্তোলন ।
উপরোক্ত বিষয় গুলো যদি ভালো ভাবে আয়ত্ব করা যায় তাহলে ডেবিট ক্রেডিট নির্নয় করতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। নিচে আমরা
একটু অনুশীলন করি-
যেমন, নগদে পন্য ক্রয় এখানে ক্রয় হিসাব ডেবিট আর নগদান হিসাব ক্রেডিট। কারন- ক্রয় এক ধরনের ব্যয়, এখানে ক্রয় বৃদ্ধি
পেয়েছে। আমরা জানি ব্যয় বৃদ্ধি পেলে ডেবিট, তাই ক্রয় হিসাব ডেবিট,। অপর দিকে নগদ একটি সম্পদ , এখানে নগদ হ্রাস পেয়েছে
আমরা জানি সম্পদ হ্রাস পেলে ক্রেডিট তাই নগদান হিসাব ক্রেডিট। আশা করা যায় এভাবে আরও আয়ত্ব করলে আর সমস্যা হওয়ার
কথা নয়।

সম্পদ এবং দায়ের ধরন-

সম্পদ (A)- কোন ব্যবসায় পরিচালনা করতে হলে অবশ্যই সম্পদের প্রয়োজন রয়েছে সাধারণত ব্যবসায়ে তিন ধরনের সম্পদ থাকে
১)স্থায়ী সম্পদ
২) বিনিয়োগ
৩) চলতি সম্পদ
১)স্থায়ী সম্পদ- যে সকল সম্পদ মুনাফা অর্জনের জন্য বারবার ব্যবহার করা হয় অই সকল সম্পদ হল স্থায়ী সম্পদ। এই ধরনের সম্পদ হতে এক বছরের বেশি সময় ধরে সুবিধা পাওয়া যায়। সাধারণত মূলধন বা দীর্ঘ মেয়াদী উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থ দ্বারা স্থায়ী সম্পদ অর্জন হয়। এই স্থায়ী সম্পদ কে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায় যথা- ক) অবচয় যোগ্য খ) অবলোপন যোগ্য
ক) অবচয় যোগ্য - এই ধরনের সম্পদ ক্রমাগত ব্যবহারে ফলে এটি ক্ষয় প্রাপ্ত হয় বা মুল্য হ্রাস পায়। এই মুল্য হ্রাস পাওয়া কে অবচয় বলে। এই ধরনের সম্পদ হল- খুচরা যন্ত্রাংশ, মোটর গাড়ী, আসবাবপত্র, কলকব্জা ও যন্ত্রপাতি,দালানকোঠা,অফিসসরঞ্জাম, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম ইত্যাদি।
খ) অবলোপন যোগ্য - এই ধরনের সম্পদ ও ব্যাবহারের ফলে মুল্য হ্রাস পায় তবে এই ধরনের সম্পদের মধ্যে ইজারা সম্পত্তি ব্যাতিত বাকী গুলো দেখা বা ধরা ছোঁয়া যায় না । এই ধরনের সম্পদ হল- ইজারা সম্পত্তি ,প্রাথমিক খরচাবলী, সুনাম,বিলম্বিত বিজ্ঞাপন, শেয়ার অবলেখকের ব্যয়/ শেয়ার দালালি খরচ, ডিবেঞ্চার অবলেখন ব্যয়, ঋনপত্র অবহার,ট্রেডমার্ক ইত্যাদি।
২) বিনিয়োগ- ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান অন্য কোন প্রতিষ্ঠানে ঋন দিলে বা টাকা লাগালে তা ব্যবসায়ের জন্য বিনিয়োগ এই ধরনের সম্পদ হল- বিনিয়োগ, % বিনিয়োগ,প্রদত্ত ঋন, প্রদত্ত কর্জ, লগ্নি( ডেবিট পাশের)% লগ্নি ইত্যাদি,
৩) চলতি সম্পদ-এই ধরনের সম্পদের নিয়মিত হ্রাস বৃদ্ধি ঘটে এবং এই ধরনের সম্পদ হতে এক বছরের কম সুবিধা পাওয়া যায়। এই ধরনের সম্পদ হলে- নগদ, নগদ তহবিল/ নগদ উদ্ধৃত্ত, ব্যাংক জমা, প্রাপ্য বিল, বিবিধ দেনাদার/প্রাপ্য হিসাব , মজুদপন্য/সমাপনী মজুদ,যাবতীয় অগ্রিম ব্যয় যেমন- অগ্রিম বাড়ি ভাড়া, অগ্রিম বিমা সেলামী, অগ্রিম কর ইত্যাদি যাবতীয়। বকেয়া আয় যেমন- বকেয়া/অনাদায়ী বিনিয়োগের সুদ, বকেয়া প্রাপ্ত ভাড়া, বকেয়া সঞ্চয় পত্রের সুদ,
দায়(L) - প্রতিষ্ঠানের সম্পত্তির বিপরীতে অথবা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের নিকট দেনা থাকলে সেটা দায়। দায় সাধারণত দুই ধরনের
১)দীর্ঘ মেয়াদী দায়
২) চলতি দায়
১)দীর্ঘ মেয়াদী দায়- যে সকল দায় দীর্ঘ মেয়াদের জন্য গ্রহন করা হয় তাকে দীর্ঘ মেয়াদী দায় বলে । এই ধরনের দায় সাধারণত ১ বছরের মধ্যে পরিশোধ করা হয়না। এই ধরনের দায়ের মধ্যে রয়েছে-বন্ধকী ঋন/ ঋন/ ব্যাংক ঋন/ %ঋন/ %ব্যাংক ঋন,
প্রদেয় বন্ড ইত্যাদি।
২) চলতি দায়- এই ধরনের দায় সাধারণত স্বল্প সময়ের মধ্যে পরিশোধ করা হয়। চলতি দায় দ্রুত পরিবর্তনশীল।এই ধরনের দায় কে ক্ষনস্থায়ী দায় বলা হয়। এই ধরনের দায়ের মধ্যে রয়েছে- ব্যাংক জমাতিরিক্ত, বিবিধ পাওনাদার, প্রদেয় বিল,ব্যাংক ওডি( ওভার ড্রাফ্‌ট),যাবতীয় বকেয়া খরচ/ ব্যয় সমূহ যেমন- বকেয়া বেতন, বকেয়া মজুরি, বকেয়া ভাড়া, বকেয়া ঋনের সুদ, বকেয়া ব্যাংক জমাতিরিক্তের সুদ, যাবতীয় ইত্যাদি, অগ্রিম আয় সমূহ যেমন- অগ্রিম শিক্ষানবিশ সেলামী, অগ্রিম বাড়ি ভাড়া প্রাপ্ত ইত্যাদি

আয় ও ব্যয়ের ধরন-

গত পর্বে আমরা সম্পদ ও দায়ের ধরন নিয়ে আলোচনা করেছি। আজ আলোচনা করব আয় এবং ব্যয়ের ধরন নিয়ে। এই আয় ও ব্যয়ের ধরন আর্থিক অবস্থার বিবরণীতে বিশেষ ভাবে কাজে লাগবে।
আয়(R)- ব্যবসায়ের বিভিন্ন ধরনের আয় হতে পারে , আয় কে প্রধানত ২ ভাগে ভাগ করা যায় ১)পরিচালন আয়। ২) অপরিচালন আয়।
১)পরিচালন আয়- যে সকল আয় করার উদ্দেশ্যে ব্যবসায় পরিচালনা করা হয় সে সকল আয় কে পরিচালন আয় বলে । পরিচালন আয় কে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায় - ক)প্রত্যক্ষ পরিচালন আয় খ) পরোক্ষ পরিচালন আয়
ক)প্রত্যক্ষ পরিচালন আয়- এই ধরনের আয় হল পন্য বিক্রয় ও সেবা আয়,
খ) পরোক্ষ পরিচালন আয় - এই ধরনের আয় হল কমিশন প্রাপ্তি, বাট্রা প্রাপ্তি(নগদ), চালানি কারবারের লাভ, পুরাতন কুঋন সঞ্চিতি।
২) অপরিচালন আয়- এই ধরনের আয় ব্যবসায় পরিচালনের বাইরে হয় ,এই ধরনের আয়ের মধ্যে রয়েছে- স্থায়ী সম্পদ বিক্রয় হতে মুনাফা, ডেবিট উদ্ধৃত্তের সুদ/সম্পদের সুদ,বিনিয়োগের সুদ, লগ্নির সুদ, সঞ্চয়পত্রের সুদ, আমানতের সুদ, ব্যাংজমার সুদ, প্রদত্ত ঋনের সুদ, ক্রয় কৃত ঋনপত্রের সুদ, সরকারী বন্ডের সুদ, সুদ আয়, উত্তোলনের সুদ, শিক্ষানবিশ সেলামী, প্রাপ্ত ভাড়া,উপ ভাড়া, উপভাড়া প্রাপ্তি।
ব্যয় (E)- ব্যবাসায় পরিচালনা কিংবা কাচামাল ক্রয় ইত্যাদি সংক্রান্ত বিভিন্ন ব্যয় হতে পারে। ব্যয় কে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায় যথা- ১)পরিচালন ব্যয় ২) অপরিচালন ব্যয়
১)পরিচালন ব্যয়- ব্যবসা পরিচালনা করতে যে সকল ব্যয় হয় সে সকল ব্যয় কে পরিচালন ব্যয় বলে পরিচালন ব্যয় কে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায় যথা- ক)প্রত্যক্ষ পরিচালন ব্যয় খ) পরোক্ষ পরিচালন ব্যয়
ক)প্রত্যক্ষ পরিচালন ব্যয়-এই ধরনের ব্যয় পন্য ক্রয় কিংবা উৎপাদনের সাথে সরাসরি সমস্পৃক্ত থাকে এই ধরনের ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে-
ক্রয়, মজুরি/ মজুরি ও বেতন, ক্রয় পরিবহন/আন্তপরিবহন/অন্তর্মুখী পরিবহন/ পন্য আনয়ন খরচ/পরিবহন/বহন খরচ, জাহাজ ভাড়া/জলযান ভাড়া, ডক চার্জ, পন্য খালাস খরচ,শুল্ক/আমদানি শুল্ক/আবগারি শুল্ক/নগর শুল্ক, বিশেষ প্যাকিং খরচ, কুলির খরচ, কারখানার ভাড়া, কারখানার কর ও বিমা, গ্যাস, জ্বালানি ও শক্তি, বিদ্যুৎ ও শক্তি, আলো ও তাপ,কারখানার যাবতীয় খরচ।
খ) পরোক্ষ পরিচালন ব্যয় -এই ধরনের ব্যয় পন্য ক্রয় কিংবা উৎপাদনের সাথে সরাসরি সমস্পৃক্ত থাকে না তবে বিক্রয় ও বন্টনের সাথে থাকে। এই ধরনের ব্যয়ের মধ্যে হল-বেতন, বেতন ও মজুরি, বিজ্ঞাপন, প্যাকিং খরচ, রপ্তানিশুল্ক, বিক্রয় প্রতিনিধির কমিশন, ভ্রমন খরচ, প্রদত্তবাট্রা/মঞ্জুরিকৃত বাট্রা/বাট্রা প্রদান/বাট্রা(ডেবিট), বাজারজাত করন খরচ/বিপনন খরচ, চালানি কারবারের ক্ষতি, ভাড়া/প্রদত্ত ভাড়া, টেলিফোন খরচ, ইন্টারনেট খরচ,যাতায়াত খরচ, যোগাযোগ খরচ, বিমা খরচ, অফিসের ভাড়া/ অফিসের যাবতীয় খরচ, কর ও অভিকর, সাধারন খরচ,মনিহারি/ছাপা ও মনিহারি, পরিচালকের ফি, বোনাস, মহার্ঘ ভাতা ইত্যাদি।
২) অপরিচালন ব্যয়- ব্যবসায় পরিচালনার বাইরেও কিছু খরচ হয় এই ধরনের খরচ কে অপরিচালন ব্যয় বলে । এই ধরনের ব্যয়ের মধ্যে রয়েছে- স্থায়ী সম্পদ বিক্রয় জনিত ক্ষতি, কমিশন খরচ, প্রদত্ত কমিশন, কমিশন প্রদান, ব্যাংক চার্জ, ঋনের সুদ/বন্ধকী ঋনের সুদ, মূলধনের সুদ, শিক্ষানবিশ ভাতা, বিবিধ ক্ষতি, দুর্ঘটনা জনিত ক্ষতি, আগুনে বিনষ্ট পন্য ইত্যাদি
উপরোক্ত আয় ব্যয় গুলো যদি ভালো ভাবে আয়ত্ব করা যায় তাহলে আর্থিক বিবরনী অনেকটা সহজ হবে।

একটি হিসাবের বিভিন্ন নাম-

গত পর্ব গুলোতে আমরা সম্পদ,দায়,আয়,ব্যয় নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আজ আমরা আলোচনা করব একটি হিসাবের বিভিন্ন নাম নিয়ে।
১) দেনাদার- বাকীতে পন্য বিক্রয় করলে দেনাদার সৃষ্টি হয়। এটি একটি সম্পদ।এই দেনাদারের অন্যান্য নাম হল- প্রাপ্য হিসাব,বুকডেটস,পুস্তক ঋন,বিক্রয় খতিয়ানের জের,
২)পাওনাদার-বাকীতে পন্য ক্রয় করার ফলে পাওনাদার সৃষ্টি হয়। এটি একটি দায়। এই পাওনাদারের অন্যান্য নাম হল- প্রদেয় হিসাব, ক্রয় খতিয়ানের জের।
৩)বকেয়া(আয়) - কোন আয় আদায়ে বাকী থাকলে সেটা বকেয়া আয় হয়। এটি একটি সম্পদ ।এর অন্যান্য নাম হল - পাওনা,অনাদায়ী, প্রাপ্য।
৪)বকেয়া (ব্যয়)- কোন ব্যয় প্রদান/পরিশোধ করতে বাকী থাকলে সেটা বকেয়া ব্যয় হয় এটি একটি দায়। এর অন্যান্য নাম হল-দেনা, প্রদেয়,অপরিশোধিত, অপ্রদত্ত।
৫)ঋন- কারবারের টাকার প্রয়োজন হওয়ায় অনেক সময় কারবার ব্যাংক বা অন্য কোন ব্যক্তি/প্রতিষ্ঠানের নিকট থেকে ঋন নিয়ে থাকে এই ঋন কারবারের কাছে দির্ঘ মেয়াদী দায়। এর অন্যান্য নাম হল- বন্ধকী ঋন, কর্জ গ্রহন, ব্যাংক ঋন, লগ্নী( ক্রেডিট পাশের), %ঋন, %ব্যাংক ঋন।
৬) বিনিয়োগ- মুনাফার আশায় কারবার অন্য কোন কারবার/প্রতিষ্ঠানের নিকট টাকা খাটালে তা বিনিয়োগ হয় এটি একধরনের সম্পদ। এর অন্যান্য নাম হল-% বিনিয়োগ,প্রদত্ত ঋন, প্রদত্ত কর্জ, লগ্নি( ডেবিট পাশের)% লগ্নি, সরকারী বন্ড ক্রয়, সঞ্চয় পত্র ক্রয়, ডিবেঞ্চার স্টক, ঋনপত্র ক্রয়
৭)বিজ্ঞাপন- ব্যবসায়ের পন্য বা সেবা দ্রুত বিক্রয়ের লক্ষে কিংবা ক্রেতাদের পন্যের জ্ঞান সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতা দূর করতে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়। এটি এক ধরনের ব্যয়। এর অন্যান্য নাম হল-নমুনা পন্য বিতরণ ,বিনামুল্যে পন্য বিতরণ,ক্রেতাদের মাঝে পন্য বিতরণ,প্রচার ব্যয়,
৮) মূলধন- মালিক কর্তৃক ব্যাবসায়ে আনিত অর্থ হল মূলধন। এটি মালিকানা স্বত্ব বৃদ্ধি করে । এটিকে অন্তঃ দায় ও বলা হয় ।এর অন্যান্য নাম হল- অতিরিক্ত মূলধন আনয়ন, মালিকের ব্যাক্তি গত সম্পত্তি বিক্রয় করে টাকা কারবারে আনয়ন, মালিকের ব্যাক্তি গত ব্যাবহৃত সম্পদ ব্যাবসায়ে আনয়ন।
৯)উত্তোলন-এটি মূলধনের ঠিক বিপরীত অর্থাৎ মালিক যদি ব্যবসায় হতে টাকা নিয়ে নিজ প্রয়োজনে ব্যয় করে তাহলে তাকে উত্তোলন বলে। এটি মালিকানা স্বত্ব হ্রাস করে।এর অন্যান্য নাম হল- পন্য উত্তোলন, নগদ উত্তোলন, জীবন বিমার প্রিমিয়াম প্রদান, আয় কর প্রদান( এক মালিকানা কারবারের ক্ষেত্রে), ব্যাবসায় হতে টাকা নিয়ে ব্যাক্তিগত কাজে ব্যবহার যেমন- ছেলের স্কুলের বেতন, স্ত্রীর অলংকার ক্রয় ইত্যাদি।
১০) কুঋন-দেনাদারের দের মধ্যে যদি কিছু অংশ আদায় না হয় তবে অই অংশ কে কুঋন বলা হয়। এটি এক ধরনের ব্যয়। এর অন্যান্য নাম হল- মন্দঋন, অনাদায়ী পাওনা।
১১) মনিহারি- ব্যবসায়ের অফিস পরিচালনা করতে হলে বিভিন্ন মনিহারি (যেমন- পিন, স্ট্যাপলার,সুতা, কলম, খাতা,কালি,কার্বন, কাগজ, আঠা, ইত্যাদি) প্রয়োজন হয়। মনিহারি এক ধরনের ব্যয় এর অন্যান্য নাম হল- ছাপা ও মনিহারি, সাপ্লাইজ, ষ্টেশনারী,সম্ভার,
১২) প্রদত্ত বাট্রা- দেনাদার দের কাছ থেকে টাকা দ্রুত আদায়ের লক্ষে কারবার কিছু টাকা ছাড় দেয় এই ছাড় কে নগদ বাট্রা বলে এটি এক ধরনের ব্যয়। এর অন্যান্য নাম হল - বরাদ্ধ কৃত বাট্রা, বাট্রা( ডেবিট পাশের) মঞ্জুরিকৃত বাট্রা।





^উপরে যেতে ক্লিক করুন