পরিচালনা কমিটির ক্ষমতা খর্ব বেসরকারি শিক্ষক নিয়োগে মেধাতালিকা করবে সরকার


দেশের প্রায় ৩০ হাজার বেসরকারি বিদ্যালয়, কলেজ ও মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে পরিচালনা বা ব্যবস্থাপনা কমিটির ক্ষমতা খর্ব করার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়েছে। এখন থেকে কেন্দ্রীয়ভাবে পরীক্ষা নিয়ে মেধাতালিকা করে দেবে সরকার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে এই মেধাক্রম অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ করতে হবে।
নতুন এ নিয়ম অন্তর্ভুক্ত করে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন পরীক্ষা গ্রহণ ও প্রত্যয়ন বিধিমালা সংশোধন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। গতকাল বুধবার সেটি মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া হয়। তবে প্রজ্ঞাপনে তারিখ রয়েছে ২২ অক্টোবর।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষাসচিব নজরুল ইসলাম খান প্রথম আলোকে বলেন, এখন থেকে নতুন নিয়মে নিয়োগ কার্যক্রম চলবে। তবে ইতিমধ্যে যাঁরা নিবন্ধন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন তাঁরাও নিয়োগের সুযোগ পাবেন। এ ক্ষেত্রে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতে আরেকটি মেধাতালিকা করে দেবে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ (এনটিআরসিএ)।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ নতুন ও পুরোনো যেকোনো তালিকা থেকে মেধাক্রম অনুযায়ী শিক্ষক নিয়োগ দিতে পারবে। নিবন্ধনের মেয়াদ হবে তিন বছর। আর যাঁরা ইতিমধ্যে নিয়োগ পেয়েছেন, এমপিওভুক্তির (বেতন ভাতার সরকারি অংশ পাওয়া) ক্ষেত্রে তাঁদের কোনো সমস্যা হবে না। তাঁরা আগের নিয়মেই এমপিওভুক্ত হবেন। শিগগিরই ‘সার্কুলার’ জারি করে বিষয়গুলো আরও স্পষ্ট করা হবে বলে জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
নতুন এই পদ্ধতির ফলে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক নিয়োগে প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা কমিটি একচ্ছত্র ক্ষমতা হারাবে। বর্তমান পদ্ধতিতে বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের অধীনে নিবন্ধন পরীক্ষা হলেও নিয়োগের ক্ষেত্রে পরিচালনা কমিটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়। পরিচালনা কমিটি তাদের প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের বিজ্ঞাপন দিলে নিবন্ধন পরীক্ষায় পাস করা শিক্ষার্থীরা আবেদন করেন। পরে পরিচালনা কমিটির অধীনেই স্থানীয়ভাবে নিয়োগ কমিটি গঠন করে আবেদনকারীদের নিয়োগ করা হয়। এই নিয়োগের ক্ষেত্রে অনিয়ম, দুর্নীতি, আর্থিক লেনদেন ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ প্রায়ই উঠছে।
নতুন নিয়মে এনটিআরসিএ প্রতিবছরের নভেম্বর মাসের মধ্যে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তার মাধ্যমে ওই জেলার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর পদ ও বিষয়ভিত্তিক শূন্য পদের তালিকা সংগ্রহ করবে। এই তালিকার ভিত্তিতে পরীক্ষা নেওয়া হবে। প্রথমে একটি বাছাই (প্রিলিমিনারি) পরীক্ষা হবে। এরপর ঐচ্ছিক বিষয়ে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ প্রার্থীদের মৌখিক পরীক্ষা নিয়ে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের উপজেলা, জেলা ও জাতীয়ভিত্তিক মেধাক্রমের তালিকা করে প্রকাশ করা হবে।
এই মেধাক্রম অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে। কোনো প্রার্থী লিখিত ও মৌখিক উভয় ক্ষেত্রে পৃথকভাবে শতকরা ৪০ নম্বর না পেলে তিনি কোনো মেধাতালিকায় স্থান পাবেন না। মেধাভিত্তিক মূল তালিকা ছাড়াও শূন্য পদের ২০ ভাগ প্রার্থীর সমন্বয়ে অপেক্ষমাণ তালিকাও প্রকাশ করা হবে। মৃত্যু, চাকরি ছাড়লে বা অন্য কোনো কারণে পদ শূন্য হলে এই তালিকা থেকে শিক্ষক নিয়োগ করা যাবে।
^উপরে যেতে ক্লিক করুন